বিশ্ব সম্প্রদায় স্তন্যপান সপ্তাহ পালন করছে বলে এটি ঘানা বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রচার ও সমর্থনে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা তা মূল্যায়নের জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) আফ্রিকা পৃষ্ঠা ১ আগস্ট টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে। প্রদর্শনীটতে ডাব্লিউএফপির একজন মা ও পুষ্টিবিদ মুতিনতা হাম্বাই জোর দিয়ে বলেছেন “স্তন্যপান প্রচার ও সুরক্ষায় বিনিয়োগ করা প্রতিটি টাকার বিপরীতে অর্থনৈতিকভাবে একটি দেশ ৩৫ [টাকা] পর্যন্ত আয় করতে পারে।”
🤱🏿 Supporting breastfeeding help mothers AND babies alike. @WFP provides nutrition training and supplements to mothers and their communities.
Our nutritionist Mutinta Hambayi gives 5 THINGS you need to know about #breastfeeding ⬇️ pic.twitter.com/hRwlcT7czO
— WFP Africa (@WFP_Africa) August 1, 2023
🤱🏿 স্তন্যপান করাতে সহায়তা করা মা ও শিশুদের একইরকম সাহায্য করে। @ডাব্লিউএফপি মায়েদের এবং তাদের সম্প্রদায়ের জন্যে পুষ্টি প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করে।
আমাদের পুষ্টিবিদ মুতিনতা হাম্বাই ৫টি জিনিস দিয়েছেন #স্তন্যপান সম্পর্কে যা আপনার জানা দরকার ⬇️
হাম্বাই ও অন্যান্য বিশ্বস্ত সূত্রের মতে শিশু ও মা উভয়ের জন্যেই বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব রয়েছে। শিশুদের জন্যে এর প্রাথমিক সুবিধাগুলির একটি হলো তাদের স্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে এর অপরিহার্য ভূমিকা। একটি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো হলে তারা প্রথম ৭২ ঘন্টার মধ্যে কোলোস্ট্রাম পায়। এই পদার্থটি অনাক্রম্যতার ঢাল ও একটি ভ্যাকসিন হিসেবে কাজ করে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেয়। বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রাথমিক সূচনা উল্লেখযোগ্যভাবে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি .৪৪ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া ছাড়াও এটি শৈশবকালীন স্থূলতা, হাঁপানি, হৃৎজনিত রোগ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমাতে অবদান রাখে। একটি অতিরিক্ত সুবিধা হলো বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুরা শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষ লাভ করে। এইভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো কীভাবে মানব পুঁজিতে একটি বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করে তা বোঝানো হয়।
মা ও তাদের শিশুদের মধ্যে একটি বিশেষ বন্ধন তৈরি করা ছাড়াও স্তন্যপান করানো মায়েদের উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়। এটি একটি প্রশান্তিদায়ক অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করে এবং নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর সম্ভাবনা রাখে। হাম্বাইয়ের মতে বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রচার শুধু একটি সিদ্ধান্ত নয়; এটি একটি জাতি তার আসন্ন সমৃদ্ধি নির্মাণে গ্রহণ করতে পারার মতো সবচেয়ে চতুর বিনিয়োগের একটি। অর্থনৈতিক সুবিধার বাইরে এটি পরিবারের স্থিতিস্থাপকতাকে শক্তিশালী করে। এভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো সমর্থন করা শুধু একটি নিছক অনুশীলন ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী মঙ্গল ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বৃদ্ধি নিশ্চিত করার একটি উপায়।
স্তন্যপান করানোর বহুবিধ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ঘানার অসংখ্য নারী প্রস্তাবিত ন্যূনতম ছয়মাসের জন্যে বুকের দুধ খাওয়ানো বজায় রাখতে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। প্রতিবন্ধকতাগুলির মধ্যে অপর্যাপ্ত ছুটির মেয়াদ, কর্মক্ষেত্রে স্তন্যপান করানোর নির্দিষ্ট জায়গার অভাব ও হাসপাতালের অপর্যাপ্ত শিক্ষাগত অভিযোজন অন্তর্ভুক্ত। গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশ না করতে নাম পরিবর্তিত ঘানার তিন নারী – মাভিস, লিন্ডা ও বার্নিস – তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে।
সরকারি খাত ঘানা জেল পরিষেবায় কর্মরত চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে থাকা লিন্ডা বুকের দুধ খাওয়ানোর সুবিধাগুলি স্বীকার করেন:
এটি সন্তানের বৃদ্ধিতে সহায়তা ও হাড়কে শক্তিশালী করে এবং মায়েদের অকাল গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে।
তিনি তার জ্ঞানের কৃতিত্ব দেন তার সন্তান প্রসবের সরকারি হাসপাতালের ধাত্রীদের। বিপরীতে বেসরকারি খাতে কর্মরত বার্নিস অনলাইনে তথ্য খুঁজেছেন:
আমি অনেক গুগল করেছি। অন্য মায়েদের কাছ থেকে শিখতে ইউটিউবে যাচ্ছি। আগেই আমাকে তথ্য দেওয়ার মতো আমার কোনো বড় বোন বা কাজিন না থাকায় এগুলোই ছিল আমার প্রধান উৎস। তাই আমার কাছে ইউটিউব ও গুগল আমার বন্ধু। তারপরে আমার কাছে আমাকে আমার গর্ভাবস্থার প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে অবহিত করা মাসিকের এই অ্যাপটিও ছিল যা ব্যবহার করে আমি বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি।
বার্নিসের মতে তাকে হাসপাতালে সঠিকভাবে অভিযোজন করা এবং শিক্ষা দেওয়া হয়নি:
আমি বলবো না যে হাসপাতাল আমাকে এতো শিক্ষা দিয়েছিল। আমাকে ছুটি দেওয়ার দিন একজন নারী এসে কিছু সংক্ষিপ্ত তথ্য দিয়েছিলেন যা থেকে বিস্তারিত না হলেও আমি একটি ন্যায্য ধারণা পাই। শুধু আমার ধারণা ছিল এটা তার জন্যে একটি ভাল এবং তাকে স্তন্যপান করিয়ে আমি সুবিধাগুলি বুঝতে পেরেছিলাম কারণ সে অসুস্থ বা তার কোনো সমস্যা হয়নি।
উভয় নারীই স্তন্যপান বজায় রাখা কঠিন করে তোলা অপর্যাপ্ত মাতৃত্বকালীন ছুটির দুর্দশার কথা তুলে ধরেছে। মাত্র তিন মাসের ছুটি দিয়ে ছয়মাস বুকের দুধ খাওয়ানো একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। লিন্ডা ব্যাখ্যা করেছেন:
আমার কর্মস্থল স্তন্যপান করানোর সময়সহ তিন মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়। আমি আমার বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্যে স্তন্যপানের সময় বেছে নিই দুপুর ১২:৩০ থেকে ১:০০ পর্যন্ত। তাই সেই দুপুর ১২:৩০ থেকে ১:০০ এর মধ্যে আমি বাড়িতে গিয়ে আমার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াই। কেউ কেউ শিশুর জন্যে বুকের দুধ বের করে রাখলেও যত্নকারী সঠিকভাবে তা না করলে দুধের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সমস্যা হতে পারে। এতে শিশু সংক্রামিত দুধ পেতে পারে। আমার ক্ষেত্রে আমি কখনোই আমার বাচ্চাদের জন্যে বুকের দুধ বের করিনি। অন্যদিকে আমার মতো প্রত্যেক মা তাদের কর্মক্ষেত্রের কাছাকাছি না থাকার কারণে অনেকেই হয়তো তাদের সন্তানকে খাওয়াতে বাড়িতে যেতে পারে না। এবং কারো একজন আয়া রাখার সামর্থ্য নাও থাকতে পারে। তাই প্রত্যেক শিশুকে অন্তত ৬ মাস বুকের দুধ খাওয়ানোর কথা থাকলেও কিছু মা তাড়াতাড়ি বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন।
কাজ থেকে দূরে থাকা স্বত্ত্বেও শিশুযত্নকারী পোষার সামর্থ্য না থাকা অনেকের কাছে এই বিকল্পগুলি চ্যালেঞ্জপূর্ণ প্রমা্ণিত। কাজের সময় দুধ বের করতে বাধ্য বার্নিস যে অতিরিক্ত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি তা কর্মক্ষেত্রে তার উৎপাদনশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করে:
আমার থলিতে দুধ বের করে আমি বাড়িতে না আসা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় রাখার জন্যে দরকারী একটি ফ্রিজ আমি পাইনি এবং আপনার সহকর্মীরা পুরুষ হওয়ায় এমনকি দুধ বের করার জায়গাটিও আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল। আপনি আপনার স্তন উন্মুক্ত করতে আসছেন বলেআপনি তাদের অফিস ছেড়ে চলে যেতে বলতে পারবেন না। বেদনাদায়ক হলেও আমি সবসময় আমার স্তন শক্ত গিঁট দিয়ে বাড়িতে যেতাম ছুটতাম যাতে আমি সেখানে গিয়ে বের করতে পারি। তাই শুধু থাকতে না পারায় সেই সময়টুকু আমি অনেক কাজ করতে পারিনি।
আশার কথা, ঘানার সমাজে জনসমক্ষে বুকের দুধ খাওয়ানো সাধারণভাবে গ্রহণীয় এটা আশ্বাস দেওয়া যায়। মাভিস নিশ্চিত করেছেন:
আমি বিশ্বাস করি না আমাদের সংস্কৃতিতে স্তন্যপান করানোকে আর অবজ্ঞা করা হয়। বেশিরভাগ ব্যক্তিই বুঝতে পারে এবং মায়েরা তাদের বাচ্চাদের জনসমক্ষে বুকের দুধ খাওয়ালে সেটা তেমন কোনো সমস্যা হিসেবে দেখা হয় না। তবে মা হিসেবে বিশেষ করে আমরা প্রথমবার মায়েরা মাঝে মাঝে অস্বস্তি বোধ করতেও পারি। তবুও সময়ের সাথে সাথে তারা চর্চাটিতে আরো অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।
মাভিস, লিন্ডা ও বার্নিসের ভাগাভাগি করা দৃষ্টিভঙ্গি কর্মক্ষেত্রের গতিশীলতা, মাতৃত্বকালীন ছুটির নীতিমালা এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্যে সহায়তা ব্যবস্থা সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। তারা মাতৃত্বকালীন ছুটি তিন থেকে ছয় মাস বাড়ানোর আশা করছে। বার্নিস বলেছেন:
ঘানায় (ছুটির মেয়াদ) বাড়ানো প্রয়োজন। এমনকি পুরো বেতনে সম্ভব না হলেও আংশিক অর্থ প্রদান করে এটি বিবেচনা করা যেতেই পারে। আমাদেরকে ছয় মাস বুকের দুধ খাওয়ানোর কথা বলে বর্তমান তিন মাসের চেয়ে (বেশি) কোনোকিছু ভালো।
এছাড়াও তারা কর্মক্ষেত্রে স্তন্যপান করানোর জন্যে মনোনীত এলাকা ও নতুন মায়েদের জন্যে হাসপাতাল প্রদত্ত সমন্বিত শিক্ষার আশা প্রকাশ করে।