
আলবার্তো ফুজিমোরির সরকারের রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে পেরুতে ৯০-এর দশকে ২,০০,০০০-এরও বেশি নারীকে বন্ধ্যা করা হয়। লিজ তাসা ও তাদেও বুরবনের ছবি। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।
সালুদ কন লুপাতে (আতস কাঁচে স্বাস্থ্য) প্রকাশিত ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ এই নিবন্ধটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ একটি গণমাধ্যম অংশীদারিত্বের অধীনে গ্লোবাল ভয়েসসে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে৷
পেরুর সাংবিধানিক আদালত ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে ২৫ বছরের সাজা ভোগ করতে থাকা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফুজিমোরিকে মুক্তি দিলে, সর্বোচ্চ আদালত একনায়ক ফুজিমোরির সময় সংঘটিত কয়েক লক্ষ জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণের জন্যে বিচারিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মামলাগুলিকে একটি নতুন ফৌজদারি অভিযোগ প্রণয়নের জন্যে অধি-প্রাদেশিক অভিশংসকের কার্যালয়ে অক্টোবর ২০১৮ এর অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিয়েছে, যাতে বিচারক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন প্রক্রিয়াটি আবার শুরু করা বা সংরক্ষণাগারে পাঠানো যাবে কিনা।
এই মামলায় বিচারিক তদন্ত এড়াতে ফুজিমোরি সরকারের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলেহান্দ্রো আগিনাগার দায়ের করা মামলার ফলে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত আসে। আগিনাগা তার যুক্তিতে দুই দশকের মধ্যে প্রমাণের অভাবে আটবার মামলা দায়ের করায় এটি তদন্তের কোনো কারণ নেই বলে তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের কথা বলেছেন।

মারিনো কোস্তা বাহুয়ের, এদুয়ার্দো ইয়ং মোতা, আলবার্তো ফুজিমোরি এবং আলেহান্দ্রো আগিনাগা। সালুদ কন লুপার ছবি। ন্যায্য ব্যবহার।
আলবার্তো ফুজিমোরির স্বৈরশাসনের সময়, জাতীয় প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে উচ্চ স্তরের দারিদ্র্য ও সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অঞ্চলে ২,৭২,০০০-এরও বেশি নারী ও ২২,০০০ পুরুষকে নির্বীজ করা হয়। সম্মতিহীন এসব অপারেশনের সঠিক সংখ্যা অজানা হলেও বিচার ও মানবাধিকার মন্ত্রণালয়ের জোরপূর্বক নির্বীজকরণের শিকারদের সরকারি নিবন্ধনে ৮,০০০ জনেরও বেশি লোক নিবন্ধিত রয়েছে৷ পরিবার ও সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বৈষম্যের শিকার ভুক্তভোগীরা আজ অবধি শারীরিক ও মানসিক পরিণতি ভোগ করেছে।
বিচারক রাফায়েল মার্টিনেজ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে,প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফুজিমোরি ও তার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের, যেমন প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলেহান্দ্রো আগিনাগা, মারিনো কোস্তা বাহুয়ের, এদুয়ার্দো ইয়ং মোতা ও উপদেষ্টা উলিসেস হর্হে আগিলারের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দেন। এই মামলার জন্যে অভিশংসক কার্যালয় দুই মাসের শুনানির সময় ১৬ বছরের তদন্তে সংগৃহীত প্রমাণ উপস্থাপন করেছে।
তাদেরকে অপারেশনের পরে চিকিৎসা কর্মীদের পর্যবেক্ষণ ছাড়া ভয়ানক স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগে পাঁচ নারী: মামেরিতা মেস্তাঞ্জা, আলেহান্দ্রা আগিয়েরে, রেনালদা বেতালেলোজ, মারপিয়া এস্পিনোলা ও সেলিয়া রামোসের মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে আরো ১,৩১৫ জন ভুক্তভোগীর প্রতি সংঘটিত আঘাতের জন্যে তাদের দায়ী করতে চেয়েছে।
এই বেশিরভাগ নির্বীজ কীভাবে করা হয়েছিল তা সেলিয়া রামোসের ঘটনাটি খুব ভালভাবে উপস্থাপন করে: ১৯৯৭ সালে ৩৪ বছর বয়সে তিনি দাঁতের চিকিৎসার জন্যে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গেলে ডাক্তাররা তাকে টিউবাল লাইগেশনের প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করে। স্বাস্থ্যকর্মীদের পীড়াপীড়ি ও চাপে, এমনকি তার সম্মতি ছাড়াই তারা তাকে বাড়িতে দেখতে গেলে রামোস অস্ত্রোপচারে সম্মত হন, এবং ১৯ দিন পরে তিনি সেপসিসে মারা যান।

ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্বীজকৃত নারীরা তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিণতির পাশাপাশি কলঙ্ক ও বৈষম্যের শিকার সম্পর্কে লিখে জানাবে। ছবি: লিজ তাসা। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।
অভিশংসকের কার্যালয় ২০২১ সালে ফৌজদারি অভিযোগ উপস্থাপনের তিন বছর পর এই বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। সরকারি মন্ত্রণালয়ের উপনীত সিদ্ধান্তের একটি হলো দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্যে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ একটি রাষ্ট্রীয় নীতি ছিল। একটি আঞ্চলিক জনসংখ্যাগত মূল্যায়নের মাধ্যমে ১৯৯১ সালে রাষ্ট্র “জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মধ্যে একটি বিপরীত সম্পর্ক” থাকার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। মূলত জঙ্গল ও পাহাড়ের গ্রামাঞ্চলের নারীদের মধ্যে প্রক্রিয়াগুলি চালানো হয়।
অভিশংসকের কার্যালয়ও সাক্ষ্যপ্রমাণ, সাংবাদিকতামূলক প্রকাশনা ও ন্যায়পাল কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রজাতন্ত্রের কংগ্রেসের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনসহ নথিভুক্ত করেছে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বল্প-আয়ের নারীদের প্রতারণা করে, হুমকি বা খাদ্য প্রদানের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জরায়ু নালী বেঁধে রাখতে বাধ্য করেছে।
অভিশংসকের কার্যালয়ের মতে, কর্তৃত্বের অবস্থান থেকে চিকিৎসকেরা মেস্তাঞ্জার মৃত্যু সংঘটিত কাজামারকার উপ-অঞ্চল ৪-এ এই চর্চাটি করতে সাহায্য করে। তবে ঘটনাগুলি প্রকাশ্যে আসার পরেও তারা কোনো সমস্যা ছাড়াই স্বাস্থ্য খাতে কাজ চালিয়ে যায়।

সন্তান: কেনজি ও কেইকো বারবাদিলোসহ ১৪ বছর কারাবন্দী থাকা আলবার্তো ফুজিমোরি ও তার কারাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। ছবি: আন্দিনা/ ভিদাল তারকি। ন্যায্য ব্যবহার।
সর্বোচ্চ বিচারিক আদাল্তের সিদ্ধান্তটি ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩-এ জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণের শিকারদের আইনি প্রতিনিধিদের অবহিত করা হয়।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফুজিমোরিকে ক্ষমা করে দেওয়া সাংবিধানিক আদালতের ২০১৭ সালের একটি রায়ের কারণে একই দিনে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়৷ আন্তঃআমেরিকা মানবাধিকার আদালত পেরুভীয় রাষ্ট্রকে লা কান্তুতা ও বারিওস আলতোসের শিকারদের ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালে ২৫ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্তর প্রতি এই পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলা সত্ত্বেও তার মুক্তি ঘটেছে৷