ফিলিপাইনে মহামারীর পরেও অধিকারের উপর অবরোধ অব্যাহত

Unblock the truth protest

ফিলিপাইনের কুয়েজন সিটিতে আদালতের শুনানির সময় গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ গোষ্ঠীগুলি অবরুদ্ধ ওয়েবসাইটগুলি মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে৷ বায়ানের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

অলাভজনক গণমাধ্যম, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতি সংস্থা এনগেজমিডিয়াতে প্রথমবার কাশিত রোনালিন ওলিয়ার এই নিবন্ধটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ এখানে গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির অংশ হিসেবে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে৷ মহামারী চলাকালীন ডিজিটাল প্রযুক্তি, নীতি ও নিয়ন্ত্রণের অন্যান্য ব্যবস্থা প্রণীত হয়েছিল। আজ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ “পুরানো স্বাভাবিক”-এ ফিরে এলেও প্রযুক্তিগত, নিয়ন্ত্রক এবং আদর্শিক নজরদারি ব্যবস্থা রয়েই গেছে। নিয়ন্ত্রণের মহামারী ধারাবাহিকের এই দ্বিতীয় সংকলনটি ডিজিটাল অধিকারের উপর কোভিড-১৯ সংকটের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের উপর আলোকপাত করে এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের ধারাবাহিক গল্প বলে।

ফিলিপাইনে তীব্র মহামারীর সময় প্রণীত কিছু ব্যবস্থা আজও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিশেষ করে সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বর দমনে ব্যবহৃত হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় কর্মীদের বৈধ প্রতিবেদন ও সমালোচনাকে “ভুয়া খবর” হিসেবে চিহ্নিত করার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। একজন পদস্ত সেনা কর্মকর্তা ২০২০ সালের জুনে ফিলিপাইন ডেইলি ইনকোয়ারারের প্রতিবেদক গ্যাব্রিয়েল লালুকে একজন কৃষকের মৃত্যুর বিষয়ে একটি নিবন্ধ নিয়ে “ভুয়া খবর লেখার” দায়ে অভিযুক্ত করেন। একটি ফেসবুক পোস্টে সেনা কর্মকর্তা লালুকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি ফিলিপাইনের কমিউনিস্ট পার্টির সশস্ত্র শাখা নিউ পিপলস আর্মির (এনপিএ) প্রচারক কিনা।

ফিলিপাইন জাতীয় পুলিশ ২০২০ সালের এপ্রিলে সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চের মাধ্যমে “ভুয়া খবর” ছড়ানোর জন্যে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে সংশোধিত দণ্ডবিধির ১৫৪ ধারা এবং প্রজাতন্ত্র আইন (আরএ) ১০১৭৫ বা সাইবার অপরাধ বিরোধী আইনের আওতায় প্রকাশনার অবৈধ উপায় ব্যবহার ও বৈধ উচ্চারণের অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন হলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক জুলিয়েট এস্পিনোজা, যিনি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন জেনারেল সান্তোস শহরের লোকেরা ক্ষুধার্ত।

সাংবাদিক ও আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছে আরএ ১১৪৬৯-এর “ভুয়া খবর” বিধানে স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় রাষ্ট্রপতিকে জরুরি ক্ষমতা প্রদান “বাক স্বাধীনতাকে অপরাধী করে তুলতে পারে।” একটি যৌথ বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেছে: “আসলে আইনটি সরকারের উপর সত্যাসত্য বিচার ছেড়ে দেবে – যা এমন একটি সম্ভাবনা যার উপর আস্থা রাখা যায় না, কারণ অতীতে প্রধান নির্বাহীসহ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা বিভ্রান্তি ও ভুল তথ্যের উৎস হয়েছে।”

আরএ ১১৪৬৯-এর কার্যকারিতা জুন ২০২০-এ শেষ হলেও মহামারী চলাকালীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা এই আইনের ব্যবহার বিদ্যমান আইনগুলিতে এই অধিকার-লঙ্ঘনকারী বিধানটি অন্তর্ভুক্ত করে চলমান বিধিনিষেধগুলিকে স্বাভাবিক করার পথ প্রশস্ত করছে৷ একজন সিনেটর “ভুয়া খবর” তৈরি ও প্রচারকে অপরাধীকরণ অন্তর্ভুক্ত করার জন্যে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ আইন সংশোধন করার জন্যে একটি খসড়া আইন দাখিল করেছেন।

খসড়া আইনটি পাস হলে সেন্সরের জন্যে ব্যবহৃত হতে পারে বলে ফিলিপাইনের জাতীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন (এনইউজেপি) সতর্ক করেছে

আইনি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস

কঠোর লকডাউন চলাকালীন ২০২০ সালে আরো নিবর্তনমূলক আইন সন্ত্রাস বিরোধী আইন (এটিএ) প্রণয়ন করা হয়েছে। সমালোচকরা উল্লেখ করেছে আইনটিতে সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা অস্পষ্ট ও বেশি বিস্তৃত এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

সংগঠনগুলির একটি বিস্তৃত জোট এটিএ চ্যালেঞ্জ করলেও সর্বোচ্চ আদালত দুটি বিধান ছাড়া আইনটির সাংবিধানিকতা সমুন্নত রেখেছে: ৪ ধারার যোগ্যতার অংশে ক্ষতি বা মৃত্যু ঘটানোর অভিপ্রায় পাওয়া গেলে ভিন্নমতকে সন্ত্রাসী কাজ বলে গণ্য করা হবে। উচ্চ আদালত এটিকে “অতি বিস্তৃত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনকারী” বলে তা বাতিল করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে আইনটি বিপজ্জনক ও মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ। পাসের প্রায় তিন বছর পরে আইনটি আদিবাসী, কৃষক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে।

সন্ত্রাসী অপবাদ ও সেন্সর

গ্রেপ্তার ছাড়াও এটিএ সন্ত্রাসবিরোধী পর্ষদকে (এটিসি) জনগণ ও সংস্থাকে সন্ত্রাসী হিসেবে মনোনয়নের ক্ষমতা দিয়েছে৷ সমালোচকরা বলছে এটি অপব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে। সক্রিয় গোষ্ঠী ব্যাগং অ্যালিয়ানসাং মাকাবায়ান এটিসির মাপকাঠিকে “স্বেচ্ছাচারী, কোনো স্পষ্ট মান, কোনো নির্দিষ্ট সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে উদ্ধৃত না করে শুধু একটি ব্যাপক অভিযোগ” হিসেবে বর্ণনা করেছে

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এটিসি শান্তি আলোচনা চলাকালীন ফিলিপাইন সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরকারী ফিলিপাইনের জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে মনোনীত করেছে। এটিসি বানোয়াট অভিযোগে আটককৃতসহ শান্তি পরামর্শদাতাদেরও সন্ত্রাসী হিসেবে মনোনীত করেছে।

উত্তর মিন্দানাওতে আদিবাসীদের সেবা প্রদানরত কমিউনিটি চিকিৎসক নাটি কাস্ত্রোকে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কাস্ত্রোকে অপহরণ ও গুরুতর অবৈধ আটক রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে আটক রাখা হলেও একটি আদালত তার বিরুদ্ধে মামলাগুলি বাতিল করলে অবশেষে ২০২২ সালের মার্চ মাসে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়

এটিসির সিদ্ধান্তগুলিও সেন্সরের ন্যায্যতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে জাতীয় টেলিযোগাযোগ কমিশন (এনটিসি) একটি স্মারকলিপি জারি করে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদেরকে কথিত সন্ত্রাসী সংযোগের ২৭টি ওয়েবসাইট অবরোধের নির্দেশ দেয়। তিনটি এটিসি সিদ্ধান্তের উদ্ধৃতি দিয়ে তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হারমোজেনেস এস্পেরন জুনিয়র এনটিসি-কে এক তালিকা ওয়েবসাইট অবরোধের “অনুরোধ” করে লেখার পর এনটিসি স্মারকলিপিটি জারি করে৷

এস্পেরনের তালিকার গণমাধ্যম সংগঠন বুলাতলাট ও সাপ্তাহিক পিনয়, প্রগতিশীল গোষ্ঠী বায়ান, পামালকায়া, আমিহান এবং ফিলিপাইনের গ্রামীণ মিশনারিজ ইত্যাদির মতো বেশিরভাগ ওয়েবসাইট এমনকি সন্ত্রাসী হিসেবে মনোনীতও নয়।

পূর্ব বিজ্ঞপ্তি বা যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই ওয়েবসাইটগুলি অবরোধ করা হয়। এটিএ বা সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ আইনে সরকারি সংস্থাগুলিকে ওয়েবসাইট ব্লক করার অনুমতি দেওয়ার বিধান নেই৷ বুলাতলাট এনটিসি স্মারকলিপির বাতিল চেয়ে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেছে।

শীতল প্রভাব

মহামারী চলাকালীন আরোপিত বিধিনিষেধ ও দমনমূলক ব্যবস্থা জনগণের উপর একটি শীতল প্রভাব ফেলেছে। বিশেষত লকডাউনের সময় সমালোচক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বিচ্ছিন্ন ও অসম্মান করতে সরকারি কর্মকর্তারা এবং সামাজিক গণমাধ্যমে তাদের ট্রলগুলি লাল-চিহ্নিতকরণ ও সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়ার আশ্রয় নেয়। সন্ত্রাসবিরোধী খসড়া আইনের জন্যে বিতর্কের সময় এই ধরনের লাল চিহ্নিতকরণ তীব্রতর হয়, তাদের বিরোধিতায় সোচ্চারদের কমিউনিস্ট ও সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গির্জার নেতা, সাংবাদিক, মানবিক সহায়তা কর্মী, এমনকি শিল্পীরাও এধরনের আখ্যা থেকে রেহাই পায়নি।

ফিলিপাইনে লাল চিহ্নিতকরণ প্রায়শই ক্ষতির দিকে পরিচালিত করে। মানবাধিকার গোষ্ঠী কারাপাতান জানিয়েছে, গুলি করে হত্যার আগে অন্তত ৪২৭ সক্রিয় কর্মীকে লাল চিহ্নিত করা হয়। লাল চিহ্নিত অন্যান্যদেরও সন্দেহভাজন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নজরদারি ও হুমকির শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়।

নতুন প্রশাসনেও একই নীতি

নতুন মার্কোস প্রশাসনের অধীনে মানবাধিকার সম্পর্কিত নীতিগুলিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই বলে মনে হচ্ছে। এটিএ এখনো কার্যকর; রেড- চিহ্নিতকরণের মতো বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার দমন অব্যাহত আছে।

প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মার্কোস জুনিয়র স্বাক্ষরিত প্রথম আইন সিম কার্ড নিবন্ধন আইন পাস হওয়ার সাথে সাথে ডিজিটাল স্থানে একটি নতুন হুমকি দেখা দিয়েছে। গোপনীয়তা, ডেটা নিরাপত্তা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের উপর প্রভাবের জন্যে মানব ও ডিজিটাল অধিকার গোষ্ঠীগুলি এই পদক্ষেপের জন্যে সতর্কতা বাড়িয়েছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো আশঙ্কা করছে এতে এটিএর সাথে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রীয় নজরদারি প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়েছে।

এই উদাহরণগুলি ব্যাখ্যা করে কীভাবে মারাত্মকভাবে ভাইরাস সংক্রামিত ফিলিপাই্নের মহামারী যুগে প্রণীত ব্যবস্থাগুলি এখন ফিলিপাইনবাসীর নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের উপর বোঝা হয়ে আছে। এই নীতিগুলির সম্পূর্ণ প্রভাব ও অপব্যবহারের সম্ভাবনা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠায় অধিকার-লঙ্ঘনকারী নীতিগুলিকে স্বাভাবিক করার জন্যে ফিলিপাইনের মানব ও ডিজিটাল অধিকার সমর্থকদের এই প্রচেষ্টাগুলি প্রতিরোধের প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে৷

*রোনালিন ওলিয়া হলেন ফিলিপাইনের বিকল্প অনলাইন সংবাদ প্রকাশনা বুলাতলাটের প্রধান সম্পাদক। তিনি এনইউজেপিরও মহাসচিব।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .