
ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ৩০ জুন তারিখে উদ্বোধনী ভাষণ দিচ্ছেন। ফিলিপাইন সরকারের রাষ্ট্রপতি যোগাযোগ ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া ছবি
বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম গোষ্ঠী ম্যানিলার জাতীয় জাদুঘরের সামনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় দেওয়া ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের উদ্বোধনী ভাষণে মিথ্যা এবং অসত্য বিবৃতি খুঁজে পেয়েছে।
৯ মে তারিখের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মার্কোসকে ৩০ জুন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।
কর ফাঁকির জন্যে অপরাধমূলকভাবে দোষী সাব্যস্ত থাকার কারণে মার্কোসের প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ছিল।
মার্কোস হলো ১৯৮৬ সালে শান্তিপূর্ণ গণবিদ্রোহে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত দুই দশক ধরে দেশ শাসনকারী প্রয়াত স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের পুত্রের নাম। মার্কোস পরিবারের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকাকালীন জাতীয় কোষাগার থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুট করার অভিযোগ রয়েছে। ফিলিপাইনের সামরিক শাসনের বছরগুলিতে করা এসব অপব্যবহার তারা অস্বীকার করে যাচ্ছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি বিশ্বাস করে যে মার্কোসেরা গত তিন দশক ধরে রাজনৈতিক প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ ব্যবহার করে স্বৈরাচার সম্পর্কে মিথ্যা আখ্যান ছড়িয়েছে। মার্কোসদের সহিংস শাসনকে হোয়াইটওয়াশ করা এবং দেশের অর্থনীতি ও গণতন্ত্রকে দুর্বল করার ক্ষেত্রে তাদের কুখ্যাত ভূমিকা মুছে ফেলতে পারা এই মিথ্যাগুলি ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক এবং সামাজিক গণমাধ্যমের অন্যান্য মঞ্চগুলিতে পাওয়া যায়।
মার্কোসের সফল নির্বাচনী প্রচেষ্টায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ বিভ্রান্তি ছিল সেটা তার উদ্বোধনী ভাষণটি প্রদর্শন করে। কারণ তার বক্তৃতায় বেশ কিছু মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ছিল।
প্রথমত মার্কোস দাবি করেন যে তিনি ফিলিপাইনের গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বাচনী ম্যান্ডেট পেয়েছেন। একটি স্বাধীন সত্য-যাচাইকারী ভেরা ফাইলস স্পষ্ট করেছে যে “মার্কোস জুনিয়র ফিলিপাইনের নির্বাচনী ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট অর্জনের দাবি করলেও আসলে তার ভোটের অংশটি কেবলমাত্র দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়লাভ।”
দ্বিতীয়ত মার্কোস তার অর্জনের মধ্যে তার নিজ প্রদেশে উইন্ডমিল নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছেন।
“এই দিনের অনেক আগে থেকেই চারদিকে সৃষ্টি করে অদৃশ্য এই পাখাগুলি উত্তর ইলোকোসের বালিয়াড়ির উপর দিয়ে ঘুরছে, করছে। আমি(ই) তাদের তৈরি করেছি।”
বিভিন্ন ব্যক্তিগত সংস্থা উইন্ডমিলগুলি তৈরি করায় এটি মিথ্যা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল।
“I built them,” President Bongbong said of the Ilocos Norte windmills
Rating: FALSE
None of the windmills in Ilocos Norte were developed or even funded by Marcos Jr.#FactsFirstPH
Read more: https://t.co/RhEHOSXKpz pic.twitter.com/OZOLBZNS2d
— The Baguio Chronicle (@baguiochronicle) June 30, 2022
“আমি এগুলো তৈরি করেছি,” উত্তর ইলোকোসের উইন্ডমিল সম্পর্কে বলেছেন রাষ্ট্রপতি বংবং
রেটিং: মিথ্যা
মার্কোস জুনিয়র উত্তর ইলোকোসের কোনো উইন্ডমিল তৈরি বা অর্থায়ন করেননি #বাস্তবতা_প্রথম_ফি
স্থানীয় একটি গণমাধ্যম গোষ্ঠী বাগুইও ক্রনিকল উল্লেখ করেছে প্রচারের সময় কীভাবে এই মিথ্যা দাবিটি বারবার করা হয়েছিল।
এমনকি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে থেকেই মার্কোস পরিবার কয়েক দশক ধরে তাদের চালানো বিভ্রান্তিকর প্রচার প্রচারণায় তাদের নাম ও ভাবমূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার প্রয়াসে প্রকল্প ও অবকাঠামো উদ্যোগগুলি বরাদ্দ করেছে।
মার্কোসের আরেকটি বিভ্রান্তিকর বিবৃতি হলো “পুরো অর্থনীতির জন্যে পর্যাপ্ত জীবাশ্ম জ্বালানি-মুক্ত প্রযুক্তি এখনো উদ্ভাবিত হয়নি” এবং “সেটা ধনী দেশগুলি গুরুত্ব সহকারে চেষ্টা করেনি” এমন দাবি। সংবাদ সংস্থা র্যাপলার বলেছে সেটা কেবল আংশিকভাবে সত্য কারণ সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়ার মতো উন্নত অর্থনীতি “শক্তি উৎপাদন থেকে নির্গমন মোকাবেলায় অগ্রগতির উদাহরণ দেখিয়েছে।”
প্রত্যাশিতভাবে মার্কোস তার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এই বলে যে শুধু তার সময়েই ফিলিপাইন খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছিল।
“অবহেলা এবং ভুল নির্দেশনা এখন কৃষির ভূমিকা সম্পর্কে জরুরী মনোযোগ দাবি করে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রতিটি প্রশাসনের মূল প্রতিশ্রুতি। একজন ছাড়া আর কেউই সেটা করতে পারেনি, “মার্কোস বলেছেন।
মার্কোসের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তথাকথিত “সুবর্ণ যুগে” দেশের অর্থনীত মারাত্মক সংকটে ছিল বলে অর্থনীতিবিদ এবং অন্যান্য পণ্ডিতরা দ্রুত এই ঐতিহাসিক বিকৃতিকে উড়িয়ে দেয়। র্যাপলার সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া সংক্ষিপ্ত করে বলেছে:
কোনো প্রশাসনই ক্রয় ও আমদানি ছাড়া প্রধান খাদ্যশস্যের মতো ভোগের চাহিদা উৎপাদন ক্ষমতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত খাদ্যে পরিপূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। মার্কোসের ২০ বছরের শাসন যে দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্যের উচ্চ হার এবং ৫০% এর বেশি মুদ্রাস্ফীতি এনেছে তার সব কিছুই খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা ছাড়াও একটি দেশের সক্ষমতার পরিমাপক।
মিথ্যা শুধু ভাষণেই ছিল না। মার্কোস সমর্থকের একটি ভাইরাল ভিডিও ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রশংসা করেছেন বলে মিথ্যে দাবি করেছে।
গণমাধ্যম পর্যবেক্ষক গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায় সম্পর্কিত কেন্দ্র মার্কোস রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন আগামী ছয় বছরে বিভ্রান্তি কীভাবে স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে সেই ব্যাপারে সতর্ক করেছে:
আগামী ছয় বছরে কীভাবে তথ্য বিবেচনা করা হবে তা নিয়ে উদ্বোধনী ভাষণ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। উপস্থাপনার বাগাড়ম্বর ও রাজনৈতিক ভাষণের নৈপুণ্য হলো রাজনীতিবিদদের কথার মিথ্যা থেকে বিভ্রান্ত করার হাতিয়ার। গণমাধ্যমকে প্রথম থেকেই রাষ্ট্রপতির মঞ্চ থেকে জারি করা মিথ্যাগুলি যাচাই করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

মার্কোসের উদ্বোধনী ভাষণের দিনে মানবাধিকার গোষ্ঠী ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার দাবিতে একটি বিক্ষোভ করে। বহুখাতের জোট বায়ানের ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া ছবি