হ্যাকার গোষ্ঠী গুয়াকামাইয়া: হ্যাকিংকে উত্থান এবং বিদ্রোহ করার জন্যে ব্যবহার করা উচিত

গ্লোবাল ভয়েসেসের দুটি গুয়াকামাইয়া পাখির বৈশিষ্ট্য অলংকরণ

গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি সরকারের কম্পিউটার হ্যাক করা দল গুয়াকামাইয়া তাদের প্রেরণা এবং ব্যাপক ফাঁসের পরে তাদের প্রত্যাশিত প্রভাব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছে।

হ্যাকারদের সক্রিয় গোষ্ঠীটির দাবি তাদের ভূমিকা প্রকৃতিকে রক্ষা করা নয় বরং তারা নিজেরাই প্রকৃতি। তাদের মতে তাদের বিদ্রোহ অ্যাব্যা ইয়ালা  বা আমেরিকা মহাদেশে বসবাসকারী জীবিত প্রাণীদের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর নির্যাতন থেকে উত্থিত। অনলাইনে সহযোগী মডেলগুলিকে প্রচার এবং আঞ্চলিক শোষণ নিরুৎসাহিত করার লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে এটি ডিজিটাল বিশ্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

সংকটময় বৈশ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে লাতিন আমেরিকার যে কোন সরকারের এই উদ্বেগ ভাগাভাগি করা উচিত। এই বছরের জুলাইয়ে প্রকাশিত বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (WMO) একটি প্রতিবেদন অনুসারে এই অঞ্চলে হিমবাহ, আমাজন বনাঞ্চল এবং প্রবাল প্রাচীরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাগুলির যে সংকটময় পরিস্থিতি তা এড়ানোর কার্যত কোন সুযোগ নেই। নথিটি অনুসারে ২০০৯ সাল থেকে বন উজাড় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, পরিবেশ কর্মীদের বিরুদ্ধে হুমকি তীব্রতর হচ্ছে। গ্লোবাল উইটনেসের মতে ২০২০ সালে সারাবিশ্বে ২২৭ জন ভূমিরক্ষক এবং পরিবেশবাদীকে হত্যা করা হয় যাদের বেশিরভাগই লাতিন আমেরিকার।

গুয়াকামাইয়া ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে লক্ষ লক্ষ ইমেলের প্রায় ১০ টেরাবাইট তথ্য বের করা একটি বিশাল হ্যাক প্রকাশ করে। নথিগুলি লাতিন আমেরিকান সরকারগুলির পরিবেশের ক্ষতিকারক নানা প্রকল্প প্রকাশ করছে। এই গোষ্ঠীটি তাদের কয়েকটি লক্ষ্যবস্তু মেক্সিকো, চিলি, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, ভেনিজুয়েলা, ব্রাজিল এবং ইকুয়েডরের তথ্য ফাঁস করার পাশাপাশি তারা কীভাবে এটি করেছে তা ব্যাখ্যা করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে

কীভাবে তারা হ্যাক করে সেটা ব্যাখ্যা করা ভিডিওর পর্দাছবি

গোষ্ঠীটি যেখান থেকে তথ্য আহরণ করবে সেসব সংস্থা নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর জোর দিয়েছে। গুয়াকামাইয়া আমাদের বলেছে:

একদিকে আমরা যেমন সবচেয়ে বেশি অপব্যবহারকারী এবং যেখানে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধ থাকা সবচেয়ে খারাপ কোম্পানি ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলিকে বেছে নিয়েছি, তেমনি অন্যদিকে আমরা পুরো ইন্টারনেট খুঁটিয়ে দেখে সহজে ঝুঁকিপূর্ণ জিনিসগুলির ঙাদা থেকে কিছু আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু এইমাত্র ফাঁস করেছি।

গুয়াকামাইয়া মূলত নির্বাচিত দেশের সামরিক সংরক্ষণাগারকে লক্ষ্যবস্তু করে। তারা তাদের একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে:

অ্যাব্যা ইয়ালার বাহিনী বৈশ্বিক উত্তরের আহরণকারী কোম্পানিগুলোর প্রবেশের নিশ্চয়তা ও সুবিধা দিয়েছে। তারাই পাহারাদার। সশস্ত্র বাহিনীগুলিই রাষ্ট্র, কোম্পানি ও মাদক পাচারকারীদের সংগঠিত অপরাধের নোংরা কাজগুলি করে থাকে।

প্রকাশিত তথ্যে রয়েছে ২০১৯ সালে চিলির সামাজিক বিস্ফোরণ সম্পর্কে চিলির সেনাবাহিনীর বিশ্লেষণ। মেক্সিকোর ফাঁসটি আদিবাসী নেতা মারিয়া দে জেসুস প্যাট্রিসিও মার্টিনেজ, বিভিন্ন নারীবাদী গোষ্ঠী এবং মন লাফার্তের মতো শিল্পীদের উপর সেনাবাহিনীর নজরদারি এবং  কখনো কখনো তাদের অন্তর্ঘাতী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিতকরণকে প্রমাণ করে। সবচেয়ে সংবেদনশীল দিকগুলির একটি হলো অন্তত তিনজন মেক্সিকীয় সাংবাদিককে অনুসরণ করার জন্যে সরকারের না কেনার দাবি স্বত্ত্বেও পেগাসাস সফটওয়্যারের ব্যবহার। গুয়াকামাইয়া তাদের কাছে কলম্বিয়ার পাঁচ টন তথ্য থাকার দাবি করলেও তারা শুধু গত সপ্তাহে কলম্বিয়ার বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর ও সশস্ত্র বাহিনীর ই-মেইলগুলি খুঁজে পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে।

বিষয়টা গৌণ নয়। ডিজিটাল বিশ্বে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা সুশীল সমাজ এবং সরকারগুলির মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার একটি বিন্দু হয়ে উঠেছে। অন্তত লাতিন আমেরিকায় সমস্যাটির দীর্ঘস্থায়িত্ব এবং অতীত ও বর্তমানে নতুন উপায়ে সংঘটিত একাধিক নজরদারি কেলেঙ্কারি অথবা প্রতিকী এবং শারীরীক সহিংসতার কারণে।সরকারগুলি এখন যেমন জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যে বিভিন্ন সফ্টওয়্যার ও প্রোগ্রাম সংগ্রহ করতে সক্ষম, তেমনি নাগরিক আন্দোলনগুলিও অন্যায় বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা ও উন্মোচন করার জন্যে নতুন সরঞ্জামাদি ব্যবহার করতে পারে।

বিশাল ফাঁসের প্রভাব এখনই নির্ধারণ করা কঠিন। সমষ্টিগত উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে একটি হলো এই অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা পরিবর্তন করা শুরু করা এবং এইগুলির মতো আরো কাজকে উৎসাহিত করা:

সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তথাকথিত নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্যে তৈরি করা প্রতিষ্ঠানগুলির দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাপনার উপাত্তগুলিকে জনসাধারণের কাছে সকলের চোখের সামনে আলাদা আলাদা করে উন্মুক্ত করে দিলে জনগণের চোখ থেকে পর্দা সরে যাবে এবং এটা আরো অনেকের জন্যে জেগে ওঠার, বিদ্রোহের এবং এই সমস্ত ভুল ও পচা ব্যবস্থার কারণে সৃষ্ট মর্যাদাপূর্ণ ক্রোধকে চালিত করার একটি হাতিয়ার হিসেবে হ্যাকিং ব্যবহার শুরু করার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে।

কৌতূহলজনকভাবে যে কারো মধ্যে থাকার মতো তুলনামূলক সহজ প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যবস্থাগুলিতে অনুপ্রবেশ করা হয়। এছাড়াও নিরাপত্তা লঙ্ঘন নতুন কোন ব্যাপার নয়। লাতিন আমেরিকায় জাতীয় সরকারগুলিকে হ্যাক করা আরো অনেক সংস্থার নজির রয়েছে  যার মধ্যে সাম্প্রতিকতমটি হলো ২০২০ সালের আগস্টে বেনামে বিকেন্দ্রীভূত সাইবার হ্যাকিং গোষ্ঠীর নিকারাগুয়ার ড্যানিয়েলের ওর্তেগা সরকার প্রকাশিত কোভিড-১৯ পরিসংখ্যানের ত্রুটি প্রকাশ করা ৪০০ ফাইল ফাঁস

গুয়াকামাইয়ার ভবিষ্যত এখনো অজানা হলেও তারা যে উন্নয়ন মডেলের সমালোচনা করে তার বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে চলা সংগ্রাম এবং যাকে তাদের বিদ্রোহের একটি ধ্রুব পরিস্থিতি বিবেচনা করে তা থেকে তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড উদ্ভূত:

প্রতিরোধের এই রূপটি আমরা পাঁচ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে যা করে আসছি তার আরো একটি এবং এই সময়ের হাতিয়ার এটি। [যুগ যুগ ধরে] আদিবাসী জনগণের নেতারা কি তাদের ভূখণ্ড রক্ষা করার জন্যে কলঙ্কিত হননি? যারা জীবন রক্ষা করে, যারা তাদের ‘স্বাভাবিকতা’ এবং আনুগত্যের নিয়মের সাথে খাপ না খাওয়ার জন্যে কলঙ্কিত তাদের জন্যে সবসময় কারাবাস, গুলি, গুম। এর জন্যে বেঁচে থাকা ছাড়া আমরা জীবন বুঝি না, লক্ষ্যই হলো এই লক্ষ্য পূরণ করা।

তাদের উপস্থাপিত পরিবেশের ক্ষতি বন্ধ করার এবং অভিযুক্ত অপরাধের প্রস্তাবটি হলো “ধ্বংসের কারখানা বন্ধ করা।”

আমাদের পূর্বপুরুষেরা শতাব্দী আগে [সমাধান] দিয়েছে এবং ব্যবস্থাটির বিজ্ঞানীরাও এখনই ধ্বংসের এই সব যন্ত্রপাতি বন্ধ করতে বলেছে। এর একটি পরিষ্কার উদাহরণ হলো এই ‘মহামারী'। কয়েকদিন এটা ‘বন্ধ’ থাকায় সিমেন্টেও জীবন বিকশিত হতে শুরু করে।

পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে তারা আমাদের বলে:

দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি [অনুসরণীয় কিছু পদক্ষেপ] ভাগাভাগি করে আসছে৷ স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিকে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়ার, পরস্পরের কথা শোনার, আবেদনে মনোযোগ দেওয়ার, নিজেদেরকে পরিবর্তিত খাবারের বিষে ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের দেহকে, মন ও আত্মার রোগ –  একাকীত্ব, বিষণ্ণতা, যন্ত্রণা, প্রতিযোগিতা, এবং কোথাও না পৌছানো একটি ভয়ংকর দৌড়ে আক্রান্ত আমাদের আত্মা এবং সত্ত্বাকে নিরাময় করার একটি পদ্ধতি রয়েছে। সমস্ত প্রাণীই এতে আক্রান্ত।

সারাবিশ্বের অসংখ্য কর্মী, সংগঠন, মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং আদিবাসী এই বার্তার পক্ষে। বাস্তবে কেউ কেউ বৃহৎ কারিগরি কোম্পানিগুলির উদ্দেশ্য চরিতার্থের পরিবর্তে সম্প্রদায়ের চাহিদা পূরণের জন্যে দক্ষিণ বিশ্বে তৈরি সহযোগিতামূলক, বিকেন্দ্রীকৃত স্থানীয় প্রযুক্তি মডেল প্রস্তাব করেছে।

গুয়াকামাইয়া বলেছে আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের কী ধরনের – আবর্জনা উৎপাদনের প্রতিযোগিতা চালু রাখা, নাকি মর্যাদার সাথে আমাদের বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্থানগুলির সাথে সঙ্গতি রেখে জীবনযাপন করার – ব্যবস্থা দরকার সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। তারা বলে:

উত্তর বিশ্বের ব্যাপক উৎপাদন দরকার। অন্যদিকে দক্ষিণ জমিকে বিশ্রাম দিতে পারলে এটি তাদের সমস্ত ধরনের জিনিস: বাসস্থানের কাঠ, সবার জন্যে খাবার, ওষধি থেকে ওষুধ দিতে পারে। দক্ষিণের উত্তরের প্রয়োজন না থাকলেও দক্ষিণকে শোষণ না করে উত্তর ছাড়া বাঁচতে পারে না। সমাধান হলো মনকে উপনিবেশমুক্ত করা এবং পশ্চিমের উদ্ভাবিত ‘দক্ষিণ বিশ্ব”তে বাস করার কারণে আমরা নিকৃষ্ট প্রাণী – এই বিশ্বাস করা বন্ধ করা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .