কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে গ্লোবাল ভয়েসেসের বিশেষ কভারেজটি দেখুন।
মালয়েশিয়ার সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলি জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদের পুলিশ এবং যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া মন্ত্রণালয়কে (কেকেএমএম) সরকারি কোভিড-১৯ বক্তব্যকে ভুল ব্যাখ্যা করার কথিত অভিযোগে অনলাইন সংবাদ ওয়েবসাইটগুলির বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার নির্দেশ দানকারী বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম গোষ্ঠী কর্তৃপক্ষের সমালোচনাকারী পোস্টসহ বিভিন্ন ধরনের ‘ভুয়া সংবাদ’ এর বিশদ বিবরণ দিয়ে একটি তথ্য-লেখচিত্র প্রকাশের সমালোচনা করেছে।
২০২০ সালের ১১ এপ্রিল তারিখে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকব ঘোষণা করেছেন যে কেকেএমএম ও পুলিশকে ‘বিভ্রান্তিকর ও ভুল’ সংবাদ প্রকাশকারী সংবাদ পোর্টালগুলির বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কোভিড-১৯ সম্পর্কে জনসাধারণকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করার জন্যে এটা প্রয়োজন।
বেশ কয়েকটি নাগরিক সমাজ গোষ্ঠী এই আদেশের সমালোচনা করে সতর্ক করেছে যে এটা সরাসরি বাক স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করে:
গণমাধ্যম সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের নির্দেশ দানের অসমানুপাতিক প্রতিক্রিয়াটির কারণে জনস্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রবাহ এবং এসম্পর্কিত প্রকাশ্য আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়ে হিতে বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে।
তারা এই প্রশ্নটিও করেছে মন্ত্রী কেন অনলাইন সংবাদ ওয়েবসাইটগুলিকে আলাদা করে চিহ্নিত করেছেন। তারা আরো বলেছে যে গণমাধ্যম কোন বিবৃতিটি ‘ভুলভাবে উদ্ধৃত’ বা ‘ভুল প্রতিবেদন’ করেছে সরকারকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়াটাও বিপজ্জনক।
সরকারগুলি সার্বজনীনভাবে কোন তথ্য পাবলিক ডোমেইনে থাকতে পারে কি পারে না এবং কোনটি “ভুলভাবে উদ্ধৃত” বা “ভুল প্রতিবেদন করা হয়েছে” তা নির্ধারণ করার ক্ষমতাসম্পন্ন সত্যের একমাত্র সালিশকারী হতে পারে না।
কোভিড-১৯ মহামারীর সাথে লড়াইয়ের সময় মালয়েশিয়ার (সংবিধানের) ১৯ অনুচ্ছেদে গণমাধ্যমের কাজ সুরক্ষার জন্যে কর্তৃপক্ষগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে:
The gov will lose their credibility when they start attacking media& journalists.The gov must make efforts to protect the work of journalists. Journalists&media are front liners that work hard to provide info to the public and their work must be protected instead of undermined.
— ARTICLE 19 Malaysia (@Article19Msia) April 12, 2020
গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের আক্রমণ করা শুরু করলে সরকার তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। সাংবাদিকদের কাজ সুরক্ষার জন্যে সরকারকে অবশ্যই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম সম্মুখ সারিতে থেকে জনসাধারণকে তথ্য সরবরাহ করতে কঠোর পরিশ্রম করে। আর তাই তাদের কাজকে অবনমন করার পরিবর্তে রক্ষা করতে হবে।
‘ভুয়া সংবাদ’ তথ্য-লেখচিত্র
১০ এপ্রিল তারিখে মালয়েশিয়ার তথ্য বিভাগ জনগণকে বিভিন্ন ধরণের ‘ভুয়া সংবাদ’ সম্পর্কে অবহিত করে একটি তথ্য-লেখচিত্র প্রকাশ করেছে। নিম্নলিখিত ধরনের সামগ্রীকে ‘ভুয়া সংবাদ’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে (স্বাধীন সাংবাদিকতা কেন্দ্র বা সিআইজে অনুবাদ করেছে):
কোন ব্যক্তির মর্যাদা ও চরিত্র, কোন সংস্থা এবং দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করে; ক্ষমতাসীন সরকার ও নেতাদের প্রতি ঘৃণার উদ্রেক করে; দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অবকাঠামো সম্পর্কে উল্লেখ করে; উগ্রবাদী বিশ্বাসের শিক্ষার সাথে জড়িত; ধর্ম ও বর্ণের সংবেদনশীলতাকে স্পর্শ করে এবং পর্নোগ্রাফি, জুয়া ও মিথ্যা উপাদান রয়েছে [এমন বিষয়বস্তু]
সিআইজে বলেছে যে তথ্য বিভাগ প্রকাশিত তালিকাটি বাক স্বাধীনতার উপর দমনাভিযান পরিচালনায় ভূমিকা রাখতে পারে:
কথিত ‘প্রকারের’ ‘ভুয়া সংবাদ’ সাধারণীকরণ ও তালিকাভুক্ত করার বিপদগুলি ভিন্নমতাবলম্বী এবং ভিন্নমত গুঁড়িয়ে দেওয়ার বা বিভিন্ন ধরনের মতামতকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্যে দমনাভিযান পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে সরকারের কৌশলগত প্রচেষ্টাকে বৈধতা দান করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন আলিরান বলেছে এটা সরকারের অস্থিতিশীলতার প্রতিফলন করে:
বিশেষ করে যাদের সমালোচনা ‘ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি অবিশ্বাস’ সৃষ্টি করেছে বলে মনে করা হয় তাদের শাস্তি দেওয়ার সরকারি প্রচেষ্টার বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি।
সঙ্কটের সময়ে বিশেষভাবে চরম আকারের সেন্সরের পথ অবলম্বন করাটা বর্তমান সরকারের নিরাপত্তাহীনতাকে প্রতিফলিত করে।
বিভাগটির প্রতি সংসদ সদস্য ফাহমি ফাদজিলের কিছু প্রশ্ন রয়েছে। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন:
সরকার কি বলতে চাচ্ছে যে কোন মন্ত্রী গরম পানি কোভিড -১৯ ভাইরাসকে মারতে সাহায্য করতে পারে একথা বলার পর আমরা কোন মন্তব্য করতে বা ক্ষুব্ধ হতে পারবো না?
অথবা সরকারের প্রকাশিত কোন গ্রাফিকস যখন গৃহবধূদের তাদের স্বামীদেরকে ডোরেমনের কণ্ঠে নকল করে ডাকতে উৎসাহিত করে?
যেটা ঠিক, সেটা ঠিক। আর ভুল হলে, সেটা সংশোধন করা দরকার।
সাংসদ একজন মন্ত্রীর নোভেল করোনা ভাইরাসকে হত্যা করার জন্যে উষ্ণ জল পান এবং গৃহনির্যাতন রোধে গৃহবধূদের ডোরেমন কার্টুনের স্বর ব্যবহার করার পরামর্শ সম্পর্কিত সাম্প্রতিক সংবাদ প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেছেন।
সিআইজে কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালে কীভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারে সে সম্পর্কে একটি ব্যাপক কর্মসুচির খসড়া প্রণয়ন করেছে। এখানে মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই সম্পর্কিত সিআইজের প্রস্তাবনাটি দেওয়া হল:
6. “Fake news” – education over prosecution. Dissenting voices must be heard; promote democracy.
Have efficient/broad channels of information from the govt and media for the public to verify info and report misinformation
Repeal/amend laws that arbitrarily stifle speech!
— CIJ Malaysia (@CIJ_Malaysia) April 9, 2020
“ভুয়া সংবাদ” – নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষা। ভিন্নমতাবম্বীদের কণ্ঠস্বর অবশ্যই শুনতে হবে; গণতন্ত্র প্রচার করুন।
জনসাধারণের তথ্য যাচাই এবং মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে সরকার এবং গণমাধ্যমের দক্ষ/ বিস্তৃত তথ্য চ্যানেল দরকার
যথেচ্ছভাবে মতামত দমনকারী আইন বাতিল/ সংশোধন করুন