চিলির একনায়কত্বের সময়ে রক্ষা করা একটি প্রতীকী তথ্যচিত্রের পুনরুদ্ধার

“চিলির যুদ্ধ: নিরস্ত্র মানুষের সংগ্রাম” তথ্যচিত্রের পর্দাছবি। ইউটিউব/ এল পোর্টেনো

চিলি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে অগাস্টো পিনোশের অধীনে ১৭ বছর স্থায়ী একটি মানবাধিকার লঙ্ঘন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও নব্য উদারনৈতিক অর্থনৈতিক মডেল চিহ্নিত সামরিক একনায়কত্বের জন্ম দেওয়া অভ্যুত্থানের ৫০ বছর উদযাপন করেছে।

একই বছর একদল লোক লাতিন আমেরিকার অডিওভিজ্যুয়াল স্মৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও উদ্ধার করে। তারা চলচ্চিত্রটির নেগেটিভসহ  উপাদানগুলিকে শ্রেণীবদ্ধ ও উদ্ধার করে সামরিক বাহিনীকে সেগুলি নেওয়া থেকে বিরত রাখে। বিশাল রাজনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও তারা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ধারণ করতে পারা ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর রেকর্ডগুলো নৌকায় করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন।

বিশ ও ত্রিশের দশকের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতারা অডিও ও ভিডিও তৈরিতে চিলির ইতিহাস রেকর্ডের সিদ্ধান্ত নেয়। দলটিতে প্যাত্রিসিও গুজমান (পরিচালক), জর্জ মুলার (চিত্রগ্রাহক ও আলোকচিত্র পরিচালক), বার্নার্ডো মেঞ্জ (শব্দ প্রকৌশলী), ফেদেরিকো এলটন (উৎপাদন ব্যবস্থাপক), হোসে জুয়ান বার্তোলোমে (প্রথম সহকারী প্রযোজক) ও গুইলেরমো কান (দ্বিতীয় সহকারী পরিচালক) ছিলেন।

আর্মিন্দো কার্দোসোর ফাইল ছবি (১৯৭৩), চিলির জাতীয় ডিজিটাল পাঠাগারে অনলাইনে প্রবেশ করা হয়েছে। বাম থেকে ডানে, জর্জ মুলার – আলোকচিত্র পরিচালক, নিখোঁজ বন্দী; প্যাত্রিসিও গুজমান (মেঝেতে উপবিষ্ট) – পরিচালক; ফেদেরিকো এলটন – উৎপাদন ব্যবস্থাপক; হোসে বার্তোলোমে – সহকারী পরিচালক এবং বার্নার্ডো মেনজ – শব্দ প্রকৌশলী।

সান্তিয়াগো এবং কিছু দক্ষিণ ও উত্তর প্রদেশে পুরো এক বছর চিত্রগ্রহণ চলে। ছবির পরিচালকের ভাষায়:

Esta película fue para nosotros mucho más que una película: maduramos, crecimos, lloramos y gritamos, nos desarrollamos juntos con ella. Comprendimos cómo era la vida colectiva, los actos de miles de chilenos: el valor de los que no tenían casi nada y que levantaban los brazos. Pudimos filmar —y sobre todo entender— el momento en que la vida cotidiana se convierte en vida política, o viceversa.

এই চলচ্চিত্রটি আমাদের কাছে একটি চলচ্চিত্রের চেয়ে অনেক বেশি ছিল: আমরা পরিণত হয়েছি, আমরা বড় হয়েছি, আমরা কেঁদেছি আর চিৎকার করেছি, আমরা এটির সাথে একসাথে বিকশিত হয়েছি। আমরা হাজার হাজার চিলিবাসীর কর্মকাণ্ডের সাথে সমষ্টিগত জীবন কেমন বুঝতে পেরেছিলাম: যাদের প্রায় কিছুই ছিল না তারা সাহসে ভর করে অস্ত্র হাতে তুলেছিল। আমারা চিত্রগ্রহণ করতে এবং সর্বোপরি বুঝতে পেরেছিলাম কখন দৈনন্দিন জীবন রাজনৈতিক জীবন হয়ে ওঠে, বা তার বিপরীত।

চিলির রাষ্ট্রপতি হিসেবে সালভাদর আয়েন্দের ১৯৭০ সালে জনপ্রিয় বিজয়ের দুই বছরেরও বেশি সময় পরে ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে চিত্রগ্রহণ শুরু হয়। সেই মুহূর্তটি একটি শান্তিপূর্ণ এবং সাংবিধানিক সংস্কারের সম্ভাবনার ইঙ্গিত এবং একটি প্রগতিশীল সামাজিক কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। চিলিতে সামাজিক উদ্দীপনা ছিল।

চিলির উপর যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত বাণিজ্যিক বিধিনিষেধের কারণে পজিটিভ টেপগুলি পেতে কয়েক মাস লেগে যায়। বিদেশ থেকে এগুলি তাদের কাছে পাঠানোর জন্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস মার্কারকে ধন্যবাদ। দলটির কাছে প্রায় ১৮ ঘন্টার গৃহীত চিত্র ছিল।

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩-এ সালভাদর আয়েন্দে সরকারের আকস্মিক ইতির মাধ্যমে শেষ হয় জনপ্রিয় ঐক্য সরকারের এবং “চিলির যুদ্ধ” এর চিত্রায়নের অবসান ঘটে। বেশি ঝুঁকির কারণে  তরুণরা সিদ্ধান্ত নেয় সবচেয়ে ভাল কাজ হবে চিত্রগ্রহণ বন্ধ করে ইতোমধ্যে পাওয়া উপাদানগুলিকে রক্ষা করা। এছাড়াও সীমিত নেগেটিভগুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা আর চিত্রগ্রহণ চালিয়ে যেতে পারতো না।

আয়েন্দেকে সরানোর আগে ও পরে সেখানে অভিযান চলে। পরিচালক প্যাত্রিসিও গুজমানের বাড়িতে একটি অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার ও বন্দী করা হয়। সামরিক বাহিনী রাইফেল ও মেশিনগান নিয়ে বাড়িতে ঢুকলে তার তৎকালীন স্ত্রী পালোমা উরজুয়া থিওদুলোজ তাদের নিরুৎসাহিত ও বিভ্রান্ত করে। তাদের মেয়ে আন্দ্রেয়া ও ক্যামিলা তার সাথে ছিলেন। তথ্যচিত্রের স্মৃতিচারণে তিনি গল্পটি বর্ণনা করেন:

Fui a mi dormitorio a buscar las llaves. Regresé y abrí el baúl grande, donde había muchos rollos de negativos de los cortos publicitarios que había hecho Patricio en España. Había muchos ejemplares de las revistas Punto Final y Chile Hoy, más algunos ejemplares del diario El Mercurio.

চাবি নিতে আমার বেডরুমে গেলাম। ফিরে এসে আমি প্যাত্রিসিওর স্পেনে তৈরি ছোট ছোট বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রের অনেক নেগেটিভ রোলপূর্ণ বড় ট্রাঙ্ক খুলি। [এছাড়াও] সেখানে পুন্টো ফাইনাল ও চিলি হোয় পত্রিকার অনেকগুলি এবং এল মারকিউরিও পত্রিকার কিছু কপি ছিল।

তিনি সৈন্যদের তারা তথ্যচিত্রের সামগ্রী নিয়ে গেছে বিশ্বাস করাতে পারায় তার বাড়িতে “চিলির যুদ্ধ” এর শেষ ১০টি ক্যান রক্ষা পায়। এটি তাদের প্যাত্রিসিও গুজমানের চাচা ইগনাসিও ভ্যালেনজুয়েলার বাড়িতে থাকা বাকি সামগ্রী সুইডেনের দূতাবাসে স্থানান্তরের সময় করে দেয়।

ফুটেজটি সুইডিশ দূতাবাসে পৌঁছাতে পারার জন্যে দূতাবাসের কর্মচারী লিলিয়ান ইন্ডসেথ, পালোমা উরজুয়া থিওদুলোজ, গ্যাস্টন আনসেলোভিচি, সংরক্ষণাগারটির রক্ষক প্যাত্রিসিওর চাচা ইগনাসিও এবং ফেদেরিকো ডি এলটন আগুয়েরের প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ। তাদের দূতাবাস ও পরিবহন সুবিধার প্রস্তাব দেওয়ার কয়েকদিন পরে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত হ্যারাল্ড এডেলস্তানকে “অবাঞ্ছিত ব্যক্তি” ঘোষণা করা হয়। এখনো যে নাম উল্লেখ করা হয়নি সেই জেইম ঘরের প্রহরীর নিয়ন্ত্রণ থেকে রক্ষার জন্যে প্যাত্রিসিওর বাড়ি থেকে লেটুস ও টমেটোসহ একটি ব্যাগে শেষ ফিল্ম টেপগুলি নিয়ে যান।

অনেক টানা-হেঁচড়ার পরে ভিডিও ও অডিও টেপগুলি ভালপারাইসো বন্দরে পৌঁছে। পরিচালকের চাচা ইগনাসিও বলেছেন:

Ya en Valparaiso los militares no querían permitir que se subiera el material, porque era mucho material. Felizmente bajó el capitán del barco y se impuso, y dio la orden de subir el material porque era un material diplomático y aceptaron.

একবার ভালপারাইসোতে সামরিক বাহিনী প্রচুর পরিমাণে হওয়ায় উপাদানগুলি জাহাজে তুলতে দিতে চায়নি। ভাগ্যবশত জাহাজের ক্যাপ্টেন নেমে এসে কূটনৈতিক পণ্য বিবেচনায় সামগ্রীটি তোলার আদেশ দিলে তারা মেনে নেয়।

আনুমানিক ৮৬টি বাক্স ভর্তি চলচ্চিত্র সামগ্রী চিলির সান্তিয়াগোতে সুইডেনের দূতাবাসে আশ্রয়ে থাকাকালে চিলির চলচ্চিত্র নির্মাতা নিভস জেন্তেনো সাবধানে গুছিয়ে শ্রেণিবদ্ধ করেন।

তেল সংকটের কারণে রিও ডি জেনিরো নামে সুইডেনের জাহাজটি কম জ্বালানি খরচের কৌশল হিসেবে প্রায় তিন মাস অর্ধ-গতিতে চলচ্চিত্র সামগ্রী নিয়ে যাত্রা করে। এই ধরনের যাত্রায় সাধারণত ২০ দিন সময় লাগার কথা। পরে কিউবায় ছবিটি সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন পেদ্রো চাসকেল।

চলচ্চিত্র সংরক্ষণাগারগুলিকে সুরক্ষিত রাখাতে সম্মিলিতভাবে কাজ করা দলটিকে ধন্যবাদ যারা এই তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চিলির ইতিহাসের একটি অংশ ভবিষ্যতে বলতে সক্ষম করেছে। এমনকি জীবন বিপন্ন করে যারা এই কাজগুলি করেছে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের গল্প শেষ হয়েছে নির্বাসনের মাধ্যমে।

তাদের একজন আর কখনো ফিরে আসেননি। চিত্রগ্রহণ ও আলোকচিত্রের দায়িত্বে থাকা ২৭ বছর বয়সী জর্জ মুলার সিলভা ২৯ নভেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে জাতীয় গোয়ান্দা অধিদপ্তরের (ডিআইএনএ) চরদের হাতে গ্রপ্তারের পর নিখোঁজ হন। এই কারণে পুরো তথ্যচিত্র ত্রয়ী তার স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়।

চিলির তথ্যচিত্র “চিলির যুদ্ধ, নিরস্ত্র মানুষের সংগ্রাম” ১৯৭২ থেকে সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ এর মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর বিবরণ দেয়। তিনটি চলচ্চিত্রের একটি ত্রয়ী হলো: “বুর্জোয়া উত্থান,” “অভ্যুত্থান” এবং “জনগণের শক্তি।” এই মাসে এই ঘটনাবলীর ৫০ বছর পরে এর পুনরুদ্ধারকৃত সংস্করণটির প্রথম প্রদর্শনীটি প্রত্যাশিত৷

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .