সাংস্কৃতিক দখল ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য মুছে ফেলা

ডিএএলএল-ই নির্মিত ছবি

গ্লোবাল ভয়েসেস একটি গণমাধ্যম চুক্তির অধীনে মুই ওয়াসোর (বলিভিয়া) জন্যে ইরিনে মাইরেমি পিটা ভাকা ও ইসাবেল কোলইয়াজোস গোত্রেতের লেখা এই গল্পটি পুনঃপ্রকাশ করেছে।

সাংস্কৃতিক দখল আমরা কে সেই উদ্ঘাটন করা কঠিন মিশ্র সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মূল স্পর্শ করা অন্তহীন ভুল ব্যাখ্যাপ্রবণ একটি সংবেদনশীল বিষয়। বলিভিয়ায় “সাংস্কৃতিক” প্রশ্ন এর শক্তিশালী ঘনিষ্ট ও পরিচয়গত উপাদানের কারণে এবং সর্বোপরি, আমরা আমাদের চারপাশের সংস্কৃতির ইতিহাস জানি না বলে প্রতিরোধকে উস্কে দেয়।

আমাদের ভূখণ্ডের সাংস্কৃতিক বৈষম্যের মানচিত্রে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস প্রতিফলিত হয়। সাংস্কৃতিক দখল সম্পর্কে চিন্তা করলে সংস্কৃতির –  আমাদের পরিচয় গঠন করা বোধগম্য জগত ও অবোধ্য বিষয়ের – মধ্যে শক্তির ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। তাই এটি মুখোমুখি হওয়া কঠিন: আমাদের বর্ণবাদ, আমাদের শ্রেণীবাদ, আমাদের কুসংস্কারের মতো দিকগুলি, বিশেষ করে আমাদের মতো একাধিক জাতিবিশিষ্ট একটি দেশে এর অসীম স্তরের বিনিময় ও ঐতিহাসিক সংগ্রামকে প্রকাশ করে।

বিশ্বব্যাপী আমরা সকল সংস্কৃতি একইরকম স্বীকৃতি উপভোগ করে না এমন ঘটনাি খুঁজে পাই। একটি “গ্রিংগো” ব্লকবাস্টার সারা বিশ্বে বিখ্যাত হলেও স্বতন্ত্র আয়োরিও গানগুলি বিবর্ণ হয়ে যাবে। যেকোন বলিভীয় অ্যাভেঞ্জারদের সম্পর্কে জানলেও তারা জানবে না আদিবাসী আয়োরিও জনগণ প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব প্রাণী, বস্তু, প্রাকৃতিক ঘটনা ও নিদর্শন নিয়ে সাতটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত।

আর বিশ্বের শৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে কেউ এই বৈষম্য- সংখ্যালঘুদের উপর আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির শক্তি – নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির সদস্যরা যখন সংখ্যালঘু সংস্কৃতির উপাদানগুলি অনুলিপি ও দখল করে তখন কী হবে?

আমাদের বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আইন নিয়ন্ত্রিত একটি বিশ্বায়িত অর্থনৈতিক মডেল সবকিছুকে বাণিজ্যিকীকরণ করে সংস্কৃতিগুলিও বিক্রি করলেও তা একই মূল্যে করে না — কারণ কিছু সংস্কৃতির বাজারে প্রবেশাধিকার থাকলেও অন্যদের নেই। এটি অনুপযুক্ত সাংস্কৃতিক সুবিধার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যেখানে একটি আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির সদস্যরা তাদের নিজস্ব সুবিধার জন্যে অন্যান্য সংস্কৃতির উপাদানগুলি কাজে লাগিয়ে তাদের অর্থহীন করে দেয়।

ইচ্ছাকৃতভাবেই হোক বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক, অনুলিপি করা সাংস্কৃতিক উপাদান ও চর্চার “শ্বেত” ও “আধিপত্যবাদী” প্রচারমূলক প্রচারণার আড়ালে সংস্কৃতির এই সদস্যরা অদৃশ্য হয়ে যায়।

সাংস্কৃতিক দখলের এই ঘটনাকে প্রতিহত করতে সক্রিয় কর্মী ও নেতাদের নিন্দা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রচারের জন্যে সংস্কৃতির রক্ষকদের দৃশ্যমান করতে হবে। এই পুনরুদ্ধারের একটি উদাহরণ হলো কারিগরদের ন্যায্যমূল্য ও পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হস্তশিল্পে ন্যায্য বাণিজ্যের বিকাশ।

যাদুঘরগুলির ক্রমবর্ধমানভাবে বস্তুগুলিকে তাদের উৎসের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া স্মৃতি, সংযোগ ও ন্যায়বিচারের বাহক হিসেবে বস্তুগুলির বিপুল সম্ভাবনা প্রদর্শন করে৷ আকাশছোঁয়া দামে নতুন সংগ্রহ প্রবর্তনের জন্যে আদিবাসী গোষ্ঠী থেকে নকশা ও কৌশল গ্রহণ করা ফ্যাশন ডিজাইনারদের নিন্দার প্রচারণাও রয়েছে।

একটি সমস্যাযুক্ত আলোচনা

তবে এই অভিযোগগুলি তাদের সত্যতা, উৎস বা মালিকানার ভিত্তিতে সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে চাওয়া আদর্শের জন্ম দেয়। তারা যখন সংস্কৃতিকে শ্রেণীবদ্ধ করার চেষ্টা করে তখন এই ধারণাগুলিকে সমস্যাযুক্ত বলে মনে হয়। এই আখ্যানের কিছু সম্ভাব্য পরিণতি হলো সামাজিক-সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাদ দিতে চাওয়া মানুষের গোষ্ঠীগুলির মধ্যেকার নতুন ভিন্নতা ও শ্রেণীবিভাগ।

এই অবস্থান মানুষের মধ্যে ভিন্নতাকে শক্তিশালী করা প্রতিক্রিয়াশীল ও রক্ষণশীল প্রস্তাবগুলিকে শক্তিশালী করে বলে মনে হয়। যেন সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি রক্ষার চেষ্টার মাধ্যমে আমরা একটি অনড়, শক্ত ও অনমনীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্বে পৌঁছে গেছি।

আমরা সেই রকম সংস্কৃতিকে বুঝি না। বিপরীতে, আমরা মনে করি একটি সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি তার সত্তা হারিয়ে তার নিয়ম-রীতিতে সীমাবদ্ধ হয়ে গেলে একটি বাহ্যিক প্রভাবও তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। তবে স্থির ও বদ্ধ সংস্কৃতির ধারণাভিত্তিক সাংস্কৃতিক পুনর্নিশ্চিতকরণের আলোচনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা খুবই কঠিন। আমরা ঐতিহাসিকভাবে বৈষম্যের শিকার ও এখনো সাংস্কৃতিকভাবে প্রান্তিক ব্যক্তি ও জনগণ এই দাবির কথা জানি। আত্মনিয়ন্ত্রণ থেকে আসা পুনর্মূল্যায়ন শক্তিশালী এই প্রতিরোধ সংগ্রাম বর্তমান প্রয়োজনীয়তার প্রতি সাড়া দেয়।

তবে সাংস্কৃতিক পুঁজিবাদের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এবং শিল্প বা স্বতন্ত্র কোম্পানি হিসেবে সৃজনশীলতার প্রসারণে সংস্কৃতির এই জাতীয় প্রতিরক্ষামূলক ও বর্জনীয় দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে এই সংস্কৃতির উত্তরাধিকারীদের বিকশিত ও সমৃদ্ধ করতে পারে তা আমাদের পক্ষে কল্পনা করা কঠিন।

সংস্কৃতিগুলি রূপান্তর সম্পর্কিত

সংস্কৃতি ক্রমাগত পরিবর্তিত হওয়ার ফলে কিছু সাংস্কৃতিক উপাদান মারা যাচ্ছে। বিশেষত বিশ্বের দখলকৃত স্থানের অনন্য ও ভিন্ন জীবনযাপন, অনুভূতি ও আচরণের সেই সব গোষ্ঠীর লোকেদের জীবনের অর্থ প্রতিফলিত করা সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির ক্ষেত্রে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন।

তবে পরিবর্তন স্বাভাবিক এবং আমরা মনে করি যা মারা যায় অন্যরূপে তার পুনর্জন্ম হতে পারে। সমস্যা হলো পুনর্জন্মের জন্যে মারা না গিয়ে সংস্কৃতিগুলি যখন সবকিছু ধ্বংসকারী একটি এককসংস্কৃতির জন্ম দেয়। প্লাস্টিকে মুড়িয়ে আসা এককসংস্কৃতিটি যা স্পর্শ করে তা বিষাক্ত করে তোলে এবং এর একমাত্র মূল্যবোধ দখল, আরো বেশি চাওয়া, আরো বেশি পাওয়া, ভোগ থেকে উপকৃত সবকিছুর মালিকদের জীবনকে নকল করা। আমাদের জন্যে সেটাই আসল হুমকি, যা বিষয়টির মূল উপজীব্য।

সংস্কৃতির আত্মসাৎ ধ্বংসাত্মক আধিপত্যের মতো উপাদান আমাদের বিষয়বস্তু নিঃশেষ করে আমাদের বৈশ্বিক দৃষ্টি সীমাবদ্ধ করে দেয়।

এই পাঠ্যের লেখক হিসেবে আমরা, নিজেদেরকে প্রশ্ন করেছি কীভাবে এবং কোন নীতির বলে আমরা যা ভালোবাসি তা চর্চা করতে পারি (বা না)।

অন্য জনগণের চর্চার আত্মসাৎ না করে আমাদের অভিজ্ঞতাকে প্রসারিত করি। যোগব্যায়াম চর্চা করি, ফোরো নাচি, হুইপাইলে বা আগুয়েও অলঙ্কৃত কানের দুলে সাজি। অবশ্যই নীতিগতভাবে এসব করতে গিয়ে দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা নিজেরা কাউকে আঘাত করছি বলে মনে করি না।

আমরা কি দায়িত্ব নিচ্ছি?

কিন্তু আমরা চর্চা ও বস্তু মূল্যায়িত হলেও তাদের নির্মাতারা না হওয়া স্পর্শকাতরতা, অন্যায় ও এই মুহূর্তে স্তব্ধ করা কণ্ঠস্বরগুলির কি দায়িত্ব নিচ্ছি? সেটা জানি না বলেই আমরা এই লেখাটি লিখছি। আমরা একটি নৈতিক ও বিস্তৃত ব্যক্তিগত চর্চায় পৌঁছানোর জন্যে নিজেদেরকে প্রশ্ন করি যা বোঝার জন্যে দাঁতে সুতো কাটার পরিবর্তে সংযোগ করে।

সাংস্কৃতিক চর্চার একটি ইতিহাস থাকায় আমরা প্রসঙ্গ থেকে শিক্ষা নিয়ে দায়িত্ব নেবো। তাদের নির্মাতাদের ন্যায্য অর্থ দিয়ে সৃষ্টির মূল্যায়ন করবো। তাদের সমস্ত কাজ, চাহিদা ও চ্যালেঞ্জগুলিকে স্বীকৃতি দিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে মঞ্চ নেওয়া সাংস্কৃতিক চর্চার স্রষ্টা বা সঞ্চালকরা যেখানে স্থানগুলিকে সুবিধা দেবো।

আমরা ভিন্ন উদ্দেশ্যে সম্পাদিত একই ক্রিয়া জিনিসের অর্থ সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে দেয় বলে উদ্দেশ্যের উৎপত্তি নির্ণয় যে অসম্ভব তা জানি। তাই আমরা দখল, ব্যঙ্গ বা অর্থনৈতিক আধিপত্যের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংস্কৃতিক সুবিধার নিন্দা করি।

আমরা যা রক্ষা করি তা এর অন্য দিক – কৌতূহলকে শ্রদ্ধার সাথে, জনগণ ও সম্প্রদায়গুলিকে পরস্পরের সাথে, স্থানিককে অস্থানিকতার সাথে যুক্ত করতে চাওয়া বিস্তৃত সংস্কৃতি। সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির বিস্তারও চুরি ও প্রসঙ্গচ্যুতির ঝুঁকিপূর্ণ এই সংযোগ ও শিক্ষার উপর নির্ভরশীল, যার জন্যে আমরা এই আলোচনা জুড়ে দুঃখ প্রকাশ করছি।

তাই আমরা এই বিতর্কের কেন্দ্রে জনগণকে পুনঃস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখি।

জনগণের কাছে ফিরে যাওয়া

স্পষ্ট বলাই সমীচীন সাংস্কৃতিক চর্চা ও বস্তু তাদের স্রষ্টার উপর নির্ভরশীল হলেও পুঁজিবাদী কোম্পানিগুলি কেবল ভোগ্য বস্তু-প্রতীক খাড়া করতে গিয়ে মানুষকে বাতিল করে দেয়। ঠিক যেমন উনবিংশ শতক থেকে জাদুঘরগুলি সাংস্কৃতিক বস্তুর সংরক্ষণ ও অনুসন্ধানে দক্ষতা তৈরি করতে গিয়ে বস্তুটির স্রষ্টার সাথে এর অন্তর্নিহিত ও শক্তিশালী সংযোগটি উপেক্ষা করতে শুরু করে।

সংখ্যালঘু সংস্কৃতিকে তাদের চারপাশ থেকে “সুরক্ষা” করাটা চ্যালেঞ্জ নয়। জ্ঞানকে ভেঙ্গে যাওয়া থেকে বাঁচাতে যাদুঘরে তালাবদ্ধ করা যায় না। তারা জীবিত ও তাদের ধরে রাখা মানুষের শরীরের অংশ। চ্যালেঞ্জটি অনেক বেশি জটিল এবং আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে যেখানে পরিচালিত করি সেখান থেকে অবাধে ও সচেতনভাবে বেছে নেওয়ার মধ্যে নিহিত। স্বাধীনতা ক্রয় ক্ষমতার সমার্থক এমন একটি অসম বিশ্বে অস্তিত্বশীলতা, অনুভব ও সম্পাদনের এই উদ্দেশ্যটিই একটি সত্যিকারের বিপ্লব।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .