সন্ত্রাসী হামলার পুনরুত্থানের মুখে সাহেল অঞ্চল

মালির গাও এলাকায় একটি পিকআপ ট্রাকে জিহাদি বিদ্রোহীরা। টি৫মঁদ ইনফো ইউটিউব চ্যানেল থেকে নেওয়া পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

মালি, বুর্কিনা ফাসো ও নাইজারের মতো সাহেল (আটলান্টিক মহাসাগর থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত সাহারা মরুভূমির দক্ষিণ প্রান্তের উপকূলবর্তী)  দেশগুলিতে অভ্যুত্থান-প্রতিষ্ঠিত সরকার ও পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যে বিপর্যস্ত সম্পর্কের কারণে সামরিক মিত্রদের চলে যাওয়াই মূলত সহিংসতার পুনরুত্থানের জন্যে দায়ী৷

সাহেল অঞ্চলের ছয়টিসহ পশ্চিম আফ্রিকা ২০২০ সাল থেকে কয়েকটি অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হয়েছে: নাইজার (২০২৩), বুরকিনা ফাসো (জানুয়ারিসেপ্টেম্বর ২০২২), গিনি (২০২১) এবং মালি (২০২০২০২১)। এই দেশগুলির বেসামরিক সরকারগুলিকে উৎখাত করে সামরিক সরকার প্রতিস্থাপিত হয়েছে, যাদের প্রথম কাজ ফরাসি ঔপনিবেশিক যুগের সামরিক চুক্তি বাতিল করে তাদের অঞ্চল থেকে ফরাসি সৈন্য প্রত্যাহার  দাবি।

সাহেলে অপারেশন সার্ভালের আওতায় মালির সেনাবাহিনীকে উত্তর মালি অঞ্চলের আজওয়াদেস্বাধীনতার দাবিতে বিদ্রোহী, সন্ত্রাসী ও সালাফি গোষ্ঠীগুলির অগ্রগতি রোধে সাহায্য করতে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ফরাসি সৈন্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে মোতায়েন করা হয়। সার্ভাল শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালে সাহেল ও সাহারার কিছু অংশ জুড়ে মালি সীমান্তের বাইরে বিস্তৃত অপারেশন বারখানেতে পরিণত হয়।

মালি, নাইজার ও বুরকিনা ফাসো থেকে অপারেশন বারখানে সৈন্যদের প্রত্যাহার এই অঞ্চলের নিরাপত্তায় একটি উল্লেখযোগ্য শূন্যতা তৈরি করেছে। এই শূন্যতা পূরণ করতে মালিবুরকিনা ফাসোর সামরিক অভ্যুত্থানের নেতারা রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে সামরিক ওয়াগনার গোষ্ঠীকে তাদের নতুন প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হতে বলেছে।

সন্ত্রাসী হামলার পুনরুত্থান

ফরাসি সৈন্য মোতায়েনে কিছু সময়ের জন্যে বিশেষ করে সাহেল ও মালিতে সন্ত্রাসী হামলা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসের কথা মন্টেইনে ইন্সটিটিউটের সাহেল সংকট বিশেষজ্ঞ জোনাথন গুইফার্ড তার বারখানে: সফলতা? ব্যর্থতা? মিশ্র ঝুলি? শীর্ষক পর্যালোচনায় ব্যাখ্যা করেছেন:

La lutte contre le terrorisme menée entre 2013 et 2022 a permis aux forces françaises, maliennes, nigériennes et burkinabè de mettre hors-de-combat les émirs des quatre katibats d’Al-Qaïda au Maghreb Islamique et plusieurs dizaines de leurs responsables opérationnels, les émirs d’Al Mourabitoune et du Mouvement pour l'Unicité et le Jihad en Afrique de l'Ouest, un grand nombre de responsables d’Ansar Eddine, trois des cinq émirs du Groupe de Soutien à l'Islam et aux Musulmans (…)

ফরাসি, মালি, নাইজেরীয় ও বুরকিনাবে সশস্ত্র বাহিনীর ২০১৩ ও ২০২২ সালের মধ্যে পরিচালিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চারটি আল-কায়েদার পশ্চিম ইসলামি কাতিবাতের (ব্রিগেড) আমির (নেতা), তাদের কয়েক ডজন ডজন মাঠ পর্যায়ের নেতা, আল মুরাবিতুন আমির এবং পশ্চিম আফ্রিকার ঐক্য ও জিহাদের আন্দোলন, আনসার দাইনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং ইসলাম ও মুসলিম সমর্থন গোষ্ঠীর পাঁচজন আমিরকে অপসারণ করতে সক্ষম করে (…)

তবে বর্তমান পরিস্থিতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত অভ্যুত্থানের একটি ঢেউ, সাহেল থেকে সামরিক মিত্রদের প্রত্যাহার এবং বুর্কিনা ফাসো, মালি ও নাইজারে একইভাবে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উত্থানের মতো তিনটি বিষয় রয়েছে।

নাইজারের অভ্যুত্থান সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন: নাইজারের সামরিক অভ্যুত্থান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেখেছে

নাইজেরীয় ২০২৩ সালের ২৬ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান সাহেল অঞ্চলকে যথেষ্ট দুর্বল করেছে। এখন শেষ ঘাঁটিটির পতনের ফলে দেশটি জিহাদি হুমকির জন্যে নতুন প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে ওঠা নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বাজুমের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে নাইজার বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার সম্মুখীন হলেও অভ্যুত্থানের পরে উল্লেখযোগ্যভাবে আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনালে (আরএফআই) স্বদেশ রক্ষার জাতীয় পর্ষদের (সিএনএসপি) প্রাথমিক মূল্যায়নে যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে:

Le 3 août, c'est un village près d'Anzourou, au nord-ouest de Niamey, à moins de 100 km de la frontière malienne, qui a été attaqué, faisant au moins 5 morts. Le lendemain, les villages de Wabila et Hondobon, près de Kokorou, ont subi le même sort : 12 personnes ont été tuées. La commune de Dessa a également fait l'objet d'une agression, et du bétail a été emporté. Le 9 août, à Bourkou Bourkou, proche de la zone aurifère de Samira, ce sont cinq gardes nationaux au moins qui ont été tués par « des bandits armés ».

নিয়ামির উত্তর-পশ্চিমে ও মালির সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও কম দূরে আনজোরুর নিকটবর্তী একটি গ্রামে ৩ আগস্ট আক্রমণে কমপক্ষে ৫ জন নিহত হয়। পরের দিন কোকোরুর কাছাকাছি ওয়াবিলা ও হন্ডোবোন গ্রামের একই ধরনের ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়। ডেসা কমিউনেও আক্রমণ করে গবাদি পশু লুটে নেওয়া হয়। সামিরা সোনার খনির নিকটস্থ বুর্কু বুর্কুতে ৯ আগস্ট “সশস্ত্র দস্যুরা” কমপক্ষে পাঁচজন জাতীয় রক্ষীকে হত্যা করে।

অভ্যুত্থানের দুই সপ্তাহ পর বা ১৯ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হতাহতসহ নয়টি হামলা হয়েছে।

২০১৫ সাল থেকে জিহাদি হামলার সম্মুখীন বুরকিনা ফাসোতে ২০১৮ সাল থেকে ফরাসি সৈন্য মোতায়েন করা হয়। একের পর এক অভ্যুত্থান দেশটির নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে ফেলেছে। ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরেকে ক্ষমতাসীন করা সর্বশেষ অভ্যুত্থান কার্যকরভাবে ২০২৩ সালের প্রথম দিকে দেশে ফরাসি সেনা মোতায়েনের অবসান ঘটায়

নতুন সরকার দেশের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের চেষ্টায় জিহাদিদের নিরপেক্ষ করতে বেশ কয়েকটি আক্রমণ পরিচালনা করে। ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল পরিচালিত একটি অভিযানে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসীকে ধরা হয়, এমনই জানিয়ে এক্সে (আগের টুইটারে) পোস্ট করেছে গণমাধ্যম কেন্দ্র আফ্রিকা২৪:

🇧🇫 #বুর্কিনাফাসোতে ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ রবিবার সশস্ত্র বাহিনী বলেছে তারা দেশের উত্তর ও মধ্য-উত্তরে দুটি সামরিক ইউনিট এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুটি আক্রমণ কমপক্ষে ৭০ জন “সন্ত্রাসী”কে নিষ্ক্রিয় করেছে।

যোদ্ধাদের সংখ্যা বাড়াতে ও সামরিক কর্মীদের সমর্থনের জন্যে নাগরিকদের স্বদেশ রক্ষার স্বেচ্ছাসেবক (ভিডিপি) হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে একটি আবেদন করা হলেও দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলার অভিজ্ঞতা অব্যাহত থাকায় সাড়ার পরিমাণ প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে।

ফরাসি সংবাদপত্র লেমঁদের মতে ১৮ জুলাই দেশের পশ্চিমে দুটি পৃথক স্থানে একটি হামলায় দশ বা ততোধিক আহত হয়। টোগোর সাথে মধ্য-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলের নোহাওতে ৬ আগস্ট আরেকটি হামলায় প্রায় বিশজন ব্যবসায়ী নিহত হয়। একটি আফ্রিকানিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, ৪ সেপ্টেম্বর আরো একটি হামলায় ৫৩ জন বুরকিনাবে নাগরিক (সৈন্য ও ভিডিপি সদস্য) নিহত হয়:

তাই দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

বিশেষভাবে মালি ঝুঁকিপূর্ণ

অন্যান্য স্থানের তুলনায় মালিতে পরিস্থিতি আরো জটিল। মালি ২০১৩ সালে অপারেশন সার্ভাল ও জাতিসংঘের বহুমাত্রিক সমন্বিত স্থিতিশীলতা মিশনের (মিনুসমা) অধীনে ফরাসি সেনা মোতায়েনের আগে আজওয়াদ অঞ্চলের স্বাধীনতার দাবিতে সহিংস আক্রমণের সম্মুখীন হয়।

দেশটির অভ্যুত্থান ফরাসি সৈন্যদের প্রস্থান ও ধীরে ধীরে মিনুসমার প্রত্যাহার করছে যা ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩-এ শেষ হবে। এদিকে ৭ সেপ্টেম্বর বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি আবার অস্ত্র তুলে নিলে ২০১৫ সালে মালি সরকার ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়। রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনালের মতে:

Jeudi, deux attaques ont visé le camp militaire de Bamba (région de Gao) et un bateau qui naviguait dans le cercle de Rharous (région de Tombouctou). Vendredi, à Gao, c'est un camp de l'armée malienne et l'aéroport qui ont été pris pour cibles. Les attaques de jeudi ont fait au moins 64 morts.

বৃহস্পতিবার বাম্বা সামরিক ঘাঁটি (গাও অঞ্চল) এবং গৌরমা-রারুস এলাকায় (তিম্বাকতু অঞ্চল) নাইজার নদীতে একটি নৌকাকে লক্ষ্য করে দুটি পৃথক হামলা ঘটে। শুক্রবার গাওতে মালির একটি সামরিক ঘাঁটি ও বিমানবন্দর লক্ষ্যবস্তু করা হয়। বৃহস্পতিবারের হামলায় অন্তত ৬৪ জন নিহত হয়।

আফ্রিকানিউজের এই ভিডিও প্রতিবেদনে ৮ সেপ্টেম্বরের হামলার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে:

সাহেল জনগণের কাছে এটা স্পষ্ট তাদের সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অক্ষম। এই অঞ্চলে ২০০৩ সালে বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং ২০ লক্ষেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অর্থনীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠানের (আইইপি) বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের উপর ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদনে পরিস্থিতি আরো খারাপের ইঙ্গিত করা হয়েছে:

সাব-সাহারা আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলটি এখন সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল সাহেল ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (মেনা) উভয়ের চেয়ে বেশি সন্ত্রাসবাদের মৃত্যুর জন্যে দায়ী। শুধু ২০২২ সালে সাহেলে এই মৃত্যু বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশ ছিল, যা ২০০৭ সালে ছিল মাত্র এক শতাংশ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .