রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ মার্কোস তার আইনি দলের সঙ্গে পরামর্শ করে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ফিলিপাইন পুনরায় যোগ দেবে না।
ফিলিপাইন ২০১৮ সালের মার্চ মাসে রদ্রিগো দুতার্তের সভাপতিত্বে আইসিসি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। তাঁকে স্থানীয়ভাবে টোখাং নামে পরিচিত রক্তাক্ত “মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” এর সাথে জড়িত মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধে যুক্ত ভাবা হয়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রত্যাহার কার্যকর হয়। রাষ্ট্রপতি দুতার্তের মেয়াদ ২০২২ সালের ৩০ জুন তারিখে শেষ হয়।
টোখাং হাজার হাজার সন্দেহভাজন মাদক ব্যবহারকারী, ব্যবসায়ী এবং গ্যাং নেতাদের হত্যাকাণ্ড এবং গ্রেপ্তারের নেতৃত্ব দেয়। টোখাং-সম্পর্কিত মৃত্যুর কোন সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও গবেষণা অনুসারে এই সংখ্যা কমপক্ষে ৬,০০০ থেকে ৩০,০০০ এর মধ্যে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি বলেছে যে কোন বাছ-বিচার না করে শহুরে দরিদ্র সম্প্রদায়গুলিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে টোখাং নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছে। পুলিশের দাবি, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা আত্মরক্ষার্থে মাদকের সন্দেহভাজনদের গুলি করতে বাধ্য হয়েছে। দুতার্তে পুলিশের পক্ষাবলম্বন করে টোখাং সমালোচকদের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী এজেন্ডা প্রচারের অভিযোগ করেন।
টোখাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আইসিসিতে দুতার্তে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে প্রতিক্রিয়া হিসেবে আইসিসি একটি পর্যালোচনা করে ২০২১ সালে প্রাথমিক বিবৃতি দিয়েছে প্রদান করে:
আদালতের কক্ষ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে অভিশংসনকারীর কাছে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার একটি যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি রয়েছে এই অর্থে যে হত্যার মতো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং এরকম তদন্ত থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য মামলা(গুলি) আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
দুতার্তে কন্যা এখন মার্কোসের সহ-রাষ্ট্রপতি। মার্কোস বলেছেন ইতোমধ্যে সরকারি সংস্থাগুলি টোখাং পরিচালনাকারী পুলিশের আচরণ পর্যালোচনা করায় আইসিসি তদন্তের কোন দরকার নেই:
আমরা বলছি যে এখানে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত শুরু হয়েছে এবং তা চলছে, তাহলে কেন [আইসিসিতে] এরকমটা হবে?
কিছু কিছু সিনেটর বলেছে যে মার্কোসের সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি এবং সার্বভৌমত্বকে নিশ্চিত করে। ফিলিপাইনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আইসিসি হস্তক্ষেপ করার বিষয়ে বিচার সচিব জেসাস ক্রিস্পিন “বয়িং” রেমুল্লা কথাটির প্রতিধ্বনি করেছেন:
[আমাদের বিচার ব্যবস্থা] নিখুঁত না হলেও এটি কার্যকরী, আমরা কোন কলা (অস্থিতিশীল-অগণতান্ত্রিক) প্রজাতন্ত্র নই যে তারা সেদেশে যেতে চাইবে? এজেন্ডাটি রাজনৈতিক হলে আমরা আমাদের জনগণের ছাড়া অন্যদের কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা চাই না। আমরা আমাদের রাজনীতি করি, বিদেশীদের নয়।
দুতার্তেও বিদেশী আদালতের কাছে দায়বদ্ধ হতে অস্বীকার করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে কেবল ফিলিপাইনের মুনতিনলুপা শহরের একটি কারাগারে বন্দি করা যেতে পারে।
“I am a Filipino. If I will be prosecuted, it will be a prosecutor who is a Filipino. If I am to be judged, it will be a Filipino judge. And if I go to prison, I should go to Muntinlupa,” he says. | @NCorralesINQ /PDI
— Inquirer (@inquirerdotnet) August 4, 2022
প্রাক্তন সিনেটর লিলা দে লিমা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্যে মার্কোসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন যে আইসিসি থেকে দেশটি নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করার পরেও সংস্থাটি ২০১৯ সালের আগে সংঘটিত অপরাধের সাথে জড়িত মামলাগুলির এখতিয়ার বজায় রাখে৷ যার মানে হলো আইসিসি দুতার্তের রাষ্ট্রপতিত্বের প্রথমার্ধে সংঘটিত টোখাং-সম্পর্কিত মামলাগুলি দেখতে পারে৷
মানবাধিকার গোষ্ঠী কারাপাতান একটি প্রেস বিবৃতিতে মার্কোসের সিদ্ধান্তের ফলাফল তুলে ধরেছে:
মার্কোস জুনিয়র ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তার প্রশাসন নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি সম্মানের বিষয়ে, বিশেষ করে মাদক যুদ্ধের শিকার এবং তাদের পরিবারগুলির দুর্দশার বিষয় এবং তাদের জবাবদিহিতার আহ্বানের ক্ষেত্রে নিষ্পৃহতার বিষয়ে পক্ষাবলম্বন করছে। কার্যত তিনি তাদের ন্যায়বিচার অস্বীকার করেছেন।
বেঁচে থাকা টোখাং ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের পরিবারগুলিকে আইনি সহায়তা প্রদানকারী একটি স্বেচ্ছাসেবক গোষ্ঠীর আইনী পরামর্শদাতা ক্রিস্টিনা কন্টি মার্কোস সরকারের যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
Terrible mistake, and could prove to be a costly miscalculation not to rejoin the ICC. Marcos’ premise is incorrect – there is no genuine investigation in the Philippines into the government policy or pattern of activities that has led to crimes against humanity #StopTheKillings
— Kristina Conti (@chronikrissys) August 1, 2022
অন্যায়কে স্থায়ী করা হলে সেটা ব্যাপক ভিন্নমতের জন্ম দেবে বলে তিনি সতর্ক করেন:
জনগণ যখন মনে করে যে সরকার তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে না বা করবে না, এবং ক্ষমতাবানরা এমনকি হত্যার মতো যেকোন কিছু করে পার পেয়ে যেতে পারে তখন বিচ্ছিন্নতা এবং হতাশার বাইরেও মার্কোসের খুব ভালভাবেই জানা উচিত যে জনগণ কীভাবে তাদের মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের পতন ঘটাতে পারে।
আইসিসির প্রসিকিউটর ফিলিপাইন সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে টোখাং-সম্পর্কিত মামলার তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য জমা দেওয়ার জন্যে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।