
পিনোকিও, কাল্পনিক চরিত্র যার নাকটি মিথ্যা বলার সময় বড় হয়, প্রায়শই সত্য-পরীক্ষণে প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এনরিকো মাজান্তি (১৮৫২-১৯১০) এর শিল্পকর্ম। উন্মুক্ত ডোমেইন.
ব্রেক্সিটের পরদিন সকালে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে গণভোট, “বের হয়ে যাওয়া” প্রচারের এক নেতা জনসাধারণকে চমকে দিয়েছিলেন কেননা তিনি একটি মূল ইস্যুতে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের সাপ্তাহিক ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড অবদানের পরিবর্তে তা জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় পরিচালিত হবে কিনা জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টির (ইউকেআইপি) প্রাক্তন নেতা নাইজেল ফারাজ বলেছিলেন, “এটি একটি ভুল ছিল।”
আইটিভির গুড মর্নিং ব্রিটেনের উপস্থাপক সুসানা রেডের সাথে একটি সাক্ষাতকারে ফারাজ বলেছিলেন যে তিনি প্রচারণার প্রতিশ্রুতি পূরণের গ্যারান্টি দিতে পারবেন না, এবং দাবিটি ইস্যুটিকে কোনও সরকারী প্রতিশ্রুতি নয় বলে দাবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, যদিও এই ক্যাম্পেইনের ঘোষণার বিজ্ঞাপণও দেয়া হয়েছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকসহ ক্ষুব্ধ নাগরিকরা দৃষ্টি-আকর্ষণকারী জায়গায়,যেমন বাসের পার্শ্বে সাঁটানো বিজ্ঞাপনগুলির ফটো টুইট করে মিথ্যার জন্য তিরস্কার করেছেন।
“The £350m was an extrapolation. It was never total.” -Iain Duncan Smith pic.twitter.com/hqAQuXsuLn
— Ciaran Jenkins (@C4Ciaran) June 26, 2016
“৩৫০ মিলিয়ন ডলার একটি অতিরঞ্জন ছিল। এটি কখনই আসল ছিল না।” -ইআইন ডানকান স্মিথ – সিয়ারান জেনকিন্স (@সি4সিয়ারান)
এই ঘটনাটি জনগণের সেবা হিসাবে আরও রাজনৈতিক ফ্যাক্ট চেকিংয়ের প্রয়োজনীয়তার চিত্র তুলে ধরেছে, যাতে তাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলি সম্পর্কে ভোটাররা আরও জ্ঞাত ও যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।
রাজনৈতিক এবং মিডিয়া হেরফেরের প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিশ্বব্যাপী ফ্যাক্ট-চেকিং এর উত্থান
ফ্যাক্ট-চেক করা সাধারণ সাংবাদিকতা প্রক্রিয়ার একটি অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ করার সময়, একজন সাংবাদিকের উচিত এর যথার্থতা যাচাই করা। কাজটি তখন সম্পাদক দ্বারা পরীক্ষা করা হয়, একজন অধিক পেশাদার অভিজ্ঞ ব্যক্তি যিনি কিছু তথ্য সংশোধন বা আরও অধিক সংশোধন করতে পারেন।
কিছু বড় সংবাদ সংস্থায় তাদের সাংবাদিক এবং সম্পাদকদের কাজ ডাবল-চেক করার জন্য বিশেষ বিভাগ নিযুক্ত রয়েছে। এই ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের ধারাটি ১৯৮৮ সালে “ব্রাইট লাইটস, বিগ সিটি” ছবিতে জনপ্রিয় সংস্কৃতি হিসেবে দেখা যায়, যেখানে মাইকেল জে ফক্স নিউ ইয়র্ক এর একটি পত্রিকার “প্রধান ম্যাগাজিনে” নিযুক্ত একজন গ্ল্যামারাস ফ্যাক্ট-চেকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

১৯৮৮ সালে নির্মিত “ব্রাইট লাইটস, বিগ সিটি” ছবিতে মাইকেল জে ফক্স “নিউ ইয়র্কের একটি বড় ম্যাগাজিনে” ফ্যাক্ট-চেকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সূত্র: উইকিপিডিয়া, ন্যায্য ব্যবহার।
১৯৮০ এর দশকের দশক পরে, বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ নিউজ আউটলেটের পক্ষে ফ্যাক্ট-চেকিং বিভাগ চালু করা, এমনকি কোনও একক ফ্যাক্ট-চেকার নিউজরুমে খারাপ বা ভ্রান্তিকর বিষয়ের উকিলের ভূমিকা পালন করতে পারে সেরকম ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হয়নি – অথবা সহজভাবে বললে এর প্রয়োজনীয় বিবেচনা করেনি।
তবে ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের প্রয়োজনীয়তা এখনও যায় নি। যেহেতু নতুন প্রযুক্তিগুলি নতুন ধরণের মিডিয়া তৈরি করেছে যেগুলি বিভিন্ন ধরণের ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়, তাই এই তথ্যপরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বেশিরভাগ তথ্য এমনকি সংবাদ মাধ্যম দ্বারা ছড়িয়ে পড়া তথ্যও চেক করা হয় না, যেমন নিউজ আউটলেটগুলি কেবল কপি-পেস্ট করে বা কিছু ক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ চুরি করা হয় “ক্লিক যোগ্য”কন্টেন্ট যা অন্যের দ্বারা তৈরি।
রাজনীতিবিদরা, বিশেষত জনগণের কারসাজি কৌশলের প্রবণতার কারণে,ট্যাবলয়েড এর টাইকুনগুলির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে বা নিজেরাই মিডিয়া মালিক হয়ে এই নতুন সংবাদ-পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাজনৈতিক ফ্যাক্ট চেকিংয়ের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য একটি অভিযান চালানো হয়েছে। এটি দুটি সাধারণ দিক থেকে এসেছে। প্রথমটিতে সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যারা বছরের পর বছর খাদে কাটানোর পরেও তাদের পেশার মান ধরে রাখার প্রয়াসে একাডেমিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। দ্বিতীয়টিতে সিভিল সোসাইটি সংস্থাগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা তাদের সরকারকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করতে বাধ্য করে এবং এর মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য নতুন প্রযুক্তিগুলি ব্যবহারের লক্ষ্যে কাজ করে। নাগরিক অ্যাক্টিভিজম এবং মিডিয়া বিকাশের সংমিশ্রণে এরকম বেশ কয়েকটি প্রকল্প বিশ্বজুড়ে উঠে এসেছে।

ডিউক রিপোর্টার্স ল্যাব ডাটাবেসের ভিত্তিতে সবুজ অঞ্চলগুলি ফ্যাক্ট-চেকিং উদ্যোগের দেশগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং সম্প্রতি চালু হওয়া সাইটগুলির সাথে সংহতি করা হয়েছে (জুন ২০১৬)। অনুমতি সহ ব্যবহৃত অ্যালেক্সিয়াস মন্টজারিস/পয়েনটারের মানচিত্র।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইয়ার্সে সাম্প্রতিক গ্লোবাল ফ্যাক্ট-চেকিং শীর্ষ সম্মেলনে ৪০ টি দেশের ১০০ শতাধিক ফ্যাক্ট-চেকার অংশ নিয়েছে (#গ্লোবাল ফ্যাক্ট৩, জুন 9-10) ইউএস এর পয়েন্টার ইনস্টিটিউট কর্তৃক আয়োজিত এই সমাবেশটি পয়েন্টারের আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করেছিল। (প্রকাশ্য: আমি মেটামোর্ফোসিস ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি হিসাবে এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছি, যা ম্যাসিডোনিয়ায় এ জাতীয় দুটি প্রকল্প পরিচালনা করে: ট্রুথমিটার এবং মিডিয়া ফ্যাক্ট-চেকিং সার্ভিস।)
সংস্থাগুলি সত্য-পরীক্ষার সাথে জড়িত এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করে যা তাদের বিশ্লেষণাত্মক পণ্যগুলির একটি নীলনকশা হিসাবে কাজ করে। গ্লোবাল ফ্যাক্ট-চেকিং সামিটের মূল আলোচনার মধ্যে একটি হল নীতিগুলির একটি শেয়ার করা কোড তৈরি করা যা ফ্যাক্ট-চেকারদেরকে আরও বৃহত্তর স্বচ্ছতার দিকে চালিত করবে, এবং ফ্যাক্ট-চেকিং উপকরণের উপর পাঠকদের বিশ্বাসকে একীভূত করবে।
পরবর্তী লক্ষ্য হিসাবে টিভি ফ্যাক্ট-চেকিং
ফ্যাক্ট-চেকিং এর ক্রিয়াকলাপগুলির জন্য প্রাথমিক শ্রোতা অনলাইনে রয়েছেন। ম্যাসেডোনিয়ায় করা গবেষণা পরামর্শ দেয় যে এই জাতীয় কন্টেন্টের লক্ষ্য উচ্চশিক্ষিত অল্প বয়স্ক লোক। বিশ্বব্যাপী, তবে, এই জনসংখ্যার পরিসংখ্যানটি ভোটদানকারী জনগণের কেবলমাত্র একটি অংশকে উপস্থাপন করে। ব্যাপক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য, ফ্যাক্ট-চেকিং প্রকল্পগুলি অন্যান্য ধরণের মিডিয়াকে সহযোগিতা করে।
কিছু ফ্যাক্ট-চেকিং প্রকল্প মাঝারি পথে প্রবেশ করেছে যা এখনও বয়স্ক এবং কম শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি প্রভাবশালী মতামত তৈরি করে — টেলিভিশনে। বেশ কয়েকটি সফল উদাহরণ রয়েছে যেমন স্প্যানিশ এল ওজেটিভো এবং ইতালিয়ান ভাইরাস। উন্নত মানের কন্টেন্ট উতপাদন সক্ষম করার জন্য নেপথ্যে সহায়তা করা হলে, এই উদাহরণগুলি দেখায় যে ফ্যাক্ট-চেকিং এডুয়েনমেন্টের (বিনোদনের সাথে শিক্ষা) একটি আকর্ষক পন্থা হতে পারে।
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, এই জাতীয় উদ্যোগে অংশগ্রহণকারীরা তাদের জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। ২০১৬ সালের মে মাসে, সর্বাধিক জনপ্রিয় ইউরোপীয় টিভি অনুষ্ঠানের প্রযোজকরা বার্ষিক পয়েন্ট সম্মেলনের অংশ হিসাবে একটি ওয়ার্কশপের জন্য আঞ্চলিক ফ্যাক্ট চেকিং উদ্যোগের সাথে জড়িত হয়েছেন যেখানে সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের পাশাপাশি জনসাধারণের বক্তৃতারও ফ্যাক্ট-চেকিং করা হবে। এনজিও হোয়াই নট, সম্মেলনের আয়োজকরা (তারা ট্রুথমিটারের বসনিয়ান সংস্করণও চালান) টিভির ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের বিভিন্ন দিক সংক্ষিপ্ত করে একটি স্বল্প সময়ব্যাপী অনলাইন ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিল।
ভিডিওতে পয়েন্টারের অ্যালেক্সোজিস মন্টজারিস ব্যাখ্যা করেছেন যে,এর লক্ষ্য হলো ফ্যাক্ট-চেকারদের সহায়তা কোঁরা “টিভির আকর্ষণীয় কন্টেন্টের মধ্যে যা করা হয় বা বলা হয় তা অনুবাদ করা। … তাই এমন কিছু করা গুরুত্বপূর্ণ যা কেবলমাত্র কৌতূহলী লোক এবং এই ধরণের সত্যতার সন্ধান করছেন তাদের কাছেই পৌঁছায় না,পাশাপাশি যারা এই কন্টেন্ট কোনোভাবেই পাচ্ছেন না তাদের কাছেও যেন পৌঁছায় । “
চ্যানেল ৪ এর ফ্যাক্ট-চেক থেকে প্যাট্রিক ওয়ার্লাল ব্যাখ্যা করেছেন যে:
আমাদের বেশ কয়েকটি কারণে ফ্যাক্ট-চেকিং দরকার। এক, দুর্ভাগ্যক্রমে রাজনীতিবিদরা মিথ্যা কথা বলে। তাদের এটা সবসময় আছে এবং সর্বদা থাকবে।ঘরে বসে লোকেরা রাজনীতিবিদরা তাদের কী বলছেন তা প্রায়ই যাচাই করতে চান এবং এ ব্যাপারে পরিশ্রম করার জন্য তাদের কাছে সময় এবং সোর্স নেই। সুতরাং আমাদের মতো লোকদের এসবকিছুর বাইরে গিয়ে তাদের ফ্যাক্ট-চেক করার কথা রয়েছে। এবং আমরা জানি,এবং এর কিছু প্রমাণও রয়েছে যে, যখন লোকেদের জনজীবন নিয়মিত ফ্যাক্ট-চেকিং করা হয়,তখন তারা আরও সৎ হয়, তারা লোকেদের যা বলে সে সম্পর্কে আরও যত্নশীল হয়ে ওঠে।