
তিব্বান আলবাশা এর চিত্রকর্ম “দুর্নীতিপরায়ণ একনায়কতন্ত্রকে না বলুন”
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রুটির দাম তিন গুন বেড়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সংগঠিত প্রতিবাদ ক্রমেই ওমর আল বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল।
অবশেষে ১১ এপ্রিল, ২০১৯ বৃহঃস্পতিবার বশির পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
AL-BASHIR IS OUT !! WE DID IT !!! #Sudan
— Alaa Salah (@iAlaaSalah) April 11, 2019
আল বশির পদচ্যুত !! আমরা পেরেছি !!! #সুদান
এই আন্দোলন দমানোর জন্য বশিরের নেতৃত্বাধীন সরকার দমন-পীড়নের কৌশল বেঁছে নিয়েছিলো, যাতে ৪০ জনের অধিক আন্দোলনকারী নিহত হয়। আহত ও গ্রেফতারের সংখ্যাও কয়েক শতাধিক।
তবে এই নিষ্ঠুর নির্যাতন আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে নারীদের অটল অবস্থানে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে নি।
“There is no amount of beating or detention that could make us stop.”
These women and many more like them, are leading the huge protests against Sudan's President Omar al-Bashir.#SudanProtests l #SudanUprising pic.twitter.com/CWBr45Nbhn
— BBC News Africa (@BBCAfrica) April 6, 2019
“এমন কোনো আঘাত বা শাস্তি নেই, যা আমাদের দমিয়ে রাখতে পারে।”
এই নারীগণ এবং তাদের মত আরও অনেকে, যারা কিনা সুদানের রাষ্ট্রপতি ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধে এই বিশাল বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে। #সুদান_বিক্ষোভ #জাগ্রত_সুদান
Today in Sudan we walk for women. Incarcerated women. Revolutionary women. Oppressed women. Refugee women. War torn women. Raped, battered and beat women. Women who are too loud and too brave for a country made for men.#مدن_السودان_تنتفض #موكب10فبراير #تسقط_بس #SudanUprising
— Qutoufy (@Qutoufy) February 10, 2019
সুদানে আজ আমরা নারীদের জন্য পদযাত্রা করেছি। নারীরা অবরুদ্ধ। নারীরা বিপ্লবী। নারীরা নিপীড়িত। নারীরা উদ্বাস্তু। নারীরা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত। নারীরা ধর্ষিত, প্রতারিত এবং পরাজিত। এইদেশ যেন পুরুষদের জন্যে গঠিত আর নারীরা তাদের জন্যে অধিক সাহসী, অধিক উচ্চকণ্ঠ। #موكب10فبراير #تسقط_بس #সুদান_নগরী_আশাবাদী #জাগ্রত_সুদান
এই পদযাত্রায় তারা “জাগরুদা” গায়, যা সাধারণত উল্লাস প্রকাশের জন্য আরব নারীরা গেয়ে থাকে।
‘Zagrouda’ (or the women’s chant) has become the calling code for every protest in the street. When people hear these women’s voices, they know it’s the revolution call and that it’s time to start their march. #Sudan_Uprising pic.twitter.com/E2RasMe6tF
— Nandini (@nandi_naira) March 21, 2019
রাজপথের প্রতিটি আন্দোলনকারীর জন্য “জাগরুদা” (বা নারীদের কণ্ঠ) একটি আহ্বান সংকেত। যখন লোকজন এই নারীদের কণ্ঠ শুনে, তারা জেনে যায়, বিপ্লবের ডাক এসেছে এবং এটাই তাদের অগ্রসর হওয়ার সময়। #জাগ্রত_সুদান
গত মার্চ মাসে নারী-অধিকার এবং এই আন্দোলনের সমর্থনে নারীরা ঐতিহ্যবাহী সাদা কাপড় পরিধান করেছিল। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো হ্যাশট্যাগ #সাদা_পদযাত্রা (#whitemarch, #مارس_الابيض)) আর সাদা কাপড় পরিহিত নারী আন্দোলনকারীদের ছবিতে একাকার হয়ে গিয়েছিল।
Happy International Women’s Day
.
Impact Hub Khartoum Family
.#IWD19 #impacthub #impacthubkhartoum #WhiteMarch pic.twitter.com/HnJicvsLDQ— Impact Hub Khartoum (@ImpactHubKRT) March 8, 2019
শুভ আন্তর্জাতিক নারী দিবস
ইমপ্যাক্ট ক্লাব খারতুম ফ্যামিলি।
#WhiteMarch
নিয়মিত এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নারীরা পুলিশের বর্বরতার শিকার হয়েছেন। তাদের উপর টিয়ার গ্যাস ও সরাসরি গুলি করা হয়েছে, এমনকি ধর্ষণের হুমকিও দেয়া হয়েছে। নারীরা আরও অভিযোগ করেছে, আটক অবস্থায় তাদের মুখে দাগ দেয়া হয় এবং চুল কেটে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই সুদানি নারীদের প্রহৃত এবং অপদস্থ হওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচারিত হচ্ছেঃ
Excessive brutality against elderly and women by police force in Khartoum North #SudanUprising #Sudan_Revolts pic.twitter.com/usTEXp1c3f
— SudanUprising (@uprising_sudan) January 14, 2019
উত্তর সুদানে বৃদ্ধ ও নারীদের প্রতি পুলিশের সীমাহীন বর্বরতা #জাগ্রত_সুদান #সুদান_বিপ্লব
তবে সুদানের নারীদের সাহসিকতার প্রচারেও এই হ্যাশট্যাগটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
#SupportSudan
Video showing a Sudanese girl throwing tear gas canister back at the security forces. #Sudan ese girls and women have shown bravery beyond belief during the #Sudanuprising. #مدن_االسودان_تنتفض #موكب14مارس pic.twitter.com/84XbERPwyg— SUPPORT SUDAN (@All4Sudan) March 14, 2019
#সুদানকে_সমর্থন
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক সুদানি মেয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া টিয়ার গ্যাস কুড়িয়ে পাল্টা তাদের দিকে ছুড়ছে। সুদানের জাগরনের সময়ে মেয়ে এবং নারীরা অবিশ্বাস্য রকমের সাহস দেখিয়েছে। #জাগ্রত_সুদান #موكب14مارس #সুদান_নগরী_আশাবাদী
এই সপ্তাহে আন্দোলনের আরেকটি ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকৌশল ও স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্রী ২২ বছর বয়সী আলা সালাহ তার ডান বাহু উঁচিয়ে রেখেছে যখন কিনা সে “ছাওরা” (“বিপ্লব” এর আরবি প্রতিশব্দ) স্লোগানে সমাবেশের নেতৃত্ব দিচ্ছিলো। ভিডিও এবং ছবিটা ভাইরাল হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারতো কিন্তু সুদানিরা এখন তাকে “কানদাকা” ডাকতে শুরু করেছে। প্রাচীন সুদানের নুবিয়ান রাণীদের এই উপাধিতে ভূষিত করা হতো।
Don’t know her name, but this Woman in #Sudan is leading rallies, standing on car roofs, and pleading for change against autocratic Bashir.
Here she is singing “Thawra” (Revolution). Remember this voice: pic.twitter.com/0JG31Tp4rZ
— Joyce Karam (@Joyce_Karam) April 9, 2019
এই নারীর নাম জানি না তবে সে সুদানে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে, গাড়ির ছাদে দাড়িয়ে স্বৈরাচারী বশিরকে পদচ্যুত করার আহ্বান জানাচ্ছে।
এখানে তিনি “ছাওরা” তথা বিপ্লবের ডাক দিচ্ছেন। কণ্ঠস্বরটা চিনতে পারছেনঃ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো সালাহ-কে “সুদানিজ স্ট্যাচু অফ লিবার্টি” অর্থাৎ সুদানের মুক্তির প্রতীকে পরিণত করেছে।
If one day I have a #daughter, I want her to be just like her♥️ #AlaaSalah 22 year old engineering and architecture student chanting and leading protest in #Khartoum she is now a symbol of #Sudanese #Revolution and became the voice of #WomenRevolutions #Sudan #WomenLove #Peace pic.twitter.com/pWxqJvCKN1
— Houda Henniche (@HoudaHenniche) April 10, 2019
যদি কোনো দিন আমার একটি মেয়ে হয়, আমি চাইবো সে যেনো ঠিক #আলা_সালাহ-র মত হয়; ২২ বছর বয়সী প্রকৌশল ও স্থাপত্যবিদ্যার এই ছাত্রী, যে কিনা খারতুমে বিক্ষোভে স্লোগান ও নেতৃত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে সে সুদানের বিপ্লবের প্রতীক এবং নারী জাগরণের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছে। #সুদান #নারী_প্রেম #শান্তি
রাজপথ থেকে রঙ্গিন পর্দায়
এক সময় যেসকল ফেইসবুক গ্রুপের মুখ্য বিষয় ছিল বিবাহ এবং বিবাহ-ভঙ্গ নিয়ে আলোচনা, পর্দার আড়ালে থেকে সেসব গ্রুপও এখন পুলিশের নৃশংসতার মুখোশ উন্মোচনে কাজ করছে। নারীরা এসব গ্রুপে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর অপকর্মের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করছে। যখন পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যায়, সংশ্লিষ্ট এজেন্টরা প্রায়ই মারধরের শিকার হয় এবং শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই গ্রুপগুলোর প্রভাব লক্ষণীয় – অনেক সামরিক সদস্য এখন মুখ লুকিয়ে রেখেছে।
সুদানের সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু নারীরা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কস (ভিপিএন), যা কিনা ব্যবহারকারীর অবস্থান গোপন রাখতে পারে, ব্যবহার করে সেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছে।
শিল্পকর্ম ছাড়া একটি বিপ্লব কখনোই পূর্ণতা পায় নাঃ
View this post on Instagram
শুভ নারী দিবস…(আন্দোলনে) বেরিয়ে পড়া সকল বিস্ময়কর বিপ্লবী নারীর প্রতি…আপনাদের নারী-আন্দোলন অব্যাহত রাখুন
রাজপথের এই প্রতিবাদকে পরিপূর্ণতা দিতে নারী চিত্রশিল্পী, ডিজিটাল আর্টিস্ট এবং গায়িকারা সৃষ্টিশীল শিল্পকর্ম প্রকাশ করছেন। জনতা, বিশেষত মহিলাদের সহিষ্ণুতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনই তাদের শিল্পের উপজীব্য। ভুক্তভোগীদের বর্ণনা এবং ঘটনাবলীকে সংরক্ষণ করে রাখতে তারা শিল্পের ব্যবহার করছেন এবং একটি নিপীড়নমূলক শাসনব্যবস্থার অধীনে বসবাসের বাস্তবতা চিত্রায়িত করছেন।
“Women are front, left and center of the revolution. When people started protesting, they were like, ‘Women should stay at home.’ But we were like — no.” said Islam Elbeiti a 24-year-old jazz bass player.
“বিপ্লবের অগ্র, পশ্চাৎ এবং কেন্দ্রবিন্দুতে নারীরা। অথচ লোকে যখন প্রতিবাদ শুরু করেছিল, তাদের ভাবনা ছিল, ‘নারীদের উচিত ঘরে বসে থাকা।’ কিন্তু আমরা (নারীরা) বিপরীতটাই ভেবেছিলাম।” বলছিলেন ইসলাম এলবেইতি, ২৪ বছর বয়সী একজন জ্যাজ বেজ বাদক।
সুদানে নারীর অধিকারের জন্য লড়াই
গত ১২ই মার্চ, সুদানের ইমারজেন্সি কোর্ট অফ আপীল আন্দোলনরত পরিবারগুলোর প্রতিবাদের চাপে নয়জন সুদানই নারী প্রতিবাদীর বেত্রাঘাতের শাস্তি প্রত্যাহার করে। আন্দোলন করার জন্যে তাদের ২০টি করে দোররা মারা এবং এক মাসের জেল শাস্তি দেয়া হয়েছিল।
সুদানে, বিশেষত নারীদের শাস্তি প্রদানের বহুল প্রচলিত একটি ধরন হলো বেত্রাঘাত – (শরিয়া আইনানুসারে) অশ্লীল পোশাক পরিধান কিংবা পরগমনের মত অপরাধগুলোর জন্য তারা বেত্রঘাতের ঝুঁকিতে থাকে।
২০১৪ সালে এক অমুসলিমকে বিবাহ করার দায়ে এক নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সুদানের আইনানুসারে, এটি ব্যভিচার। ২০১৫ সালে পিতার সম্মতি ছাড়া বিবাহ করায় এক নারীকে ৭৫ বার চাবুক মারা হয়।
২০১৭ সালে দেশটির কট্টর শরিয়া আইন অমান্য করে প্যান্ট পরায় ২৪ জন নারীকে গ্রেফতার করা হয়।
নিষ্ঠুরতা কখনো কখনো বেত্রাঘাতকেও অতিক্রম করে – অনেক সুদানি নারীকে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত।
রয়েটার্স জানিয়েছে, বশির নিজের ক্ষমতা সংহত করতেই ২০১১ সালে সুদানে কট্টর ধর্মীয় আইন জারি করেঃ
We want to present a constitution that serves as a template to those around us. And our template is clear, a 100 percent Islamic constitution, without communism or secularism or Western (influences).
আমরা এমন একটি সংবিধান উপস্থাপন করতে চাই, যা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জন্যে উদাহরণ হয়ে থাকবে। এবং আমাদের সংবিধানের চাহিদা স্পষ্ট – শতভাগ ইসলামী সংবিধান; সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা কিংবা পশ্চিমা প্রভাব এতে থাকবে না।
শরিয়া (ইসলামী আইন) ভিত্তিক সুদানিজ পেনাল কোড অনুযায়ী মাত্র ১০ বছরের একজন মেয়েও বিবাহের উপযুক্ত হিসেবে স্বীকৃত আর একজন নারী স্বামীর দ্বারা ধর্ষিত হলে তা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে না!
অধিকন্তু, নারীদের “নৈতিকতা আইন” এর মুখোমুখি হতে হয়, যা তাদের প্রতিনিয়ত আটকে ফেলে এবং ঝামেলায় ফেলে।
এসব কারনে বিক্ষোভের সম্মুখভাগেও সারি সারি নারীর উপস্থিতি, যারা পরিবর্তনের জন্য লড়াই করছেন।