
গণসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মিয়ানমারজুড়ে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে। গ্লোবাল ভয়েসেসকে সরবরাহ করা ছবি, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।
মিয়ানমারের সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলি খসড়া “সাইবার নিরাপত্তা আইন”টির বিরোধিতা করলেও এটা সামরিক সরকারের ক্রমবর্ধমান বিরোধিতার মধ্যেই প্রবর্তিত হয়েছে।
৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এই খসড়া আইনটি স্থানীয় টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলির কাছে তাদের পর্যালোচনার জন্যে পাঠিয়েছে। অনলাইনে এই নথিটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় জনগণ এর বিষয়বস্তু পড়ার সুযোগ পায়।
৭৬টি ধারা সম্বলিত এই খসড়া আইনটিতে কর্তৃপক্ষগুলিকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট অবরুদ্ধ করা, বিষয়বস্তু সরিয়ে দেওয়া, এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে যেকোন ব্যক্তিকে জরিমানা করার ক্ষমতা প্রদান করার বিধি-বিধান রয়েছে।
সামরিক বাহিনী একটি অভ্যুত্থান করার কয়েকদিন পরেই এই খসড়া আইনটি চালু করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে পাস হলে খসড়া আইনটি দেশে বাক স্বাধীনতার আরো গলা চেপে ধরবে। ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের দিন এবং ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে মিয়ানমারে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের উপর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ সমর্থিত নাগরিক অবাধ্যতা আন্দোলনে ক্রমেই সমর্থন বাড়ছে। অভ্যুত্থান ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পর্কিত সংবাদ এবং অন্যান্য হালনাগাদ ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
খসড়া আইনটি প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমারভিত্তিক ২০০টিরও বেশি সুশীল সমাজ গোষ্ঠী একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে। এতে তারা প্রস্তাবিত আইনের খসড়া তৈরির ক্ষেত্রে সামরিক নেতৃত্বাধীন মন্ত্রণালয়টির কর্তৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
“খসড়া আইন” জারি করা শুধু সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা নয়, জনসাধারণের উপর অত্যাচার করার জন্যে অবৈধ আইনী ক্ষমতা প্রয়োগ করারও প্রমাণ।
… “খসড়া আইন”টিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা এবং অনলাইনে অন্যান্য গণতান্ত্রিক নীতিমালা ও অধিকার লঙ্ঘনের মতো মানবাধিকার বিরোধী ধারা রয়েছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলির উল্লিখিত একটি শর্তে কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করলে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির ব্যবহারকারীর ডেটা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
Art 30 & 31 from chapter 9 of the “bill” states, online platforms (FB, Twitter..etc) to keep user's details (IP, phone, ID, address, usage data, and other necessary data as directed by the ministry) for 3 yr and give it to them when asked. #WhatsHappeningInMyanmar #myanmarcoup pic.twitter.com/7tpTmZZKeN
— MIDO (@myanmarido) February 10, 2021
“খসড়া আইন”টির ৯ম অধ্যায়ে ৩০ ও ৩১ ধারায় (ফেবু, টুইটার ইত্যাদি) অনলাইন মঞ্চ ব্যবহারকারীর (আইপি, ফোন, আইডি, ঠিকানা, ব্যবহারের ডেটা এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য) বিবরণ ৩ বছরের জন্যে সংরক্ষণ করতে এবং চাওয়া হলে দিতে বলা হয়েছে। #মিয়ানমারে_কী_হচ্ছে #মিয়ানমার_অভ্যুত্থান
সামরিক সরকার খসড়া আইনটি সম্পর্কে মিয়ানমার কম্পিউটার ফেডারেশনকে মন্তব্য করতে বললেও তারা এই পদক্ষেপটিকে প্রত্যাখ্যান করে অংশীজনদের সাথে এটি নিয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছে। তারা আরো বলেছে যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদেরই এই আইনটির খসড়া করা উচিত।
STATEMENT: Myanmar Computer Federation, the mother organization of all computer associations in the country “strongly opposed” military council’s the draft of “Cyber Security law” sent to them for reviewing and recommend to go through proper legitimate procedures. Thread/1 pic.twitter.com/NyNYxBCvVi
— Hnin Zaw (@hninyadanazaw) February 12, 2021
বিবৃতি: দেশের সমস্ত কম্পিউটার সমিতির মাতৃ সংগঠন মিয়ানমার কম্পিউটার ফেডারেশন পর্যালোচনা করার জন্যে তাদের কাছে সামরিক কাউন্সিলের পাঠানো “সাইবার সুরক্ষা আইন” এর খসড়ার “তীব্র বিরোধিতা করে” এর যথাযথ বৈধ পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে। থ্রেড/১
মিয়ানমারের দায়িত্বশীল ব্যবসা কেন্দ্রের পরিচালক ভিকি বাউম্যান ফ্রন্টিয়ার ম্যাগাজিনকে বলেছেন, খসড়া এই আইনটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির ব্যবসা কার্যক্রমকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে:
মানবাধিকার সুরক্ষা না করা এরকম একটি আইন মানবাধিকার রক্ষা করে মিয়ানমারে পরিচালনার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সংস্থাগুলির পাশাপাশি অনলাইন পরিষেবা সরবরাহকারীদের কার্যক্রমকেও খুব কঠিন করে তুলবে।
বার্মার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইউ অং মায়ো মিন মিয়ানমার টাইমসকে বলেছেন যে খসড়া এই আইনটি সাইবার জগতের সামরিক নিয়ন্ত্রণকে বৈধতা দিতে পারে:
এটাকে সুরক্ষার চেয়ে আরো বেশি নির্যাতনমূলক মনে হয়। আর মনে হয় খসড়া এই আইনের আসল লক্ষ্য হলো অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন করা আর সামাজিক নেটওয়ার্কগুলি নিষিদ্ধ করা।
একই বক্তব্যের প্রতিধ্বনিত তুলেছে বেসরকারি সংস্থা মিয়ানমারের জন্যে ন্যায়বিচার – সামরিক কর্মকর্তাদের অস্বাভাবিক ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশের পরে যাদের ওয়েবসাইট ২০২০ সালে অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে:
#Myanmar military to enact a new Cyber Security Bill. Military “already controls 2 mobile networks, #Mytel & MPT, but now they want to control all online info through an unlawful process & punish those who dare practice their fundamental rights, including FOE”. #Myanmarcoup https://t.co/e2OF6AyUxR
— Justice For Myanmar (@JusticeMyanmar) February 11, 2021
#মিয়ানমার সামরিক বাহিনী নতুন একটি খসড়া সাইবার সুরক্ষা আইন কার্যকর করতে যাচ্ছে। সামরিক বাহিনী “ইতোমধ্যে #মাইটেল এবং এমপিটি মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করলেও তারা এখন একটি অবৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্ত অনলাইন তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে এবং এফওইসহ যারা মৌলিক অধিকার চর্চার সাহস করে তাদের শাস্তি দিতে চায়।” #মিয়ানমার_অভ্যুত্থান
অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশের সাথে সাথে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ভিন্নমতাবলম্বী কণ্ঠস্বর দমনাভিযান তীব্রতর করেছে। নাগরিক অবাধ্যতা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্যে বিক্ষোভকারী, কর্মী ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করেছে। আরো একটি গণগ্রেপ্তারের আশঙ্কা জাগিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে আবার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
Internet connections in Myanmar have been cut off again since around 1am Monday amid fears of a crackdown on recent protests. The move comes as armored personnel carriers and other military vehicles have been seen in various locations around Yangon.
#WhatsHappeningInMyanmar pic.twitter.com/mVwC5uWe8M
— Myanmar Now (@Myanmar_Now_Eng) February 14, 2021
সাম্প্রতিক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমনাভিযানের আশঙ্কার মধ্যে সোমবার দুপুর ১টার দিকে মিয়ানমারে আবার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ইয়াঙ্গুনের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র বাহিনী বহনকারী এবং অন্যান্য সামরিক যানবাহন দেখা যাওয়ার পর এই পদক্ষেপটি গ্রহণ করা হয়েছে।