পাকিস্তানে বিক্ষোভকারীদের বিচারের জন্যে নিবর্তনমূলক সেনা আইন জারি

Police blocking Protesters

বিক্ষোভকারীদের বাধা দিচ্ছে পুলিশ। লেখকের ছবি। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

পাকিস্তানে বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদ (এনএসসি) ১৬ মে, ২০২৩ তারিখে বেসামরিক বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সেনা আইন এবং দাপ্তরিক গোপনীয়তা বিধি চালু করার সিদ্ধান্তের পর রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। বিক্ষোভকারীরা ৯ মে,২০২৩ তারিখে ইসলামাবাদে পুলিশ ও রেঞ্জারদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির সভাপতি ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করছে। গ্রেপ্তারের পর পিটিআই নেতা-কর্মীদের উপর পুলিশি দমন-পীড়ন চালায়।

বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত লাহোরে পূর্বে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হাউস নামে পরিচিত এক সেনা কর্মকর্তার বাড়িতে দাঙ্গায় রূপ নেয়। পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত ১১ মে, ২০২৩ দুর্নীতির অভিযোগে ইমরান খানের গ্রেপ্তার বেআইনি বলে ঘোষণা করে।

উল্লেখ্য এনএসসি বৈঠকে বৈধ নির্বাচন করার জন্যে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশকে উপেক্ষা করে তত্ত্বাবধায়ক মেয়াদ পার করা পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখওয়ার প্রাক্তন অন্তর্বর্তী মুখ্যমন্ত্রীদের উপস্থিতি দেখা গেছে।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ২০ মে, ২০২৩ তারিখে সামরিক আদালতে বিক্ষোভকারীদের নিপীড়নের জন্যে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে

Displaying police batons to scare protestors. Interestingly, this person is not wearing a police uniform, and no police badge is visible. Image by the author

বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখাতে লাঠিচার্জ করছে পুলিশ। মজার বিষয় হলো এই ব্যক্তি পুলিশের পোশাক এবং কোনো পুলিশ ব্যাজও পরেনি। লেখকের ছবি। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

পাকিস্তানের বিতর্কিত সেনা আইন ও দাপ্তরিক গোপনীয়তা বিধি

পাকিস্তান সেনা আইন (১৯৫২) হলো সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত পাকিস্তানি সামরিক কর্মীদের এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার করার জন্যে সেনাবাহিনীর নিজস্ব আইনি বিধান।

সেনা আইন ও দাপ্তরিক গোপনীয়তা বিধির (পাকিস্তানের গুপ্তচরবৃত্তি বিরোধী আইন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কর্মে শত্রুকে সহায়তাকারী ব্যক্তিদের বিচারের জন্যে) অধীনে গ্রেপ্তারকৃত এবং সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি বেসামরিক নাগরিকরা মৃত্যুদণ্ডসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো সম্ভাব্য কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে। বেসামরিকদের কাছে তাদের মামলাগুলি দেওয়ানি আদালতে স্থানান্তর করার সুযোগ থাকলেও আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই রাজনৈতিক গণগ্রেপ্তারঅপহরণ বিরাজমান পরিস্থিতিকে খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ও অনিশ্চিত করে তুলেছে।

২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুতকারী রাজনৈতিক জোট পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সভাপতি মহসিন দাওয়ার সেনা আইনে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার পরিচালনার ধারণাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আইনপ্রণেতা খুশাল খান টুইট করেছেন:

সেনা আইনে বেসামরিকদের বিচার করা খুবই বিপজ্জনক হবে। এটি রাজনৈতিক কর্মীদের প্রভাবিত করার একটি নজির স্থাপন করবে। @এমজেদাওয়ার সভাপতি @এনডিএম_কর্মী আজ জাতীয় পরিষদে বক্তব্য রাখছেন।

আদালতে মঞ্জুরকৃত জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পুলিশ শিরিন মাজারি, সিনেটর ফালাক নাজ ও ফাওয়াদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নেতাকে আবার গ্রেপ্তার করেছে

প্রবাসী পিটিআই সমর্থক উসমান হাশমি টুইট করেছেন:

কিছুক্ষণ আগে আবার গ্রেপ্তার করে শিরিন মাজারিকে তৃতীয়বারের মতো নেওয়া হলো।

শক্ত থাকুন শিরিন মাজারি  #৭০০০পাকিস্তানিকেমুক্তকর

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ১২ মে অপহরণকৃত ব্যক্তিরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে।

পাকিস্তানে পুলিশের নৃশংস কর্মকাণ্ড ভয়াবহ। শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভকারী নারীদের অপহরণ ও মারধর করা ফ্যাসিবাদের স্পষ্ট লক্ষণ। @পাকক্ষমতাসীনদল #حوا_کی_بیٹیوں_کو_عزت_دو

এছাড়াও ইলানের সাথে যুক্ত একজন বিখ্যাত নকশাবিদ খাদিজা শাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সম্ভবত সেনা আইনে বিচারের মুখোমুখি হবে।

টুইটার ব্যবহারকারী এরিকা আরো যোগ করেছেন:

৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে পুলিশ হেফাজতে থাকা #সানামজাভেদ এবং অন্যান্য নারীদের মুক্তির জন্যে লাহোর উচ্চ আদালতের আদেশ জারি স্বত্ত্বেও এখনো তিনি নিখোঁজ,

#পিটিআই #আইআরকেছেড়েদাও #সনমজাভেদখানকেছেড়েদাও #পিটিআই_কর্মীদের_ছেড়েদাও #ইমরানরিয়াজখানকেছেড়েদাও

পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি) ৯ মে বিক্ষোভে জড়িত ব্যক্তিদের পাকিস্তান সেনা আইন ১৯৫২ ও দাপ্তরিক গোপনীয়তা বিধি ১৯২৩ এর অধীনে ভাংচুরের জন্যে বিচারের সামরিক সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে

“সামরিক আদালতে বেসামরিকদের বিচার আন্তর্জাতিক আইনেবিরোধী এবং ন্যায্য বিচারের অধিকার লঙ্ঘন করে” যুক্তি দেখিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সামরিক আইনে বেসামরিক নাগরিকদের গ্রেপ্তার করার জন্যে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে কঠোর নিন্দা জানিয়েছে

🇵🇰পাকিস্তান: সামরিক আদালতে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার হতে পারে এমন কোনো ইঙ্গিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে পাকিস্তানের বাধ্যবাধকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়:

একটি সামরিক আদালত ২০২১ সালে  রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেলের ছেলে হাসান আসকারিকে পাকিস্তান সেনা আইনে দোষী সাব্যস্ত করে। বিচার চলাকালে আসকারিকে নিজস্ব আইনী প্রতিনিধিত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাকে সমর্থনের জন্যে সামরিক আদালত একজন আইনজীবী নিয়োগ করে।

বিশিষ্ট সামরিকপন্থী ভাষ্যকার করাচির নোমান খান টুইট করেছেন – কোর অধিনায়কের লাহোরের বাড়িতে দাঙ্গা মোকাবেলার জন্যে এনএসসির বৈঠক ডাকার প্রধান উদ্দেশ্য হলো ইমরান খানের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে সেনা আইনে তার বিচার করা:

তারা যদি এই ভিডিওর দাঙ্গাবাজ ও তাদের নেতার (ইমরান খান) উপর সেনা আইন ও গোপনীয়তা বিধি প্রয়োগ না করে তাহলে তাদের লোভ ও বিভ্রান্তির কারণে ব্যবহৃত সাধারণ কর্মীদেরকেও মুক্তি দেওয়া উচিত। উস্কানিদাতাদেরসহ মূল আয়োজক ও নির্দেশনা প্রদানকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত এটি বারবার ঘটতেই থাকবে।

জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদের বৈঠকে দাদা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জিয়া উল হক বিচারিকভাবে হত্যা করেছে দাবি করা বিলাওয়াল ভুট্টোর উপস্থিতি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু, কর্তৃপক্ষের সাথে টালমাটাল সম্পর্ক ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সরকার থেকে ক্ষমতাচ্যুতির পূর্ববর্তী দৃষ্টান্ত সত্ত্বেও পাকিস্তান মুসলিম লীগের নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরীফ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

লেখক এবং গবেষণা ও নিরাপত্তা পাঠ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ গুল টুইট করেছেন:

সেনা ও গোপনীয়তা আইনে বিচারের ক্ষমতা বেসামরিক ব্যক্তিদের মাধ্যমেই পাকিস্তানকে জেনারেল জিয়ার সামরিক আইনের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যায়

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সন্ত্রাস সম্পর্কিত অভিযোগসহ বেসামরিক অপরাধের জন্যে পাকিস্তান একাই সামরিক আদালতকে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার করার অনুমতি দেয়। এই নিবর্তনমূলক কঠোর আইনের অবসান ঘটানোর জন্যে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের সাথে সম্পর্ক পরিবর্তনের ব্যাপারে খুব ভালভাবেই চিন্তা করছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .