মঙ্গোলিয়া ২৯ ও ৩০ জুলাই পর্যটকদের আকর্ষণ করতে তার প্রথম ডাইনোসর উৎসবের আয়োজন করবে যাকে তাদের একটি নিয়মিত বার্ষিক অনুষ্ঠানে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে। অনুষ্ঠানটি গোবি মরুভূমির দক্ষিণ ওমনোগোভি প্রদেশের বায়ানজাগ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গোলীয় জীবাশ্মবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান আয়োজিত এই উৎসবের কর্মসুচিতে শিল্পকর্ম ও লেজার প্রদর্শনী, একটি হলোগ্রাফিক উপস্থাপনা ও ডাইনোসরের জীবাশ্ম অনুসন্ধানীদের সাথে একটি বিশেষ সফরের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
এখানে মঙ্গোলিয়ার আসন্ন ডাইনোসর উৎসব সম্পর্কে একটি ইউটিউব ভিডিও রয়েছে৷
বিশ্বের জীবাশ্ম সংক্রান্ত সম্প্রদায়ের জন্যে একটি বিশাল গুরুত্ব বহন করে বলে অনুষ্ঠানের তারিখ ও স্থান সাবধানে বাছাই করা হয়েছে। ঠিক ১০০ বছর আগে মার্কিন প্রাকৃতিক ইতিহাস যাদুঘরের পরিচালক রয় চ্যাপম্যান অ্যান্ড্রুস বায়ানজ্যাগ সাইটে প্রথমবারের মতো ডাইনোসরের ডিম আবিষ্কার করেছিলেন যাকে তিনি ফ্লেমিং ক্লিফস নামে অভিহিত করেন। ঠিক আজকের পাখিদের মতো ডাইনোসররা ডিম পাড়ে প্রমাণ করার জন্যে আবিষ্কারটি সেই সময়ে যুগান্তকারী ছিল এবং এটি একটি তত্ত্বের জন্ম দেয় যে পাখিরা ডাইনোসরের বংশধর।
এখানে ১৯২০ এর দশকের গোড়ার দিকে রয় চ্যাপম্যান অ্যান্ড্রুজ ও তার দলের দক্ষিণ মঙ্গোলিয়ায় জীবাশ্ম অনুসন্ধানের একটি ইউটিউব ভিডিও রয়েছে৷
ডাইনোসর ও প্রাচীন ইতিহাস অধ্যয়নের জন্যে মঙ্গোলিয়াকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত করে পরবর্তী কয়েক বছরে আরো অনেক কিছু আসতে চলেছে। মাত্র দুই বছরে অ্যান্ড্রুজ ও তার দল ১০০টিরও বেশি ডাইনোসর আবিষ্কার করে তাদের জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়। এই আবিষ্কারগুলি অ্যান্ড্রুজকে এতোটাই বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের কিংবদন্তীতে পরিণত করে যে তিনি ইন্ডিয়ানা জোনসের একজন কাল্পনিক প্রত্নতত্ত্ববিদ ও দুঃসাহসিকের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা ১৯২০ এর দশকের গোড়ার দিকে আরো অভিযানের জন্যে অ্যান্ড্রুজকে মঙ্গোলিয়ায় ফিরে আসতে দেয়নি।
তবে তার আবিষ্কারগুলি ইতোমধ্যে মঙ্গোলিয়াকে বিশ্বের জীবাশ্ম বিজ্ঞানের মানচিত্রে একটি সেরা গন্তব্যে পরিণত করে। ১৯৪০-এর দশকে সোভিয়েত-মঙ্গোলীয় অভিযান এবং ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে পোলিশ-মঙ্গোলীয় অভিযানগুলি আগে মানবজাতির অজানা অনেকগুলি ডাইনোসর প্রজাতির অসংখ্য আবিষ্কারের দিকে পরিচালিত করে।
এপর্যন্ত আবিষ্কৃত ৪০০ প্রজাতির ডাইনোসরের মধ্যে ৮০টি এসেছে তাদের মেসোজোয়িক যুগের ক্রিটেসিয়াস সময়কালের বাসস্থান দক্ষিণ মঙ্গোলিয়া থেকে। উদাহরণস্বরূপ, জুরাসিক পার্ক সিনেমায় প্রদর্শিত ভেলোসিরাপ্টরসহ ওভিরাপ্টর ও প্রোটোসেরাটপস গোবি মরুভূমির মঙ্গোলীয় অংশে প্রথম পাওয়া যায়। সবচেয়ে বিখ্যাত ডাইনোসরের জীবাশ্মগুলির একটি ভেলোসিরাপ্টর ও প্রোটোসেরাটপের মধ্যে লড়াই দেখানো ফাইটিং ডাইনোসর পোলিশ ও মঙ্গোলীয় জীবাশ্মবিদরা ১৯৭১ সালে খুঁজে পায়।
এখানে ফাইটিং ডাইনোসরের জীবাশ্মের ছবিসহ একটি টুইট রয়েছে৷
Our favorite fossils for #FossilFriday! The Fighting #dinosaurs, protoceratops vs velociraptor was discovered in 1971.#ProtoceratopsWeek pic.twitter.com/yFnQUIpJPV
— Institute for the Study of Mongolian Dinosaurs (@MongolianDinos) August 4, 2017
জীবাশ্ম_শুক্রবারের জন্যে আমাদের প্রিয় জীবাশ্ম! ফাইটিং #ডাইনোসর প্রোটোসেরাটপস বনাম ভেলোসিরাপ্টর ১৯৭১ সালে আবিষ্কৃত হয়। #প্রোটোসেরাটপস_সপ্তাহ
মঙ্গোলিয়ায় আবিষ্কৃত সবচেয়ে বিখ্যাত ডাইনোসর হলো সাত কোটি বছরের পুরনো টারবোসরাস বাটার (টি-বাটার)-কে উত্তর আমেরিকার শীর্ষ শিকারী টাইরানোসরাস রেক্সের এশীয় স্বজন বলে মনে করা হয়। এটি মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটারে অবস্থিত মঙ্গোলীয় ডাইনোসরের কেন্দ্রীয় যাদুঘরের প্রধান প্রদর্শন।
টি-বাটারের গল্পটি মঙ্গোলীয় জীবাশ্মবিজ্ঞান সম্প্রদায়ের মুখোমুখি হওয়া ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাচারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রকাশ করে। নিউইয়র্কে ২০১২ সালে একটি নিলামে প্রায় বিক্রি হতে যাওয়া এটি ২০১৩ সালে মঙ্গোলিয়ায় ফেরত দেওয়া হয়৷ ২০১৬ সালে মার্কিন নিলাম থেকে ৩০টিরও বেশি উদ্ধার করা জীবাশ্ম এখন মঙ্গোলীয় ডাইনোসরের কেন্দ্রীয় যাদুঘরের কক্ষগুলিতে শোভা পাচ্ছে৷ চোরাচালানের পরে উদ্ধার করা মঙ্গোলীয় ডাইনোসরগুলির মধ্যে একটি হলিউড অভিনেতা নিকোলাস কেজ কিনেছিলেন বলে কথিত।
পুনরুদ্ধার অভিযানের পিছনে অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব হলেন মঙ্গোলীয় জীবাশ্মবিদ বোলর্টসেটসেগ মিনজিন। তিনি দেশের জীবাশ্ম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও মঙ্গোলীয় জীবাশ্মবিদদের পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষিত করার জন্যে প্রতিষ্ঠিত মঙ্গোলীয় ডাইনোসর অধ্যয়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। সারা দেশে জীবাশ্মবিদ্যাকে জনপ্রিয় করে মঙ্গোলিয়া তার জাতীয় পরিচয়ের অংশ হিসেবে ডাইনোসরের ঐতিহ্য দাবি করতে পারার জন্যে তার মতো লোকদের ধন্যবাদ। মঙ্গোলিয়া ২০২৩ ও ২০২৪ সালকে পর্যটন বছর ঘোষণা করে বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের জন্যে তার ডাইনোসরের দিকে ঝুঁকছে। এবং মঙ্গোলীয় ডাইনোসররা সেই কাজটি করে দিতে পারে।