“একপেশে বর্ণনার” অভিযোগে ফিলিস্তিনি কিশোরী একটিভিস্টদের নিয়ে নির্মিত এক তথ্যচিত্রের প্রদর্শন সিঙ্গাপুর সরকার নিষিদ্ধ করেছে

“রেডিয়েন্স অফ রেজিসট্যান্স (প্রতিরোধের উজ্জ্বলতা)” নামের তথ্যচিত্রটি ২০১৬ সালে মুক্তি পায়। এই ছবিটি তথ্যচিত্রের ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

ফিলিস্তিনের দুই একটিভিস্টি যারা কিশোরী, তাদের জীবনের ভিত্তিতে তৈরি তথ্যচিত্র ফিলিস্তিন-ইজরায়েল-এর সংঘাতের বিষয়টি তুলে ধরছে, “একপেশে বর্ণনার” অভিযোগে সিঙ্গাপুর সরকার এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শন সেদেশে নিষিদ্ধ করেছে।

২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া “রেডিয়েন্স অফ রেজিসস্ট্যান্স“-এর পরিচালক মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা জোসেফ রবার্টস। জানুয়ারি ২০১৮ –এর প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুর-ফিলিস্তিন চলচ্চিত্র উৎসবে এটি প্রদর্শিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সিঙ্গাপুরের ইনফো কমিউনিকেশন মিডিয়া ডেভলপমেন্ট (সিঙ্গাপুর তথ্য যোগাযোগ প্রচারমাধ্যম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা আইএমডিএ) এই তথ্যচিত্রকে সকল রেটিং-এর জন্য যোগ্য নয় হিসেবে চিহ্নিত করে উৎসবে এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে।

এই তথ্যচিত্রের সারাংশ অনুসারে, এটি নির্মাণের সময়কার ১৪ বছর বয়স্ক আহেদ আল তামিমি এবং তার ৯ বছরের বন্ধু জাননা আইয়াদ-এর কাহিনী তুলে ধরছে :

এই তথ্যচিত্র এই দুই কিশোরী একটিভিস্ট প্রতিদিনের জীবন এবং ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্মের অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি নিবিড় মনোযোগ প্রদান করেছে।

২০১৭ সালে তামিমি সংবাদ শিরোনাম হন ইজরায়েলী এক সৈনিককে চড় মারার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে। এই তার এই চড় মারার ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ করা হয় এবং দ্রুত এই ভিডিও চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে আনীত মামলা এখনো চলছে।

এই বিষয়টি পরিষ্কার নয় যে আইএমডিএ-এর এই সিদ্ধান্ত এই আলোচিত মামলার কারণে কি না, তবে প্রতিষ্ঠানটির বিবৃতি ব্যাখ্যা করছে নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে এই তথ্যচিত্রের “একপেশে বর্ণনার” বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে:

এই তথ্যচিত্রের “একপেশে বর্ণনা” উত্তেজনা সৃষ্টি এবং সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন জাতি এবং ধর্মের মাঝে অস্থিরতার সৃষ্টি করবে। […]

এই বালিকাকে এক আদর্শ হিসেবে বিবেচিত করলে এই ধরণের চলমান সংঘর্ষের তীব্রতা আরো বেড়ে যেতে পারে। এই তথ্যচিত্র একটিভিস্টদের প্ররোচিত করবে অবৈধ দমনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য।

সিঙ্গাপুর এবং ইজরায়েল উভয় রাষ্ট্র নিজেদের মাঝে এক সুন্দর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উপভোগ করছে। একই সময়ে ,ফিলিস্তিন সরকারের সঙ্গে সিঙ্গাপুর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ২০১৭ সালে, সিঙ্গাপুরের প্রধান মন্ত্রী লী সুয়েন লুং বলেন ইজরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘর্ষ এক “আবেগপূর্ণ বিষয়”, বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য। তিনি উল্লেখ করেন যে সিঙ্গাপুরের দক্ষিণপূর্ব এশীয় অঞ্চলের প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহে সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলমান এবং সিঙ্গাপুরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমানের বাস। সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাকালীন নীতির একটি হচ্ছে দেশটি বহুমাত্রিক জাতিসমূহের মাঝে সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা।

ওয়েব সাইটে ঘোষণার স্ক্রিনশট প্রদর্শন করছে রেডিয়েন্স অফ রেজিসট্যান্স এর প্রদর্শন বাতিল হওয়ার ঘোষণার বিষয়টি।

রেডিয়েন্স অফ রেজিসট্যান্স এর নির্মাতা তার ফেসবুকের পাতায় সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বর্ণনা করেন:

এটা এক ধরণের বাজে রকমের নিষেধাজ্ঞা, চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় আমরা যার মুখোমুখি হই যে চলচ্চিত্রে ফিলিস্তিনের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা হয়েছে এবং যা ফিলিস্তিন প্রচার মাধ্যম সাধারণত প্রতিনিয়ত এই ধরণের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়।

সিঙ্গাপুরের শিল্পী আ১ফিয়ান সাআ’ত আইএমডিএ-এর যুক্তি প্রত্যাখান করছে:

এমন কোন তথ্যচিত্র নেই যার কোন সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নেই, থাকে না। সকলের এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, অবস্থান রয়েছে, সকলে একটা মাত্রার নিজস্ব ভাবনার দ্বারা পরিচালিত, একটা পক্ষে অথবা নির্দিষ্ট মাত্রায় ঘটনার সাথে জড়িত থাকে- আর এখানে এটা আদর্শিক ভাবে পতনের মত এক অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে যা ছদ্মাবরণে ঢাকা এক উদ্দেশ্য পূরণ করছে।

এই চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকেরা বলেছে তথ্যচিত্রটি জনসম্মুখে প্রদর্শনের বিষয়ে আইএমডিএ-এর নিষেধাজ্ঞার কারণে হতাশ, কিন্তু সময়ের অভাবের কারণে তারা এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কোন আবেদন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .