রাশিয়ান নারীবাদীরা ক্লাসিক সোভিয়েত সিনেমার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে

সোভিয়েত রাষ্ট্রীয় প্রচারণাগুলো লিঙ্গ সমতার উপর গুরুত্ব দিলেও সোভিয়েত নারীদের সারাদিন বাইরে কাজ এবং এরপর পরিবার দেখাশোনা উভয়ই করতে হয়। ছবিঃ স্কটল্যান্ড এর জাতীয় লাইব্রেরীর, সিসি-বিওয়াই-এনসি-এসএ লাইসেন্স আওতায় প্রকাশিত।

রাশিয়া, পূর্ববর্তী সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকা কিছু দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা রাশিয়ানদের মধ্যে নতুন বছর আগমনের পুর্ব প্রস্তুতিতে কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। একটি হলো প্রতি বছর সোভিয়েত ক্লাসিক সিনেমাগুলো নিয়ে কয়েকদিনব্যাপি টিভির একটি বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হয় এবং বহু লোক তা দেখে। সেখানে দেখানো সিনেমার উদাহরণস্বরূপ ১৯৮০ সালে মোসফিল্ম প্রতিষ্ঠানের মস্কো ডাজ নট বিলিভ ইন টিয়ার্স (মস্কো কান্নায় বিশ্বাসী না), এই সিনেমাটি বিদেশী ভাষায় শ্রেষ্ঠ চলচিত্রের জন্য অস্কার সহ আরো বেশ কয়েকটি পুরস্কার পায়। আরেকটি সেরকম ক্লাসিক সিনেমা হলো দ্য আয়রোনি অব ফেইট (ভাগ্যের বিদ্রূপ) (১৯৭৬) যা প্রতি বছর ৩১ শে ডিসেম্বর কোন প্রধান টিভি চ্যানেল প্রচার করে যখন লক্ষ লক্ষ রাশিয়ান পরিবার অলিভিয়ের সালাদ তৈরিতে ব্যস্ত থাকে।

যাহোক, সেই সময় জন্ম নেয়া প্রজন্ম যাদের বয়স এখন মধ্য ত্রিশ বা চল্লিশের কোটায় তারা মনে করেন যে এই সিনেমাগুলো বর্তমান আধুনিক সময়ে একবারেই সামঞ্জস্যপুর্ণ নয় বরং এগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি খুবই অপমানজনক। নতুন বছর আগমনের আগে রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সমালোচনামুলক বার্তায় তারা বলছেন যে তাদের মা বাবার পছন্দের সিনেমাগুলো যে সব মুল্যবোধ প্রচার করছে তা মোটেও প্রগতিশীল নয়ঃ

চলুন “মস্কো ডাজ নট বিলিভ ইন টিয়ার্স” (মস্কো কান্নায় বিশ্বাসী না) নিয়ে কথা বলি। এই বার্তাটি কেমন লাগে আপনার কাছেঃ তুমি একটি ফ্যাক্টরির ডিরেক্টর হতে পারো, মস্কো সিটি কাউন্সিলের সদস্য হতে পারো, সফল একজন মা হতে পারো, কিন্তু তুমি একমাত্র তখনই সফল যখন তুমি তোমার মাতাল প্রেমিককে এক বাটি স্যুপ পান করালে?

এই ধরণের মানসিকতা আজো রাশিয়াতে লক্ষ্যণীয়ভাবে বিদ্যমান। এজন্য রোশজেন্ডারনাজোর নামে একটি নারীবাদী সংস্থা (একে রুশজেন্ডারওয়াচ বলা যায় সহজে) বিভিন্ন ক্লাসিক রাশিয়ান সিনেমার দৃশ্যে শিরোনাম যুক্ত করে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে এই ধরণের একপেশে এবং হীন মন্তব্যের বিরুদ্ধে কিভাবে একটি চরিত্রের উত্তর দেয়া উচিৎ ছিল।

এখানে মস্কো ডাজ নট বিলিভ ইন টিয়ার্স এর একটি দৃশ্যে দেখা যায় যে মুল খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করা মহিলাকে তার থেকে উপরের পদে কাজ করা কেতাদুরস্ত এবং ক্ষমতাবান পুরুষ যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চাপ দিচ্ছে এবং পরে সে মহিলা গর্ভবতী হয়ে পড়লে সে তাকে ছেড়ে দেয়।

নিচের ছবিতেও আয়রনি অব ফেইট (ভাগ্যের বিদ্রূপ) সিনেমার ক্ষেত্রে একই ধরণের উত্তর দেখা যাচ্ছে। এই সিনামাটি খুবই জনপ্রিয় যেখানে দেখানো হয় যে স্থায়ী কিন্তু অপরিপুরক সম্পর্কে থাকা অবস্থায় অপরিচিত একজন নারী ও পুরুষ নতুন বছরের আনন্দে মাতাল হয়ে এক অপরের কাছে আসে। এখানেও সেই সোভিয়েত পুরনো ধারনার একই ধরণের সর্বজনীনতা ও অভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

পুরুষের অবদমিত অনুভূতি নিয়েও বার্তা দেয়া হয়েছে [এটি ১৯৭২ সালের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ধারাবাহিক দ্য বিগ স্কুল ব্রেক (স্কুলের লম্বা ছুটি) বা দ্য লং রেসেস (লম্বা রেসগুলো) থেকে নেয়া যেখানে বয়স্কদের স্কুলের একজন শিক্ষকের গল্প বলা হয়েছে]:

ফেসবুকের একটি পোষ্টে রোশজেন্ডারনাজোর প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা বলেন:

Приближаются новогодние праздники. Встречаем 2019 год, а за столом — все те же блюда, на экранах — все те же фильмы. И представления о социальных ролях мужчин и женщин все те же. Новый выпуск “тех самых карточек” — про старое-доброе советское кино и гендерные стереотипы. Мы вторгаемся в диалоги героев новогодних фильмов и помогаем им отвечать собеседникам с патриархальными взглядами. Такие взгляды не редкость и сегодня: они поддерживают неравенство между мужчинами и женщинами. Поэтому наши ответы могут помочь и вам. С Новым годом!

নতুন বছরের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। ২০১৯ প্রায় এসে গেল অথচ খুব সামান্যই বদলেছে সমাজ। এখনও টেবিলে সেই একই খাবার, টিভিতে সেই একই সিনেমা আর সমাজে নারী পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি একই থেকে গেছে। এই বার্তাগুলো পুরনো সৌভিয়েত সিনেমার বাঁধাধরা লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে করা হয়েছে। যে সিনেমাগুলো প্রতি বছর দেখানো হয় আমরা চেয়েছি যে চরিত্রগুলো পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক কথাটি বলার সুযোগ পাক। এধরণের দৃষ্টিভঙ্গি নারী পুরুষের অসম সম্পর্ককে আরো বেগবান করে, যা এখনও সমাজে দেখা যায়। তার মানে আমাদের প্রতিউত্তর গুলো আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে। শুভ নববর্ষ।

সৌভিয়েত ক্লাসিক সিনেমাগুলোর সব আধুনিক বার্তার ইংরেজি সংস্করণ এখানে দেখা যাবে। কেউ কেউ এটাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছে:

এই দারুণ ছবিগুলো আমি পুনরায় ফেসবুকে পোষ্ট করেছি আর খুব মজা লাগছে দেখতে যে কিছু মানুষ অপমানে “আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে” এই ধরণের মন্তব্য করছে।

এই ছবিগুলোতে প্রতিটি পুরুষ চরিত্রের মন্তব্যগুলো অনেকটা এমন “মনে রেখো যেহেতু আমি পুরুষ তাই সব ধরণের সিদ্ধান্ত আমিই নেব” এবং এর প্রতিউত্তরে এই ছবিগুলো বলছে “তুমি তাহলে নিজের রাস্তা মাপতে পারো”।

২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম দ্বারা পরিচালিত গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী রাশিয়া ১৪৯ টি দেশের মধ্যে ৭৫তম স্থান পেয়েছে যেখানে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে নারীরা সমান অধিকার পায় তবে অন্যান্য অধিকার রক্ষায় ঘাটতি রয়েছে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .