কম্বোডিয়া: সমস্যাযুক্ত আইন ও তথ্যের উপর বিধিনিষেধে হুমকির মুখে ডিজিটাল অধিকার

Cambodia digital rights

এনগেজমিডিয়া থেকে নেওয়া ছবি।

এই নিবন্ধটি কম্বোডিয়ার মুখোমুখি হওয়া ডিজিটাল অধিকার সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কর্মরত সমর্থকদের মতামত নিয়ে লেখা হয়েছে৷ মূলত অলাভজনক গণমাধ্যম, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি সংস্থা এনগেজমিডিয়া প্রকাশিত নিবন্ধটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে একটি বিষয়বস্তু ভাগভাগির চুক্তির অংশ হিসেবে এখানে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে৷

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কম্বোডিয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহার ও ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নতিতে সংবাদ ও তথ্যে প্রবেশ ও স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার প্রয়োগে আরো বেশি মানুষ সামাজিক গণমাধ্যম ও অন্যান্য অনলাইন মঞ্চের উপর নির্ভর করছে। তবে ক্রমবর্ধমানভাবে অনলাইন স্থানে ডিজিটাল অধিকার কর্মী, মানবাধিকার রক্ষক, সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন, ডিজিটাল আক্রমণ ও সরকার প্রবর্তিত দমনমূলক আইনের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে।

কম্বোডিয়া ২০২২ সালের নেটের_স্বাধীনতার প্রতিবেদনে ১০০টি দেশের মধ্যে ৪৩তম এবং সীমান্তবিহীন প্রতিবেদকের ২০২২ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪০তম অবস্থানে। স্বাধীনতা_সদন উল্লেখ করেছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রায়শই তাদের অনলাইন কার্যকলাপের জন্যে গ্রেপ্তার হয়, ভয়ের পরিবেশ ও আত্ম-সেন্সরের সুবিধা দেয়। প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ও কম্বোডীয় পিপলস পার্টির আধিপত্যে থাকা সরকার সমালোচনামূলক অভিব্যক্তির প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, প্রায়শই বিরোধী ও গণমাধ্যমের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিপীড়ন ও হয়রানির সাথে জড়িত।

সমস্যাযুক্ত আইন

কম্বোডিয়ায় সমস্যাযুক্ত আইন প্রণয়ন স্বাধীন মতপ্রকাশকে দমিয়ে দিচ্ছে এবং সক্রিয় কর্মী, স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন ২০২১ সালের ১৯ মার্চ তারিখে কম্বোডীয় সরকার জাতীয় ইন্টারনেট ফটক (এনআইজি) প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একটি সাব-ডিক্রি গ্রহণ করে যা তাদের এখতিয়ারের মধ্যে ইন্টারনেট ট্রাফিককে কেন্দ্রীভূত করবে। উপ-ডিক্রির অনুচ্ছেদ ৬ অনলাইন সংযোগ বা বিষয়বস্তুকে “নিরাপত্তা, জাতীয় রাজস্ব, সামাজিক শৃঙ্খলা, মর্যাদা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও রীতিনীতিকে প্রভাবিত করছে” মনে হলে এগুলিতে কী উপাদান আছে তার আরো বিশদ বিবরণ ছাড়াই অবরোধ করার অনুমতি দেয়৷ এই বিধান ও এর সীমাবদ্ধতার অভাব কর্তৃপক্ষকে বিষয়বস্তু অবরোধ বা সীমাবদ্ধ করা এবং নজরদারি চালানোর ক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ দেয়।

এখনো বাস্তবায়িত না হলেও সাব-ডিক্রিটি কম্বোডিয়ার সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে নিশ্চয়তাযুক্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনে বিধৃত মানবাধিকারকে স্বীকৃতি ও মর্যাদা দেওয়া ৩১ অনুচ্ছেদকে সীমাবদ্ধ করবে। মানবাধিকার সুরক্ষক ও ডিজিটাল অধিকার সমর্থকরা সাব-ডিক্রিটির সমালোচনা করে সরকারকে এনআইজি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। একটি বিবৃতিতে ৩২টি সংস্থা বলেছে:

সঠিক প্রযুক্তিগত অবকাঠামো ও এটি কীভাবে পরিচালিত হবে তা এখনো অজানা হলেও সন্দেহ নেই এনআইজি’র আসল উদ্দেশ্য কম্বোডীয় সরকারকে দেশে অবশিষ্ট ইন্টারনেট স্বাধীনতার বিষয়ে ফাঁদ শক্ত করতে সক্ষম করা।

এই ধরনের বিধানগুলি অনলাইন সক্রিয় কর্মী ও গণমাধ্যমকে তাদের গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের প্রতি হুমকি, বিচার, বা সম্ভাব্য প্রত্যাহার — বা এমনকি বন্ধ — এড়াতে সমালোচনামূলক বিষয়বস্তু তৈরিতে আরো সতর্ক হতে বাধ্য করে আত্মসেন্সরের সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করবে৷

কম্বোডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নকে শক্তিশালী ও প্রসারিত করতে সরকারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত আইন গ্রহণ করলেও আইনটিতে কর্তৃপক্ষকে দেওয়া নজরদারির অতিরিক্ত ক্ষমতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধীকরণের মতো সমস্যাযুক্ত বিধান রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ অনুচ্ছেদ ৯৭ একটি “বৈধ কর্তৃপক্ষের” অনুমোদন নিয়ে যেকোনো টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে কথোপকথনের গোপন শোনা ও রেকর্ড করার সুযোগ দিলেও “বৈধ কর্তৃপক্ষ” কীভাবে গঠিত তা নির্দিষ্ট না করে ইচ্ছামত ব্যাখ্যার দরজা খোলা রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে আইন ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে আইনটির প্রাসঙ্গিক প্রকাশ (আনুষ্ঠানিক ঘোষণা) বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ বা অবরোধ করতে ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন ২০১৮ সালে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের ১৫টি স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বা নিউজ ওয়েবসাই্টের পরিষেবা অবরোধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

লক্ষ্য করা দরকার এই আইনগুলি কম্বোডীয়দের ডিজিটাল অধিকারকে হুমকির পাশাপাশি মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং আসিয়ান সনদের মতো কম্বোডিয়া সরকার অনুস্বাক্ষরিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি নির্ধারিত তাদের যে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও দায়িত্ব তার বিরুদ্ধেও যায়।

তথ্যে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধকরণ

বেশিরভাগ জনগণ তথ্যের জন্যে ফেসবুকের উপর নির্ভরশীল হলেও সামাজিক গণমাধ্যমের মঞ্চটি সম্প্রতি হুন সেন ও সরকারের রোষানলে রয়েছে। জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী নেতাদের হুমকি দিয়ে ভাষণ দিলে সেটা তার ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। সমালোচকরা সহিংসতায় উস্কানি বিষয়ে মেটার নিয়ম উল্লেখ করে ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানালে মামলাটি মেটার সালিশ বোর্ডে পাঠানো হয়। সম্প্রতি তারা ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়া উচিত বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফেসবুকের মঞ্চ থেকে বরখাস্তের সুপারিশ করে। জবাবে সরকার ফেসবুক অবরোধের হুমকি দিয়ে সালিশ বোর্ডের সদস্যদের দেশে প্রবেশে বাধা দেয়

সরকারের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ ওয়েবসাইটগুলি অবরোধ করে বা সমালোচনামূলক গণমাধ্যম বন্ধ করার আদেশ দিয়ে তথ্যে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার পূর্ববর্তী পদক্ষেপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফেব্রুয়ারিতে সরকার দেশের সর্বশেষ অবশিষ্ট স্বাধীন সংবাদ সংস্থাগুলির একটি ভয়েস অফ ডেমোক্রেসি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এটি ২০১৭ সালে কম্বোডিয়া প্রতিদিন ও ৩০টিরও বেশি স্বাধীন রেডিও কেন্দ্রসহ কয়েক বছর ধরে বন্ধের একটি ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে। সরকারি কর্তৃপক্ষের লক্ষ্যবস্তু হওয়া এড়াতে সাংবাদিকরা আরো সতর্ক হতে পারে বা জনস্বার্থের বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন সেন্সর করতে পারে।

এগিয়ে চলা

নাগরিক সমাজের গোষ্ঠীগুলি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কম্বোডিয়ায় ডিজিটাল অধিকার ও ইন্টারনেট স্বাধীনতা মোকাবেলা করার জন্যে ডিজিটাল অধিকার কর্মগোষ্ঠী (ডিআরডাব্লিউজি) আহবান করে। কর্মগোষ্ঠীটি অনলাইন মঞ্চে তথ্যের প্রবাহের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ, আক্রমণাত্মক সাইবার-পুলিশী তৎপরতা, ওয়েবসাইট ও সংশ্লিষ্ট সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলি অবরোধ এবং অনলাইন নজরদারি বৃদ্ধির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করে।

কম্বোডিয়ায় ডিজিটাল অধিকার লঙ্ঘন মোকাবেলার জন্যে বহু-অংশীজন সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক ও আন্ত র্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে এবং ডিজিটাল অধিকারগুলিকে আরো সুরক্ষা ও প্রচারের উপায় খুঁজতে বিভিন্ন অংশীজনের সাথে যুক্ত হয় বলে ডিআরডাব্লিউজি’র ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রণীত নীতিমালা যাতে ডিজিটাল অধিকার সীমাবদ্ধ ও লঙ্ঘন না করে তা নিশ্চিতের জন্যে ডিজিটাল অধিকার বিষয়ে সরকারের সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের খোলামেলা আলোচনা করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .