বাংলাদেশ সরকার তড়িঘড়ি করে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ পাস করেছে

বাংলাদেশ সংসদ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে সাইবার অপরাধ ও মিথ্যা তথ্যের বিস্তার রোধে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ (সিএসএ) পাস করেছে। মাত্র মাসখানেক আগে ৭ আগস্ট, বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ (ডিএসএ) বাতিল করে প্রস্তাবিত সিএসএ দ্বারা প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

মানবাধিকার ও ডিজিটাল অধিকারের প্রচারণা গ্রুপগুলি জোর দিয়ে বলছে নতুন আইনটি মূলত তার পূর্বসূরি, ডিএসএ’র একটি পুনর্বিন্যস্ত সংস্করণ। নতুন আইনে সম্ভাব্যভাবে মানবাধিকার আইনজীবী, সাংবাদিক, বিরোধী ব্যক্তিত্ব ও ভিন্নমত বা সরকারের সমালোচনা প্রকাশকারী ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করে অসৎ উদ্দেশ্যে অপব্যবহারের ঝুঁকিপূর্ণ অনেক বিতর্কিত ধারা রয়েছে। তাড়াহুড়ো করে বাংলাদেশের ১১ তম সংসদের ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে সমাপ্ত ২৪ তম অধিবেশনে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ পাস করা হয়। এই অধিবেশনটি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগের সর্বশেষ হতে পারে

প্রবাসী বাংলাদেশী সাইমন কার্টুনশিল্পী অপুর একটি কার্টুন এক্সে (পূর্বে টুইটার) পোস্ট করেছেন:

#বাংলাদেশ #ডিএসএ থেকে #সিএসএ

নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে ৮ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে আইনে পরিণত হয়। সামাজিক গণমাধ্যম বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম মঞ্চের মাধ্যমে ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসবাদ, প্রচারণা এবং ঘৃণার বিস্তার রোধ করা এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল। এর আগে অন্যান্য কিছুসহ পুলিশকে অনলাইনে “ভুয়া,” “অশ্লীল,” বা “মানহানিকর” বিবেচিত বিষয়বস্তু পোস্ট করার জন্যে ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়া নিবর্তনমূলক ৫৭ ধারা সম্বলিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন (২০০৬) বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করে।

তবে ডিএসএ আরো নিবর্তনমূলক বলে এর অস্পষ্ট ভাষা এবং চিন্তা ও মতামতের বৈধ প্রকাশকে অপরাধী করার প্রবণতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, আইন বিশেষজ্ঞ ও ব্যক্তিদের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্ররোচনা যুগিয়েছে। এই আইনে অনলাইনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা হতে পারে এমন সন্দেহে কোন সমন ছাড়াই লোকেদের গ্রেপ্তার ও খানাতল্লাশির ক্ষমতার মতো কর্তৃপক্ষকে বিস্তৃত ক্ষমতা দেওয়া হয়। সরকারের হিসেবে, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা ৭,০০০টিরও বেশি মামলার প্রায় ৮৬ শতাংশ এখনো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি সমীক্ষা কেন্দ্রের একটি উদ্যোগ ডিএসএ ট্র্যাকার ৩১ মে, ২০১৩ পর্যন্ত ১,৩২১টি মামলা অনুসরণ করে দেখেছে আসামি হিসেবে নাম দেওয়া ৪,১২১ জনের মধ্যে ১,৪৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তা আইন (২০২৩): ডিএসএ’র একটি নাম পরিবর্তিত নতুন সংস্করণ

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মতে, ডিএসএ ২০১৮ বাতিল না করে এর কিছু ধারা সংশোধনের পর রূপান্তরিত ও আধুনিকীকরণ করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামকরণ করা হয়েছে। নতুন আইনে ডিএসএ’র ২১ ধারায় মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত “উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচারণা”র শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড থেকে সিএসএতে ৭ বছর করার মতো শাস্তি কিছুটা কমানো হয়েছে

তবে অস্পষ্ট বিধান এবং পুলিশ ও ডিএসএ প্রয়োগকারী সংস্থার বিস্তৃত ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত মূল সমস্যাগুলির একেবারে কিছুই করা হয়নি।
লিখেছেন জিল্লুর রহমান। #ডিএসএ #সিএসএ #মতামত #আইন #বাংলাদেশ

আইনমন্ত্রী বলেন, অংশীজনদের মতামত বিবেচনা করা হয়েছে। তবে সাধারণ জনগণকে ইমেলের মাধ্যমে তাদের পরামর্শ ও উদ্বেগ জমা দেওয়ার জন্যে ১০ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট, ২০২৩ পর্যন্ত একটি সংক্ষিপ্ত সময় দেওয়া হয়। একটি বিবৃতিতে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস জোর দিয়ে বলেছে আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সরকার অংশীজনদের পর্যালোচনা ও তাদের পরামর্শ দানের পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ দেয়নি। বিবৃতি অনুসারে, সিএসএ ডিএসএ’র এমন অনেক উপাদান ধরে রেখেছে যা এখনো মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্যে হুমকি। উপরন্তু তারা উল্লেখ করেছে সিএসএ-তে কিছু নির্দিষ্ট ধারায় অপরাধের জন্যে জামিন অস্বীকার করার বিধান রয়েছে এবং কিছু সংজ্ঞা খুবই বিস্তৃত ও সমালোচকদের ভয় দেখানো ও চুপ করানোর জন্যে অপব্যবহৃত হতে পারে।

তথ্য প্রযুক্তি পেশাজীবী ইয়ামিন হোসেন সোহান পোস্টে বলেছেন:

এই বিবৃতিটি একেবারে পরিষ্কার। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি এই নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে না।

গণমাধ্যম ও ডিজিটাল অধিকার রক্ষাকারীরা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে নতুন আইনটি বাংলাদেশের সংবিধানের বিভিন্ন বিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সাথে সাংঘর্ষিক। উপরন্তু, সিএসএ’র ৪২ ধারা, ডিএসএ’র ৪৩ ধারার মতো কর্তৃপক্ষকে কোনো অপরাধ বা এর প্রমাণ ধ্বংস হচ্ছে বা হতে পারে এমন সন্দেহে অভিযান ও তল্লাশি চালানো বা গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়। তবে, আইনমন্ত্রীর দাবি, নতুন সিএসএ-তে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারের সুযোগ নেই এবং  ৪২ ধারার আইনগত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

মানবাধিকার রক্ষক সাদ হামাদি সরকারের দাবির সমালোচনা করেছেন:

জরিমানা বাড়ানো আর মানহানির জন্যে কারাদণ্ডের মেয়াদ কমানোকে ডিএসএ সংশোধন করা বোঝায় না।

জনগণ এক মাস আগে অনলাইনে পোস্ট করা খসড়াটিতে অংশীজনদের সংযুক্তি এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পরামর্শের ভিত্তিতে কী পরিবর্তন করা হয়েছে তা বোঝার জন্যে অধীর আগ্রহে আইনটির সরকারি সংস্করণের প্রত্যাশা করছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .