থাই শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ অনলাইন ক্লাসে ইউনিফর্ম ও জাতীয় পতাকার জন্যে দাঁড়াতে চায়নি

একটি বৃত্তিমূলক কলেজের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস শুরুর আগে খুব ভোরে জুম মিটিংয়ে ইউনিফর্ম পরিধান, প্রার্থনা করতে এবং কলেজ স্লোগান দিতে হয়। সূত্র: খারাপ_শিক্ষার্থীবৃন্দ।

থাই শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের মাধ্যমে তাদের জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো, ক্যামেরার সামনে প্রার্থনা করানো এবং অনলাইন ক্লাসের সময় ইউনিফর্ম পরানোর সাম্প্রতিক জাতীয়তাবাদী প্রচেষ্টাগুলির সমালোচনা করতে সামাজিক গণমাধ্যমের আশ্রয় নিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ভাষায়, কিছু কিছু শিক্ষক প্রতিদিন অনলাইন ক্লাস শুরুর আগে সকাল আটটায় তাদের ক্লাসকে জাতীয় পতাকাকে দাঁড়িয়ে সম্মান করতে বলেছেন। একজন শিক্ষক সচিত্র প্রমাণ হিসেবে শিক্ষার্থীদেরকে জাতীয় সংগীতের জন্যে তাদের দাঁড়িয়ে থাকার রেকর্ড পাঠাতে বলেছেন।

“আগামীকাল সকাল আটটায় শিক্ষার্থীরা ঘরের মধ্যে টেলিভিশনের সামনে জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উঠে দাঁড়াবে এবং তার একটি ছবি তুলে আমার কাছে পাঠাবে,” লাইনের মাধ্যমে উবোন রাচাথানির একটি স্কুলের একজন শিক্ষক বলেছেন।

মুছে ফেলা শিক্ষকের নামসহ এই কথোপকথনটি ৮ জুন তারিখে থাইল্যান্ডে শিক্ষা সংস্কারের জন্যে সক্রিয় ছাত্র-কর্মীদের একটি দল খারাপ_শিক্ষার্থী ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৩ হাজার প্রতিক্রিয়া, ২৩ হাজার শেয়ার এবং ৩ হাজার ৫০০ সমালোচনামূলক মন্তব্যসহ পোস্টটি অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে।

“থাই শিক্ষকরা প্রতিদিন একটি নতুন নিম্নমান অর্জন করছে,” একটি মন্তব্যে বলা হয়েছে।

“এদের থামাবেন না। সারাদেশের কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এটা সমর্থন করা উচিত। আমাদের অবশ্যই দেশপ্রেমিক হতে হবে। বিদেশী গণমাধ্যম এর প্রতিবেদন না করা পর্যন্ত করতে থাকুন। তাদের দেখান, থাই শিক্ষাব্যবস্থা কেমন। তাদের অভিসম্পাত না করে তাদের উৎসাহিত করুন, “একটি ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যে বলা হয়েছে।

ভিন্ন একটি ইভেন্টে ৮ জুন তারিখে খারাপ_শিক্ষার্থীবৃন্দ জানিয়েছে যে একটি বৃত্তিমূলক কলেজের অনলাইন ক্লাস শুরুর আগে ভোরে জুম অধিবেশনে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরিধান ও প্রার্থনা করতে এবং কলেজ স্লোগান দিতে হয়েছে। সকালের অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম ছাড়া ভিন্ন পোশাক পরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে খারাপ_শিক্ষার্থীবৃন্দ।

সমালোচনা বৃদ্ধি পেলে ৮ জুন তারিখে থাইল্যান্ডের মৌলিক শিক্ষা কমিশন দপ্তরের মহাসচিব আম্পর্ন পিনাসা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই আদেশ দেয়নি বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন এটিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা যেতে পারে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই অংশ নিতে রাজি থাকা পর্যন্ত চর্চাটি সঠিক এবং এতে নতুনত্ব রয়েছে।

তবে পিনাসা আরো বলেছেন যে শিক্ষার্থীরা নীতিমালাগুলির সাথে একমত না হলে এটিকে অনুপযুক্ত বিবেচনা করা যেতে পারে।

কিছু সময়ের ধরে জাতীয় সংগীতটি থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয়বস্তু হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ২০২০ সালের গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভে অনেক শিক্ষার্থী জাতীয় সংগীত চলাকালে তিন আঙুলের সালাম প্রদর্শন করতো, যা করার জন্যে কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব এমনকি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অধিকার স্থগিত বা কেঁড়ে নেওয়া হতো।

২০২০ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংগীতের সময় উঠে দাঁড়াতে না পারায় রুটি বিক্রি করা একজন ৪৫ বছর বয়সী মহিলা শিক্ষার্থীর ইউনিফর্মে থাকা একটি মেয়েকে চড় মারেন। মেয়েটি তার মাসিক চলার কারণে উঠে দাঁড়াতে পারেনি। শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সরকার সমর্থিত একটি গোষ্ঠী হামলাকারী মহিলাটিকে কমপক্ষে ১৮,২০০ বাত ( প্রায় ৪৯ হাজার টাকা) প্রদান করে।

১ জুন নতুন সিমেস্টারের পড়াশোনা শুরুর পর থেকেই শিক্ষা বিতর্কের একটি বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। কোভিড-১৯ ছড়িয়ে যাওয়ার সময় প্রায়শই অত্যন্ত রক্ষণশীল ও কর্তৃত্ববাদী হিসেবে কথিত শিক্ষার্থীদের বাড়িতে শিখন উপকরণ সরবরাহ করার মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্লাস অনলাইনে নিয়ে যাওয়ার সময় থাই স্কুলগুলিকে অনেক সামঞ্জস্য বিধান করতে হয়েছে।

২০২১ সালের মে মাসের শেষের দিকে ট্রাট গভর্নর পিনিয়ো প্রাকোবফন শৃঙ্খলা ও একাডেমিক কর্মক্ষমতা উন্নত করবে মনে করে অনলাইন ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন নীতিমালাটি কার্যকর করা উচিত কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেবে স্কুলগুলি। এর প্রতিবাদে নীতি উপহাস করার জন্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ক্যামেরা ফিল্টার তৈরি করে। ফিল্টারগুলিতে প্রকৃতপক্ষে ইউনিফর্ম না পরা অবস্থাতেও একজন শিক্ষার্থীকে ইউনিফর্ম পরিহিত বলে মনে হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .