
প্রবাসী শ্রমিকদের পরিচালিত বই পড়াকে উৎসাহিত করার উদ্যোগ ‘একটি ব্যাগ, একটি বই’ – শ্রমিক নিবাসগুলিতে প্রয়োজনভিত্তিক জরুরি সরবরাহ এবং অনুদান সংগ্রহের একটি অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। ফেসবুক পাতা ‘একটি ব্যাগ, একটি বই’ থেকে নেওয়া ছবি। অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।
কোভিড-১৯ এর বিস্তার রুখে দেওয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্যে বিশ্বব্যাপী সংবাদ প্রতিবেদনগুলিতে সিঙ্গাপুর নিয়মিত প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু ২০২০ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে দেশটিতে মূলতঃ বিদেশী শ্রমিকদেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনার পরিমাণ তীব্র বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুর সরকারের কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অবহেলা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
৭ এপ্রিল তারিখে সরকার একটি ‘সার্কিট ব্রেকার’ আরোপের ঘোষণা করেছে যা কার্যত ৫৭ লক্ষ জনসংখ্যাসহ পুরো দেশটিকে লকডাউনের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন:
সংক্রমণটিকে ধীর গতির করতে আমাদেরকে শক্ত করে থামতে হবে। সার্কিট ব্রেকার বলতে আমরা এটাই বোঝাতে চাই। সরকারি এবং ব্যক্তিগত উভয় জায়গায় গতিবিধি এবং মেলামেশা যথেষ্ট কমাতে বর্ধিত নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা দরকার।
২১ এপ্রিল তারিখে ‘সার্কিট ব্রেকার’টি ১ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হবে বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন।
২৪ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ১২,০৭৫টি কোভিড-১৯ ঘটনা নিবন্ধিত হয়েছে যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই বিদেশী শ্রমিক নিবাসে বসবাসকারী অভিবাসী শ্রমিক। সিঙ্গাপুরে এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোভিড-১৯ ঘটনা থাকলেও সরকার দাবি করেছে যে ব্যাপক ও আগ্রাসী সংখ্যায় পরীক্ষার কারণে এই সংখ্যাটি এতো বেশি।
সিঙ্গাপুরের শ্রমিক নিবাসগুলিতে কাজের অনুমতিপ্রাপ্ত তিন লক্ষেরও বেশি শ্রমিক রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দক্ষিণ এশীয় দেশগুলি থেকে আসা মানুষ। তারা ১২ থেকে ২০ জনের খাটিয়া বিশিষ্ট কক্ষে বসবাস করে যেখানে সামাজিক দূরত্ব অনুশীলন করা কঠিন।
সরকার চিকিৎসা এবং পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করার জন্যে চিকিৎসক দল মোতায়েন করায় শ্রমিকরা তাদের ঘর ছেড়ে বেরুতে না পারায় হঠাৎ করে এই নিবাসগুলি অনেক কয়েকটি কোভিড-১৯ এর আতুর ঘরে পরিণত হয়েছে।
Singapore quarantined nearly 20,000 workers in two dormitories after they were linked to at least 90 coronavirus infections. Migrant workers living in these camps say they are like a coronavirus time bomb waiting to explode https://t.co/BppsWDV1RT pic.twitter.com/liQSkdS2Hq
— Reuters (@Reuters) April 7, 2020
সিঙ্গাপুর কমপক্ষে ৯০টি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সাথে সংযুক্ত প্রায় ২০ হাজার কর্মীদের দুটি আস্তানায় কোয়ারেন্টাইন করেছে। এই শিবিরগুলিতে বসবাসরত অভিবাসী শ্রমিকরা বলেছে যে তারা করোনা ভাইরাসের একটি টাইম বোমা বিস্ফোরণের জন্যে অপেক্ষা করছে
এই নিবাসগুলিতে বসবাসকারীদের থেকে কোভিড-১৯ রোগীদের আলাদা বিভাগে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। স্বাধীন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংবাদ মঞ্চ কোকোনাটস জানিয়েছে যে:
এছাড়াও সরকার পৃথকভাবে: একটা অভিবাসী শ্রমিকদের এবং একটা সিঙ্গাপুরের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্যে এমনভাবে ট্যালি করার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিবাসী জনগোষ্ঠীকে বিশেষত নাগরিক ও (স্থায়ী) বাসিন্দাদেরকে শ্রুতিমধুরভাবে “সম্প্রদায়” উল্লেখ করে অভিবাসী জনগোষ্ঠীকে “আলাদা করা”র অভিযোগ তোলা হয়েছে।
১৩ এপ্রিল তারিখে সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় শ্রমিক নিবাসে রূপান্তরিত কারখানাগুলির (এফসিডি) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছে:
এফসিডিগুলিতে সবচেয়ে বেশি অসুস্থ রোগীর এবং পৃথক রাখার জায়গার অভাবসহ ৫৭টি ছোটখাট ত্রুটি খুঁজে পাওয়া গেছে। এফসিডিগুলির কয়েকটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মান অগ্রহণযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে সরকারের এইসব নিবাসে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা দরকার ছিল বলে জনশক্তি মন্ত্রী জোসেফাইন তেও এই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন:
কারণ সেই সময় স্বাস্থ্যবান শ্রমিকরা দলে দলে পরীক্ষা করার জন্যে হাসপাতালে যাচ্ছিল। উৎকণ্ঠা হয়েছিল, হয়তো হাজার হাজার লোক সেখানে হাজির হয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার কর্মীদেরকে নাজেহাল করে ফেলবে।
একটি টেলিভিশন বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী লি হিসিয়েন লুং প্রবাসী শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছেন যে সরকার তাদের ত্যাগ করবে না:
আমাকে আমাদের অভিবাসী কর্মীদের আবারো জোর দিয়ে বলতে দিন: আমরা যেমন সিঙ্গাপুরবাসীর যত্ন নিই তেমনি আপনাদেরও যত্ন নেব। এই কঠিন সময়কালে আপনাদের সহযোগিতার জন্যে আমরা আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আপনার স্বাস্থ্য, আপনার কল্যাণ এবং আপনার জীবিকা দেখাশোনা করবো। আপনি যেন বেতন পান এবং আপনি যেন বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্যে আমরা আপনার নিয়োগকারীদের সাথে কাজ করবো। এবং আমরা আপনাকে বন্ধু এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখতে সহায়তা করবো।
অস্থায়ী শ্রমিকদেরও বিবেচনায় নিতে হবে নামের একটি বেসরকারী সংস্থা শ্রমিক নিবাসে শ্রমিকদের সহায়তা প্রদান করে আসছে। এটি নিয়োগকর্তারা যাদের ঘরে আটকে রেখেছেন বলে কথিত শ্রমিকদের সম্পর্কে গণমাধ্যম এবং জনসাধারণকে জানিয়েছে। এটি আরো জানিয়েছে যে সরকার কোভিড-১৯ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে শ্রমিকদের কিছু নির্দিষ্ট চিকিৎসা পরিস্থিতির প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না। সংস্থাটি শুধু শ্রমিকদেরই যে নোংরা আস্তানাগুলির জন্যে দোষী সাব্যস্ত করতে হবে এমন ধারণারও বিরোধিতা করেছে।
এখানে যুক্তিটি হলো কোন জায়গা পরিষ্কার বা নোংরা থাকার ক্ষেত্রে কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতাগুলি একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে। স্থানটির নকশা; আবাসনের ঘনত্ব; চলাফেরার উপর নিয়ন্ত্রণ; বিদেশী কর্মী, পরিচালন ব্যবস্থা এবং পদ্ধতিসমূহের মধ্যেকার কর্মজীবনের ভারসাম্য – এগুলির সবকিছুই বিবেচনায় নিতে হবে।
এটা শুধু মানুষগুলোর ব্যাপার নয়। এটা হলো সেই ব্যবস্থাটি। স্তূপের একদম নীচে থাকা শ্রমিকদের দোষারোপ করার আগে এটির উপরে বসে থাকা লোকদের মেধার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে।
আইনজীবী ও প্রাক্তন কূটনীতিবিদ টমি কোহ ফেসবুকে লিখেছেন যে শ্রমিক নিবাসগুলিতে কোভিড-১৯ এর ঘটনাগুলি হলো সিঙ্গাপুরকে জাগিয়ে তোলার ডাক তারা যেন শ্রমিকদের সাথে আরো ভাল আচরণ করে:
সরকার নিয়োগকারীদের আসনবিহীন সমতল ট্রাকে করে তাদেরকে পরিবহন করার অনুমতি দিয়েছে। তারা উপচে পড়া ভীড় সম্পন্ন আস্তানাগুলিতে থাকে এবং সার্ডিন মাছের ঝাঁকের মতো তাদের ১২ জনকে একটি ঘরে প্যাকেট করে রাখা হয়। আস্তানাগুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নয়। আস্তানাগুলি বিস্ফোরণের জন্যে অপেক্ষারত টাইম বোমার মতো। এখন সেগুলি সংক্রমিত বহু শ্রমিক হিসেবে বিস্ফোরিত হয়েছে। সিঙ্গাপুরের এটাকে আমাদের অপরিহার্য বিদেশী কর্মীদের প্রতি প্রথম বিশ্বের দেশগুলির মতো আচরণ এবং এখন তাদের প্রতি যে অসম্মানজনক আচরণ করা হচ্ছে তা না করার জাগ্রত আহ্বান হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ।
সিঙ্গাপুরের লেখক কার্স্টেন হান টুইটারে লিখেছেন যে সমস্যাটি “একইসাথে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা, একটি মানবিক সমস্যা, একটি জরুরি সরবরাহের সমস্যা এবং একটি অর্থনৈতিক সমস্যা”। তার স্মরণ করিয়ে দেওয়াটি সেই শিক্ষাটিকে বুঝায় যা সিঙ্গাপুর এবং অন্যান্য সমাজগুলিকে কর্ণপাত করতে হবে:
18/ What should we learn from this? I think what we're seeing in #Singapore is that even if you do most things right, if you're not considering or proactively looking out for the most vulnerable and marginalised in your society, you're not going to effectively fight #COVID19.
— Kirsten Han 韩俐颖 is on a “circuit break” (@kixes) April 24, 2020
১৮/ এটা থেকে আমাদের কী শেখা দরকার? আমি মনে করি আমরা #সিঙ্গাপুরে যা দেখছি তা হলো বেশিরভাগ জিনিস ঠিকভাবে করার পরও আপনি যদি আপনার সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকি পূর্ণ ও প্রান্তিকদের বিবেচনা অথবা সক্রিয়ভাবে সন্ধান না করেন, তাহলে আপনি আসলে কার্যকরভাবে #কোভিড-১৯ এর সাথে লড়াই করছেন না।