যুক্তরাজ্যের লুটের ধন ধার দেওয়ার বিষয়ে ঘানাবাসীদের প্রতিক্রিয়া

প্রথমবারের মতো ১৫০ বছরের মধ্যে ব্রিটেনের চুরি করা আসান্তে (অশান্তি) রাজ্যের স্বর্ণ ও রৌপ্য রাজচিহ্নগুলি সাময়িকভাবে ফেরত দেওয়া হবে। সামাজিক গণমাধ্যমে ঘানাবাসীরা এই ঋণ চুক্তি নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

বিবিসি জানিয়েছে, আসান্তে রাজার রজত জয়ন্তী স্মরণে এই বছরের শেষের দিকে ঘানার কুমাসি শহরের মানহিয়া প্রাসাদ যাদুঘরে জিনিসগুলি প্রদর্শনের জন্যে নির্ধারিত রয়েছে। এটি গত বছর রাজা চার্লস তৃতীয়ের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদানকারী  আসান্তেনি নামে পরিচিত বর্তমান আসান্তে রাজা ওটুমফো ওসেই টুটু দ্বিতীয়ের  একটি তিন বছরের ঋণ প্রতিশ্রুতির অধীনে করা হবে।

লন্ডনের ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট (ভিএন্ডএ) যাদুঘরব্রিটিশ যাদুঘরের সহযোগিতায় ঘানার মানহিয়া প্রাসাদ যাদুঘর “একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সহযোগিতা”র বিশদ বিবরণ দিয়ে ২২ জানুয়ারি একটি বিবৃতিতে এই ঘোষণাটি দিয়েছে৷

ভিএন্ডএ এবং ব্রিটিশ যাদুঘরসহ যুক্তরাজ্যের প্রধান যাদুঘরগুলি তাদের সংগ্রহে স্থায়ীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জিনিসগুলি ফেরত দেওয়া থেকে ১৯৬৩ সালের ব্রিটিশ যাদুঘর আইনের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ। (আইনি) সীমাবদ্ধতার কারণে জাদুঘরগুলির বস্তুগুলি মূল দেশে ফেরতের সুবিধা দেওয়ার একমাত্র উপায় এই ঋণ চুক্তি।

ঘানার সংস্কৃতি মন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা নানা ওফোরিয়াত্তা আয়িম জিনিসগুলির সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্যের উপর জোর দিয়ে বিবিসিকে বলেছেন, “এগুলো শুধু জিনিস নয়; তাদের আধ্যাত্মিক গুরুত্বও আছে। তারা জাতির স্বত্ত্বার অংশ। এটা আমাদের নিজেদের জিনিসেরই ফিরে আসা।” তিনি ঋণটিকে লুটপাটের বার্ষিকীতে নিরাময়ের  দিকে একটি ইঙ্গিত এবং ঘটে যাওয়া সহিংসতার স্মরণে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন।

তিনি বলেছেন ঋণটি লুটপাটের বার্ষিকীতে “একটি ভাল সূচনা বিন্দু” এবং “যে সহিংসতা হয়েছিল তার এক ধরনের নিরাময় ও স্মরণের একটি চিহ্ন।” কথোপকথনের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, তৃতীয় ও চতুর্থ অ্যাংলো-অশান্তি যুদ্ধের (১৮৭৩-৭৪ এবং ১৮৯৫-৯৬) সময় কুমাসিতে লুটপাট হয়। সুবিধাবাদ ছাড়াও এই লুণ্ঠনের একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল আসান্তে রাজ্যের বাসিন্দাদের অপমানিত করা, যেমনটি বিবিসি ও কথোপকথন উভয়েই তুলে ধরেছে।

বিবিসির সাথে একটি সাক্ষাৎকারে নানা ওফোরিয়াত্তা আয়িম বলেছেন কিছু জটিলতার কারণে ঋণ চুক্তিটি ঘানার সরকারের সাথে না হয়ে সরাসরি আসান্তে রাজার সাথে হয়েছে। তাছাড়াও আসান্তে রাজার সাথে চুক্তি করা সহজ প্রক্রিয়া বলে প্রতীয়মান হয়েছিল। ভিএন্ডএ  থেকে উদ্ভূত চুক্তিটি ঘানার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে নেওয়া হলে কীভাবে জিনিসগুলি ঘানায় ফেরত নেওয়া উচিত সে সম্পর্কে অসংখ্য শর্তের কারণে তা বাতিল হয়। তবে ঘানার নিজস্ব জিনিসের যত্ন নির্ধারণের ক্ষমতা থাকার কথা নানা ওফোরিয়াত্তা আয়িম তুলে ধরেছেন।

জিনিসগুলির বিশদ বিবরণ

বিবিসি অনুসারে, ভিএন্ডএ ১৭টি এবং ব্রিটিশ যাদুঘর থেকে ১৫টি মোট ৩২টি জিনিস ঘানায় ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি আত্মা-মোছার ব্যাজ, রাষ্ট্রের একটি তরবারি, একটি আনুষ্ঠানিক টুপি এবং একটি ঢালাই-স্বর্ণের বাঁশি-বীণার অনুকৃতি। আসান্তে অঞ্চলে সংঘাতকালে রাষ্ট্রীয় তরবারি ও আনুষ্ঠানিক টুপি লুটের সময় আত্মা-মোছার ব্যাজগুলি ১৯ শতকের একটি নিলাম থেকে পাওয়া যায়। তবে ঢালাই-স্বর্ণের বাঁশি-বীণার অনুকৃতিটি লুট করা না হলেও উপহার দেওয়া হয় ব্রিটিশ লেখক ও কূটনীতিক টমাস বাউডিচকে ১৮১৭ সালে, যা আসান্তে জাতির সম্পদ ও মর্যাদা প্রদর্শনের জন্যে আসান্তেনের কাছ থেকে উপহার হিসেবে যাদুঘরে দিয়ে দেওয়া হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

সামাজিক গণমাধ্যমে ঘানাবাসীরাএই ঋণ চুক্তি নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

বেশ কিছু সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারীরা প্রশ্ন করেছে চুরি হওয়া জিনিস কীভাবে মূল মালিকদের কাছে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এক্সের একজন ব্যবহারকারী (পূর্বের টুইটার) বলেছে:

এগুলো লুটপাট করা জিনিস। লুট মানে চুরি। তাদের ক্ষমা চেয়ে নিঃশর্তভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না কেন? কেন তাদের মূল মালিকদের কাছে ঋণ দেওয়া হচ্ছে?

চুরি কি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে মালিকানা প্রদান করে?

যেমন ওকেআফ্রিকা তুলে ধরেছে, অনেকে মনে করে “ঋণ” শব্দটি ব্যবহার করে বোঝানো হয়েছে যে মালিকানা ঘানার নয়।

অন্য এক্স ব্যবহারকারী বলেছেন:

ওয়ে…শুধু ঠিক যদি একই ধন যা তাদের কাছ থেকে আসতো! তারা তাদের জন্যে ভিন্ন কিছু (গল্প) তৈরি করতো!

সামাজিক গণমাধ্যম প্রতিক্রিয়াগুলি বিষয়টির সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরে, ব্যক্তিরা চুরি হওয়া আইটেমগুলিকে ঋণ দেওয়ার ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

একটি ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নিয়োজিত প্রতিবেদনে আফ্রিকীয় সাংস্কৃতিক সম্পত্তির একটি বিস্ময়কর ৯০ শতাংশ বর্তমানে ইউরোপীয় যাদুঘরগুলিতে রাখা্র কথা প্রকাশ করা হয়েছে। পশ্চিমা জাদুঘরে প্রদর্শিত এই চুরি করা বিশেষ করে ১৯ শতকে ঔপনিবেশিক সেনাবাহিনীর লুট করা বা মিশনারি ও রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে অর্জিত নিপীড়িত মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বকারী প্রত্নবস্তুগুলির প্রত্যর্পনের আহ্বান তীব্রতর হয়েছে। উল্লেখযোগ্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে পার্থেনন ভাস্কর্য (এলগিন মার্বেলস) ও বেনিন ব্রোঞ্জ, যা গ্রীস ও নাইজেরিয়া বহু বছর ধরে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে।

যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ানের একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে ব্রিটিশ যাদুঘরে চুরির বিভিন্ন ঘটনার কারণে এই আন্দোলনটি গত বছরের আগস্টে উল্লেখযোগ্য গতি অর্জন করে। নিরাপত্তা লঙ্ঘন ও সঞ্চিত জিনিসপত্রের অপ্রতিরোধ্য সংখ্যার কারণে পশ্চিমা জাদুঘরগুলি যে বিশ্বের ধন-সম্পদ সংরক্ষণের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান এই ধারণাটি ক্ষুন্ন হলেও সমালোচকদের যুক্তি লুণ্ঠিত পণ্যগুলির প্রদর্শনের পাশাপাশি জাদুঘরগুলি তাদের সাংস্কৃতিক বোঝাপড়ার উদ্দেশ্যকে সমন্বয়ের লড়াই করে

হলোকাস্ট জিনিসগুলির জন্যে আইন পরিবর্তন করা হলেও নানা ওফোরিয়াত্তা আয়িম উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশ যাদুঘর লুণ্ঠিত জিনিসগুলি স্থায়ীভাবে ফেরত দেওয়ার জন্যে আইনে পরিবর্তনের জন্যে চাপও দিতে পারে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .