সঙ্গীত উপভোগে – এমনকি আন্তর্জাতিক স্ট্রিমিং জায়ান্টদের সাথে পাল্লা দিয়ে – আফ্রিকীয়রা পরিবর্তিত হচ্ছে

সঙ্গীতপ্রেমীদের ডিস্ক ত্যাগ করে ডিজিটাল ডাউনলোডের বৈশ্বিক প্রবণতা অনুসরণের জন্যে আফ্রিকা মহাদেশের তিনটি মূল বাজার দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া এবং নাইজেরিয়াতে কম্প্যাক্ট ডিস্ক (সিডি) বিক্রি গত দুই দশক ধরে ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়েছে৷ স্মার্টফোনগুলি সর্বব্যাপ্ত হয়ে ওঠার সাথে সাথে আরো বেশি আফ্রিকীয়রা ইন্টারনেটে ঢুকতে পারছে, যা আর্থিক প্রযুক্তির বাজার এবং গণমাধ্যম শিল্পের মধ্যে প্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করেছে। এই উদ্ভাবনের সাথে সাথে সঙ্গীত স্থানীয় বাজারে আরো বেশী প্রবেশযোগ্য হয়ে ওঠায় মঞ্চগুলি একসময় আন্তর্জাতিক সঙ্গীত বাজারের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় হিসেবে দেখা অঞ্চলটিতে নতুন স্ট্রিমিং সম্ভাবনা দেখছে।

আফ্রিকাতে কীভাবে সঙ্গীত উপভোগ করা হয় তা অন্বেষণ করা দুই-পর্বের ধারাবাহিক নিবন্ধের প্রথম এটি।

স্ট্যাটিস্তা মতে, প্রাক্কলিত হিসেব  অনুসারে সঙ্গীত স্ট্রিমিং খাত থেকে আয় ২০২২ সালে ২৯ কোটি ৭০ লক্ষ মার্কিন ডলারে (প্রায় ২,৬০৮ কোটি টাকা) পৌঁছাতে পারে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে আফ্রিকাতে প্রায় ৫ কোটি ৫৮ লক্ষ ব্যবহারকারী থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মহাদেশটির মোবাইল গ্রাহক ২০১৯ সাল থেকে প্রায় ২ কোটি বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালের শেষে ৪৯.৫ কোটি জনে পৌঁছেছে যা এই অঞ্চলের জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে।

কিন্তু অনলাইন পদক্ষেপটি চ্যালেঞ্জ ছাড়া অর্জিত হয়নি। মোবাইল ডেটা খরচ এখনো আগ্রহোদ্দীপক নয় বেশিরভাগের কাছে। সুলভ ইন্টারনেটের জোট (এ৪এআই) এর একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে আফ্রিকীয় দেশগুলির গ্রাহকদের ইন্টারনেটে প্রবেশের জন্যে তাদের আয়ের তুলনায় বিশ্বের সর্বোচ্চ হারে টাকা দিতে হয়। এটি আফ্রিকীয় বাজারের জন্যে স্ট্রিমিং সংস্থাগুলির মধ্যে একটি যুদ্ধকে উস্কে দিয়েছে যার ফলে তারা এই বাজারের গতিশীলতার সাথে মানানসই কৌশল পরিবর্তনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে।

স্পটিফাইয়ের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা

সারাবিশ্বের শিল্পীরা ডেটা খরচ ছাড়াও স্পটিফাইয়ের মতো বৈশ্বিক স্ট্রিমিং জায়ান্টদের কৃপণের মতো রয়ালটির অর্থ পরিশোধ প্রক্রিয়ার নিন্দা করেছে। বৈশ্বিক বিলবোর্ড চার্টে প্রবেশ করতে না পারার পাশাপাশি এটাও  সত্য যে অনেক শিল্পী ও সৃজনশীল ব্যক্তিরা তাদের সঙ্গীত বিতরণ এবং পণ্যের বান্ডিলগুলির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায় যা আফ্রিকীয় সঙ্গীত স্ট্রিমিং মঞ্চগুলির বিকাশের জায়গা তৈরি করেছে।

সঙ্গীত স্ট্রিমিংয়ের পথিকৃৎ এবং তর্কাতীতভাবে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত স্ট্রিমিং মঞ্চ স্পটিফাই ২০১৮ সালে আফ্রিকার ৪০টিরও বেশি দেশে বিস্তৃত হয়ে আফ্রিকার প্রধানত তরুণ জনগোষ্ঠীকে একটি অতিরিক্ত মিউজিক স্ট্রিমিং বিকল্প প্রদান করেছে। তবে আফ্রিকীয় ভিত্তিক নতুন স্ট্রিমিং উদ্যোগগুলি স্পটিফাইয়ের বাজার আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে।

গত কয়েক বছরে দারুণ প্রবৃদ্ধির ফলে বুমপ্লে এবং মদুন্দো মঞ্চ দু’টি শক্তিশালী প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে।

৬ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী নিয়ে বুমপ্লে আফ্রিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় মিউজিক স্ট্রিমিং পরিষেবা। এটি অন-ডিমান্ড বৈশ্বিক স্ট্রিমিং মডেলের বিকল্প হিসেবে স্বদেশী সঙ্গীত স্ট্রিমিং এবং বিষয়বস্তু মঞ্চগুলির মধ্যে অন্যতম বৃহৎ একটি প্যাক অফার করছে।

তাদের কৌশল দেখে বোঝা সহজ কেন চীনা-মালিকানাধীন আফ্রিকা-কেন্দ্রিক কোম্পানিটি মহাদেশের সেরা বিকল্প হয়ে উঠতে গিয়ে স্পটিফাই এবং অ্যাপল মিউজিকের মতো বৈশ্বিক স্ট্রিমিং জায়ান্টদের পরাজিত করতে পেরেছে।

আফ্রিকার শীর্ষ-বিক্রীত ফোন ব্র্যান্ড টেকনো, ইনফিনিক্স এবং আইটেল নির্মাতা ট্র্যান্সনের বিক্রি করা প্রতিটি স্মার্টফোনে আগে থেকেই বুমপ্লে অ্যাপ ইনস্টল করা থাকে।

২০১৩ সালে চালু মদুন্দো প্রধানত আফ্রিকার লক্ষ লক্ষ গান বিনামূল্যে ডাউনলোড প্রস্তাব করে। এটিতে ফ্রিমিয়াম এবং গ্রাহক-ভিত্তিক মডেল ব্যবহার করা একটি বৈশ্বিক সঙ্গীত ক্যাটালগ পাওয়া যায়। এর আয়ের প্রাথমিক উৎস হলো ডিসপ্লে ব্যানারে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন এবং এর সঙ্গীত ট্র্যাকগুলিতে এমবেড করা অডিও বিজ্ঞাপন।

মদুন্দোর একটি অনন্য শিল্পী-কেন্দ্রিক আর্থিক মডেল রয়েছে। মঞ্চটিতে স্বাক্ষর করা শিল্পীরা তাদের গানের সমস্ত বিজ্ঞাপনের আয়ের ৫০ শতাংশ কেটে নেয়। কোয়ার্টজ আফ্রিকা অনুসারে,  ৮০ হাজারেরও বেশি সঙ্গীতজ্ঞ কোম্পানিটির সাথে নিবন্ধিনের ফলে ১৫ লক্ষ গানের একটি সম্মিলিত ক্যাটালগ তৈরি হওয়ায় এটি আফ্রিকীয় শিল্পীদের কাছে আকর্ষণীয় প্রমাণিত হয়েছে।

২০২১ সালের শেষ ত্রৈমাসিকে নিখিল-আফ্রিকীয় সঙ্গীত স্ট্রিমিং পরিষেবা তার ব্যবহারকারীর সংখ্যা  ২২ শতাংশ বৃদ্ধি ঘোষণা করেছে অর্থাৎ ব্যবহারকারীর সংখ্যা আগের বছরের ১ কোটি ৬৩ লক্ষ থেকে বেড়ে ২ কোটি পর্যন্ত হয়েছে।

মহাদেশটিতে রাজস্বের সম্ভাবনা যেমন দাঁড়িয়েছে তা বৈশ্বিক কোম্পানিগুলির কাছে এখনো আকর্ষনীয় না হলেও এই অঞ্চলটি আগামী দশকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সঙ্গীত গ্রাহক তৈরি করবে। স্থানীয় খেলোয়াড়রা শিল্প, শিল্পী, সঙ্গীত সম্প্রদায় এবং গণমাধ্যমের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে থাকায় তাদের বৈশ্বিক মঞ্চে স্ট্রিমিং বিভাগের বৃহত্তম অংশে পরিণত হওয়া খুবই সম্ভব।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .