ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংকটের মারাত্মক প্রভাবের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির কর্মীরা বেশ কয়েকটি উদ্যোগের দিকে জোর দিচ্ছে যা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর আরো সিদ্ধান্তমূলক বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন ফুটিয়ে তোলা গল্প, আখ্যান,ও শিল্প উপস্থাপনাকে তুলে ধরে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বৈশ্বিক দূষণে ন্যূনতমএর অবদান সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের কঠোর প্রভাবের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মুখোমুখি। দ্বীপ সম্প্রদায়গুলি বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য করা এবং তাদের কাজ ও জীবনযাত্রাকে হুমকিতে ফেলা চরম জলবায়ু বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ কিরিবাতির জলবায়ু কর্মী আন্তেরিয়া প্রাসঙ্গিক_সংবাদ ওয়েবসাইটকে অভিবাসনের কথা বিবেচনাকারীদের অনুপ্রেরণা সম্পর্কে বলেছেন:
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের জনগণের যাওয়ার জায়গা নেই…আমার জন্যে এই জীবনটা ভালো হলেও আমার মেয়ের কী হবে? আমার সন্তানের জন্যেই আমি স্থানান্তর করতে, একটি চাকরি পেতে এবং একটি নতুন বাড়ির জন্যে অবদান রাখতে চাই।
গত মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর এই বাধ্যতামূলক অভিবাসন ধারণ করা একটি সাম্প্রতিক উদ্যোগ “প্রশান্ত মহাসাগরীয় জলবায়ু গল্প” চালু করেছে। এটিতে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে অভিবাসী শ্রমিকদের ব্যক্তিগত গল্পগুলি ভাগাভাগি করা একটি অ্যানিমেটেড ভিডিও ধারাবাহিক রয়েছে।
গল্পগুলির মধ্যে একটি হলো ২০১৬ সালে ফিজিতে হারিকেন উইনস্টনের আঘাতে বাড়ি ও জীবিকা ধ্বংস হয়ে যাওয়া নামতুয়া তুইনিকাকার। এটি তাকে নিউজিল্যান্ডে কাজ খুঁজতে বাধ্য করে। এই ভিডিওটি বন্যা, সমুদ্রের জলের স্তর বৃদ্ধি এবং অন্যান্য চরম আবহাওয়ার ঝামেলা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপবাসীদের তাদের সম্প্রদায় থেকে সরিয়ে দেওয়া প্রদর্শন করে।
ভিডিওটির সাথে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অভিবাসী শ্রমিকদের সাধারণ অভিজ্ঞতাকে চিত্রিত করা একটি মজাদার টুকরো গল্প রয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাতিসংঘের মানবাধিকারের আঞ্চলিক প্রতিনিধি হেইক আলেফসেন জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য বাসিন্দাদের পরিস্থিতি ভাগাভাগি করার জন্যে গল্প বলার ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন:
গল্পগুলি উত্থান, অনুপ্রেরণা এবং যুক্ত করার ক্ষমতা রাখে। আমরা আশা করি এই গল্পগুলির মাধ্যমে তাদের স্বাগত জানানো অভিবাসী ও সম্প্রদায়গুলি একসাথে আরো শক্তিশালী।
জীবন ও সম্প্রদায়ের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে ব্যক্তিগত সাক্ষ্য বর্ণনাকারী জলবায়ু গল্প প্রকল্প হলো আরেকটি উদ্যোগ। ২০১৩ সালে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় অংশে আঘাত হানা মহা টাইফুন হাইয়ানের প্রভাব সম্পর্কে কথা বলা টাক্লোবান শহরের এফ্লেদা বাতিস্তার গল্প হলো একটি উদাহরণ। আরেকটি রেকর্ডিং হলো দাবানল পর্যবেক্ষণ, প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস, এবং বৃহৎ প্রবাল প্রাচীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ভাগাভাগি করা অস্ট্রেলিয়ার সিডনির এজে টেন্যান্টের।
এদিকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু গল্পের বইটি এই অঞ্চলে পরিবর্তনশীল জলবায়ুর প্রভাবকে ঘিরে সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতা নথিভুক্ত করে৷ এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের আবহাওয়া পরিষেবা এবং অন্যান্য অংশীদারী সংস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কর্মরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসনের তৈরি৷
একটি সৃজনশীল সহযোগিতা হলো ২০২১ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের সময় প্রদর্শিত শৈল্পিক ভিডিওগুলির একটি সংগ্রহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কণ্ঠ – মানা মোয়ানা। ভিডিওগুলিতে কবিতা ও লোকসাহিত্য ব্যবহার করে শিল্পী এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক অভিনয়শিল্পীদের তাদের অঞ্চলের জীবনযাত্রায় জলবায়ু পরিবর্তনের অস্তিত্বগত হুমকি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ভিডিওগুলির মধ্যে একটি হলো সামোয়ার থেকে ফাউমুইনা ফেলোলিনি মারিয়া তাফুনা'ই লিখিত ও পরিবেশিত একটি কবিতা।
অন্য একটি ভিডিওতে গ্রহের প্রতিবেশকে পুনরুজ্জীবিত করার টেকসই স্থানীয় ও বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের জরুরি আবেদন জানানো প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন কণ্ঠস্বর প্রদর্শিত হয়েছে।
একটি শক্তিশালী কাজ হলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও বিশ্বব্যাপী জনগণের জন্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরার আহ্বান। আমাদের সময়ের সবচেয়ে জরুরি সংকট ও নেতৃত্ব সমস্যা সমাধানের জন্যে প্রাচীন মহাসাগরীয় জ্ঞান ও বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে সজ্জিত করা হয়েছে।
নানা উদ্যোগ ও প্রচারণা ইতোমধ্যে উচ্চ-দূষণকারী দেশগুলির কয়েক দশকের নির্গমন ও অসাবধান পরিবেশগত অনুশীলনের প্রভাবের ভুক্তভোগী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সম্প্রদায়গুলির জন্যে জলবায়ু সংকট কতটা জরুরি তা বুঝিয়েছে।