কেনিয়া ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক সকল আফ্রিকীয় নাগরিকের জন্যে তার দরজা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত মহাদেশে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার একটি পদক্ষেপ।
অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন থেকে উপকৃত হওয়ার জন্যে আন্তঃসীমান্ত গতিশীলতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রগুলির একটি সাধারণ আগ্রহ রয়েছে। কারণ এটি পণ্য, পরিষেবা ও মূলধনের আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের সুযোগ দেয়, যা অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ও অগ্রগতি প্রচার করে। তবে নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে বেশিরভাগ সরকারই ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে। এর মানে হলো নির্দিষ্ট দেশগুলিতে যাওয়া নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের জন্যে কঠিন হতে পারে।
কেনিয়ার সিদ্ধান্তে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া
ব্যবসার জন্যে ভ্রমণকারী আফ্রিকীয়দের জন্যে ভিসা বিধিনিষেধ অপসারণের কেনিয়ার সিদ্ধান্ত টুইটারে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। উত্তরদাতাদের অধিকাংশই আরো সীমান্তবিহীন আফ্রিকার আহ্বান জানিয়ে কেনিয়ার সরকারের প্রগতিশীল পদক্ষেপের প্রশংসা করে অন্যান্য আফ্রিকীয় দেশগুলিকে এটি অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছে।
Great move AFRICA…. this should be all 54 states should follow suit. this will change Africa
— #africaunite 🇪🇬 🇹🇿 🇩🇿 🇬🇭 🇳🇬🇯🇲 🇿🇦 (@Leralambs) June 1, 2023
দুর্দান্ত পদক্ষেপ আফ্রিকা…. এই সমস্ত ৫৪টি রাষ্ট্রের অনুসরণ করা উচিত। এটি আফ্রিকাকে বদলে দেবে
কেউ কেউ আরো আগ বাড়িয়ে শুধু ব্যবসার জন্যে নয় সকল উদ্দেশ্যেই ভিসা বিধিনিষেধ সম্পূর্ণ অপসারণের পক্ষে কথা বলছে। সেনজেন চুক্তির মতো উদাহরণগুলি ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সুবিধা প্রদর্শন করায় তারা প্রশ্ন করে কেন আফ্রিকীয়দের অন্যান্য আফ্রিকীয় দেশগুলিতে ভিসার প্রয়োজন হবে। তারা আরো যুক্তি দেয় আরো উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি মহাদেশ জুড়ে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও একতা বাড়াবে।
Great news for African business travellers! Removing visa restrictions will boost trade and economic growth across the continent. Kudos to Kenya's President William Ruto for taking this step. #AfricaRising #TradeFacilitation
— VAR Checking (@alec2030) June 1, 2023
আফ্রিকীয় ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীদের জন্যে দুর্দান্ত খবর! ভিসা বিধিনিষেধ অপসারণ মহাদেশ জুড়ে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। এই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যে কেনিয়ার রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম রুটোকে ধন্যবাদ। #আফ্রিকাজাগছে #বাণিজ্যসহায়তা
Africans have been limited to roaming in their continent by Western laws & I suspect this may’ve been a strategy to keep us divided. We’d just have one birth recording system & every African can live & move to wherever whenever they want. There’ll be a massive circulation of 💵.
— Tshilidzi M (@TshilidziMutond) June 1, 2023
আফ্রিকীয়রা পশ্চিমা আইনে তাদের মহাদেশে ঘোরাঘুরির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং আমার সন্দেহ এটি আমাদের বিভক্ত রাখার একটি কৌশল হতে পারে। আমাদের কাছে শুধু একটি জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থা থাকবে ও প্রত্যেক আফ্রিকীয় যেখানে খুশি সেখানে থাকতে ও যেতে পারবে। 💵 এর ব্যাপক প্রচার হবে।
টুইটার ব্যবহারকারীরা আফ্রিকীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের আফ্রিকা ভিসা উন্মুক্ততা সূচক প্রতিবেদন ২০২২ অনুসারে শুধু তিনটি দেশ – বেনিন, গাম্বিয়া এবং সেশেলস – বর্তমানে সমস্ত আফ্রিকীয় নাগরিকদের ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার উপস্থাপন করে৷ আফ্রিকা ভিসা উন্মুক্ততা সূচক (এভিওআই) আফ্রিকীয় দেশটি অন্যান্য আফ্রিকীয় দেশের ভ্রমণকারীদের জন্যে কতোটা উন্মুক্ত তা পরিমাপ করে। মহাদেশের কোন দেশগুলি তাদের ভূখণ্ডে ভ্রমণের সুবিধা দেয় তা দেখানোর জন্যে সূচকটি প্রতিটি দেশের ভিসার প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করে। প্রতিবেদন ২০২২ আফ্রিকায় ভিসা উন্মুক্ততার অগ্রগতি দেখায় – ১০টি দেশ তাদের স্কোর উন্নত এবং প্রাক-মহামারীর মাত্রা অতিক্রম করেছে। এই পরিসংখ্যানটি কেনিয়ার সিদ্ধান্ত বৃহত্তর আঞ্চলিক একত্রীকরণ ও অন্তর্ভুক্তির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, এই অনুভূতিকে শক্তিশালী করে।
তবে এই সুযোগের সম্ভাব্য অপব্যবহারের বিষয়ে উত্থাপিত কিছু উদ্বেগ বিশেষ করে নির্দিষ্ট কিছু দেশে বিদ্যমান অপরাধী ও প্রতারকদের একটি শক্তিশালী ঘরাণা লক্ষ্য করাটা গুরুত্বপূর্ণ, যদিও এটি সবসময় হয় না।
Nigerians will claim to be arriving for business. Next thing, Kenya is full of drugs, traffickers and scammers
— 𝐍𝐝𝐮𝐦𝐢𝐬𝐨🌍 (@Ndumiiiso) June 1, 2023
ব্যবসার জন্যে নাইজেরীয়রা আসবে বলে দাবি করে। পরবর্তী সমস্যা কেনিয়া মাদক, পাচারকারী ও প্রতারকে পরিপূর্ণ
পুরস্কার বিজয়ী আফ্রো-রাজনৈতিক নারীবাদী জুডিকেলে ইরাকোজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আফ্রিকার মধ্যে আফ্রিকীয়দের জন্যে ভিসা বাতিলের পক্ষে কথা বলে টুইটারে একটি উল্লেখযোগ্য আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তার টুইট বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
Good move. However it should be restricted in a way that it's valid for let's say 2 months like the kenya- south Africa visa agreement to avoid influx of scammers from Nigeria and Ghana. Infact these two should be restricted
— Nuru Okanga (@Nuru_Okanga2314) June 1, 2023
ভালো পদক্ষেপ হলেও কেনিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার ভিসা চুক্তির মতো ধরা যাক ২ মাসের জন্যে এর বৈধতা সীমাবদ্ধ করা উচিত যাতে নাইজেরিয়া ও ঘানার প্রতারকদের আগমন এড়ানো যায়৷ আসলে এই (দেশ) দুটিকে সীমাবদ্ধ করা উচিত
পুরস্কার বিজয়ী আফ্রো-রাজনৈতিক নারীবাদী জুডিকেলে ইরাকোজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আফ্রিকার মধ্যে আফ্রিকীয়দের জন্যে ভিসা বাতিলের পক্ষে কথা বলে টুইটারে একটি উল্লেখযোগ্য আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তার টুইট বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
Abolish visa for Africans within Africa.
— Judicaelle Irakoze (@Judicaelle_) September 19, 2022
আফ্রিকার মধ্যে আফ্রিকীয়দের জন্যে ভিসা বাতিল করুন।
অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও মানবাধিকার
লন্ডন অর্থনীতি স্কুলের জন্যে ভিসা সীমাবদ্ধতা ও অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের উপর ম্যাথিয়াস চেজকা ও এরিক নিউমায়ার পরিচালিত গবেষণায় তারা বলেছে ভিসা বিধিনিষেধগুলি দরিদ্র দেশগুলির জন্যে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকারক। কারণ এই দেশগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্যে পর্যটন, বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগের ওপর বেশি নির্ভরশীল। সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে পর্যটকদের কিছু বিঘ্নিত প্রবাহ, পণ্য ও পরিষেবা এবং মূলধন অন্যান্য ভিসামুক্ত গন্তব্যে পুনঃপরিচালিত হয়। এর মানে হলো ভিসা বিধিনিষেধহীন দেশঙ্গুলি অন্যান্য দেশের ভিসা বিধিনিষেজ্ঞার ফলে পর্যটন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে উপকৃত হতে পারে। আফ্রিকার ব্যবসায়িক ব্যক্তিদের জন্যে কেনিয়ার দরজা খোলার সিদ্ধান্ত এই ফলাফলগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ এটি অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি প্রচার এবং আফ্রিকীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের সুযোগ প্রসারিত করে৷
আফ্রিকীয় উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানানোর পদক্ষেপটি কেবল কেনিয়ার অর্থনীতিকে নয় বরং আফ্রিকার বৃহত্তর অঞ্চল জুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে উদ্দীপিত করে। আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যকে সহজতর ও ব্যবসায়িক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে কেনিয়া ভাগাভাগি করা সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত অর্থনৈতিক সুযোগের একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করে। এই পদ্ধতিটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনো শূন্যফলের খেলা নয় বরং সকল অংশগ্রহণকারীর উপকার করা একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দেয়। ফলে আফ্রিকীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীরা কেনিয়ার অর্থনীতির পাশাপাশি তারা সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশের অগ্রগতিতেও অবদান রাখে।
অর্থনৈতিক সুবিধা ছাড়াও কেনিয়ার সিদ্ধান্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা, চাকরি তৈরি ও তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির সুযোগ দিয়ে ক্ষমতায়ন করে। একটি সহায়ক পরিবেশ প্রদানের মাধ্যমে কেনিয়া ব্যক্তি ও সম্প্রদায়কে দারিদ্র্য ও প্রান্তিকতার চক্র থেকে মুক্ত করে তাদের মানবাধিকারকে এগিয়ে নেয়।
সিদ্ধান্তটি আফ্রিকীয় উদ্যোক্তাদের আলিঙ্গন করে কেনীয় সমাজে সামাজিক সংহতি ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রচারও করে। এটি বৈচিত্র্য, বোঝাপড়া ও বিভিন্ন সংস্কৃতির উপলব্ধি বৃদ্ধি করে শেষ পর্যন্ত আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সহনশীল সমাজ গঠনে অবদান রাখে। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা কেনীয় ও আফ্রিকীয় উদ্যোক্তাদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সমাজকে সমৃদ্ধ করে অচলায়তনকে চ্যালেঞ্জ করে আরো সম্প্রীতির সামাজিক বুনন তৈরি করতে পারে।
আফ্রিকীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীদের জন্যে কেনিয়ার অবাধে দরজা খোলার সিদ্ধান্ত মানবাধিকারের মূল নীতিগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ – জাতিগত বা জাতিগত পটভূমি নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মর্যাদা ও মূল্যকে স্বীকার করে। এটি মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা এবং মানবাধিকার ও জনগণের অধিকার সম্পর্কিত আফ্রিকীয় সনদের মতো আন্তর্জাতিক উপকরণগুলিতে অন্তর্ভুক্ত মানবাধিকার সমুন্নত রাখার প্রতি কেনিয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।
কেনিয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিদ্যমান ভিন্ন ভিন্ন এসব মতামত ছাড়াও সামগ্রিকভাবে টুইটার প্রতিক্রিয়া কেনিয়ার সিদ্ধান্তের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ও আরো সীমান্তহীন আফ্রিকার ধারণাকে নির্দেশ করে। প্রচলিত ধারণাটি হলো ভিসা বিধিনিষেধ অপসারণ করা ভ্রমণ ও বাণিজ্যকে সহজতর করা ছাড়াও আফ্রিকীয় দেশগুলির মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে, যা সমগ্র মহাদেশকে বর্ধিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করবে।