সংবাদকক্ষের বিরুদ্ধে এসএলএপিপি মামলার সমালোচনা করায় সার্বীয় কেআরআইকে’র সাংবাদিকরা দোষী সাব্যস্ত

বেলগ্রেড উচ্চ আদালতের বিচারক স্লোবোদান কেরানোভিচ। আরটিএস পর্দাছবি ভিত্তিক কেআরআইকে’র ছবির কোলাজ, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

মেটা.এমকে-তে মূলত প্রকাশিত মেরি জর্ডানভস্কার এই গল্পটি একটি সম্পাদিত সংস্করণ গ্লোবাল ভয়েসেস ও মেটামরফোসিস ফাউন্ডেশনের মধ্যে একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির অধীনে এখানে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।

“এই রায়টি এটি স্পষ্ট করে এসএলএপিপিগুলি শাসকগোষ্ঠীর কাছে অবশিষ্ট কয়েকটি স্বাধীন গণমাধ্যম বন্ধ করার প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিষয়গুলি এতদূর এগিয়েছে যে আমাদের সংবাদকক্ষ মামলায় প্লাবিত হওয়ার বিষয়টি জনসমক্ষে জানানোর অনুমতি পর্যন্ত নেই – এমনকি এর জন্যে আমরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছি,” বলেছেন কেআরআইকে প্রধান সম্পাদক স্তেভান দয়চিনোভিচ। তিনি টুইটারেও ব্যাখ্যা করেছেন:

স্তেভান দয়চিনোভিচের টুইট: “খুব খারাপ খবর। কেআরআইকে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে আক্ষরিক অর্থেই শুধু আমাদের বিরুদ্ধে মামলাকারীদের  একটি তালিকা প্রকাশ করার জন্যে।
আজকের সার্বিয়ায় কেউ আত্মরক্ষা করতে বা এটা নিয়ে কথা বলতে পারে না।
তারা পদদলিত করলে আপনার শুধু চুপচাপ কষ্ট ভোগের অনুমতি রয়েছে।
তবে এমনকি এই মামলাও আমাদের থামাতে পারবে না।
লড়াই চলবে।”

কেআরআইকে উদ্ধৃত টুইট:
বিচারক কেরানোভিচ রায়ে মোটেই তালিকার পাঠ্যের অংশ নয় এমন বিষয় সামনে এনে কেআরআইকে’কে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এছাড়াও তিনি #এসএলএপিপি মামলার অস্তিত্ব অস্বীকার করে দাবি করেন যে “যে কেউ সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারে।”

অনুসন্ধানী গল্প ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্যে পুরস্কৃত ও একটি নিবন্ধে এর আগে তার সংবাদকক্ষের মুখোমুখি হওয়া কয়েকটি মামলার তালিকা প্রকাশ করার জন্যে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার সমালোচনার জন্যে বেলগ্রেডের উচ্চ আদালত কর্তৃক দণ্ডিত সার্বীয় অলাভজনক সংস্থা কেআরআইকে (অপরাধ ও দুর্নীতি প্রতিবেদন নেটওয়ার্ক এর সংক্ষিপ্ত রূপটির অর্থ সার্বীয় ভাষার “কান্না” বা “চিৎকার” বোঝায়)।

এই মোকদ্দমাগুলি ইউরোপ পর্ষদের বর্ণনা মতে জনসমক্ষে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে কৌশলগত মামলা (এসএলএপিপি) নামে পরিচিত, যার উদ্দেশ্য বিবাদিদের থামানোর জন্যে শুধু ভয় দেখানো বা অসাধ্য আইনি ব্যয় সৃষ্টি করা।

বেলগ্রেড উচ্চ আদালতের বিচারক স্লোবোদান কেরানোভিচ কেআরআইকে’র সাংবাদিকদের দোষী সাব্যস্ত করলে কেআরআইকে বেলগ্রেডের আপিল আদালতে একটি আবেদন জমা ্দিয়েছে।

এর আগে বিচারক কেরানোভিচ আদালত সাপ্তাহিক এনআইএন এর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নেবোসা স্তেফানোভিচের ক্ষতিপূরণের জন্যে আনুমানিক ২,৫০০ ইউরো (প্রায় ২ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা) জরিমানা করে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শিরোনাম হন। এনআইএন-এর বিরুদ্ধে বিচারে শুধু একটি মাত্র শুনানি হয় যাকে স্বাধীন গণমাধ্যমটি বিদ্রূপাত্মকভাবে “সার্বীয় ইতিহাসে সবচেয়ে দক্ষ বিচার” বলে মনে করে।

যুগোস্লাভিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী সংবাদ পত্রিকার একটি হিসেবে ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে খ্যাতিমান “নেদেলিন ইনফর্মাতিভনে নোভিনে” (সাপ্তাহিক তথ্যমূলক সংবাদপত্র) এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো এনআইএন। এটি শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের ভাষ্য ও মতামতের অংশ উপস্থাপনসহ সংবাদ প্রতিবেদন ও অন্যান্য নিবন্ধ উপস্থাপন করে থাকে।

বলকানের সবচেয়ে সম্মানিত অনুসন্ধানী গণমাধ্যম সংস্থার অন্যতম কেআরআইকে। এটি সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ ও দুর্নীতি প্রতিবেদন নেটওয়ার্কের সদস্য ও এর সাংবাদিকরা অসংখ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পেশাদার পুরস্কারপ্রাপ্ত।

“রায়টি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে এসএলএপিপি মামলাগুলি অবশিষ্ট কয়েকটি স্বাধীন গণমাধ্যম বন্ধ করার জন্যে শাসকগোষ্ঠীর প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিষয়গুলি এতদূর এগিয়েছে যে আমাদের সংবাদকক্ষ মামলায় প্লাবিত হওয়ার বিষয়টি জনসমক্ষে জানানোর অনুমতি পর্যন্ত নেই – এমনকি এর জন্যে আমরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছি,” বলেছেন দয়চিনোভিচ।

কেআরআইকে নিবন্ধের পর্দাছবি “শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ট লোকদের মামলায় সমাহিত কেআরআইকে।”

দেড় বছর আগে “শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ট লোকদের মামলায় সমাহিত কেআরআইকে ” শিরোনামে প্রশ্নবিদ্ধ নিবন্ধটি কেআরআইকে-তে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি তাদের সাংবাদিকদের নীরব করার জন্যে সংবাদকক্ষের বিরুদ্ধে মামলাকারী প্রত্যেককে তালিকাভুক্ত করে বলেছে যে তথাকথিত এসএলএপিপি মামলাগুলি সাধারণত সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকেরাই শুরু করে। তিনি বলেন কেআরআইকে’র বিরুদ্ধে পুলিশ প্রধান গোরান জিভকোভিচ এবং সাক্ষী সুরক্ষার জন্যে পুলিশ ইউনিটের তার দুই সহকর্মী মামলা করে। এরপরে তারা তিনজনই সংবাদকক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা প্রকাশ করার জন্যে আবার কেআরআইকে’র বিরুদ্ধে মামলা করে।

আদালত সাংবাদিকদের সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণার জন্যে পুলিশ কর্মকর্তাদের অবশ্যই ৩ লক্ষ ৭৪ হাজার সার্বীয় দিনার (প্রায় ৩ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা) ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের মামলা উল্লেখ করা নিবন্ধের অংশটি মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ব্রাতিস্লাভ গাসিচের করা একটি আপিল মামলায় ২০২২ সালের নভেম্বরে সার্বীয় গণমাধ্যম সংস্থাটির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় এই রায়টি দেন একজন বিচারক

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .