
১ মে, ২০২০ তারিখে ফিলিপাইনের বিদেশী শ্রম দপ্তরের কর্মীরা তাইওয়ানের তাইচুং-এ শ্রম দিবস উদযাপন করছে। ফিলিপাইনের একটি সরকারি সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক ফেসবুক পাতা থেকে প্রাপ্ত ছবি
তাইওয়ান সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট প্রকাশের কথিত অভিযোগে ফিলিপাইনের এক সেবিকাকে দেশে ফেরত পাঠাতে ফিলিপাইনের একজন সরকারি শ্রম কর্মকর্তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
২৫ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে ফিলিপাইনের শ্রম ও কর্মসংস্থান বিভাগের (ডিওএলই) প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ফিলিপাইনের বিদেশী শ্রম দপ্তরের (পিওএলও) শ্রম সহদূত ফিদেল ভি ম্যাকাউইয়াগের রাষ্ট্রপতি রডরিগো দুতার্তের বিরুদ্ধে “নোংরা ও কুৎসিত” মন্তব্য করার জন্যে তাইওয়ানে থাকা ফিলিপাইনের একজন সেবিকাকে প্রত্যাবাসনের অনুরোধ করা একটি প্রেস বিবৃতি পোস্ট করেছে।
আমরা কোভিড-১৯ মহামারীজনিত বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সঙ্কটের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ফেসবুকে রাষ্ট্রপতি দুতার্তের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে নোংরা ও কুৎসিত বিষয়বস্তু পোস্ট করার মাধ্যমে সাইবার কুৎসা রটনার অপরাধে তাইওয়ানে অবস্থানরত ফিলিপাইনের একজন সেবিকাকে প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছি।
বিবৃতিটিতে আরো বলা হয়েছে যে এই সেবিকা “রাষ্ট্রপতির বদনাম এবং সরকারকে অস্থিতিশীল করতে একটি দল সংগঠিত করেছে।”
বিবৃতিটিতে উল্লিখিত ফিলিপাইনের প্রবাসী কর্মীটি (ওএফডাব্লু) হলেন গত তিন বছর ধরে তাইওয়ানের ইউনলিন কাউন্টিতে কর্মরত এলানেল এগোট অর্ডিডর নামের একজন সেবিকা। অর্ডিডরের স্বামীও ফিলিপাইনের প্রবাসী কর্মী এবং ফিলিপাইনে তাদের তিন সন্তান রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আনুমানিক এক কোটি ২০ লক্ষ ফিলিপাইনের প্রবাসী কর্মী রয়েছে। তাইওয়ানে থাকা প্রায় দেড় লক্ষ ফিলিপাইনের প্রবাসী কর্মীর মধ্যে বেশিরভাগই কারখানার শ্রমিক বা গৃহকর্মী।
ডিওএলই-এর প্রেস বিবৃতিটিতে বলা হয়েছে যে অর্ডিডর প্রথমে তার ‘কুৎসাপূর্ণ’ ভিডিওটি মুছে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহযোগিতা করতে রাজি হয়ে দুতার্তের উদ্দেশ্যে ক্ষমা চান। তবে পোলো বলেছে যে অর্ডিডর তার কথিত অন্যান্য সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির উপর আক্রমণ অব্যহত রাখার ফলে এই দপ্তর “ফিলিপাইনের আইনে অপরাধের গুরুত্বের ভিত্তিতে তাকে নিয়োগে সাহায্যকারী দালাল এবং তার নিয়োগকর্তার সাথে তার প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সমন্বয়” করেছিল।
অর্ডিডরকে প্রজাতন্ত্র আইনের ১০১৭৫ নম্বরের আওতায় সাইবার কুৎসার দায়ে অভিযুক্ত করা হতে পারে।
অর্ডিডর তার ফেসবুক পাতায় নিয়মিত দুতার্তে সরকারের কোভিড -১৯ মোকাবেলার সমালোচনা করেছেন। ফেসবুক তার কয়েকটি ভিডিও নামিয়ে নিলেও তিনি দরিদ্র ও শ্রমিকদের জীবিকা অর্জনে বাধা দেয়া কঠোর লকডাউন ব্যবস্থার সমালোচনা করে মন্তব্য করা অব্যাহত রেখেছেন।
ভাইরাসটির কারণে নয়, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কারণেই অনেকে মারা যাবে – তিনি একথা লিখেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিবাসী কর্মীরা মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নাগরিক সুবিধা উপভোগ করবে বলে জোর দিয়ে তাইওয়ানের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় অর্ডিডরের বিরুদ্ধে প্রত্যাবাসনের আবেদনটি নাকচ করে দিয়েছে।
ইউনলিন কাউন্টি শ্রম বিষয়ক বিভাগের মহাপরিচালকও মন্ত্রণালয়ের অবস্থানের প্রতিধ্বনি তুলে অর্ডিডরকে সেবিকা হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারার আশ্বাস দিয়েছে।
গণযোগাযোগ মাধ্যমের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে অর্ডিডর তাইওয়ান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন:
আমি খুশি এবং আমার অধিকার বজায় রাখার জন্যে তাইওয়ান সরকার যা বলেছে তার জন্যে আমি কৃতজ্ঞ।
আমি অনুভব করেছি আমি যা বলতে চেয়েছি তারা তা শুনেছে এবং এটা প্রমাণ করে যে এই তাইওয়ানে তারা গণতন্ত্রকে মূল্য দেয়।
Watch and listen as Linn Ordidor talks about her convictions, and why she thinks being opinionated and outspoken is worth the risk of offending the powerful here: https://t.co/TPweLGxcbq
— Rappler (@rapplerdotcom) April 30, 2020
লিন অর্ডিডরকে কেন তিনি শক্তিশালীদের বিরুদ্ধে মতামত প্রকাশ করা এবং স্পষ্ট ভাষায় কথা বলার ঝুঁকি নিয়েছেন তার সেই বিশ্বাসের ব্যাপারে এখানে আালোচনা করতে দেখুন এবং শুনুন:
ম্যানিলা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দপ্তরের (এমইসিও) সভাপতি এবং আবাসিক প্রতিনিধি অ্যাঞ্জিলিটো বানায়ো তাৎক্ষণিকভাবে তাইওয়ানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
এমইসিও তাইওয়ানে ফিলিপাইন সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি। বানায়ো জানিয়েছেন পিওএলও কর্মকর্তা এমইসিও-এর সাথে পরামর্শ না করে নিজে নিজেই একাজ করেছেন।
বিষয়টি ফিলিপাইনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এটি দুতার্তে সরকারের ভিন্নমতাভলম্বী অসহিষ্ণুতার আরো প্রমাণ হিসাবে উদ্ধৃত হয়েছে।
ওএফডাব্লুদের সহায়তা প্রদানকারী অভিবাসী আন্তর্জাতিক নামের একটি গোষ্ঠী পিওএলওকে স্বার্থসিদ্ধির জন্যে প্রাধিকারকে কাজে লাগানোর দায়ে অভিযুক্ত করেছে:
হাজার হাজার দুর্দশাগ্রস্থ, নিপীড়িত, অসহায় ও অবহেলিত ওএফডাব্লুদেরকে উদ্ধার ও সহায়তা করা দরকার। কিন্তু বিদেশে থাকা এসব পিওএলও কর্মকর্তারা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক মতামতের কারণে অর্ডিডরের বিরুদ্ধে তাদের সমস্ত সময় ব্যয় করার জন্যে দলবদ্ধ হয়েছে। এটা অবশ্যই ফিলিপাইনে কোভিড-১৯ মহামারী ও মন্দা মোকাবেলায় দুতার্তে শাসনের অনর্থকতা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরানোর উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
ফিলিপাইন সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা ফ্রাঙ্কলিন এম. ড্রিলন শ্রমবিষয়ক সহদূতকে অপসারণের আহ্বান জানিয়েছেন:
তার দায়িত্ব হলো আমাদের ওএফডাব্লুদের কল্যাণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তিনি সর্বোচ্চ অজ্ঞতা প্রদর্শন করেছেন। তার এই নিকৃষ্ট পদক্ষেপ ফিলিপাইন সরকারকে বিব্রত করেছে।
ফিলিপাইনের একজন অসহায় প্রবাসী কর্মীর প্রতি জনাব ম্যাকাউইয়াগের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ওএফডাব্লুদের কল্যাণ রক্ষার্থে তার নেওয়া শপথের দায়িত্বগুলির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মানবাধিকার কমিশনের আনুষ্ঠানিক মুখপাত্র অ্যাট্টি জ্যাকুলিন অ্যান ডি গিয়া কর্তৃপক্ষকে বাক স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে অনুরোধ করেছেন:
আমরা বারবার সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে জনগণের পরিষেবায় মতামত এবং সমালোচনার উচ্চতর সহনশীলতা দরকার, বিশেষ করে আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বৃহত্তর জবাবদিহিতার সুযোগ প্রদানের জন্যে শাসন সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর আলোচনা বজায় রাখলেই গণতন্ত্র সর্বোত্তমভাবে কাজ করে।
2 টি মন্তব্য
your story is informative. Thsank you for share with us
your story is really informative. Thank you