মূলত ২০০৪ সাল থেকে চালু একটি ব্যক্তিগত ব্লগ মিশরীয় দিনপঞ্জিতে ৯ জুলাই, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত এই গল্পটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ অনুমতি নিয়ে এখানে পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছে।
আমরা আসন্ন মিশরীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কবে হবে না জানলেও বর্তমানে এটি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত হয়েছে। সংবিধানের ১৪০ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে যে:
প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে একশত বিশ দিন আগে শুরু করা হবে। এই ধরনের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ত্রিশ দিন আগে ফলাফল ঘোষণা করতে হবে।
তা সত্ত্বেও গত দুই সপ্তাহের ঘটনাবলী এই বিশেষ নির্বাচনের সংস্করণটি কতটা অপ্রচলিত ও “অস্বস্তিকর” হবে তার ইঙ্গিত দিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে যারা আগামী নির্বাচনে তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছে তাদের সম্পর্কে এখানে একটি হালনাগাদ রয়েছে।
আল-ওয়াফদ পার্টির প্রার্থী
মিশরের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আল-ওয়াফদ পার্টি ১৮ জুন একটি ঘোষণা করেছে তাদের বর্তমান নেতা আবদেল সানাদ ইয়ামামা বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির বিরুদ্ধে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হবেন।
তবে আল-ওয়াফদের স্বাভাবিক অভ্যন্তরীণ লড়াই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাদের পথ খুঁজে পেয়েছে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে ইয়ামামার প্রার্থীতাকে সমর্থনকারী কথিত উচ্চ কমিটির সদস্যবৃন্দসহ দলের প্রবীণ সদস্যরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।
এই উদ্ঘাটনটি একটি চমকপ্রদ সত্য উন্মোচন করে: আল-ওয়াফদ পার্টির উচ্চ কমিটি মোটেও সভা আহ্বান করেনি বা নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্যে কোনো বৈঠকও ডাকা হয়নি। প্রাক্তন আল-ওয়াফদ নেতা মাহমুদ আবাজাসহ প্রবীণ সদস্যরা এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছে। মাহমুদ আবাজা বলেছেন: “আবেদেল সানাদ ইয়ামামাকে নিজ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।”
কয়েকদিন পর আল-ওয়াফদের একজন প্রবীণ নেতৃস্থানীয় সদস্য ফুয়াদ বাদরাভি রাষ্ট্রপতি পদে তার প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। তিনি তার অধিকারের উপর জোর দিয়ে তার ও ইয়ামামার মধ্যে বেঁছে নেওয়ার জন্যে উচ্চ কমিটির একটি সভা আহ্বান করেন।
আর তাই আসন্ন নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন এখনো অনিশ্চিত এবং অপ্রকাশিত।
গণপ্রজাতন্ত্রী দলের মনোনয়ন
মিশরীয় ধনকুবের, বিতর্কিত গণব্যক্তিত্ব ও সিনেটর আহমেদ আবু হাশিমা প্রসঙ্গে “আবু হাশিমার পার্টি“র রাজনীতি অনুসরণ করতে আগ্রহীদের কাছে পরিচিত গণপ্রজাতন্ত্রী পার্টি (আরপিপি) নামে একটি দল আছে। তিনি মিশরীয় সিনেটের সদস্য ও সিনেট যুব ও ক্রীড়া কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির প্রাক্তন সদস্যসহ প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা, গভর্নর ও মন্ত্রীদের নিয়ে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও ২০২০ সালের মার্চ মাসে আহমেদ আবু হাশিমা এর সহ-সভাপতি হিসেবে যোগদান করার সময় আরপিপির গণমাধ্যমের যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ ব্যাখ্যা করে কেন লোকেরা একে আবু হাশিমার পার্টি বলে।
আরপিপির নেতৃত্বে আছেন ২০২০ সালের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি এল-সিসি সিনেটে সিনেটর হিসেবে নিযুক্ত হাজেম ওমর। প্রকৌশল ডিগ্রিধারী তিনি বর্তমানে সিনেটে বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির প্রধানের পদে আছেন।
জনগণের কাছে অপরিচিত হলেও আরপিপি ২০২০ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে প্রতিনিধি পর্ষদে ৫৮টি ও সিনেটে ১৭টি আসন অর্জন করতে পেরেছে।
আরপিপি নিজেকে একটি উদার-বাম মধ্যপন্থী দল হিসেবে বর্ণনা করে “অর্থনৈতিক উদারীকরণ ও বেসরকারিকরণ নীতি থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণীগুলিকে রক্ষার জন্যে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণের” পক্ষে কথা বলে। পার্টির সাথে সম্পদ ও ক্রমাগত সামাজিক বিতর্ক সৃষ্টিকারী আবু হাশিমার সম্বন্ধকে বিদ্রূপাত্মক বলে মনে করা হয়।
সাম্প্রতিককালে গণপ্রজাতন্ত্রী পার্টির উচ্চ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে চেয়ারম্যান হাজেম ওমরকে ২০২৪ সালে মিশরে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্যে পার্টির আনুষ্ঠানিক প্রার্থী নির্বাচিত করেছে।বর্তমান স্বাধীনতা জোট
মিশরের আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের শীর্ষে থাকা মজাদার ঘোষণাটি হলো বর্তমান স্বাধীনতা জোট এবং গণতান্ত্রিক শান্তি পার্টি উভয়ের পক্ষ থেকে আহমাদ এল-ফাদালির প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
এল-ফাদালি ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাহরির চত্বরে উটের যুদ্ধে মুবারক সরকারকে সমর্থন করার জন্যে গুণ্ডাদের একত্রিত করায় অভিযুক্ত একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব।
যুদ্ধে এল-ফাদালির জড়িত থাকার ভিডিও প্রমাণ থাকলেও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি একটি কলঙ্ক প্রচারণার শিকার বলে দাবি করেছেন:
একাধিক প্রার্থীবিশিষ্ট ২০০৫ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণে ِএল-ফাদালি দাবি করলেও রাষ্ট্রপতি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকায় তার নাম নেই।
গণতান্ত্রিক শান্তি পার্টির মঞ্চটি অস্পষ্ট ও অনুপ্রেরণাহীন। এছাড়াও এল-ফাদালি কীভাবে বর্তমানে দারিদ্র্যপীড়িত মিশরকে বাঁচানোর পরিকল্পনা করেছেন তা স্পষ্ট নয়।
প্রাচ্যের শিশু
এল-ফাদালি আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের শীর্ষের চেরিফল হলে এমাদ সাদাল্লাহ তার খেপাটে রূপের জীবন্ত প্রমাণ।
সাদাল্লাহ তার ১৯৫০ এর দশকের প্রথম দিকের একজন মানুষ। তিনি নিজেকে দুবাইতে কর্মরত একজন শীর্ষ আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক সার্জন বলে দাবি করলেও এর সত্যতার কোনো প্রমাণ নেই।
টুইটার ও টিকটকের মতো মঞ্চের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করা ছাড়াও তিনি খোলাখুলিভাবে ইসরায়েলের ঔপনিবেশিক নীতির প্রতি সমর্থনে মিশরীয় পতাকা পরিবর্তনের পক্ষে সমর্থন করে জীবনের সোনালী চাবিসহ একটি লাল পটভূমির বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি নকশার প্রস্তাব করেছেন।
নিজেকে বাইবেল ও বুক অফ রিভিলেশন উভয়েই উল্লিখিত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত “প্রাচ্যের শিশু” বলে সাদাল্লা দাবি করেন। অসংখ্য ভবিষ্যতবাণীর জন্যে পরিচিত মার্কিন আধ্যাত্মিক জিন ডিক্সন এই উপাধিটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। ডিক্সন বিংশ শতকে মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্বের উপর গভীর প্রভাব ফেলা “প্রাচ্যের শিশু” নামের একটি শিশুর জন্মের বিষয়ে বিশেষভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তার ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে এই শিশুটি একজন আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে উত্থিত হয়ে বিভিন্ন ধর্মের লোকদের একত্রিত করে বিশ্ব শান্তি এনে শেষ পর্যন্ত তাদের বিশ্বাসের একটি বলিষ্ঠ অবস্থান তৈরি করবে।
এখন পর্যন্ত এরা প্রার্থী হলেও এখনো আরো চমকের সময় আছে। মিশরের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের সুযোগ না থাকলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে মিশরীয় জনগণ তাদের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন এবং তার নীতিমালা তাদের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে ব্যস্ত।