সহিংসতার উস্কানিমূলক একটি ভিডিও ভাগাভাগি করায় মেটার সালিশি বোর্ড ছয় মাসের জন্যে অ্যাকাউন্ট স্থগিতের সুপারিশ করলে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন তার সরকারি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দিয়েছেন। তার এক কোটি ৪০ লক্ষ অনুসারীবিশিষ্ট অ্যাকাউন্টটি প্রায়শই সরকারি ঘোষণা ও নথি ভাগাভাগি করতে ব্যবহৃত হত।
একটি প্রকাশ্য বক্তৃতার সময় ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে বিরোধীদের শাসক দলের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের স্থানীয় নির্বাচনে প্রতারণার দাবি প্রত্যাখ্যান করে হুন সেন যারা প্রতারণার অভিযোগ ছড়িয়েছে তাদের “পেটাতে গুন্ডা” পাঠানোর হুমকি দিয়ে বিরোধীদের “আইনি ব্যবস্থা” ও “লাঠি”র মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে বলেছেন।
নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২৩ জুলাইয়ের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান বিরোধী দলকে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার পরে প্রায় চার দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা হুন সেনের উত্তরাধিকারী হতে প্রস্তুত তার ছেলে। হুন সেন ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা দাবিকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ব্যবহারের হুমকি দেওয়ার পরে কীভাবে বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আক্রমণ করা হয় তা একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে।
বক্তৃতাটি ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিম করা হলে অনেক ব্যবহারকারী সম্প্রদায়গত মান লঙ্ঘনের জন্যে কোম্পানিটিকে অভিযোগ করে। “সংবাদযোগ্যতার” কারণে ফেসবুকের মালিক মেটা তার ভিডিওটি ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়:
সম্ভাব্য অফলাইন ক্ষতি রোধের জন্যে মেটা আমাদের মঞ্চে সহিংসতার হুমকি নিষিদ্ধ করলেও বিষয়বস্তুটির উচ্চ জনস্বার্থের মান থাকলে বিশেষ করে ক্ষতির ঝুঁকিকে ছাপিয়ে ভবিষ্যতের সরকারি পদক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক করতে পারলে এটিকে সংবাদযোগ্যতা মঞ্জুর করা যেতে পারে।
কিন্তু মেটার অর্থায়নকৃত স্বাধীন তদারকি সংস্থা সালিশি বোর্ডের পর্যালোচনার জন্যে বিষয়টিকে উন্নীত করা হলে ২৯ জুন মেটার আগের পদক্ষেপ উল্টে দিয়ে হুন সেনের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট স্থগিতের সুপারিশের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
মেটার কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সহিংসতার হুমকি দেওয়া একটি ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে উল্টে দেয় সালিশি বোর্ড। লঙ্ঘনের তীব্রতা ছাড়াও হুন সেনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ভয় দেখানোর ইতিহাসের পাশাপাশি এই ধরনের হুমকি বিস্তারে তার সামাজিক গণমাধ্যমের কৌশলগত ব্যবহারের ফলে বোর্ড মেটাকে অবিলম্বে ছয় মাসের জন্যে হুন সেনের ফেসবুক পৃষ্ঠা ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার আহ্বান জানায়।
কেন মেটার আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল এটি তা ব্যাখ্যা করেছে:
পোস্টটির জনস্বার্থ মূল্যের চেয়ে মঞ্চে বিষয়বস্তুটিকে অনুমতি দেওয়ার ফলে সৃষ্ট ক্ষতি বেশির কারণে বোর্ড এই ক্ষেত্রে মেটার সংবাদযোগ্যতা প্রয়োগের ভুল খুঁজে পেয়েছে।
বোর্ড মেটাকে জনব্যক্তিত্ব, বিশেষ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে ক্ষুন্নকারীদের সাথে জড়িত নীতিমালা পর্যালোচনা করার জন্যেও আহ্বান জানিয়েছে:
বোর্ড মেটাকে জনব্যক্তিত্বের অ্যাকাউন্টগুলিকে সীমাবদ্ধ করা যে শুধু সহিংসতা ও নাগরিক অস্থিরতার একক ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে নাগরিকদের ক্রমাগত প্রতিশোধমূলক সহিংসতার হুমকি পাওয়ার প্রেক্ষাপটও প্রযোজ্য, সে বিষয়ে তার নীতি স্পষ্ট করতে অনুরোধ করেছে।
সালিশি বোর্ডের সিদ্ধান্তের উল্লেখ না করে হুন সেন ইতোমধ্যে টেলিগ্রাম ও টিকটকে অ্যাকাউন্ট তৈরির কথা বলেছেন। একটি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানের সময় তিনি কম্বোডিয়ায় ফেসবুক নিষিদ্ধ করার হুমকিও দেন।
PM Hun Sen warns foreign opposition groups if they remain arrogant and daring, he would order the closure of Facebook in Cambodia🙏😏 pic.twitter.com/tMZZaHVZMW
— Mech Dara (@MechDara1) June 30, 2023
প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বিদেশী বিরোধী গোষ্ঠীগুলিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন এখনো তারা অহংকারী ও বেপরোয়া থাকলে তিনি কম্বোডিয়ায় ফেসবুক বন্ধ করার নির্দেশ দেবেন🙏😏
বক্তব্যের অব্যবহিত পরেই তিনি জনপ্রিয় সামাজিক গণমাধ্যমের মঞ্চটিকে নিষিদ্ধ করবেন না বলে স্পষ্ট করে দেন। একটি ভিডিও বিবৃতিতে তিনি বলেন, “জনগণ যখন একটি সংযোগ ও এই খবর পেতে ফেসবুক ব্যবহার করছে তখন আমি এটি বন্ধ করে দেওয়ার মতো বোকা নই।”
কম্বোডিয়ার সাড়ে ১৬ কোটি জনগণের মধ্যে ২০২২ সালে এক কোটি ১০ লক্ষেরও বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী ছিল। বহু বছর ধরে সক্রিয়ভাবে মঞ্চটি ব্যবহার করে তার নির্বাচনী ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ ও রাষ্ট্রীয় নীতি সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করতেন বলে প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলায় কিছু সরকারি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিতে প্রবেশাধিকার প্রভাবিত হবে।
Hun Sen deleting his Facebook page means around 7 years of public records, documents and political history was wiped out. If all his ministries delete their Facebook pages, more publicly accessible documents will be lost, with little chance of retrieving them from other sources. pic.twitter.com/80uHz5OusP
— Ananth Baliga (@antbaliga) June 30, 2023
হুন সেনের ফেসবুক পৃষ্ঠা মুছে ফেলার অর্থ হলো প্রায় ৭ বছরের সরকারি রেকর্ড, নথি ও রাজনৈতিক ইতিহাস মুছে ফেলা। তার সকল মন্ত্রণালয় তাদের ফেসবুক পৃষ্ঠাগুলি মুছে ফেললে সর্বজনীনভাবে প্রবেশাধিকারযোগ্য আরো নথি হারিয়ে যাবে যা অন্যান্য উৎস থেকে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা খুব কম।
ফেসবুক এখনো দেশে প্রবেশাধিকারযোগ্য হলেও এটি কোম্পানির সাথে চুক্তি ও অংশীদারিত্ব শেষ করচবে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে।
এতদ্বারা মন্ত্রণালয় কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব, রাজকীয় সরকারের সাথে যোগাযোগ ও বেসরকারি খাতে অংশীদারিত্বসহ তাদের সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ করাসহ ফেসবুক প্রতিনিধিদের কম্বোডিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে।
মন্ত্রণালয় ভুয়া অ্যাকাউন্টের অস্তিত্ব, ব্যক্তিগত তথ্য হারানোর ঝুঁকি, ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যবহার ও সংগ্রহ, ভুয়া খবর ছড়ানো, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপসহ ফেসবুক সম্পর্কিত অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে।
হুন সেন সরকার সমালোচকদের আটক, বিরোধী দলকে অযোগ্য ঘোষণা করতে এবং দেশের নাগরিক স্বাধীনতার দমনকে তুলে ধরা প্রতিবেদনগুলিকে বাতিল করতে প্রায়শই “বিদেশী যোগসাজশের” অভিযোগ ব্যবহার করেছে।
সাংবাদিক কেভিন ডয়েল হুন সেনের কাছ থেকে মেটার সালিশি বোর্ডের কিছুটা জবাবদিহিতা আদায়ের প্রহসনের কথা উল্লেখ করেছেন:
Tad ironic: One of few times (or ever?) Cambodia PM faced consequences for threatening violence against political opponents comes from FB oversight board – not UN, EU, or the many int’l orgs/countries that showered his govt with aid billions over decades https://t.co/lHYen1oXaZ
— Kevin J Doyle (@doyle_kevin) June 30, 2023
কিছুটা প্রহসন: কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি দেওয়ার জন্যে তার সরকারকে হাজার হাজার কোটি (ডলার) সাহায্য দেওয়া জাতিসংঘ, ইইউ বা অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা/ দেশ থেকে নয় বরং ফেসবুক সালিশি বোর্ডের কাছ থেকে কোনো একবার (বা কখনো?) পরিণতির সম্মুখীন হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বিচারিক কমিশন অনুরূপ ঘটনগুলির জন্যে নজির স্থাপন করতে পেরেছে বলে সালিশি বোর্ডের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তটি সকল ব্যবহারকারীর জন্যে একই নিয়ম প্রযোজ্য বলে শুধু অবস্থানের কারণে রাজনৈতিক নেতারা সহিংসতার প্ররোচনার জন্যে কোনো উচ্চ সুরক্ষা উপভোগ করেন না বলে একটি সুস্পষ্ট বার্তা পাঠায়।
ইতোমধ্যে একজন কম্বোডীয় বিশ্লেষক “হিংসাত্মক” ও “বর্ণবাদী” বিষয়বস্তুর কারণে নির্বাসিত বিরোধী নেতার ফেসবুক পোস্টগুলিও খতিয়ে দেখতে ফেসবুককে অনুরোধ করেছেন।