নারী-নেতৃত্বাধীন আইনসভা সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একটি ছোট স্পেনীয় শহরকে পুনরুজ্জীবিত করেছে

স্পেনের অ্যাঙ্গুয়েস পৌরসভার পূর্ণাঙ্গ সভায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে প্রার্থিতা উপস্থাপন করছে এএমপিএমএ সদস্যরা। বাম থেকে ডানে: আনা রুইজ, মারিয়া জেসুস অগাস্টিন, হারমিনিয়া ব্যালেস্টিন, অ্যাডেলা আলফারো এবং মারিলা আরাউজো। ছবির সম্পাদনা করেছেন ফ্রান্সিসকো লোমেরো, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

জুনের মাঝামাঝি একটি সর্ব-নারী স্বাধীন গোষ্ঠী অ্যাঙ্গুয়েস পৌরসভার জন্যে নারীরা (এএমপিএমএ) ২৮ মে, ২০২৩-এর পৌরসভা নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর স্পেনের ছোট আরাগোনীয় শহর অ্যাঙ্গুয়েসে দ্বিতীয় মেয়াদে নেতৃত্ব শুরু করবে। তাদের কার্যকাল স্পেনের আজকের গণতন্ত্রের সবচেয়ে অনন্য রাজনৈতিক ঘটনা।

এএমপিএমএ মোট ২৫৪টি ব্যালটের মধ্যে ১৪৮টি ভোট পেয়েছে যা অ্যাঙ্গুয়েস, বেস্পেন এবং ভেলিলাস শহর নিয়ে গঠিত হুয়েস্কা প্রদেশের অ্যাঙ্গুয়েস পৌরসভার ৫৮.৭৩ শতাংশ ভোটের প্রতিনিধিত্ব করে।

Resultados elecciones locales Municipio de Angüés 2023

২০১৯-২০২৩ সালের তুলনামূলক ফলাফলের ছবি এবং অ্যাঙ্গুয়েস নগর পর্ষদের নতুন গঠন। উৎস: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৮ মে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক সাইট (২ জুন, ২০২৩)।

বিভিন্ন কারণে তাদের প্রশাসন একটি খুব বিশেষ রাজনৈতিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে: তারা ২০১৯ সালে অনুপস্থিতির উচ্চ হারে প্রতিফলন করা ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উদাসীনতা হ্রাস করে সেই বছর পৌরসভায় ৭৬.৮৭ শতাংশ (শুধু এই বছর ৮০.৩৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে) ভোটদান রেকর্ড করে কোনো বিরোধিতা ছাড়াই একটানা ১৬ বছর ধরে শাসন করে আসা ঐতিহ্যবাহী স্পেনীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক পার্টিকে (পিএসওই) দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে ক্ষমতাচ্যুত করে। তবে নিঃসন্দেহে পৌরসভায় অনিবার্য প্রতিভাত জনসংখ্যা কমে যাওয়া বন্ধ (এবং বৃদ্ধি শুরু) করাই তাদের সবচেয়ে বড় বিজয়।

২০১৯ সালের নির্বাচনে যা কেউ আশা করেনি

বিরোধিতা ছাড়াই ২০০৩ সাল থেকে পৌরসভা শাসন করা পিএসওই তালিকাকে পরাজিত করা ছিল হারমিনিয়া ব্যালেস্টিন (আঙ্গুয়েসের বর্তমান মেয়র) এর নেতৃত্বে এএমপিএমএ নারীদের প্রথম বিজয়।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গোষ্ঠীটির কোনো সম্পর্ক নেই; প্রতিটি সদস্যের নিজস্ব রাজনৈতিক ধারণা রয়েছে। তার ওপর শুধু ইতোমধ্যে পিএসওই এর একজন কাউন্সিলর থাকা  প্রবীণ হারমিনিয়া ব্যালেস্টিন বাদে তাদের বেশিরভাগেরই আইনসভা পরিচালনার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। এই বছর বিকল্প তালিকা প্রস্তুতকারী পারিষদ মারিয়া ডি মার্কো মনে করিয়ে দেন:

Cuando nos presentamos no teníamos programa ni prácticamente sabíamos qué se podía hacer. Podíamos proponer cosas, pero no sabíamos cómo funcionaba un ayuntamiento.

আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সময় আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না এবং কার্যত আমরা জানতাম না কী করা যায়। আমরা কিছু প্রস্তাব করতে পারলেও আমরা জানতাম না কিভাবে একটি নগর পর্ষদ কাজ করে।

আসলে অনেকে ভেবেছিল নারীদের একটি গোষ্ঠী আর কতোদিন টিকে থাকবে এবং রসিকতা ও যৌনতাবাদী মন্তব্যের অভাব ছিল না। “আমি সমস্যাটি ইতোমধ্যে কাটিয়ে ওঠার কথা ভাবলেও তত্ত্ব আর বাস্তবতার ফারাক আছে, বিশেষ করে একটি ছোট শহরে,” স্পেনীয় গণমাধ্যম লা সেক্সতাকে বলেছেন ব্যালেস্টিন।

চারটি বছর ও একটি মহামারীর পরে নারীদের এই গোষ্ঠীটি প্রমাণ করেছে তারা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ স্বাস্থ্য সংকটগুলির একটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম এবং তার ওপর তারা অসম্ভব মনে হওয়া জনসংখ্যা রোধ মোকাবেলা করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের অদম্য সমর্থন জিতে তাদের ছোট পৌরসভায় জীবন ফিরিয়ে এনেছে

“খালি স্পেনের” একটি গ্রামের সবচেয়ে বড় অর্জন

অ্যাঙ্গুয়েস, স্পেন, লেখকের তোলা ছবি।

জাতীয় পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান (আইএনই) থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ১৯০০ সাল নাগাদ অ্যাঙ্গুয়েসের বাসিন্দা ১০২২ জন হলেও ২০ এর শতকে জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি হারায়। শুধু ২১ শতকের প্রথম দুই দশক পর্যন্ত এই প্রবণতা অ্যাঙ্গুয়েস ছাড়াও স্পেনের বেশ কয়েকটি গ্রামীণ এলাকাতেও অব্যাহত ছিল। এটি মূলত বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে বর্তমান দিন পর্যন্ত অব্যাহত গ্রাম থেকে শহরমুখী যাত্রার কারণে ব্যাপকভাবে অভিবাসনের শিকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত “খালি স্পেন (এস্পানা ভ্যাসিয়াদা)” নামে পরিচিত একটি ধারণা।

এএমপিএমএ ২০১৯ সালে প্রথমবার আইনসভা জেতার সময় সমগ্র পৌরসভায় মাত্র ৩৫৪ জন বাসিন্দা ছিল। আনন্দের বিষয় সেই প্রবণতাটি শুধু ধীরগতির নয় বরং সকল সমস্ত প্রতিকূলতার বিপরীতে ধীরে ধীরে উল্টে যাচ্ছে: সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুসারে ১ জানুয়ারি, ২০২২ সালে অ্যাঙ্গুয়েসের জনসংখ্যা হয় ৩৬৮ জন এবং এই বছর এটি ৩৮৭ তে পৌঁছেছে বলে অনুমান করা হয় যা গত চার বছরে প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করবে।

গোষ্ঠীটির উদ্যোগের বিষয়ে হারমিনিয়া ব্যালেস্টিন পেরিওডিকো ডি আরাগনকে বলেছেন: “আমি কিছুটা পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম এবং আমরা ভেবেছিলাম নারী ব্যবস্থাপনা কেমন তা দেখানোর জন্যে এই গোষ্ঠী গঠন খুবই আকর্ষণীয় হবে।”

আইনসভা গ্রহণ করার পর ২০১৯ সালে তারা প্রথম কাজ হলো মেয়রের বেতন বাতিল এবং নগর পর্ষদ প্রদত্ত কাউন্সিলরদের সেল ফোন, ক্রিসমাস বোনাস ও ক্রিসমাস ডিনার অপসারণ করে পদগুলিকে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী করা যা থেকে প্রতি বছর এলাকাটির প্রায় ১২,০০০ ইউরো (প্রায় ১৪,0০,০০০ টাকা) সাশ্রয় হয়। এছাড়াও তারা টাউন হলে সৌর প্যানেল স্থাপন ও রাস্তার আলো পরিবর্তন করে শক্তি খরচ কমিয়েছে।

বাসিন্দাদের আকৃষ্ট করে ধরে রাখতে তারা তরুণদের মুক্তির জন্যে একটি কর্মসূচি এবং একটি প্রকল্প তৈরি করে যার মাধ্যমে পৌরসভা সেখানে বসতি স্থাপন করতে ইচ্ছুক পরিবারগুলিকে সাশ্রয়ী মূল্যের ভাড়া প্রস্তাব করার জন্যে বেদখলকৃত বাড়িগুলি অধিগ্রহণ করে পুনর্বাসন করে। এখন পর্যন্ত তিনটি বাড়ি নেওয়া হয়েছে, এবং চতুর্থটি সংস্কার করে এই বছর প্রস্তাব করা হবে৷

একটি গ্রাম মারা যাওয়ার নির্ধারক একটি উপসর্গ হলো একটি স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া। কিন্তু অ্যাঙ্গুয়েসে আসা নতুন পরিবারগুলিতে শিশু জনসংখ্যা বাড়ায় একটি বিনামূল্যে স্কুল সহায়তা কর্মসূচি তৈরি, বেস্পেনে (পৌরসভার তিনটি গ্রামের একটি) একটি নতুন খেলার মাঠ স্থাপন, পৌর গ্রন্থাগার পুনরায় চালু এবং কাজের প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তাদের জন্যে কর্মশালার বিকাশসহ স্থানীয় বিদ্যালয়কে সম্প্রসারণ করে ২ বছর বয়সীদের একটি শ্রেণীকক্ষ খুলতে হয়েছে।

তারা সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড যেমন কনসার্ট, বক্তৃতা এবং সেমিনার, আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, শিশু ও পারিবারিক অনুষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী উৎসব এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে সামাজিক জীবন ও নাগরিকদের অংশগ্রহণকে উদ্দীপিত করার চেষ্টা করে।

উন্নতির জন্যে সময় লাগলেও সেসব ধারাবাহিক ও দৃশ্যমান ছিল। বাজেট খুবই সীমিত থাকায় তারা নিজেরাই অনেক কাজ করেছে: “আপনাকে এটি করার পরিষেবার জন্যে একটি ফোন কল করতে হবে, কারণ আপনি সবকিছুর যত্ন নিলেও আপনি একটি ইউরোও দেখতে পান না,” ব্যালেস্টিন তার প্রথম পরিচালনাকে “তৃপ্তিদায়ক” হিসেবে মূল্যায়ন করে বলেছেন

চার বছরের অভিজ্ঞতা ও অর্জনের প্রতি সন্তুষ্টি নিয়ে গোষ্ঠীটি নতুন প্রস্তাবনার মাধ্যমে তার পুনরুজ্জীবনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার আশায় দ্বিতীয় মেয়াদে চলে গেছে এই বিশ্বাসে যে এখন নাগরিকরা তাদের আরো বেশি বিশ্বাস করবে।

তাদের প্রচেষ্টা ব্যালটের চূড়ান্ত ফলাফলের মাধ্যমে পুরস্কৃত হয়ে তাদের দ্বিতীয় মেয়াদে নিশ্চিত করেছে। হারমিনিয়া ব্যালেস্টিন আশ্বাস দিয়েছেন:

Los pueblos están más vivos que nunca y solo hay que demostrarlo. Esta es nuestra forma de pensar y en esto basamos nuestro trabajo.

আমাদের শুধু দেখাতে হবে গ্রামগুলি আগের চেয়ে জীবন্ত। এটা আমাদের চিন্তা করার উপায় এবং আমরা এর উপর ভিত্তি করেই কাজ করি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .