নেটনাগরিক প্রতিবেদন: ভারতের রাজ্যগুলোতে ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা কখনো বন্ধ হবে কি?

ভারতের ইন্টারনেট শাটডাউন মানচিত্র, জানুয়ারি ২০১০ – মার্চ ২০১৭। দিল্লি জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় এবং যোগাযোগ শাসন কেন্দ্র (সিসি বাই)

অ্যাডভক্স নেট-নাগরিক প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট অধিকারগুলির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং উদীয়মান প্রবণতাগুলির একটি আন্তর্জাতিক আলোকপাত উপস্থাপন করে। এই প্রতিবেদনটিতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ থেকে ১৪ তারিখের বিভিন্ন সংবাদ এবং ঘটনা কাভার করা হয়েছে।

ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে ভারতের রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মিরে এবং মণিপুর এই তিনটি রাজ্যের কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় সাময়িকভাবে সব ধরনের মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে।

একটি বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন খসড়া আইনের বিরুদ্ধে মণিপুরের বিক্ষোভ ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখের মোবাইল ইন্টারনেট শাটডাউনটি উস্কে দিয়েছে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা পালা করে ২৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ শুরু করার পরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ উত্তেজনা তুঙ্গে উঠলে কর্তৃপক্ষ সান্ধ্য আইন জারি করে।

মোদি সরকারের প্রস্তাবিত ও প্রচারিত জাতীয় নির্বাচনগুলি দ্রুত এগিয়ে আসার সাথে সাথে খসড়া আইনটি এশিয়ার অন্যান্য অংশ থেকে আসা বিপুল অভিবাসী জনসংখ্যা অধ্যুষিত মণিপুরের (যার সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে) মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে সমালোচনার মুখে পড়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধন খসড়া আইনটি ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে স্থানান্তরিত কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠীর নাগরিকদের নাগরিকত্বের একটি নতুন ভাবনা তৈরি করবে।

ইতোমধ্যে সম্পদ-সীমাবদ্ধ মণিপুর রাজ্যে অভিবাসীদের প্রবাহ সৃষ্টি হতে পারে এই ভয়ে কিছু কিছু লোক এই বিলটির বিরোধিতা করছে। অন্যেরা ধর্মীয় বৈষম্যের কারণে বিলটির বিরোধিতা করছে – বিলটিতে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দু এবং শিখদের মতো সুরক্ষিত সংখ্যালঘুদের একটি তালিকা রয়েছে যারা এই সংস্কার থেকে উপকৃত হবে। কিন্তু সুরক্ষিত সংখ্যালঘু তালিকাটিতে মুসলমানদের নাম নেই।

এদিকে রাজস্থানে রাজ্য আইনের আওতায় গুজ্জর শ্রমিকদের চাকরির অধিকতর শক্তিশালী সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যে আদিবাসী গুজ্জর সম্প্রদায় বৃহদাকার শ্রমিক বিক্ষোভ করেছে। আরো অন্যান্য কৌশলের সাথে সাথে বিক্ষোভকারীরা একটি প্রধান রেলপথ – দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের মধ্যবর্তী ট্রেন চলাচলের পথ – অবরোধ করে এর উপর একটি পাঁচ দিনের অবস্থান ধর্মঘট পরিচালনা করে। এর ফলে সেই ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখেই সারাদিনের জন্যে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।

আর ৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে জম্মু ও কাশ্মিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংঘর্ষপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করার সময় কাশ্মীর উপত্যকায় নেটওয়ার্কগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিগত দুই বছর ধরে ভারতের ইন্টারনেট শাটডাউন অভিযানে সবচেয়ে খারাপভাবে প্রভাবিত এখানকার অধিবাসীদের জন্যে এটি নতুন কিছু নয়। দিল্লিভিত্তিক সফটওয়্যার স্বাধীনতা আইন কেন্দ্র শুধু ২০১৮ সালেই জম্মু ও কাশ্মিরে ৬৫টি মোবাইল ইন্টারনেট শাটডাউন নথিবদ্ধ করেছে।

ফিলিপাইনের গণমাধ্যম নেতা জামিনে মুক্ত হলেও ‘সাইবার কুৎসা’র অভিযোগের সম্মুখীন

১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে ফিলিপাইনের বিচার বিভাগ র‍্যাপলার, রেসা এবং র‍্যাপলারের সাবেক কর্মী রেইনাল্ডো সান্টোসের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে  “সাইবার কুৎসা”র অভিযোগ দাখিল করার পর স্বাধীন মিডিয়া সাইট র‍্যাপলার-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সম্পাদক এবং ম্যানিলা ও জাকার্তার সিএনএন এর প্রাক্তন ব্যুরো মারিয়া রেসা গ্রেপ্তার হন। কেংকে অবৈধ মাদক এবং মানব পাচারের সাথে যুক্ত করা র‍্যাপ্লারের ২০১২ সালের একটি গল্প সম্পর্কে ব্যবসায়ী উইলফ্রেডো ডি কেংয়ের করা একটি নালিশ থেকে অভিযোগগুলো উত্থিত হয়েছিল।

১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে জামিন দাখিলের পর রেসাকে আটকাবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। প্রতিবেদকদের দেয়া একটি বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ষষ্ঠবারের মতো আমি জামিন দাখিল করেছি এবং আমি দাগী আসামীদের চেয়েও বেশি জামিন দেব। আমি ইমেলদা মার্কোসের চেয়েও বেশি পরিমাণ জামিন দিবো।”

ফিলিপাইনের মাদক হত্যাকাণ্ডগুলোকে র‍্যাপ্লার আগ্রাসীভাবে কাভার করায় রাষ্ট্রপতি রডরিগো দুতার্তের বারংবার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। দুতার্তে প্রকাশ্যে বহুবার র‍্যাপ্লারকে “ভুয়া সংবাদ প্রতিষ্ঠান” বলে অভিযুক্ত করেছেন।

ভেনিজুয়েলার বিরোধীদের অনলাইন কেন্দ্রবিন্দুতে কেউ অবৈধ হস্তক্ষেপ করছে

১২ এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি ভেনিজুয়েলার ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞরা মাদুরো সরকারবিরোধী জনগণ এবং রাজনীতিবিদদের প্রধান প্রধান ওয়েবসাইটগুলিতে একাধিক অস্বাভাবিক ঘটনার অভিযোগ করেছেন। ভেনিজুয়েলার জাতীয় পরিষদের আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইটটি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় নেটওয়ার্কেই বিরতি দিয়ে দিয়ে বারবার অফলাইন এবং অনলাইন হয়েছে।

ভেনিজুয়েলার জনগণের প্রয়োজনে খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ আনতে সচেষ্ট একটি বিরোধীপন্থী সাংগঠনিক মঞ্চ ভেনিজুয়েলার_স্বেচ্ছাসেবী (VoluntariosxVenezuela)-তে আরো বেশি অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে জনগণ ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সিএনটিভি-তে এই সাইটটিতে ঢোকার চেষ্টা করতে গিয়ে এই সাইটের সঠিক ইউআরএল  [voluntariosxvenezuela.com] –এ চাপ দেয়ার পর তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আসলটির একটি নকল ভেনিজুয়েলার_স্বেচ্ছাসেবী[ডট] কম (voluntariovenezuela[dot]com)-এ পুনঃনির্দেশিত হচ্ছিল। সংগৃহীত প্রযুক্তিগত তথ্য এবং ফিল্টারবিহীন_ভিইতে করা আলেসান্দ্রো আজপুরুয়ার প্রতিবেদন অনুসারে এই পুনঃনির্দেশটি “প্রতারণামূলক অনুরোধ” বা বিরোধী ক্রিয়াকলাপগুলিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যের একটি ডিএনএস (ডোমেন নামসমূহের সার্ভার) এড়ানোর কৌশলী প্রচেষ্টার ফল। ডিজিটাল ওশেন পৃষ্ঠপোষিত এই নকল সাইটটি এখন আর প্রবেশযোগ্য নয়।

ফিল্টারবিহীন_ভিই এবং নেটব্লকস উভয়েই জানিয়েছে  যে সিএএনটিভিতে ইউটিউবসহ গুগলের বিভিন্ন পরিষেবাও মাঝে মাঝে পাওয়া যায় না।

ফেসবুক বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রীর নামের শত শত অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে

৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বহনকারী এবং গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলে কথিত ৭৩২টি অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে ফেসবুক। সরকারি সূত্র অনুসারে টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ সেলের অনুরোধে এই অপসারণগুলো সংঘটিত হয়। (ইরান, ইন্দোনেশিয়া এবং মিয়ানমারে সংঘটিত) “অপতথ্য” ভিত্তিক সাম্প্রতিক অন্যান্য গণ অ্যাকাউন্ট অপসারণের বিপরীতে এটি ফেসবুকের কোম্পানি ব্লগে প্রকাশিত হয়নি।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে অপতথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং চাঁদাবাজির জন্যে অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করার কথিত অভিযোগে পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়

থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার পর ভিয়েতনামী ব্লগার নিখোঁজ

রেডিও মুক্ত এশিয়াতে একটি রাজনৈতিক ধারভাষ্যের ব্লগ লেখক ভিয়েতনামী ব্লগার ট্রুওং ডুয় নহাতকে ২৬ জানুয়ারি তারিখ থেকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নহাত ২৫ জানুয়ারি তারিখে জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনারের কাছে আশ্রয়ের একটি আবেদন করার জন্যে ব্যাংকক গিয়েছিলেন।

সাবেক সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক কর্মী নহাতকে “রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো” এবং “গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অপব্যবহার” এর জন্যে ২০১৪-২০১৫ সালে ভিয়েতনামে জেলে পাঠানো হয়েছিল।

সামাজিক মাধ্যমে করারোপের পর উগান্ডায় ব্যাপক ইন্টারনেট ব্যবহার হ্রাস

২০১৮ সালের জুলাই মাসে উগান্ডায় তথাকথিত “সামাজিক মাধ্যম কর” কার্যকর হওয়ার পর থেকে  ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ৪৭% থেকে ১২ শতাংশ পরিমাণ  কমে ৩৫% হয়েছে। এই ব্যবস্থাটি অনুসারে সামাজিক মাধ্যম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো আইপিভিত্তিক চ্যাট পরিষেবাগুলি ব্যবহার করার জন্যে জনগণকে প্রতিদিন ট্যাক্স দিতে হবে।

অনেকের ক্ষেত্রেই করটি বাক স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে করের বোঝা দ্বিগুণ করেছে। কারণ ইন্টারনেটে প্রবেশ করতে ডেটা বান্ডিলগুলির জন্যে নাগরিকদের আগেই কর প্রদান করতে হয়। এটা প্রয়োগ করার আগেই  বিরোধীদলীয় সাংসদ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ জনগণ যুক্তি দেখিয়েছিল যে এই করটি অনলাইনের বিভিন্ন পরিষেবা থেকে জনসংখ্যার ৭০% শতাংশেরও বেশি যে যুব সম্প্রদায় তাদের মতো হাজার হাজার মানুষকে বের করে দিতে পারে। ২০১৮ সালের তৃতীয় ও চতুর্থাংশের ইন্টারনেট ব্যবহারের ডেটা  তাদের যুক্তিকে প্রমাণ করে।

নতুন গবেষণা

  • How Memes and a Transfer App May Have Helped Popularize VPN Use in Zimbabwe (মেমে এবং একটি স্থানান্তর অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার যেভাবে জিম্বাবুয়েতে ভিপিএন ব্যবহার জনপ্রিয় করতে সাহায্য করে থাকতে পারে) – স্থানীয়করণ গবেষণাগার
  • On WhatsApp, Rumours and Lynchings (হোয়াটসঅ্যাপ, গুজব এবং শাস্তি প্রদান) – চিন্ময়ী অরুণ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সাপ্তাহিক
  • The 2018 Palestine Press Freedom Index (ফিলিস্তিনী প্রেস স্বাধীনতা সূচক) – এমএডিএ ফিলিস্তিন

নেট-নাগরিক প্রতিবেদনের গ্রাহক হোন

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .