থাইল্যান্ডে মনোনীত ট্রান্স নারী সাংসদ লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্তি আরো এগিয়ে নিচ্ছেন

Paramee “Juang” Waichongcharoen

পারমি “জুয়াং” ওয়াইচংচারোয়েন। ছবি প্রচাতাই থেকে

মূলত থাইল্যান্ডের একটি স্বাধীন সংবাদ সাইট প্রচাতাই প্রকাশিত পাতপন সাবপাইতুনের এই সম্পাদিত নিবন্ধটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ গ্লোবাল ভয়েসেস একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগির চুক্তির আওতায় পুনঃপ্রকাশ করেছে।

থাইল্যান্ডে গণমাধ্যম ও জনসাধারণ প্রায়শই নারীদের চেহারা বা তারা কীভাবে পোশাক পরে বা কীভাবে আচরণ করে সেদিকে মনোযোগ দেওয়ায় নারীরা দীর্ঘকাল “অলঙ্কারিক” বিবেচিত হলেও এতে এলজিবিটিকিউ+ প্রতিনিধিত্ব প্রায় অস্তিত্বহীন। এলজিবিটিকিউ + সম্প্রদায়ের অনেকেরই একই পরিণতি বা আরো খারাপ। গত নির্বাচনে তিনজন স্বঘোষিত এলজিবিটিকিউ+ সদস্যের সংসদীয় আসনে জয় সম্প্রদায়ের জন্যে একটি যুগ-সন্ধিক্ষণ বয়ে এনেছে।

আই-ল অনুসারে পুরুষ-শাসিত থাই রাজনীতিতে নারী সাংসদের সংখ্যা প্রতিনিধিদের মাত্র ১৫.৪ শতাংশ, অর্থাৎ ২০২২ সালে ৪৭৪ জন মোট সদস্যের মধ্যে মাত্র ৭৩ জন নারী। সেই সংখ্যার মধ্যে তিনজন স্বঘোষিত এলজিবিটিকিউ+ সাংসদ মোটের মাত্র ০.৬৩ শতাংশ।

তবে গত মাসে মুভ ফরোয়ার্ড দলের প্যারামি “জুয়াং” ওয়াইচংচারোয়েন ট্রান্সনারী হিসেবে পার্টি তালিকার সাংসদ প্রার্থী নির্বাচিত হলে থাই এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের জন্যে আরেকটি জয়ের সূচনা হয়। বিরোধী দল সংসদ নির্বাচনে সর্বাধিক সংখ্যক আসন জয়ের ফলে সামরিক-সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে।

জীবনের বেশিরভাগ সময় শিক্ষা নিয়ে কাজ করে মনোনীত সাংসদ দলের শিক্ষানীতি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্ত নীতির পক্ষে সমর্থনের জন্যে অন্যান্য এলজিবিটিকিউ+ সাংসদ মনোনীতদের সাথেও কাজ করবেন।

ব্যাং স্যুতে ওয়াত সোয় থংয়ের নিকটবর্তী একটি ঘিঞ্জি পাড়ায় বেড়ে ওঠা পারমি অল্প বয়স থেকেই জীবনে উন্নতির হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারেন। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

পরে তিনি জানতে পারেন রাজকীয়তা ও আভিজাত্যের গভীরভাবে সংযুক্ত ঐতিহ্যে নিজেকে গর্বিত করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরিধান ও নির্দিষ্ট নিয়ম ও মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতি বিধান প্রত্যাশিত ছিল। রূপান্তরিত লিঙ্গ শিক্ষার্থীদের তাদের জৈবিক লিঙ্গ অনুযায়ী পোশাক পরতে এবং কাজ করতে হতো। সেই অভিজ্ঞতা আজও তাকে তাড়িত করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্ববিদ্যালয় তার অনেক কঠোর নিয়ম শিথিল করলেও এতে একটি রক্ষণশীল ভাব বিরাজ করছে, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিকতার সাথে যুক্ত কিছু অনুষদে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা অনুষদ যেখানে পারমি পড়াশোনা করেছেন।

জন্মলগ্ন থেকে অনুষদটি ভেতর থেকে অগণিত এলজিবিটিকিউ+ শিক্ষার্থীদের পৃষ্ঠপোষণ করলেও শিক্ষার্থীরা তাদের জৈবিক লিঙ্গ অনুসারে পোশাক পরবে ও “সেই অনুযায়ী আচরণ করবে” বলে কিছু কিছু অনুষদ সদস্য এখনো জোর দেন। পারমির সময়ে যখন এই প্রথা প্রচলিত ছিল তখন তাকে ছোট চুলের পরচুলা পরতে হতো। ২০২০ সালে একজন রূপান্তরিত লিঙ্গ শিক্ষার্থী অনুষদের গভর্নিং বডিতে আবেদন করার পরে এই নিয়মটি সম্প্রতি বাতিল করা হয়।

এটিই শিক্ষায় একটি সাধারণ ক্যারিয়ারের অনুসরণ করতে চাওয়া রূপান্তরিত লিঙ্গ শিক্ষার্থীদের ভাগ্যের ফলাফল। থাই ব্যবস্থায় আপনি একজন শিক্ষক হতে চাইলে হয় আপনাকে লিঙ্গের ধরাবাঁধা নিয়ম মেনে চলতে হবে নয়তো আপনাকে দরজা দেখিয়ে দেওয়া হবে।

তিনি যতোটা শিক্ষক হতে চেয়েছেন ততোটাই তিনি নিজে যা তার প্রতি অনুগত থাকতে চেয়েছেন। তিনি ছোট চুল ও পুরুষদের পোশাক পরা সহ্য করতে পারতেন না।

অতএব ১৯৯৩ সালে তিনি শিক্ষায় স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর যখন তার বেশিরভাগ সহকর্মী পেশাজীবী শিক্ষক হয়ে ওঠে তখন তিনি প্রথাগত পথ প্রত্যাখ্যান করে একজন গৃহশিক্ষক ও ব্যক্তিগত শিক্ষক হন। এখন ২৭ বছর ধরে তিনি থাইল্যান্ডের উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষাদান করে জীবনযাপন করছেন।

পরিচয় লুকিয়ে রাখার বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার পরেও তিনি আরো সহনশীল শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে সমর্থন জানানোর আশা করেন যেখানে সকল লিঙ্গের লোকেরা বৈষম্য ছাড়াই তাদের নির্বাচিত জীবনধারা অনুসারে জীবনযাপন করতে পারে।

থাই সমাজ এলজিবিটিকিউ+ লোকেদের জন্যে উন্মুক্ত বলে মনে হলেও জীবনের নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করেপেশাদার ক্ষেত্রে বৈষম্য এখনো বিস্তৃত। আপনার পরিচয় নিয়ে সত্যতার সাথে বেঁচে থাকার অর্থ হতে পারে কিছু সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়া। নিজের মতো করে বাঁচতে একজনকে অনেক পছন্দ ত্যাগ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেছেন:

সরকারি কর্মচারী একজন ট্রান্স নারী একজন নারীর মতো পোশাক পরতে পারবেন না। শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নয় বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে এখনো এমনটি রয়েছে। আপনি শুধু নারী হিসেবে পোশাক পরতে পারবেন না। আপনাকে অবশ্যই পুরুষদের পোশাক ও চুলে সাক্ষাৎকার দিতে হবে। পরচুলা পরে পুরুষ হিসেবে পোষাক পরতে হবে. … আপনার অধিকর্তা কতোটা উন্মুক্ত মনের সেটা বুঝে আপনাকে চলতে হবে।

“আপনার জীবন হবে একটি লটারির টিকিট কেনার মতো,” তিনি আরো বলেছেন।

তবে তিনি জানেন বড় পরিবর্তন করতে হলে ছোট ছোট পদক্ষেপ প্রয়োজন। ন্যূনতম বাঁধার সম্মুখীন না হয়ে লোকদের তাদের ইচ্ছেমতো পোশাক পরতে পারা উচিত, তিনি বলেন। এটিকে বাস্তবে পরিণত করতে তিনি আইন দিয়ে শুরু করবেন, সঙ্গতি বিধানের সুযোগের জন্যে নিয়ম ও প্রবিধানগুলি অধ্যয়ন করবেন এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তনগুলিকে প্রভাবিত করবেন৷ তিনি তার পরিকল্পনা ভাগাভাগি করেছেন:

সমতার জন্যে আমি অন্যান্য সংসদ সদস্যদের ধাক্কা দেবো। শুধু রাষ্ট্রীয় খাতে নয় বেসরকারি খাত কখনো কখনো বড় বড় রক্ষণশীল সংস্থাগুলিও এলজিবিটিকে তাদের পছন্দের লিঙ্গ প্রদর্শনের ক্ষমতা দিতে সাহস করে না।

ট্রান্সনারী ও দলীয় তালিকার সাংসদ প্রার্থী মুভ ফরোয়ার্ডের পারামি ওয়াইচংচারোয়েন তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন শিক্ষার কাজে। তাকে এখন পার্টির শিক্ষানীতি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি আরো লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্ত সমাজ সমর্থনের অঙ্গীকার করেছেন।

মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি পারমিকে অন্য দুই সাংসদর সাথে শিক্ষা নীতি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি বলেছেন তিনি আরো সমান শিক্ষা সমর্থনের বিষয়ে অনড় যেখানে লোকেরা অবস্থান নির্বিশেষে মানসম্পন্ন শিক্ষা পেতে পারে। একজন সাংসদ হিসেবে তার ভূমিকায় তিনি এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অন্যান্য সাংসদদের সাথে লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্ত নীতিগুলি পরিচালনা করতে সহায়তা করবেন। সমলিঙ্গের বিবাহ খসড়া আইনের পাশাপাশি তিনি ট্রান্স জনগণের লিঙ্গ অনুসারে উপাধি ব্যবহার করার পক্ষে ওকালতি করার লক্ষ্য রাখেন।

সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে পৌঁছানো একটি উজানমুখী যুদ্ধ হলেও তিনি মনে করেন ধীরে ধীরে সংলাপ ও উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে এই পরিবর্তনটি হবে। পারমি একটি লিঙ্গ পার্থক্য সচেতন আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ দেখতে চান। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন:

আমি বোঝাপড়া তৈরি করতে চাই। আমি ছকেবাঁধা চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের একটি বোঝাপড়া তৈরির কথা বলতে চাই।

পারমি মনে করেন সমাজকে আরো অন্তর্ভুক্ত করতে রাজনীতিতে এলজিবিটিকিউ+ জনগণের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক এলজিবিটিকিউ+ জনগণকে উৎসাহিত করেন।

থাই শিক্ষায় অভিজ্ঞ বিবেচিত হলেও পারমি রাজনীতিতে তুলনামূলকভাবে নতুন। তিনি এই চ্যালেঞ্জপূর্ণ পরিবেশে বিচরণ করতে শিখলেও প্রভাবের জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করতে গিয়ে তিনি জেনেছেন এমন কিছু লোক থাকবে যারা তার পার্থক্যকে গ্রহণ করবে না। মনোনীত সংসদ সদস্য বলেন:

আমি নীতিতে বিশ্বাসী। নীতিগতভাবে আমার কাজ সঠিক হলে কে কী বলে তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি কিছু ভুল করলে আপনি আমার সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু আপনি আমার জীবনের পছন্দগুলিকে সমালোচনা করতে পারবেন না, কারণ এটি আমার অধিকার।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .