
অ্যাম্বনে প্রশাসনিক মামলা দায়েরের প্রাথমিক শুনানির সময় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। শিক্ষার্থী গ্রুপ পেম্বেবাসান এর ফেসবুক পৃষ্ঠা থেকে নেয়া ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে পূর্বাঞ্চলীয় পাপুয়া সমর্থক এবং মূলত খ্রিস্টান অধ্যুষিত প্রদেশের পক্ষে বিক্ষোভে যোগদানের পরে ইন্দোনেশিয়ার খায়রুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত চার শিক্ষার্থীর মধ্যে আরবি নূর অন্যতম। বর্তমানে তাদের বহিষ্কারের বিরুদ্ধে আপিল করা হলেও আরবি নূর ১৩ জুলাই তারিখে জানতে পেরেছেন যে পুলিশ তাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ এবং ‘জনগণকে উস্কানি’র দায়ে অভিযুক্ত করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি তার বিরুদ্ধে মামলা বাতিল এবং শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্বহাল করার আহ্বান জানিয়েছে। গ্লোবাল ভয়েসেসের লেখক মং প্যালাতিনো ১২ আগস্ট তারিখে টুইটার কথোপকথনের মাধ্যমে মামলা সম্পর্কে আরবি নূরের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
বিক্ষোভ থেকে বহিষ্কার
আরবি নূর এবং রাত সতীর্থ ফাহরুল আবদুল্লাহ ডাব্লু বোন, ফাহিউদি কবির এবং ইকরা এস আলকাতিরি পাপুয়ার রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ২ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে টার্নেট সিটিতে একটি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশ সহিংসভাবে এই বিক্ষোভ সমাবেশটি ছত্রভঙ্গ করে এই চারজনকে ২৭ ঘন্টা আটক রেখেছিল।
পূর্ব ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত পশ্চিম পাপুয়া এবং পাপুয়া প্রদেশের প্রতিবেশী দ্বীপ টারনেট উত্তর মালুকু প্রদেশের অংশ। পাপুয়ার অনেক শিক্ষার্থী এখানকার কলেজে পড়াশোনা করে।
পশ্চিম পাপুয়া এবং পাপুয়া ইন্দোনেশিয়ার অংশ হলেও কিছু গোষ্ঠী সরকারের কাছে পাপুয়াবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি দাবি করছে। পাপুয়ার রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে বহু বছর ধরে চলতে থাকা এই বিরোধে এই অঞ্চলে ইন্দোনেশীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করে আসছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পর্যবেক্ষণ অনুসারে ২ জুন অবধি পাপুয়া থেকে প্রায় ৫১ জন বিবেকের বন্দী রয়েছেন। বেশিরভাগ রাজনৈতিক কর্মী এবং মানবাধিকার সুরক্ষাকারী রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের সম্মুখীন।
ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত না হলেও খায়রুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর চারজন শিক্ষার্থীকে পুলিশের পাঠানো নোটিশের ভিত্তিতে বহিষ্কার করেছে। রেক্টরের ঘোষণায় বলা হয়েছে যে এই চারজন “বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন, শিক্ষার্থী হওয়ার নৈতিকতা লঙ্ঘন এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকি সৃষ্টি করেছে।”
শিক্ষার্থীরা বহিষ্কারাদেশের বিজ্ঞপ্তিটি এই মার্চ মাসে পেয়েছে। তারা মালুকু দ্বীপপুঞ্জ প্রদেশের রাজধানী অ্যাম্বনের প্রশাসনিক আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করে এই বহিষ্কারাদেশটিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা
আপিলের আবেদন করার পরে আরবি নুরের বিরুদ্ধে টারনেট পুলিশ একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করেছে। ১৩ জুলাই তারিখে পুলিশ টারনেট জেলা অ্যাটর্নি অফিসে নোটিশ পাঠিয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে আরবি নূরের ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
আরবি নুরের আইনজীবী টিগর হুটাপিয়া বলেছেন, বিচারিক রায় ছাড়া পুলিশ কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথিত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারে না।
কোন ব্যক্তির সংঘটিত কথিত মাকার (রাষ্ট্রদ্রোহ) অবশ্যই আদালতে প্রমাণিত এবং রায়ের মাধ্যমে হতে হবে। স্পষ্টতই কপোলরেস (পুলিশ প্রধান) এর একটি সাধারণ বিজ্ঞপ্তিকে আনুষ্ঠানিক আইনী রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
জনসুরক্ষক জোর দিয়ে আরো বলেছেন আরবি নূর কোন অপরাধ করেননি:
আরবি পাপুয়াবাসীদের বিরুদ্ধে [মানবাধিকার] লঙ্ঘনের কথাও বলেছেন। আবার, বিক্ষোভটি শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ছিল এবং কোন ভোঁতা বা ধারালো অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না এবং ব্যক্তি বা সম্পত্তির বিরুদ্ধে কোন সহিংসতা সংঘটিতও হয়নি।
১০ আগস্ট তারিখে পশ্চিম পাপুয়ার জন্যে ইন্দোনেশীয় গণফ্রন্ট বা এফআরআই-ডব্লিউপি এর মুখপাত্র নানং কোসিম রেডিও নিউজিল্যান্ডকে বলেছেন যে তাদের মতো রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রায়শই মারধর করে এবং ‘জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে আটক করা হয়। আরবি নূর বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ক্রমবর্ধমানভাবে শাখা বৃদ্ধি পাওয়া এফআরআই-ডব্লিউপি এর সদস্য।
মানবাধিকার পর্যবেক্ষক (এইচআরডাব্লু) বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে আরবি নুরের মামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এটি খায়রুন বিশ্ববিদ্যালয়কে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের পুনর্বহালের আহ্বানও জানিয়েছে। এইচআরডাব্লু'র প্রবীণ ইন্দোনেশিয়া গবেষক আন্দ্রেয়াস হারসোনো বলেছেন:
খায়রুন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং বাক স্বাধীনতাকে সমর্থন করা উচিৎ এবং শান্তিপূর্ণভাবে মতামত প্রকাশকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা ঠিক নয়। (এর) এই সেমিস্টারেই শিক্ষার্থীদেরকে তাদের পড়াশোনায় ফিরে আসতে দিয়ে বাক স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নিশ্চিত করা উচিৎ।
Indonesian students becoming engaged in the West Papuan human rights struggle are under pressure from authorities.
Four Indonesian university students have been expelled for protesting against human rights abuses in Papua.https://t.co/gbBcjf59UP
— RNZ (@radionz) August 11, 2020
পশ্চিম পাপুয়ায় মানবাধিকার সংগ্রামে জড়িত ইন্দোনেশীয় শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের চাপে রয়েছে।
পাপুয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করায় ইন্দোনেশিয়ার চার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরবি নুরের প্রতিক্রিয়া
সরাসরি একটি টুইটারে বার্তার মাধ্যমে এই লেখক আরবি নুরের সাথে যোগাযোগ করলে নুর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বিষয়ে তার চিন্তা জানান:
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার বিষয়টি জানতে পেরে আমি অবাক হইনি এবং ভয়ও পাইনি। আমি এই অভিযোগের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগটি প্রায়শই পাপুয়ার নেতা-কর্মী এবং সংহতি জ্ঞাপনকারী পাপুয়ার নন এমন নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, (বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্যে রাষ্ট্রদ্রোহে দোষী সাব্যস্ত) সূর্য অন্তর অভিযুক্তি। আর এর প্রভাব হলো বাক স্বাধীনতাকে চুপ করিয়ে দেওয়া।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার বহিষ্কারের কথাও লিখেছেন।
ক্যাম্পাসকে স্বাধীন হতে হবে। ক্যাম্পাসের বাইরের (পুলিশি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে) রাজনৈতিক স্বার্থকে ক্যাম্পাসে স্থান দেওয়া উচিৎ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমলাদের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের ভিতর বা বাইরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।
তিনি ইন্দোনেশিয়া সরকারের পাপুয়ায় মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার দাবিকেও অস্বীকার করেন। তিনি বিশ্বের পাপুয়ায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পরিস্থিতির উপর অধিকতর নজর এবং এই অঞ্চলে মানবাধিকার সহিংসতার জন্যে ইন্দোনেশীয় পুলিশকে জবাবদিহি করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে চাপ দেওয়ার উপর জোর দেন।