একজন স্ব-স্বীকৃত নাস্তিক মোবারক বালাকে নবি মুহাম্মাদকে অপমান করার কথিত অভিযোগে ২০ মার্চ, ২০২০ তারিখে উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ার কাদুনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, জানিয়েছে নাইজেরীয় দৈনিক পাঞ্চ।
২৭ এপ্রিল তারিখে উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ার কানো অঞ্চলের পুলিশ কমিশনারের কাছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে জিকোকো অনলাইন পোর্টাল অনুসারে এখানে, এখানে এবং এখানে প্রকাশিত ফেসবুক পোস্টগুলিকে “উস্কানিমূলক ও বিরক্তিকর” বলে অভিযোগ করা একদল আইনজীবির একটি আবেদনের পর বালাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বলেছিল বালা:
…আরো অন্যান্য বক্তব্যের মতো ইসলামের নবি মুহাম্মদ (সাঃ) [তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক] -কে শিশুকামী, সন্ত্রাসীর মতো সব ধরনের নিন্দনীয় নামে সম্বোধন অবশ্যই মুসলমানদের আইন হাতে নিতে প্ররোচিত করবে যার ফলে শেষ পর্যন্ত জনবিশৃঙ্খলা এবং শান্তি বিঘ্নিত হবে।
কানো প্রদেশের দণ্ডবিধি অনুসারে ধর্মনিন্দার অভিযোগে বালা’র বিচার করা হতে পারে। দোষী সাব্যস্ত হলে তার জরিমানাসহ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
বালা – বিতর্ক নতুন নয়
রাসায়নিক প্রকৌশলী এবং নাইজেরী মানবতাবাদী সমিতির নেতা বালা (৩৫) বিতর্কে নতুন নন।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৪ সালের জুন মাসে বালার পরিবার জোর করে তাকে কানোর একটি মানসিক হাসপাতালে আটকে রেখেছিল। ১৮ দিন পরে তাকে কানো মানসিক হাসপাতাল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
২০১৮ সালে মানবতাবাদী কণ্ঠস্বরকে হাসপাতালে তার অগ্নিপরীক্ষার কথা স্মরণ করে বালা বলেছিলেন “মনস্তাত্ত্বিক এবং সিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের” ওষুধ দিয়ে তাকে “জোর করে মাদকাসক্ত” করা হয়েছিল। ওষুধগুলি ” আমাকে প্রায় পাগল করে তোলার মতো প্রচুর অদ্ভুত অনুভূতি জাগিয়ে তুলতো,” তিনি বলেছিলেন।
যার ফলে অতীতের কথা চিন্তা করলে তার সাম্প্রতিক ফেসবুক মন্তব্যগুলি নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ২৬ এপ্রিল তারিখে বালা তার ফেসবুকের দেওয়ালে হাউসা ভাষায় এই কথাটি ভাগাভাগি করেছেন অনুবাদ করলে যা দাঁড়ায়: “লাগোসের নবি টিবি জোশুয়া (সাঃ) এবং সৌদি আরবের মুহাম্মাদ (আঃ) এর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই, আমাদের নাইজেরিয়ার সন্ত্রাসবাদের জন্যে এটা আরো ভাল।”
টিবি জোশুয়া হলেন লাগোসের (ইমানুয়েল টিভি কেন্দ্র পরিচালনাকারী) সর্বজাতীয় সিনাগগ-গির্জার একজন সুসমাচার প্রচারকারী যাজক।
স্পষ্টতই তার পোস্টটিতে উত্থাপিত প্রতিক্রিয়ার ফল হিসেবে বালা আরো একটি ফেসবুক পোস্ট ভাগাভাগি করার সময় বলেছেন: “আপনি যদি ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্মনিন্দা না করতে পারেন, এর মতবাদের সমালোচনা করতে না পারেন, তবে এই পাতাটি আপনার জন্যে নয়…”
সাহারা প্রতিবেদক নামের একটি অনলাইন সংবাদপত্র জানিয়েছে যে বালা “আবদুল সামাদ আদামু হিসেবে চিহ্নিত এক পুলিশ সদস্য”সহ “উগ্রপন্থীদের” কাছ থেকে মৃত্যুর হুমকি পাচ্ছেন। আদামু উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার বাউচি প্রদেশ পুলিশ কমান্ডের একজন সার্জেন্ট।
বালার আইনজীবীরা গ্রেপ্তারের আগেই “সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যম” এবং “ফোন কলের মাধ্যমে” তাদের মক্কেলের জীবনের উপর “সরাসরি” হুমকির কারণে কানো থেকে নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজাতে তার মামলা সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছেন।
ধর্মনিন্দা নাকি বাকস্বাধীনতা
ব্লাসফেমি বা ধর্মনিন্দা নাইজেরিয়ার প্রথাগত (ধর্মনিরপেক্ষ) এবং শরিয়া (ইসলামি) উভয় আদালত ব্যবস্থায় শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ।
প্রথাগত ব্যবস্থায় নাইজেরিয়ার ফৌজদারী বিধির ২০৪ ধারায় “ধর্মের অপমান” শিরোনামে বলা হয়েছে:
কোন ব্যক্তি কোন একটি শ্রেণীর জনগণের ধর্মের প্রকাশ্য অবমাননা বিবেচনা করে থাকে এমন কোন কাজ তাদেরকে অবমাননা করার উদ্দেশ্যে করলে এবং কোন ব্যক্তি কোন একটি শ্রেণীর জনগণ এধরনের অবমাননা বিবেচনা করবে জেনে বে-আইনী কোন কাজ করলে সে অপকর্মের জন্য দোষী সাব্যস্ত এবং দুইবছরের জন্যে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
কানো প্রদেশ দুইটি আইনী ব্যবস্থার অধীনে চলে।
তবে ১৯৯৯ সালের নাইজেরিয়ার সংবিধানের ৩৮ ধারায় প্রতিটি নাইজেরীয়কে চিন্তাভাবনা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতা প্রয়োগের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ৩৯ ধারা প্রতিটি নাইজেরীয়কে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার প্রদান করে।
এদিকে টুইটারে বালার গ্রেপ্তার এবং আসন্ন ধর্মনিন্দার অভিযোগ আরোপ নিয়ে #মুবারক_বালা_মুক্ত_কর হ্যাশট্যাগে বিভক্ত মতামত জড়ো হচ্ছে।
লেখক গিম্বা কাকান্দা বালার গ্রেপ্তারকে “একটি বাড়াবাড়ি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন:
The arrest of @MubarakBala on charges of blasphemy is uncalled-for. I don’t subscribe to provoking the sensibility of any religious group and I’ve told him it’s unfair that he does that, but arresting him is an overkill. He’s not a threat to Islam. He should’ve just been ignored. pic.twitter.com/jANzGIs6Ns
— Gimba Kakanda (@gimbakakanda) April 29, 2020
অযথাই ধর্মনিন্দার অভিযোগে @মুবারক_বালাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীর সংবেদনশীলতা উস্কে দেওয়ার পক্ষপাতি নই এবং আমি তাকে বলেছি যে তার এটা করা অন্যায়, তাই বলে তাকে গ্রেপ্তার করা একটি মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি। তিনি ইসলামের জন্যে হুমকি নন। তাকে স্রেফ উপেক্ষা করা উচিৎ।
“ধর্মের সমালোচনা করা কোন অপরাধমূলক কর্ম নয়,” এই নেটনাগরিক লিখেছেন:
Nigeria is a secular state and freedom of speech is one of the fundamental characteristics of a modern democratic state.
Criticising a religion is not a criminal offence.
So every right minded person should put aside their religious views and lend a voice to #FreeBalaMubarak.
— Obi Of Onitsha?? (@cliqik) April 29, 2020
নাইজেরিয়া একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং বাকস্বাধীনতা একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
কোন ধর্মের সমালোচনা করা কোন অপরাধমূলক কাজ নয়।
সুতরাং প্রতিটি ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে #বালা_মুবারক_মুক্ত_কর-তে কণ্ঠ মেলানো উচিৎ।
এই নেটনাগরিক ২০২০ সালে এসে ব্লাসফেমি বা ধর্মনিন্দা আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন:
The only reason you still enforce blasphemy laws in 2020 is because your religion cannot withstand the slightest enquiry.
— Girl de Maupassant (@somiscellany) April 29, 2020
২০২০ সালে এসে আপনি এখনো ব্লাসফেমি আইন কার্যকর করার কথা বলার একমাত্র কারণ হলো আপনার ধর্ম সামান্যতম তদন্ত সহ্য করতে পারে না।
তবে কেউ কেউ তাতে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
এই নেটনাগরিক টুইটারে হযরত মুহাম্মদকে অপমানকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার একটি চরমপন্থী মন্তব্য লিখেছেন:
যে নবি মুহাম্মদ (সাঃ)-কে অপমান করবে তার মৃত্যু*ণ্ড কার্যকর করা উচিৎ।
এটা বিতর্কের জন্য উন্মুক্ত নয়
আপনার বাকস্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে আপনি নির্দিষ্ট ধর্মকে আক্রমণ করে এটি লঙ্ঘন করতে ঘুরে বেড়াবেন
এবং এই নেটনাগরিক ধর্মের ব্যাপারে মানবাধিকার কর্মীদের ভণ্ড বলে অভিহিত করেছেন:
When someone insults our Prophet you'll say its freedom of speech
But when we insult gays/lesbians you'll say its discrimination
You right activists are hypocrites, have always been and will always be#FreeBalaMubarak
— Umar Al Asad (@alpha_keyboard) April 29, 2020
কেউ আমাদের নবিকে অপমান করলে আপনি তার বাকস্বাধীনতার কথা বলবেন
আর আমরা সমকামী/ লেসবিয়ানদের অপমান করলে তখন আপনারা এটাকে বৈষম্য বলবেন
আপনারা অধিকার কর্মীরা সর্বদা ভণ্ড ছিলেন, এবং #বালা_মুবারক_মুক্ত_কর এর পক্ষে থাকবেন
নাইজেরিয়ায় নাস্তিকতা
আনুমানিক ২০ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত নাইজেরিয়ায় দুটি প্রধান ধর্ম: খ্রিস্টান ও ইসলাম রয়েছে। মুসলমান ও খ্রিস্টানরা মিলে যথাক্রমে নাইজেরিয়ার জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ এবং ৪৮ শতাংশ।
উত্তরটি মূলত মুসলমান এবং নাইজেরিয়ার দক্ষিণ মূলত খ্রিস্টান প্রধান। দেশের উভয় অঞ্চলেই প্রচলিত কয়েকটি ধর্মের অনুসারি রয়েছে।
নাস্তিকতা জনপ্রিয় না হলেও কিছু কিছু জনপ্রিয় নাইজেরীয় রয়েছেন যারা প্রকাশ্যে যেকোন ধর্মের প্রতি তাদের অবিশ্বাসকে ব্যক্ত করেন।
ধর্মের নিন্দা করার জন্যে কিছু কিছু তরুণ নাইজেরীয় নাস্তিককে তাদের পরিবারগুলি নির্বাসিত করেছে। বিশেষত উত্তর নাইজেরিয়ার এটি মারাত্মক। ২০১০ সালের পিউ গবেষণার একটি অধ্যয়নে দেখা গেছে যে উত্তর নাইজেরিয়ার বেশিরভাগ (৫৮ শতাংশ) পুরুষ মুসলমান ইসলাম ধর্ম ত্যাগকারীদের মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করেন।
তবুও এগুলি চরম ঘটনা বলে মনে হচ্ছে।.
পালস অনলাইন ম্যাগাজিনের বিজনেস ইনসাইডারের সাথে ২০১৮ সালের একটি সাক্ষাৎকারে নাইজেরিয়ার নাস্তিক সমিতির একজন সদস্য স্বীকার করেছেন যে নাইজেরিয়ার নাস্তিকদের সাথে দেখা করতে গিয়ে কেউ কেউ “এখনো আঁতকে ওঠেন।” তবে বেশিরভাগ “নাইজেরীয় আপনার সাথে একমত না হলেও তারা সহিষ্ণু এবং মন খুলে কথা বলতে ভালবাসে।” ফলে তাদের বিশ্বাসের অভাব “প্রচুর আলোচনা” এবং “খুব কম হুমকি দেওয়ার উদাহরণ” প্রজ্জ্বলিত করে।
1 টি মন্তব্য
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি খবর আমাদের দেয়ার জন্য। এমনিতেই গ্লোবাল ভয়েস এর আমি অনেক বড় ফ্যান। এর প্রতিটি খবর আমার কেন জানি অনেক ভালো লাগে। মনের মাধুরি মিশিয়ে যেন লেখা হয়েছে প্রতিটি লেখা। বেঁচে থাকুক গ্লোবাল ভয়েস এটাই কামনা।