
কিভাবে সাংবাদিকরা নীরব হয়ে আছেন এই বিষয়ে সিপিজের কাছে বলছেন পাকিস্তানের সাংবাদিক নাজাম শেঠি। সাক্ষাৎকারের ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া।
মৃত্যু, হুমকি, ছাঁটাই, বিলম্বে বেতন, সেন্সরশিপ ও টিভি চ্যানেলের নিষেধাজ্ঞা – এগুলো যেন পাকিস্তানের গণমাধ্যমের পেশাজীবীদের জন্যে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত জুন ১৬, ২০১৯ তারিখে পাকিস্তানি ব্লগার ও স্বতন্ত্র সাংবাদিক বিল্লাল খানের মৃত্যু হয় ছুরিকাঘাতে। তার একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেখানে তিনি রাজনীতিকদের সাক্ষাৎকার প্রচার করতেন এবং ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতেন। অনুমান করা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং পাকিস্তানের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) নিয়ে সমালোচনার ফলশ্রুতিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে, ভেহরির একটি শুকিয়ে যাওয়া কূপে জাফর আব্বাস নামের এক সাংবাদিকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তিনি ব্যক্তি মালিকানাধীন চ্যানেল সেভেন নিউজে কাজ করতেন। পুলিশের সূত্র অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ৭ তারিখে আব্বাস রাত করে কোট মালিক এলাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন। এরপর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণ মামলা দায়ের করা হয় অজ্ঞাতনামাদের নামে। তবে এখনো বের করা যায়নি এই হত্যাকাণ্ড কিভাবে ঘটলো।
Another attack on freedom journalism
I strongly condemn the killing of journalist Zafar Abbas in Mailsi@OFFICIALDPRPP #آزاد_صحافت pic.twitter.com/oUjrYTQmtc— Pir Toqeer (@PirToqeer) September 12, 2019
আবারো সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর হামলা
সাংবাদিক জাফর আব্বাসের হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই – পীর তৌকির
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীদের ধরা যায়নি। সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি (সিপিজে) এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯২ সালের পর থেকে পাকিস্তানে ৬১ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
অভিজ্ঞ সাংবাদিক এবং পাঞ্জারের সাবেক তত্ত্বাবধায় মুখ্যমন্ত্রী নাজাম শেঠি সিপিজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সাংবাদিকরা পাকিস্তানের ইতিহাসে এখন সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে।” প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কথিত বৈবাহিক সমস্যা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রচারের পর চ্যানেল টুয়েন্টিফোর এইচডিতে প্রচারিত তার নিয়মিত সংবাদভিত্তিক রাজনৈতিক অনুষ্ঠান “নাজাম শেঠি শো” বাতিল করে দেয়া হয় গত আগস্টে।
Journalist & publisher @NajamSethi, whose "Najam Sethi Show" was taken off-air amid defamation suits from authorities, spoke to CPJ about the unprecedented challenges facing the press in #Pakistan today.
Sethi received CPJ's International #PressFreedom Award in 1999. #IPFA pic.twitter.com/VXlO8Qtsw3
— Committee to Protect Journalists (@pressfreedom) September 12, 2019
সাংবাদিক ও প্রকাশক নাজাম শেঠির অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের হবার পর। তিনি সিপিজের সাথে সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের সাংবাদিকরা কি পরিমাণ চ্যালেঞ্জ ও চাপ অনুভব করছে সে সম্পর্কে বলেছেন।
১৯৯১ সালে শেঠি সিপিজের আন্তর্জাতিক প্রেসফ্রিডম পুরস্কার পান।
সাংবাদিকদের নীরবতা নিয়েও শেঠি কথা বলেন: যতবার তারা আওয়াজ তুলেন, সরকারের সমালোচনা করেন, ততবারই তাদের দেশদ্রোহী বলা হয়, তাদের কাজে সংশয় প্রকাশ করা হয়।
পাকিস্তানে সেন্সরশিপ বেড়ে গিয়েছে। সরকারের সমালোচনা করলে, রাজনীতিবিদদের সাক্ষাৎকার নিলে সেটার সম্প্রচার বন্ধ করে ফেলা হয়। এই চাপ সৃষ্টি করে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ। ওদিকে সাংবাদিকরা সরকারের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হলে সেই সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মগুলো তাদের ইমেইল দিয়ে সাবধান করে দেয়। এই নিয়ে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছে এবং দেশটির সাংবাদিকদের প্রতি এমন আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
শেঠি সাংবাদিকদের দুরাবস্থা সঠিকভাবে তুলে ধরেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়টিও হালকাভাবে দেখা যাবে না: এখন সাংবাদিকদের অনলাইনে হুমকি ও উৎপীড়ন করা হচ্ছে, হামলার বেশিরভাগ শিকার হচ্ছে নারী সাংবাদিকরা।
সম্প্রতি, ক্ষমতাশীল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দল তাদের টুইটারে সাংবাদিক ঘারিদাহ ফারুকীকে সতর্ক করেছে রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য প্রদানের জন্য:
Gharidah if we count the “slip of tongues” that have actually been anti state by u over the years,u would be out of job. PM IK had once told u that “aap bohat low intellect ki baatein kar rahi hain”. We can totally understand why he said that; causing damage to an important cause https://t.co/fc3F0RD1dB
— Tehreek-e-Insaf (@InsafPK) September 10, 2019
ঘারিদাহ, এই কয়েক বছর ধরে আপনার ’মুখ ফসকে’ বের হওয়া দেশবিরোধী সব কথা যদি আমরা আমলে নিতাম তাহলে আপনার চাকরি থাকত না। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একবার আপনাকে বলেছিলেন ‘আপনি অকাজের কথা বেশি বেশি বলছেন’। আমরা ভালোই বুঝতে পারি তিনি কেন এই কথা বলেছেন – আপনি আসলে আমাদের মূল কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন।
ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইন্সিটিউট (আইপিআই) এর ৭১তম ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম হিরো অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত কলামিস্ট সিরিল আলমিডা চাপের মুখে আছেন ২০১৬ সালে সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের একটি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে ডন পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ করে। এর পরে ২০১৮ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাওয়াজ শরীফের সাথে করা একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশের জন্য আলমিডাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
২০১৯ সালে জানুয়ারিতে আলমিডাকে উক্ত পত্রিকায় কলাম প্রকাশে বারণ করা হয়।
Some work news: suspending writing the Sunday column for Dawn. Thank you for the readership and affection over the years. ???
— cyril almeida (@cyalm) January 19, 2019
কিছু খবর: ডনের রবিবারের কলাম লেখা থেকে বরখাস্ত হলাম। এতো বছরের পাঠকদের স্নেহের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
অবশ্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে আলমিডা ঘোষণা করেন তিনি আবার লেখালেখি শুরু করবেন এবং এবারের কলামটিও পূর্বের ন্যায় বেশ কঠোর হবে:
Some work news: have resumed the Sunday column for Dawn… grateful to the many friends and readers who have messaged… ??https://t.co/YEoqBa4Mpw
— cyril almeida (@cyalm) September 15, 2019
কিছু খবর: ডনের রবিবারের কলাম লেখা আবার শুরু করলাম। বন্ধু ও পাঠকদের প্রতি কৃতজ্ঞ যারা মেসেজ দিয়েছেন…
ডন.কম এ নতুন কলামঃ ইমরান নিজেকে বাজে এবং সম্ভাব্য বিপদজ্জনক অবস্থায় ফেলেছেন
পাকিস্তানে সাংবাদিকদের কাজ করার পরিবেশ এতো সহজ না। ডনের প্রবীণ সম্পাদক জাফর আব্বাস এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “তারা শুধু সাংবাদিকদের হত্যা করছে না। তারা সাংবাদিকতাকে গলা টিপে হত্যা করছে”।
এরকম মারাত্মক ঘটনাই শুধু নয়, সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত আরও সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন – যেমন দেরীতে বেতন পাওয়া, এমনকি ছাঁটাইয়ের মুখোমুখি হওয়া। অনেক মিডিয়া হাউজ অভিযোগ করেছে যে তারা সরকারি বিজ্ঞাপন পাচ্ছে না তাই তারা সাংবাদিকদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নির্দিষ্ট মিডিয়া হাউসে সরকারী বিজ্ঞাপনের পরিমাণ দিনকে দিন কমছে।
বিভিন্ন মিডিয়ার জন্যে পাকিস্তানের সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেশের মোট বিজ্ঞাপন ব্যয়ের ২৫ শতাংশ। এবং অনেকেই বুঝতে পেরেছেন যে ক্ষমতাশীলদের নিয়ে সমালোচনা করলেই পরিণতি হিসেবে ছাঁটাইয়ের মুখোমুখি হতে হয়। এই অবস্থায় পাকিস্তানের সাংবাদিকতার ভবিষ্যত বেশ আশঙ্কাজনক বা আঁধার বলেই মনে হয়।