ব্রাজিল: তেল আহরণ প্রকল্প আমাজন নদীর মোহনায় জেলেদের উদ্বিগ্ন করেছে

ব্রাজিলের সুদূর উত্তর অঞ্চলের ওয়াপোক শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা তাদের আয়ের জন্যে কারিগর ফিশিং ব্যবহার করে | ছবি: উইলি মিরান্ডা/ এজেন্সিয়া পাবলিকা

হায়ানে পেনয়ার লেখা এই প্রতিবেদনটি ডাব্লিউডাব্লিউএফ-ব্রাজিলের অংশীদারিত্বে এজেন্সিয়া পাবলিকা পরিচালিত  তেল ও জলবায়ু পরিবর্তন ক্ষুদ্র অনুদানের ফলাফল৷ মূলত ১২ জুন, ২০২৩ তারিখে এজেন্সিয়া পাবলিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই লেখাটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ একটি অংশীদারিত্ব চুক্তির অধীনে গ্লোবাল ভয়েসেস পুনঃপ্রকাশ করেছে।

জুলিও তেইশেরা ১২ বছর বয়সে প্রায় ১,১৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী তার ৮ বছর বয়সের কর্মস্থল সালভাতেরা থেকে একটি মাছ ধরার নৌকায় করে উত্তরাঞ্চলীয় আমাপা রাজ্যে পৌঁছান। সেখানে তিনি নিকটতম শহর ওয়াপোক শহর থেকে ১৮ ঘন্টা নৌকায় চড়ে কাবো অরেঞ্জ জাতীয় উদ্যানের মাছ ধরার গ্রাম তাপেরেবার বাসিন্দাদের সাথে যোগ দেন।

“সেখানে শুধু জেলে, খুঁটি আর সেতু ছিল, কোন শুকনো জমি ছিল না। সেখানেই আমি বড় হয়েছি আর কাজ করতে শুরু করি,” তিনি স্মৃতিচারণ করেন। এখন তিনি ব্রাজিল ও ফরাসি গায়ানার সীমান্তবর্তী ওইয়াপোকের জেলেদের বসতির সভাপতি।

তেইশেরা বলেছেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোব্রাস চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলে তেল অনুসন্ধানের জন্যে গবেষণা পরিচালনা করছে। জাতীয় পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ও জৈব জ্বালানি এজেন্সি থেকে পাওয়া তথ্য নিশ্চিত করে: ১৯৬৯ সালে ভূ-প্রাকৃতিক সমীক্ষা অধ্যয়নের জন্যে আমাজন নদীর মোহনায় কোম্পানিটির উপস্থিতি ছিল।

পেট্রোব্রাস ২০২১ সালের আগস্টে আমাজন নদীর মোহনায় তেল অনুসন্ধানের জন্যে ব্রাজিলীয় পরিবেশ ও নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ প্রতিষ্ঠান (ইবামা)-র কাছে লাইসেন্সের জন্যে একটি আবেদন জমা দেয় যদিও সংস্থাটি আগেই প্রাক্তন মালিক ফরাসি কোম্পানি টোটাল ইএন্ডপি’র ছাড়ের অনুরোধ অস্বীকার করেছিল। ওইয়াপোক থেকে উত্তর-পূর্বের রাজ্য রিও গ্রান্ডে ডো নর্তে পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাটি আমাপের উপকূল থেকে ১৭৫ কিলোমিটার দূরে নিরক্ষীয় সীমানায় অবস্থিত একটি উপকূলীয় অঞ্চল, যাকে ব্রাজিলের তেল অনুসন্ধানের নতুন সীমান্ত হিসেবে দেখা হয়।

অন্যান্য জিনিসের পাশপাশি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রাণীজগতের সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করেনি বলে গত মে মাসে ইবামা পেট্রোব্রাসকে লাইসেন্স প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাটি বলেছে এটি “সমস্ত প্রয়োজনীয়তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পূরণ করেছে” এবং এটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করেছে

আমাজন নদীর মোহনায় আহরণ নিয়ে বিতর্ক রাজনীতিবিদদের একটি অবস্থান নিতে প্ররোচিত করে বিশেষ করে খনি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সরকারকে বিভক্ত করেছে।

“তেল সমস্যা”

তেলের সমস্যাটি আমাপা’র বাসিন্দাদের উপরও ঝুলছে। রাষ্ট্রটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠনের মতে সেখানে থাকা অন্তত ৭,০০০ স্থানীয় জেলে হয়তো অবমূল্যায়িত হতে পারে।

আপনি ২৮,৫০০ বাসিন্দার শহর ওইয়াপোকের চারপাশে হাঁটার সময় পেট্রোব্রাসের পরিকল্পনার কথা শুনতে পাবেন। এই ধরনের বড় আকারের প্রকল্পগুলি সংঘটিত আমাজনের বেশিরভাগ সম্প্রদায়ের মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে রা তাদের সম্প্রদায়ের ক্ষতির আশঙ্কা একটি ধ্রুবক।

স্বামীর সাথে কাঁকড়া ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা ক্লডিয়া বারবোসা তার মতো শ্রমিকদের জীবিকা নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, “তেল উপচে পড়লে আমরা বাঁচবো কীভাবে? অনেকের জন্ম শুধু মাছ ধরার কাজ করে। এখানে (অন্য) কোন চাকরি নেই। আর যারা শুধু এই কাজ করে বাঁচতে জানে তাদের কী হবে? কীভাবে তারা তাদের পরিবারের ভরণপোষণ করবে?”

তেইশেরার মতে একজন জেলে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্যে কমপক্ষে ৬,০০০ রিয়াস (প্রায় ১,৩১,৩০০ টাকা) খরচ করে যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চালিত করে। “এটা শুধু মাছ বিক্রি করা নয়। [আপনি] তেল কেনেন, বরফ কেনেন, জেলেকে অগ্রিম টাকা দেন – আপনি প্রত্যেককে ৩০০, ৪০০ থেকে ৫০০ রিয়াস অগ্রিম না দিলে জেলেরা বাইরে যাবে না,” তিনি বলেন। “আপনাকে খাবার [ও] উপকরণ কিনতে হবে। এমন নৌকা আছে যেগুলো ২০ দিন [মাছ ধরার] জন্যে ২০,০০০ রিয়াস (প্রায় ৪,৩৮,০০০ টাকা) পর্যন্ত মূল্যের উপকরণ নিয়ে যায়।”

বেশিরভাগ পরিবার এবং কারিগর-স্তরের উৎপাদন শৃঙ্খলও মাছ ধরা ও এর সাথে যুক্ত বিভিন্ন কাজ তৈরি করে, যা এই অঞ্চলে অনেক লোকের জন্যে অবৈধ খনন ও কাঠ চোরাইয়ের কাজ না করার বিকল্প।

রাজনৈতিক চাপ

ব্রাজিলের সবচেয়ে সংরক্ষিত রাজ্য আমাপাওয়াই শ্বাসমূল, মাঠ, তৃণভূমি, সাভানা, দৃঢ় বনভূমি, জলাবন ও ইগাপো বন রয়েছে। বিশাল আর্থ-সামাজিক-পরিবেশগত গুরুত্ব সত্ত্বেও এটি ক্রমাগত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী শ্রেণীর প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের চাপে রয়েছে।

গ্রামের জেলেরা মনে করে সাধারণভাবে সরকার ও সরকারি কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলে তেল উত্তোলনের (কু)প্রভাবের প্রতি আগ্রহী নয়, এজেন্সিয়া পাবলিকার নেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেরা বলেছে।

“তারা রূপকথার জগতে বাস করে, তারা শুধু রয়্যালটির কথা ভাবে,” তেইশেরা বলেছেন।

অ-নবায়নযোগ্য সম্পদ ব্যবহারের জন্যে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানিগুলির কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য ও পৌরসভাকে দেওয়া আর্থিক ক্ষতিপূরণ হলো রয়্যালটি।

সিনেটে সরকারের বর্তমান নেতা আমাপের সিনেটর হ্যান্দলফি হদ্রিগেস রাজ্যে সম্ভাব্য তেল উত্তোলনের বিষয়ে গবেষণা নিয়ে তার্কিকদের একজন। এই সমস্যাটি তাকে হেজে পারি (বাংলায় টেকসই নেটওয়ার্ক) ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে যার সাথে পরিবেশ মন্ত্রী মেরিনা সিলভা যুক্ত।

হদ্রিগেস দাবি করেন বিতর্ক এখন শুধু অনুসন্ধানমূলক খনন নিয়ে। তিনি তার সংবাদ প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বলেছেন, “[রাজ্যের উপকূলে] তেল আছে কিনা তা জানার অধিকার আমাপা’র জনগণের থাকতে হবে।

সিনেটরের যুক্তি, কেন্দ্রীয় সরকার আহরণ না করার সিদ্ধান্ত নিলে আমাপা রাজ্যের ক্ষতিপূরণ পাওয়া উচিত।

আমাপা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকসই অঞ্চলিক উন্নয়ন কেন্দ্রের গবেষক জনাইনা কালাদো তেল আহরণ ও আমাজনের প্রবাল প্রাচীর সম্পর্কে বাসিন্দাদের ধারণা বোঝার জন্যে ২০১৮ সাল থেকে কাজ করছেন। তার মতে সমস্যাটি হলো প্রকল্পের প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত করার জন্যে কোনো জনপ্রিয় ব্যাপক পরামর্শ না থাকা বা শক্তিশালী পরিবেশগত প্রভাব অধ্যয়ন উপস্থাপন না করা।

“আমাজন নদীর মোহনায় আমাদের প্রধান সমস্যা হলো এই অঞ্চল সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানের অভাব। ভালভাবে, পরিকল্পিত ও ব্যাপক জনপ্রিয় অংশগ্রহণের সাথে পরিচালিত হলে উদ্যোগটি আসলেই রাষ্ট্রের জন্যে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসতে পারে, “তিনি বলেন।

গবেষক উল্লেখ করলেও স্থানীয় লোকেদের জন্যে সরাসরি-সংযুক্ত প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ছাড়াই এই অর্থনৈতিক প্রভাব রয়্যালটি আনার মাধ্যমে ঘটবে।

মে মাসে আমাপের আইনসভা স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে তেল আহরণ নিয়ে আলোচনা করার জন্যে ওইয়াপোকে একটি গণশুনানি করলেও এজেন্সিয়া পাবলিকার সাক্ষাৎকার অনুসারে জেলেরা দাবি করেছে অনুষ্ঠানটি একটি “রাজনৈতিক পদক্ষেপ” এবং তাদেরকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। ঐতিহ্যবাহী ও আদিবাসী সম্প্রদায়গুলিও অনুষ্ঠানটির দুর্বল প্রচারণার সমালোচনা করে শুনানিতে উপস্থিত থাকতে তাদের সময়মতো আমন্ত্রণ না জানানোর জন্যে মন খারাপ করে।

মে মাসে জাপানে একটি সরকারি সফরের সময় সাংবাদিকদের সাথে কথোপকথনে রাষ্ট্রপতি লুলা বলেন পরিবেশের জন্যে সত্যিকারের ঝুঁকি থাকলে তিনি আমাজন নদীর মোহনায় তেল আহরণের যেকোনো ইচ্ছেকে ভেটো দেবেন।

সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি বার্তায় আমাপা ও উত্তর-পারার আদিবাসী জনগণ ও সংস্থার নেটওয়ার্ক (এপিওআইএএনপি) বলেছে তারা আমাজন নদীর মোহনায় প্রভাব মূল্যায়ন বা আদিবাসীদের সাথে পূর্বে পরামর্শ না করা তেল আহরণের বিরুদ্ধে এবং তারা ইবামার পেট্রোব্রাসকে লাইসেন্স প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .