কেনিয়ার ই-শাসনের দিকে যাত্রা এস্তোনিয়া থেকে অনুপ্রাণিত

এস্তোনিয়ার তালিনে ই-শাসন সম্মেলনের প্যানেল অধিবেশন। ই-শাসন একাডেমি থেকে পাওয়া ছবি।

কেনিয়ার সাম্প্রতিক মাদারাকা দিবসের সময় রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম রুটো ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্যে একটি দৃষ্টিভঙ্গি ভাগাভাগি করে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ সকল সরকা্রি পরিষেবাকে ডিজিটাল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যা কেনিয়াকে ই-শাসনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে৷ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে কেনিয়া একটি সমৃদ্ধ গণতন্ত্র হলেও এর মাত্র ৩৩ শতাংশ ইন্টারনেট অনুপ্রবেশের হার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে: দেশটি কি আদৌ ই-শাসনের তরঙ্গকে আলিঙ্গন করতে প্রস্তুত?

ই-শাসন একটি বৈশ্বিক বিপ্লবের প্রতীক হলেও এর তরঙ্গ কেনিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশে আশা ও আতঙ্কের অনুভূতি সৃষ্টি করে। অনলাইনে পরিবর্তনের ফলে উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির আশায় এধরনের দেশগুলি তাদের অর্থনীতিতে লাফ দেওয়ার একটি সুযোগের প্রত্যাশা করে। জাতিসংঘের আর্থ-সামাজিক বিষয়ক সহকারী মহাসচিব, এলআই জুনহুয়া দাবি করেছেন “ডিজিটাল প্রযুক্তি ও বহু-অংশীজনের অংশীদারিত্বের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রয়োগের মাধ্যমে সু-পরিচালিত ডিজিটাল রূপান্তর ও ডিজিটাল সরকার, একটি টেকসই অগ্রগতির জন্যে সবার ভবিষ্যতের একটি শক্তিশালী চালিকা হয়ে থাকবে।”

ই-শাসন উন্মোচন: কেনিয়ার পটভূমি

কেনিয়াতে সফল মোবাইল ব্যাংকিং মঞ্চ এম-পেসার মতো ডিজিটাল রূপান্তরের উত্থান দেশটির ডিজিটাল অগ্রগতি প্রদর্শন করে৷ কেনিয়া প্রজাতন্ত্র পূর্ব আফ্রিকার মধ্যে ডিজিটালকরণের একটি নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যাকে প্রায়শই সিলিকন সাভানা বলা হয়। এর জাতীয় ডিজিটাল মহাপরিকল্পনা ২০২২-২০৩২ এটির ডিজিটাল রূপান্তরের এক দশক কল্পনার প্রতি নিষ্ঠার একটি প্রমাণ হলেও সকল সরকা্রি পরিষেবা ডিজিটালে স্থানান্তর একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

সরকার ২০২৩ সালের মধ্যে সকল পরিষেবা ই-নাগরিক মঞ্চে স্থানান্তরিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি রুটো ডিজিটাল মঞ্চ পরিষেবাগুলি ৩২০ থেকে ৫,০০০-এ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বছরের শেষ নাগাদ প্রায় ৭,০০০ পরিষেবা কভার করার ইচ্ছা রয়েছে৷ এই ডিজিটাল স্থানান্তরের লক্ষ্য হলো অত্যধিক আমলাতান্ত্রিকতা দূর করে নাগরিকদের নির্বিঘ্নে পরিষেবায় প্রবেশাধিকার দেওয়া। তবে ই-শাসনের দিকে কেনিয়ার যাত্রা ডিজিটাল বিভাজন সারিয়ে তোলা ও সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বাধার সম্মুখীন।

কেনিয়াতে ই-শাসনের চ্যালেঞ্জ

কেনিয়ার বিশেষ করে শহুরে ও গ্রামীণ এলাকার মধ্যে ডিজিটাল বিভাজন ই-শাসনের জন্যে একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ। গ্রামাঞ্চলে মাত্র ১৭ শতাংশের তুলনায় শহরাঞ্চল ৪৪ শতাংশ ইন্টারনেট অনুপ্রবেশ নিয়ে গর্বিত। এই ব্যবধান বিদ্যমান বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে মাত্র ৪৯ শতাংশকে ই-শাসন পরিষেবা বা মঞ্চ সম্পর্কে সচেতন করে৷ এটি জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে ডিজিটালকৃত সরকারি পরিষেবাগুলিতে প্রবেশাধিকার ও ডিজিটাল নাগরিক ব্যস্ততায় অংশ নেওয়া থেকে বাদ দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। সমাধান না করা হলে এই বিভাজন কেনিয়ার ই-শাসন রূপান্তরের অন্তর্ভুক্তি ও কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

একই সাথে সাইবার হুমকি ও ডেটা লঙ্ঘনের বৃদ্ধি বিশেষ করে এক বছরে সাইবার অপরাধে প্রায় চার কোটি মার্কিন ডলার হারানো কেনিয়ার ব্যাঙ্কিং খাতের বিরুদ্ধেশক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জাতীয় প্রশাসনের স্বরাষ্ট্র বিভাগের প্রধান সচিব রেমন্ড ওমোলো একটি টুইটে বলেছেন:

আমরা ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হওয়ার সাথে সাথে সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব এখন জাতীয় নিরাপত্তার সাথে তুলনীয়।

তাই এই বাস্তবতায় আমাদের সাইবার নিরাপত্তা বাড়িয়ে অর্থপূর্ণ মিথস্ক্রিয়াগুলির জন্যে নিরাপদ ভার্চুয়াল স্থান তৈরি করতে হবে।

জাতীয় কম্পিউটারের চেয়ারম্যান হিসেবে…

প্যারাডাইম উদ্যোগের ২০২২ ডিজিটাল অধিকার ও অন্তর্ভূক্তি প্রতিবেদন এই চ্যালেঞ্জগুলিকে উচ্চকিত করেছে৷ এটি আফ্রিকাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রবেশাধিকার বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ও সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের জন্যে ভয়ঙ্কর থেকে যাওয়া নিশ্চিত করেছে। প্রবেশাধিকারযোগ্য অবকাঠামো, ডিজিটাল সাক্ষরতার দক্ষতা ও সাশ্রয়ী মূল্যের সহায়ক যন্ত্রপাতিসহ এই অভাব প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।

এর ওপর কেনীয় সরকারের কথিত প্রযুক্তির অপব্যবহার গণতান্ত্রিক নীতি ও গোপনীয়তা হ্রাস সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়ায়। ভিন্নমত দমন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হেরফের করতে কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় তা প্রতিবেদনগুলিতে প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিষয়গুলি কেনিয়াতে গোপনীয়তা রক্ষা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার জন্যে সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

সাফল্য থেকে শিক্ষা: ই-শাসনের এস্তোনীয় মডেল

ই-শাসনের অগ্রদূত হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এস্তোনিয়া কেনিয়ার মতো দেশগুলির জন্যে একটি মূল্যবান মডেল৷ প্রতিটি নাগরিকের জন্যে একটি স্বকীয় ডিজিটাল পরিচয়ের ডিজিটাল স্থানান্তর কেন্দ্রগুলির প্রতি এর নাগরিক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বিস্তৃত ধরনের অনলাইন পরিষেবায় প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করে। এস্তোনিয়ার ই-শাসনের মূল ভিত্তি হলো বিভিন্ন ডিজিটাল পরিষেবার মধ্যে নিরাপদ ডেটা বিনিময় নিশ্চিত করার বিকেন্দ্রীকৃত মঞ্চ এক্স-রোড ব্যবস্থার ফলে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। তার ওপর সাইবার নিরাপত্তা, ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ডিজিটাল পরিবেশের উপর এস্তোনিয়ার ফোকাসের সাফল্যের উপর জোর দেয়।

একটি স্পষ্ট দৃষ্টি, শক্তিশালী অবকাঠামো ও নাগরিক ক্ষমতায়নের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি দিয়ে কার্যকর করা হলে এই মডেলটি ই-শাসনের সম্ভাবনাকে মূর্ত করে। তালিনে ই-শাসন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কাজা ক্যালাসের বক্তব্য “ই-শাসন শুধু প্রযুক্তি নির্মাণ নয়, গণতন্ত্রও গড়ে তুলে” কেনিয়ার ডিজিটাল যাত্রার সুর নির্ধারণ করে৷

ডিজিটালকরণ ছাড়িয়ে একটি ভবিষ্যতের কল্পনা

কেনিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রিপরিষদ সচিব সিএস এলিউড ওওলো জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রযুক্তি বিষয়ক দূত ফায়াজ কিংয়ের সাথে পরামর্শ করার সময় এমন একটি ভবিষ্যত কল্পনা করেন যেখানে কেনীয়দের “অনলাইনে যাওয়ার লাইনে দাঁড়ানো” থেকে উত্তরণ ঘটাবে৷

শুধু পূর্ব আফ্রিকা নয় আফ্রিকা মহাদেশ ও তার বাইরেও অন্যত্র ডিজিটাল প্রযুক্তি নেতৃত্ব প্রদান করে।

কেনিয়ার সরকার আমাদের জনগণকে লাইনে দাঁড়ানো থেকে অনলাইনে নিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ই-শাসনে একটি সফল স্থানান্তর শহর-গ্রামের বিভাজন দূর ও নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করে কেনিয়াতে রূপান্তরমূলক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে পারে। উন্নয়নের জন্যে ডিজিটাল (ডি৪ডি) হাবের মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আফ্রিকীয় ইউনিয়ন-ইউরোপীয় ইউনিয়নের (এইউ-ইইউ) উন্নয়নের জন্যে ডিজিটাল হাব একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ডিজিটাল রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপনে আফ্রিকীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে সহায়তা করে। প্রকল্পটি ইউরোপীয় অংশীদারদের সাথে ডিজিটাল সহযোগিতা এগিয়ে নিতে আফ্রিকীয় সরকার ও আঞ্চলিক সংস্থাগুলির সাথে কাজ করে৷

কেনিয়ার একটি সম্পূর্ণ ডিজিটালকৃত সরকারে যাওয়ার পথটি চ্যালেঞ্জে ভরা হলেও প্রতিশ্রুতিতে ঝলমল করছে। দেশটি ডিজিটাল বিপ্লবে বিচরণ করছে বলে অনেক অংশীজন আশাবাদী। জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি মহাপরিকল্পনা ২০১৭-এর অতীত অর্জনের কথা বলে কেনিয়ার ডিজিটাল প্রস্তুতি প্রতিবেদনটি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছে “কেনিয়ার ডিজিটাল ভবিষ্যত উজ্জ্বল।” বর্তমান মহাপরিকল্পনার শক্তিশালী কর্মসূচিতে থাকা একটি বিস্তৃত এক লক্ষ কিলোমিটার জাতীয় ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক, সরকারি পরিষেবার একটি ডিজিটাল ওয়ান-স্টপ দোকান, একটি জাতীয় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, একটি স্বকীয় চৌকস পরিচয়পত্র ব্যবস্থা, দুই কোটি নাগরিকের জন্যে ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রশিক্ষণ এবং ১,৪৫০টি ডিজিটাল হাব প্রতিষ্ঠা আশাব্যঞ্জকভাবে নাগালের মধ্যে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

ডিজিটালকরণ এগিয়ে আসাটা কি কেনিয়ার ই- শাসনের চূড়ান্ত পর্যায় নাকি এটি কেবল গভীরতর বিষয়গুলিকে তুলে ধরছে? এমনকি সরকার ডিজিটালকরণের দিকে ছুটছে বলে কিছু নাগরিক মূল সমস্যাটি ডিজিটাল পরিষেবার অভাব নয় বরং প্রথমে একটি মৌলিকভাবে ভেঙে যাওয়া ব্যবস্থা এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলিকে সমাধান করা উচিত বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

উইলিয়াম কাকা, এটা একটা কেলেঙ্কারী, কোনো অগ্রাধিকার নয়, কেনীয়রা ক্ষুধার্ত, জীবনযাত্রার ব্যয় ঠিক করুন, আমরা হিজি ডিজিটাল জিনিসগুলিতে আগ্রহী নই। সে কখনো চুরি করতে ক্লান্ত হয় না.. এনকেটি

তাদের দাবি ই-শাসনের দিকে যাত্রা শুধু ডিজিটালকরণের দিকে ছোটা নয় বরং সরকারি ব্যবস্থার পুনর্গঠন ও উন্নতির জন্যে একটি বিস্তৃত কর্তব্য হওয়া উচিৎ। শুধু সময়ই বলে দেবে ডিজিটাল রূপান্তরের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা কেনিয়া এই তরঙ্গকে তার প্রতিশ্রুতিশীল ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে প্রস্তুত কিনা। তারা যেমন বলে একটি শিশুকে বড় করতে একটি গ্রাম লাগে, তেমনিভাবে একটি ই-শাসিত জাতি গড়ে তুলতে একটি বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল গ্রাম লাগবে৷

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .