জিহাদি হুমকির মুখে সাহেল অঞ্চলের স্কুল শিক্ষকরা

বুর্কিনা ফাসোর (সাহেল অঞ্চলে) স্কুলে শিক্ষার্থীদের পর্দাছবি। টিভি৫ মন্ডে ইনফো ইউটিউব চ্যানেল

সাহেল অঞ্চলের জিহাদি সংঘাতের প্রভাব থেকে কোনো খাতই রেহাই পায়নি। এমনকি শিক্ষা খাতও সশস্ত্র গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড ও হুমকিতে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়।

সাহেল অঞ্চলের সংঘাত হলো জিহাদি ও ইসলামপন্থী গোষ্ঠী এবং পশ্চিম আফ্রিকার সরকারগুলির মধ্যে একটি সশস্ত্র সংঘাত যার মধ্যে কিছু কিছু দেশ ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক সমর্থন পায়। এই সংঘাত ২০০৩ সালে আবদেরাজাক এল পারার নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ৩২ জন জর্মন ও অস্ট্রীয় পর্যটককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পর থেকে শুরু হয়। আনুমানিকভাবে এসব সংঘর্ষে ১১ হাজারেরও বেশি বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছে।

সাহেল অঞ্চলের অস্থির নিরাপত্তা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করলেও এটি শিক্ষকদের দৈনন্দিন কাজে তাদের এতোটাই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে যাতে অনেকেরই মনে হয় প্রতিটি দিন যেন তাদের শেষ দিন। কেউ কেউ পরবর্তীকালে তাদের জীবন বাঁচাতে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, আবার কেউ কেউ তাদের পেশার প্রতি ভালোবাসা থেকে শিশুদের ভবিষ্যত রক্ষায় সংকল্পবদ্ধ হয়। সকলের জন্যে স্কুল শিক্ষার ধারণার সাথে তাদের আদর্শ সাংঘর্ষিক বলে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি বারবার তাদের জীবন নেওয়ার চেষ্টা করে, এমনটাই টিভি৫ মন্ডে ইনফোভিডিও প্রতিবেদন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বরাত দিয়ে ব্যাখ্যা করেছে:

জিহাদি হুমকিতে শিক্ষাবর্ষ

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে শুরু হওয়া শিক্ষাবর্ষটি সাহেল অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িতদের জন্যে সহজ ছিল না। বুরকিনা ফাসো, নাইজার, মালি, উত্তর বেনিন, টোগো ও নাইজেরিয়ার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের এই সশস্ত্র সংঘাতের গভীর প্রভাবের সাথে লড়াই করতে হয়েছে। জাতিসংঘের মতে ২০১৯ সালে এই অঞ্চলে স্কুলগুলিতে প্রায় ৫০০ হামলা চালানো হয় এবং ২০১৭ সাল থেকে আনুমানিক ৬,৫০,০০০ শিক্ষার্থী স্কুল বন্ধের কারণে প্রভাবিত হয়েছে।

নাইজারের বছরের শেষের পরীক্ষাগুলি দ্রুত এগিয়ে এলেও এই দেশের পশ্চিমাঞ্চলের স্কুলগুলিতে প্রবেশাধিকার এখনো চ্যালেঞ্জিং। টিলাবেরিতে, বা আরো বিশেষভাবে বুরকিনা ফাসো ও মালির সাথে নাইজারের ভাগাভাগি করা ত্রি-সীমান্ত অঞ্চলটিতে নিরাপত্তার কারণে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে

একটি তত্ত্বাবধায়ক পরিদর্শনের পর নাইজেরিয়ার জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রী, ইব্রাহিম নাটাটু প্রকাশিত পরিসংখ্যান নিরাপত্তার কারণে ২০২৩ সালের মে মাসে টিলাবেরির ৯২১টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকার ইঙ্গিত করে।

নাইজারের মাধ্যমিক শিক্ষার জাতীয় সরকারি ও  চুক্তিভিত্তিক কর্মী ইউনিয়নের (সিনাফেসেস) মহাসচিব লাবো সিবু গ্লোবাল ভয়েসেসের সাক্ষাৎকারে এই পর্যবেক্ষণটি নিশ্চিত করেছেন:

Le Niger est secoué ces dernières années par des attaques répétées au niveau de quatre régions à savoir : Tahoua, Maradi, Diffa et Tilaberi. Mais la situation s’est beaucoup dégradée au niveau de la zone des trois frontières du fait des actions des groupes terroristes, des écoles ont été fermées.

গত কয়েক বছর ধরে বারবার আক্রমণে নাইজারের চারটি নির্দিষ্ট অঞ্চল: তাহুয়া, মারাদি, ডিফা ও টিলাবেরি কেঁপে উঠলেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতার কারণে ত্রি-সীমান্ত অঞ্চলে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটায় স্কুলগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

লাবো সিবুর মতে এই পরিস্থিতি হাজার হাজার শিশুকে নাইজারের সংবিধানের ২৩ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত শিক্ষার অধিকারকে অস্বীকার করে।

আবালার দক্ষিণ-পশ্চিম বিভাগে ৪১টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে একত্রিশটি এবং শিক্ষকের অভাবে দশটি। গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে আবালার প্রিফেক্ট বিভাগ বুবাকার ওমারু বলেছেন:

Quand les enseignants partent, l’école ferme automatiquement. Ce n’est pas un bon signe pour nous parce que nous avons des milliers d’élèves. Environ 3 000 qui sont en train de chômer

শিক্ষকরা চলে গেলে স্কুলগুলি অনিবার্যভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এটি আমাদের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জন্যে ভাল নয়। বর্তমানে প্রায় ৩,০০০ ঝুলে আছে।

Iবুরকিনা ফাসোতে শিক্ষকরা একই ধরনের সন্ত্রাসী হুমকির সম্মুখীন। বুরকিনা ফাসো জাতীয় শিক্ষক ও গবেষক ইউনিয়নের ফেডারেশনের মহাসচিব সোলায়মানে বাদিয়ানের মতে দুটি চলমান সমস্যা রয়েছে। তিনি গ্লোবাল ভয়েসেসকে ব্যাখ্যা করেছেন:

Il n y a même pas eu d’année scolaire à proprement parler. Il y a quelques localités où les cours ont pu se dérouler mais difficilement, c’est-à-dire pas à un rythme défini par les normes.

এমনকি একটি শিক্ষাবর্ষও (বেঁচে) নেই। কিছু এলাকায় পাঠদান সম্ভব হলেও তা খুব কঠিন। বলা যায় মানসম্মত কোনো পদ্ধতিতে নয়।

বাদিয়ানের মতে দেশের ১৩টি প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিঘ্ন শুধু কেন্দ্রীয় অঞ্চল রাজধানী ওয়াগাডুগুর স্কুলগুলিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি।

একজন বুরকিনাবে সাংবাদিক জাকারিদিয়া সিরিবি টুইট করেছেন:

#শিক্ষা: @ইউনিসেফ_ফ্রান্সের মতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্ব ও হুমকির কারণে কেন্দ্রীয় সাহেল অঞ্চল ও লেক চাদ অববাহিকায় ১১,০০০টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এর ফলে লক্ষ লক্ষ শিশু নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রবেশ করতে পারেনি। @কালিদু

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব যন্ত্রের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে

এই জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে স্কুল পাঠ্যক্রম কীভাবে এগিয়ে নেওয়ার কথা ভাবা কঠিন। এই বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলিতে শিক্ষকদের নিরাপদ পাঠদান চালানো নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের সুরক্ষার ব্যবস্থা স্পষ্টতই অনুপস্থিত। নাইজারের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে লাবো সিবু ব্যাখ্যা করেছেন:

Il n’y a pas de soutien formel de l’État. On avait même demandé qu’il y ait des primes de motivations pour des zones d’insécurité mais jusque-là, l’État n’a rien prévu.

কোন আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় সমর্থন নেই। এমনকি অনিরাপদ এলাকার জন্যে আমরা চাওয়া প্রণোদনার ব্যাপারে রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি।

বুরকিনা ফাসোর ক্ষেত্রে বাদিয়েন আরো বলেছেন:

Face à ces menaces, nous ne recevons pas d’appui de la part des autorités. L’essentiel des investissements dans notre pays va ministère de la défense et de la sécurité.

এই হুমকি মোকাবেলা করার জন্যে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সমর্থন পাই না। আমাদের দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগ চলে যায় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের দিকে।

মুসা নামে পরিচিত (নাম প্রকাশ না করার জন্যে পরিবর্তিত) টিলাবেরির একজন শিক্ষকের মতে এই পরিস্থিতি সহ্য করা কঠিন:

Quand nous expliquons à nos supérieurs hiérarchiques que nous avons reçu des messages de fermer les écoles, des menaces de quitter le village, nous sommes mal compris. Ils nous demandent de retourner à nos postes dans nos villages sans quoi, nos contrats seront définitivement résiliés. D’un côté, nous sommes sous menaces terroristes, et de l’autre nous sommes sous la menace de l’administration.

আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতনদের স্কুল বন্ধ করার বার্তা ও গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার হুমকি পাওয়ার কথা বললে তারা আমাদের গুরুত্বের সাথে নেয় না। তারা আমাদের গ্রামে কাজে ফিরে যেতে বলে, নইলে আমাদের চুক্তি স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে। আমরা একদিকে সন্ত্রাসী হুমকি ও অন্যদিকে প্রশাসনিক হুমকির মধ্যে আছি।

আতঙ্ক ও আঘাত প্রতিদিন

সন্ত্রাসী ঝুঁকি ও হুমকি খুবই বাস্তব, বাদিয়েন যেমন ব্যাখ্যা করেছেন:

Dix-sept membres du personnel de l’éducation ont perdu la vie du fait de l’action des groupes armés terroristes. En plus de cette perte en vies humaines, il y a des traumatismes physiques. Certains ont été pourchassés, bastonnés parfois même devant leurs élèves. Il y a aussi des traumatismes psychologiques.

সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অভিযানে ১৭ জন শিক্ষা পেশাজীবী প্রাণ হারিয়েছে। এই প্রাণহানির পাশাপাশি শারীরিক আঘাতও রয়েছে। কয়েকজনকে খুঁজে হত্যা করা হয়েছে এবং কখনো কখনো তাদের শিক্ষার্থীদের সামনে মারধরও করা হয়েছে। মনস্তাত্ত্বিক আঘাতও আছে।

নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক পড়াতে না পারার কারণে এবং পরবর্তীতে সহজেই প্রাণ হারানোর ভয়ে এমন এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হলে এই আতঙ্কের উদ্ভব হয়। নিজেও বেশ কয়েকটি হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মুসা বলেন:

«Nous avons été menacés de fermer nos écoles et même de quitter le village définitivement. Il y a même un enseignant qui a été tué dans la commune d’Anzourou, située sur la frontière nigéro-malienne. Dans cette zone, les terroristes sévissent, des chefs de villages ont été tués et d'autres villages ont été abandonnés sous menaces terroristes.

“আমাদের স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়ার এবং এমনকি চিরতরে গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। মালি-নাইজার সীমান্তে আনজৌরু কমিউনে একজন শিক্ষকও নিহত হয়েছেন। এই এলাকায় সন্ত্রাসীদের দাপট রয়েছে। গ্রামের নেতাদের হত্যা করায় সন্ত্রাসী হুমকির কারণে অন্যান্য গ্রাম পরিত্যক্ত হয়েছে।”

লাবো সিবুর মতে শুধু সম্প্রদায়ের মধ্যে লুকিয়ে থেকে অথবা চিহ্নিত হওয়া এড়াতে ছেঁড়া কাপড় পরে কিছু শিক্ষক বেঁচে যায়। তিনি আরো বলেন:

Beaucoup de nos camarades ont été lâchement abattus par les terroristes du fait qu’ils enseignent aux enfants du Niger et que ces groupes sont contre l’enseignement moderne.

নাইজারে আধুনিক শিক্ষার বিরোধিতাকারী সন্ত্রাসী দলগুলি নির্মমভাবে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া আমাদের অনেক সহকর্মীকে হত্যা করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .