পুয়ের্তো রিকানদের দুই সপ্তাহব্যাপী ক্রমাগত বিক্ষোভে পদত্যাগে বাধ্য হলেন গভর্নর

Protesters rejoicing in the rain on July 22 in San Juan, Puerto Rico. Image widely circulated on social media and taken from the Twitter account of social worker Larry Emil Alicea-Rodríguez.

২২ জুলাই পুয়ের্তো রিকোর সান জুয়ানে বিক্ষোভকারীরা বৃষ্টিতে ভিজেই উল্লাস করছে। ফাবিয়ান রদ্রিগেজ টোরেস ছবিটি তুলেছেন এবং তার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেন (@fabianfrt)। তিনি ফেইসবুকে একটি পোস্ট করেন, যাতে তিনি সাধারণ জনগণকে ছবিটি ব্যবহারের অনুমতি দেন, ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরে। সমাজ কর্মী ল্যারি ইমিল এলিসিয়া-রদ্রিগেজের টুইটার অ্যাকাউন্ট (@larryemil) থেকে এই বিশেষ ছবিটি নেয়া হয়েছে।

দুই সপ্তাহব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ ও অভ্যন্তরীণ বেসামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির পর পুয়ের্তো রিকোর গভর্নর রিকার্ডো রোসেলো পদত্যাগ করেছেন। স্বরাষ্ট্র সচিবের অনুপস্থিতিতে বিচার বিভাগ সচিব ওয়ান্ডা ভাজকুয়েজ গভর্নরের দায়িত্ব পালন করবেন। ২ আগস্ট, বিকেল ৫ ঘটিকায় রোসেলোর পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে।

একটি টেলিগ্রাম মেসেঞ্জার অ্যাপের দ্বারা কথোপকথন এবং দূর্নীতির কূট-পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেলে এই আত্ম-প্রণোদিত এবং ক্রমবর্ধমান গণ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। সেই টেলিগ্রামে রোসেলোর মন্ত্রিসভার সদস্যদের যৌনতা, নারী-বিদ্বেষী, সমকামিতা বিষয়ক কথা বলতে এবং লজ্জাজনক শারীরিক অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায়।

এই টেলিগ্রাম বার্তা ফাঁসের আগে রোসেলোর প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কিছু সদস্যকে গ্রেফতার করা হয় যার মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষা সচিব জুলিয়া কেলেহের, যাকে মানি লন্ডারিং এবং অর্থ চুরি ও জালিয়াতি ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়।

চৌদ্দ দিন যাবত ক্রমাগত আন্দোলনের প্রতিদিনই গভর্নরের বাসভবনের সামনে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দ্রুতই পুয়ের্তো রিকোর অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২২ জুলাই সান জুয়ানে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ আয়োজিত হয়, যাতে আনুমানিক প্রায় ছয় লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করে।

পুয়ের্তো রিকোর এই আন্দোলন সম্পর্কে মজার বিষয়টি হলো, কোন সংগঠন কর্তৃক এটি সংগঠিত করা হয়নি। বরং যারা রোসেলোকে প্রতিরোধ করতে চেয়েছিল, তার পদত্যাগ দাবি করেছিল, সেসকল পুয়ের্তো রিকানরাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে এটি করেছে।

তবে এই কর্মসূচি কেবল পুয়ের্তো রিকোতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। স্পেন, আর্জেন্টিনা, স্লোভেনিয়া, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী পুয়ের্তোরিকানরা প্রবাসে থেকেও এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিল।

এই আন্দোলনের সাথে শিল্প ও সংস্কৃতির যোগসূত্রও গড়ে উঠেছিল। সাংবাদিক ভিক্টোরিয়া লেয়ান্দ্রা টুইটারে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করেছেন, যাতে আন্দোলনে দৃষ্টিগোচর হওয়া পুয়ের্তো রিকানদের কিছু সৃজনশীল কর্মকাণ্ডকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছেঃ

আরও পড়ুনঃ কি সব বিচিত্রভাবে পুয়ের্তোরিকানরা রিকার্ডো রোসেলোর পদত্যাগ চেয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে, কেন্দ্রীয় আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই পুলিশ বাহিনী সহিংসতা চালিয়েছে। এই ব্যাপারে সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানী এবং প্রবন্ধকার রিমা ব্রুশির টুইটার পোস্টটি উল্লেখ না করলেই নয়, যাতে তিনি পুয়ের্তো রিকোয় সংগঠিত এই আন্দোলনকে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছেনঃ

পাঁচ লক্ষ বিক্ষোভকারী আর মাত্র পাঁচ জন গ্রেফতার, তারপর? আমি বলবো, আন্দোলনকারীরা কেবল অসহিংসই ছিল না, তারা অসাধারন নিয়মনিষ্ঠ, সৃজনশীল এবং সংযত ছিল।

- রিমা ব্রুশি (@RimaBrusi) জুলাই ১৯, ২০১৯

প্রতিবাদকারীরা পরদিনই প্রতিবাদের স্থানগুলোতে ফিরে আসেন পরিষ্কার কর্মসূচি চালানোর জন্যে:

কিছু বিষয় আছে, যা তারা গণমাধ্যমের কল্যাণে আপনাকে দেখতে দিবে না। কারণ তারা চায়, আপনার মন্দ ধারণা হোকঃ

১। লোকেরা গত রাতের ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে তুলছে
২। একদল সংঘবদ্ধ মানুষ একে অপরের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে

তবে রোসেলোর পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পরার কয়েকদিন আগেই জিউমারা টোরেস রিভেরা, সাংবাদিকতা প্রকল্প টোডাসের একজন কলামিস্ট, পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে গভর্নরের পদত্যাগের পরই প্রকৃত কাজ শুরু হবেঃ

Hoy somos foco de atención porque nos atrevimos a accionar la palabra, a transformar nuestros disgustos en movilidad. La exigencia de renuncia es solo el principio. Nos queda un camino largo de reflexión para tomar otras decisiones y no mirar atrás. Para atrevernos a exigir el país que nos merecemos. Una auditoría ciudadana, una cancelación de la deuda, una educación con perspectiva de género, un sistema de salud y retiro digno y un esquema de gobierno con personas que pongan las necesidades de la gente primero. Se nos va la vida y no estamos dispuestas a perder una más.

আজ আমরা সমগ্র বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছি কারণ আমরা কথাকে কাজে পরিণত করার সাহস দেখিয়েছি, আমাদের ক্রোধকে আন্দোলনে পরিণত করেছি। শুরুটা হয়েছিল, গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করে। আমাদের পিছনে ফিরে তাকাতে হবে ঘটনাক্রম বোঝার জন্যে যাতে আমরা সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। আমরা এখন আমাদের প্রাপ্য দেশটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারি। চাই একটি দেশ যেখানে নাগরিক নিরীক্ষা বাস্তবায়ন, জনগণের ঋণ বাতিল, লৈঙ্গিক দৃষ্টিকোণসহ শিক্ষা, শালীন স্বাস্থ্যসেবা এবং অবসরভাতা এবং এমন ব্যক্তিদের সমন্বিত একটি সরকার থাকবে যা জনগণের প্রয়োজনকে প্রথমে রাখে।

গ্লোবাল ভয়েসেস এই উদীয়মান গল্পটি সম্পর্কে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।

অ্যানা পোর্টনয় পোস্টটি লিখতে অবদান রেখেছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .