‘রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা’ মার্কিন ভেন্টিলেটরগুলিকে বার্বাডোসে পৌঁছতে দেয়নি – নাগরিকদের কাছে কৌশলটি প্রশ্নবিদ্ধ
কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে গ্লোবাল ভয়েসেসের বিশেষ কভারেজটি দেখুন।
কোভিড -১৯ মহামারীর মধ্যে দেশগুলি পরীক্ষণ উপকরণ, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম এবং ভেন্টিলেটরের মতো যাদের বেশিরভাগই আমদানি করতে হয় এমন গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সামগ্রীর ক্রমবর্ধমান চাহিদার সম্মুখীন হয়।
সম্পদ সুরক্ষিত করতে ছুটে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী সরকারগুলির এধরনের সরঞ্জামাদির উপর নিষেধাজ্ঞার মতো সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
৫ এপ্রিল তারিখে একটি সংবাদ সম্মেলনে বার্বাডোসের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা মন্ত্রী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেফ্রি বোস্টিক (টাইমলাইনে ৩৩ মিনিটে) বলেছেন বার্বাডোসের জন্যে আসতে থাকা ২০টি ভেন্টিলেটর (এর চালান) “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জব্দ করেছে।”
তিনি বিস্তারিত আর কিছু জানাননি।
প্রাথমিকভাবে এই ভেন্টিলেটর মেশিন গুলি বার্বাডীয় বংশোদ্ভূত পপ তারকা রায়হানার দান করা কিনা তা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি থাকলেও পরে নিশ্চিত করা হয়েছিল যে এগুলি একটি আলাদা ব্যাচের ছিল।
এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মন্ত্রী বোস্টিক বলেছেন যে দ্বীপের বর্তমান চাহিদা পূরণের জন্যে (অন্যান্য বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া দেড় শতাধিক গণনায় না ধরেই) বার্বাডোসের পর্যাপ্ত পরিমাণ ভেন্টিলেটর রয়েছে – এবং গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী কেনার জন্যে সরকারের কাছে একটি “খোলা চেক” {যথেষ্ট অর্থ) রয়েছে।
দ্বীপটিতে বর্তমানে ৪৮টির মতো ভেন্টিলেটর রয়েছে; ৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ৫৬ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে মাত্র তিন জনের এগুলি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়েছিল।
তা সত্ত্বেও ক্যারিবীয় নেটনাগরিকেরা ভেন্টিলেটর রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপটিকে ভালভাবে নেয়নি:
More barbarism from the United States.
Sickening #ventilators #Barbados https://t.co/jWdoZBLYiT
— Alex Rupert (@alexanderupert) April 6, 2020
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরো বর্বরতা।
অসুস্থ করে তোলার মতো #ভেন্টিলেটর #বারবাডোস
মার্কিন প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইন
কোভিড-১৯ মহামারীতে জনহিতকর কাজ (উদাহরণস্বরূপ, চীন ত্রিনিদাদ ও টোবাগোকে কয়েক হাজার পরীক্ষণ উপকরণ দান করেছিল) ঘটলেও এধরনের স্বার্থপরতার কাজ সেগুলির কিছুটা হলেও বিপরীত ভারসাম্য বিধান করেছিল।
উদাহরণস্বরূপ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০২০ সালের ২ এপ্রিল তারিখে ট্রাম্প প্রশাসন স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক থ্রিএমকে কানাডা এবং লাতিন আমেরিকায় সুরক্ষামূলক মুখোশ রপ্তানি বন্ধ করার কথিত নির্দেশ প্রদানের পর প্রতিশোধ গ্রহণের হুমকি দিয়েছিলেন।
হোমল্যান্ড নিরাপত্তা বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থাকে তাদের বিবেচিত প্রয়োজনীয় যে কোন চিকিৎসা সরবরাহ দখলে নিয়ে নেওয়ার অনুমোদন প্রদান ছাড়াও বেসরকারি প্রস্তুতকারীদেরকে আদেশ পূরণের সময় সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করতে পারা প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইনটি চালু করে মার্কিন সরকার এটা করতে পেরেছে।
তবে রপ্তানিতে চাপ প্রদান করা হলে “বিপরীতমূখী” প্রভাব এবং সুদূরপ্রসারী মানবিক পরিণতি সৃষ্টি হতে পারে বলে থ্রিএম পিছিয়ে গিয়েছিল।
আরো বেশ কয়েকটি দেশ কোভিড-১৯ সরবরাহের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এমনকি মার্কিন হাসপাতালগুলি কেন্দ্রীয় এজেন্টদের “কার্যাদেশগুলি দখল” করে নেওয়া এবং চিকিৎসা কর্মীরা এই প্রক্রিয়াটিতে স্বচ্ছতার অভাব সম্পর্কে অভিযোগ করেছে।
মার্কিন সরকার অবশ্য সরবরাহগুলি কোথায় যাবে তা নির্ধারণের জন্যে একটি ডেটাবেজ পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা বলেছে।
‘দখল করে নেওয়া'টা কি সঠিক শব্দ?
বার্বাডোসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি রেকর্ডে বলতে চেষ্টা করেন যে “এর জন্যে ’দখল করে নেওয়া”টা সঠিক শব্দ নাও হতে পারে”। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “এটা শুধু নির্দিষ্ট কিছু আইটেমের উপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ব্যাপার।”
এই বিধিনিষেধগুলিতে কী কী রয়েছে তা স্পষ্ট করে জানার জন্যে গ্লোবাল ভয়েসেস বার্বাডোসের সরকারি তথ্য পরিষেবাতে গিয়ে সংবাদ প্রকাশের সময় আমাদের প্রশ্নগুলিকে মন্ত্রীর প্রতিনিধির কাছে উপস্থাপন করেও কোন উত্তর পায়নি।
বার্বাডোস সরকার কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবে তা ঘোষণা না করলেও বার্বাডোসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মার্কিন দূতাবাসের মধ্যে বারবার আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
তবে ৯ এপ্রিল তারিখে বার্বাডোস টুডে জানিয়েছে মার্কিন দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা ল্যারি সোচা বলেছেন যে তার দপ্তর “কথিত ঘটনা নিয়ে বার্বাডোস সরকারের কাছ থেকে কোনরকম হালনাগাদ পায়নি।”
দূতাবাস বলেছে যে কোভিড-১৯-কে পরাজিত করতে দেশটির সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্যে তারা ঐসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার অপেক্ষায় রয়েছে।
ক্যারিবীয়দের উদ্ভাবনের জন্যে একটি সুযোগ?
এই ঘটনাটি জনগণকে মার্কিন কৌশলগুলিকে আধুনিককালের জলদস্যুতা হিসেবে তকমা দিতে ছাড়েনি:
Bluntly said, this is pure piracy. Wild west times are back!!! #coronavirus #COVID19 #Barbados #US #USA. Radio Havana Cuba | U.S. seizes #ventilators destined for #Barbados: https://t.co/9drbihU2j6
— Damian Donéstevez (@DamianDonestvez) April 6, 2020
সোজা কথায় বললে এটি পুরোপুরি জলদস্যুতা। বুনো পশ্চিমের কাল ফিরে এসেছে !!! #করোনা_ভাইরাস #কোভিড-১৯ #বার্বাডোস #যুক্তরাষ্ট্র #মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রেডিও হাভানা কিউবা | মার্কিনীদের #বার্বাডোসের #ভেন্টিলেটরগুলি দখল
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র সোচা আলোচনার এই “দুর্ভাগ্যজনক” দিকটি সম্পর্কে আরো জোর দিয়ে বলেছেন যে “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভক্ত করার জন্যে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ও সংস্থা এটি প্রচার করছে”:
এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একত্রিত হওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই এবং বিভক্তির গল্প প্রচার করা ব্যক্তি ও সংস্থাগুলি (আসলে) তাদের নিজ দেশ এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্যে একটি বিপর্যয় তৈরি করছে।
ফেসবুক ব্যবহারকারী ডেভিড কুলথ্রাস্ট অবশ্য এতে ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্যে একটি সুযোগ দেখেছেন:
বার্বাডোসের খুব মেধাবী কোন প্রকৌশলী কি ভেন্টিলেটর তৈরি করতে পারেন? আমি মনে করি আমাদের এখনই কাজে লেগে পড়া দরকার। ইউডব্লিউআই [ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়] কি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে?
একজন টুইটার ব্যবহারকারী জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন যে এরকম প্রচেষ্টা নিশ্চয়ই নজিরবিহীন নয়:
In this time of great need for #ventilators, take some time to reflect on the early apparatus pioneered by Henry Edmund Gaskin Boyle, a son of the soil of @Barbados #Barbados ??https://t.co/zxUV8OzgRi #coronavirus #COVID19 pic.twitter.com/Rs8HcGeZnZ
— Leslie Deane MBBS, MS, FRCSC, FACS (@lesdeane) March 28, 2020
#ভেন্টিলেটরগুলির খুব প্রয়োজনের এই সময়ে @বার্বাডোসের ভূমিপুত্র হেনরি এডমন্ড গ্যাসকিন বয়েলের চালু করা প্রাথমিক যন্ত্রটির কথা মনে করার জন্যে কিছুটা সময় নিন
উদাহরণস্বরূপ জ্যামাইকার একজন বিজ্ঞানী কোভিড-১৯ উপসর্গের চিকিৎসার জন্যে গাঁজা ভিত্তিক ওষুধের পেটেন্ট অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে শোনা গেছে।
তবে বেপরোয়া এই সময়ে অনেক আঞ্চলিক সরকার অবশ্য করছে যে “জোর যার মুল্লুক তার” কোভিড-১৯ এর কোন শিক্ষা হবে না:
Barbados’ Minister of Health just indicated in a press conference that ventilators destined for the island had been “paid for but seized in the United States”. It's every country for itself out here and the small ones will be the biggest losers.
— Lisa Harewood (@islandcinephile) April 5, 2020
বার্বাডোসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবেমাত্র একটি সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে দ্বীপটির (বার্বাডোসের) জন্যে আসতে থাকা ভেন্টিলেটগুলির “দাম পরিশোধ করা হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেগুলো জব্দ করা হয়েছে।” প্রতিটি দেশই নিজেদের স্বার্থে এখানে বেরিয়ে পড়েছে, ফলে ছোট ছোট দেশগুলিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
This story is part of Global Voices’ special coverage of COVID-19 and offers a view on the pandemic from the perspective of our global community of contributors. সবগুলো পোস্ট