পুরস্কার বিজয়ী পরিবেশবাদী পাকিস্তানে নারী তুলা বাছাইকারীদের ক্ষমতায়ন করছেন

Woman cotton worker in Meho Machi village of Matiari district in Sindh, Pakistan. Via Javed Hussain. Used wth permission.

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের মাতিয়ারি জেলার মেহো মাচি গ্রামের নারী তুলা শ্রমিক। জাভেদ হোসেনের মাধ্যমে। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

পাকিস্তান বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম তুলা উৎপাদনকারী এবং পাঞ্জাবসিন্ধু প্রদেশ পাকিস্তানের ৯৯ শতাংশ তুলা উৎপাদন করে। শুধু পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশেই তুলা বাছাইয়ের কাজ করে ৫ লক্ষেরও বেশি নারী। তবে সীমিত সাক্ষরতা ও সংখ্যার দক্ষতার ফলে নারীরা প্রায়শই শোষণের শিকার হয়, বিশেষ করে তুলা চাষীরা তাদের কম বেতন দেয়।

পাকিস্তানের পরিবেশবাদী জাভেদ হুসেন ২০২২ সালের নভেম্বরে মিশরে জলবায়ু সম্মেলন কপ২৭-এ ‘পাকিস্তানে নারী তুলা বাছাইকারীদের শ্রম অধিকারের অগ্রগতি‘ শীর্ষক প্রকল্পের জন্যে মর্যাদাপূর্ণ ‘লিঙ্গ ন্যায়বিচার জলবায়ু সমাধান পুরস্কার’ পেয়ে একটি অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করেন। অলাভজনক সিন্ধু কমিউনিটি ফাউন্ডেশন (এসসিএফ) এর একটি প্রকল্পের প্রধান হিসেবে হুসেন চরম আবহাওয়া ও ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার দ্বৈত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি নারী তুলা বাছাইকারীদের অধিকার সুরক্ষিত করার জন্যে বছরের পর বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।

Photo: Javed Hussain. Used with permission.

ছবি: জাভেদ হুসেন। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

গ্লোবাল ভয়েসেস পাকিস্তানে নারী তুলা বাছাইকারীদের সাক্ষরতার দক্ষতা ও অধিকার উন্নত করার জন্যে তার কাজ সম্পর্কে ইমেলের মাধ্যমে জাভেদ হুসেনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সংক্ষিপ্ততা ও স্পষ্টতার জন্যে সাক্ষাৎকারটি সম্পাদনা করা হয়েছে।

গ্লোবাল ভয়েসেস (জিভি): আপনিই প্রথম ‘লিঙ্গ ন্যায়বিচার জলবায়ু সমাধান পুরস্কার’ জেতা পাকিস্তানি পরিবেশবাদী। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির দিকে আপনার যাত্রা সম্পর্কে আমাদের বলুন।

জাভেদ হুসেন (জেএইচ): জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থা জোরদার করার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু সচেতনতা, জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং শ্রম অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে নারী কৃষি শ্রমিকদের জন্যে একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তানসহ ১১৯টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ২৫৯টি সংস্থার মধ্যে যারা পুরষ্কারের জন্যে তাদের আবেদন জমা দিয়েছে তাদের মধ্যে শুধু তিনটি নারী ও লিঙ্গ কনস্টিটিউয়েন্সি, ইউএনসিটিসিএন, এবং সাধারণ ভবিষ্যতের জন্যে নারী সম্পৃক্ততা স্বীকৃতির জন্যে নির্বাচিত হয়েছে।

জিভি: পাকিস্তানে নারী তুলা বাছাইকারীদের নিয়ে আপনার প্রকল্প সম্পর্কে আমাদের বলুন।

জেএইচ: সিন্ধু কমিউনিটি ফাউন্ডেশন (এসসিএফ) পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ তুলা উৎপাদনকারী অঞ্চল মাতিয়ারি জেলার নারী তুলা শ্রমিকদের কাজের অবস্থার সুরক্ষা ও উন্নতির জন্যে নিবেদিত। প্রকল্পটির লক্ষ্য সাক্ষরতার দক্ষতার উন্নতি, অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও তুলা বাছাইয়ে নিযুক্ত নারীদের জন্যে নেটওয়ার্কের সুযোগ তৈরি, তাদের ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দাতব্য সংস্থা ফিড দ্য মাইন্ডস সমর্থিত প্রকল্পটি জেলার মধ্যে অবস্থিত দশটি গ্রামে কার্যকর করা হচ্ছে।

জিভি: নারী কৃষি শ্রমিকদের জন্যে জলবায়ু ন্যায়বিচার অর্জনে এসসিএফ কীভাবে কাজ করে?

জেএইচ: জীবিকার প্রধান উৎস হিসেবে প্রায় ১৫ লক্ষ ক্ষুদ্র কৃষক তুলা চাষের উপর নির্ভর করে। চাষযোগ্য জমির ১৫ শতাংশ জুড়ে থাকা তুলা দেশের সবচেয়ে ব্যাপকভাবে উৎপাদিত ফসল। তুলা শিল্পের বোঝা মূলত নারীদের উপর পড়ে। সিন্ধুতে পাঁচ লক্ষেরও বেশি নারী, বিশেষ করে মাতিয়ারিতে ৫০,০০০ তুলা বাছাইয়ে জড়িত। তাদের অবদান সত্ত্বেও তারা দরিদ্র ও শোষিত। তাদের স্বাস্থ্য বিষাক্ত কীটনাশকের অত্যধিক ব্যবহার করা বিপজ্জনক কাজের পরিবেশ থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার ওপর ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানো ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার বিরূপ প্রভাব, তাদের স্বাস্থ্য, শ্রম উৎপাদনশীলতা ও সামগ্রিক জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এই শ্রমিকদের জন্যে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিন্মমানের।

সাম্প্রতিক বন্যা সিন্ধুর জনগণের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে আনুমানিক এক কোটি ২০ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। জলবায়ু সংকটকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্যে এই লোকদের সীমিত অভিযোজন দক্ষতা ও জলবায়ু সাক্ষরতা ছিল। এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্যে সিন্ধু কমিউনিটি ফাউন্ডেশন (এসসিএফ) মাতিয়ারি জেলার পাঁচটি গ্রামে জলবায়ু পরিবর্তন সচেতনতা দক্ষতা তৈরিতে সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে এসসিএফ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই গ্রামে বসবাসকারী ৩৫৯ জন নারী তুলা শ্রমিকের কাছে পৌঁছেছে। প্রশিক্ষণের পর এসসিএফ নারী তুলা শ্রমিকদের আত্মবিশ্বাস, অভিযোজন দক্ষতা, নিরাপদ কাজের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি দেখতে পায়।

জিভি: কিভাবে এসসিএফ তার প্রকল্প বাস্তবায়নে নারীবাদী অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করে তার উপর আপনি কি অনুগ্রহ করে কিছু আলোকপাত করতে পারেন?

জেএইচ: সিন্ধু কমিউনিটি ফাউন্ডেশন ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রতিক্রিয়ায় উন্নত কাজের পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য পরিষেবা সমর্থনের জন্যে নারী কৃষি শ্রমিকদের – বিশেষ করে তুলা বাছাইকারীদের দাবিকে সমর্থন করতে একটি নারীবাদী অংশগ্রহণকারী কর্মকাণ্ড গবেষণা (এফপিএআর) পদ্ধতি ব্যবহার করে৷ পাকিস্তানের মাতিয়ারি জেলায় অবস্থিত ফাউন্ডেশনটি জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে সামাজিক ও জলবায়ু ন্যায়বিচারকে সংযুক্ত করে একটি উদ্ভাবনী প্রচারণা কৌশল তৈরি করেছে। একটি মূল উদ্দেশ্য হলো ১০০ জন নারী কৃষি শ্রমিকের জন্যে একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করা, তাদের জলবায়ু সচেতনতা, জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং শ্রম অধিকার সুরক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে সজ্জিত করা। চূড়ান্তভাবে এসসিএফ ২০২০ সালের সিন্ধু কৃষি নারী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের জন্যে নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।

এসসিএফ নারী নেতাদের নারীবাদী অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণা পদ্ধতি দিয়ে ক্ষমতায়নের প্রশিক্ষণ অধিবেশন পরিচালনা করে। এই অধিবেশনগুলি নারী তুলা বাছাইকারীদের সাথে ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় জড়িত ছিল। অ্যাডভোকেসি স্তরে আমরা জলবায়ু সুরক্ষার প্রচার এবং কাজের অবস্থা, পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শ্রমিকদের জন্যে বীমা উন্নত করতে নীতিনির্ধারকদের সাথে যোগাযোগ করেছি। ফলে সিন্ধু সরকার সিন্ধু নারী কৃষি কর্মী সুরক্ষা আইন ২০২০ নামে একটি আইন পাস করেছে৷ এই আইনটি বাস্তবায়নে কিছু বিলম্ব হওয়া সত্ত্বেও সম্মিলিত কণ্ঠে আমরা একটি নীতিতে পরিবর্তন অর্জন করতে পারি৷

জিভি: পাকিস্তানে জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থা জোরদার করার ক্ষেত্রে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

জেএইচ: আমরা সিন্ধুতে নারী তুলা শ্রমিকদের জলবায়ু সহনশীলতা উন্নত করা এবং তাদের জ্ঞান ও অভিযোজন দক্ষতা বাড়ানোর জন্যে নিবেদিত।

আমাদের উদ্যোগের লক্ষ্য হলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীর ক্ষমতায়ন করা। অন্তত ৬০০টি সাক্ষরতা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রায় ৩০,০০০ জন সাক্ষরতার দক্ষতা থেকে উপকৃত হচ্ছে। মৌলিক সাক্ষরতার পাশাপাশি, এই কেন্দ্রগুলি জলবায়ু সাক্ষরতা উন্নত করবে, পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াবে এবং কাজের পরিবেশ ও মরসুমের বাইরে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি প্রচার করবে। একইভাবে আমাদের মনোযোগ নারীদের নেতৃত্বে জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রচার, লিঙ্গ পরিবর্তন, জলবায়ু ন্যায়বিচার ও সহনশীলতা এবং নারী তুলা শ্রমিকদের শ্রম অধিকার সুরক্ষার দিকেও রয়েছে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আইন ও নীতির প্রতিশ্রুতি এবং সামাজিক নিরাপত্তা জাল বাস্তবায়নের জন্যে প্রচারণা চালানো এবং জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের (এনডিসি) সাথে সঙ্গতি বিধান করা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .