গত ৩১শে জুলাই সোমবার মালদ্বীপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন বিরোধী দলের সাংসদরা মালদ্বীপের এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ‘জনতার মজলিসে‘ ব্যপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন, আর সৈন্যরা স্পিকার মান্যবর আব্দুল্লা মাসেহ মোহাম্মদকে ঘিরে রেখে নিরাপত্তা প্রদান করে। এর এক সপ্তাহ আগে ২৪শে জুলাই বিকালে পুলিশ আর সেনা সদস্যরা মজলিস থেকে দুইজন সাংসদকে জোর করে বের করে গ্রেফতার করেছিল।
This was Maldives Parliament Chambers this morning! Millitary officers obstructing opposition MPs. pic.twitter.com/lsQhg6KvrU
— Maji? (@abdulmaajid) July 31, 2017
আজ সকালে মালদ্বীপের সংসদের চিত্র! সেনাসদস্যরা বিরোধীদলের সাংসদদের ঢুকতে দিচ্ছে না।
#Maldives People's Majlis – Military personnel forming a wall inside the chamber. pic.twitter.com/fAQCnaJ4wr
— ? (@Simwarr) July 31, 2017
জনতার মজলিস – চেম্বারের বাইরে সেনাসদস্যরা দেয়াল করে রেখেছে।
Soldiers in plainclothes inside Parliament, to remove Opposition. No legal grounds for soldiers inside chambers before session begins. pic.twitter.com/ZI5CJLxkzV
— Eva Abdulla ?❓ (@evattey) July 31, 2017
সংসদ ভবনের ভেতরে সাদা পোশাকে সেনাসদস্যরা প্রস্তুত বিরোধীদলকে বের করে দেবার জন্যে। সংসদের কার্যক্রম শুরুর আগে সেনাদের প্রবেশের নিয়ম নেই।
গত ৩রা জুলাই চার দলীয় জোট মালদ্বীপ ইউনাইটেড অপোজিশন স্পিকার আব্দুল্লা মাসেহ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ৮৫ জন সদস্যের মধ্যে ৪৫ জনের সইসহ অনাস্থা প্রস্তাব রাখে যেখানে ৪২টা সই হলেই চলে। স্পিকার মাসেহ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ুমের কাছের মানুষ বলে পরিচিত। প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিন এর বিরুদ্ধের বেশ কিছু দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
ওদিকে সুপ্রিম কোর্টে ক্ষমতাশীন প্রগ্রেসিভ পার্টি অফ মালদ্বীপ (পিপিএম) অনাস্থা প্রস্তাবের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে, যেখানে তারা বলেছেন যে পিপিএম থেকে দলত্যাগ করা সাংসদ যারা এতে স্বাক্ষর করেছেন তাদেরকে দলত্যাগের জন্য শাস্তি দেয়া যাবে কিনা। জুলাই মাসের ১৩ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট আটর্নি জেনারেলের অনুরোধে একটি দলত্যাগ বিরোধী রুলিং দিয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রীয় সাংসদরা তাদের আসন হারাবেন যদি ১)তারা তাদের দল ছেড়ে দেন ২) দল থেকে বরখাস্ত করা হয় বা ৩) দল পরিবর্তন করেন।
এই রুলিং এর ভিত্তিতে চারজন বিরোধী দলীয় নেতা তাদের আসন হারান। যার ফলে স্পিকারের বিরুদ্ধে ২৪ জুলাই এর অনাস্থা ভোট খারিজ হয়ে গেছে পর্যাপ্ত সিগনেচারের অভাবে। বিরোধী দল এর নেতৃত্বে এই প্রস্তাবের জন্য প্রয়োজনীয় সর্ব নিম্ন ৪২ সাক্ষরের থেকে সংখ্যাটা কমে গেছে। এর ফলে দেশে ব্যপক বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিরোধী দলীয় সাংসদ রোজাইনা আদম টুইট করেছেনঃ
We cannot make a defection law without bringing relevant changes to the constitution. The Constitution doesn't give space 4a defection law.
— MP Rozaina Adam? (@Roxeyna) July 13, 2017
সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধন না করে আমরা দলত্যাগ আইন করতে পারি না। সংবিধানে দলত্যাগ আইনের স্থান নেই।
রুলিং এর ব্যাপারে মতামত দিতে গিয়ে মালদ্বীপ ইউনাইটেড অপোজিশন (এমইউও) দাবি করেন যে সূচি অনুযায়ী এই অনাস্থা প্রস্তাব ২৪শে জুলাইতেই সংসদে আলোচনা করা প্রয়োজন। এর জন্যে চাপ প্রয়োগ করতে তারা তাঁদের সমর্থকদের পথে নেমে আসতে অনুরোধ করেন। তারা অনাস্থা প্রস্তাব নাকচের ব্যাপারে মজলিসের সিদ্ধান্ত আর জুলাই ৩১ পর্যন্ত রাজধানীতে স্বাধীনতা দিবস পালনে বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসাবে সংসদে সকল মিটিং স্থগিত করা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। একই সাথে এমইউও প্রস্তাব দাখিলের ১৪ দিনের মধ্যে মিটিং করার সাংবিধানিক প্রযোজনীয়তার কথা উল্লেখ করে।
ঘটনার দিন মালদ্বীপ সরকার নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলে সংসদ বন্ধ করে দেয়। একই সাথে সাবধান করে দেয় যে কেউ বিক্ষোভ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২৪শে জুলাই প্রায় সকল বিরোধী দলীয় সাংসদ মজলিশের দিকে দল বেধে যান এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বেষ্টন এড়িয়ে সংসদে ঢুকতে সমর্থ হন। সেনাবাহিনী তখন বিরোধী দলীয় সাংসদদের টেনে হিচড়ে বাইরে নিয়ে যায়, যেখানে তারা আরো ৩০০ জন উপস্থিত বিক্ষোভকারীর সাথে দাড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বিক্ষোভকারীদের দিকে মরিচের স্প্রে মারা হয় আর দুইজন সাংসদ আর সাংবাদিকসহ বেশ কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
টুইটারে ঘটনার গুরুত্ব ও বাস্তবতা অনুভব করা যায়।
Opposition lawmakers get in to the Parliament, despite police and military blockade. pic.twitter.com/tuJ9GfIWR4
— Junayd ?? (@mjunayd) July 24, 2017
বিরোধীদলীয় সাংসদরা সংসদে ঢুকেছে পুলিশ আর সেনাদের অবরোধ সত্ত্বেও।
Maldives Constitution has been suspended while the Parliament is under-siege by Maldives National Defence Force. (1/2) pic.twitter.com/i3wblT5BIv
— Mohamed Musthafa (@Thimarafushi) July 24, 2017
মালদ্বীপের সংবিধান স্থগিত করা হয়েছে এবং সংসদ ভবন মালদ্বীপের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর দখলে আছে।
All Mps attacked with pepper spray. pic.twitter.com/0fEztkKlAI
— MP Rozaina Adam? (@Roxeyna) July 24, 2017
সাংসদদের উপর মরিচের স্প্রে মারা হয়েছে।
MPs @faya_i @MariyaDidi @MohamedAmeeth being dragged out of parliament by @MNDF_Official pic.twitter.com/yhUgUTvxWk
— Munshid ?❓ (@dyingregime) July 24, 2017
সাংসদদের টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মজলিস সচিবালয় মালদ্বীপের জাতীয় ডিফেন্স ফোর্সকে মোতায়েনের স্বপক্ষে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে যেখানে সংসদে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার খবরকে মিথ্যা খবর হিসাবে বলা হয়েছে।
ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুম (প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের সৎ ভাই) মন্তব্য করেছেনঃ
Appalled by the way Hon MPs were mishandled both inside parliament & on the roads today. All MPs MUST be respected. #NationFirst
— Maumoon Abdul Gayoom (@maumoonagayoom) July 24, 2017
আজকে সংসদের ভিতর আর বাইরে মান্যবর সাংসদদের সাথে দূর্ব্যবহারে স্তম্ভিত। সকল সাংসদকে সম্মান করা উচিত।
২০০৮ সালে মালদ্বীপে প্রথম গনতন্ত্র আসে। কিন্তু তাদের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদকে যখন ২০১২ সালে কথিত অভ্যুত্থান এর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় তখন থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। ২০১৩ এর বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হন প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা। পর্যবেক্ষকরা বলছে যে দেশটি ক্রমান্বয়ে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঝুকছে। প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষমতার জোরে বিরোধীদের চুপ করানো আর মিথ্যা অভিযোগে নাশিদ সহ বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জেলে ঢোকানো।
মালদ্বীপ গণতান্ত্রিক দলের নেতা আর ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট নাশিদের নেতৃত্বে গত বছর মালদ্বীপ ইউনাইটেড অপজিশন নামে বিরোধীদলের কোয়ালিশন গঠিত হয়। নাশিদ এখন যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে আছেন মালদ্বীপে জেলের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এই কোয়ালিশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ুমকে আইনগতভাবে সরিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা আর তার অর্থ পাচার আর অন্যান্য অপরাধের বিচার করা।
গত সেপ্টেম্বরে, “স্বর্গ থেকে চুরি” নামে আল জাজিরার একটা তদন্তমূলক রিপোর্ট প্রকাশিত হয় যেখানে প্রকাশ করা হয় কিভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন আর তার সঙ্গীরা কোটি কোটি ডলার জালিয়াতি করেছেন, বিচারক আর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছেন, আর ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারী কর্মীদের সরিয়েছেন যারা বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। মালদ্বীপের সরকার রিপোর্টটিকে পক্ষপাতদুষ্ট আর অপমানজনক বলেছে।
সংসদ বন্ধ করে বিরোধী দল আর মিডিয়ার উপরে হামলায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এটা এখন দেখার বিষয় যে প্রেসিডেন্ট ইয়েমিন তার বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা বিরোধীতা কি করে সামাল দেন। তবে তার অনুকূলে রয়েছে বিচার বিভাগ যাকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করতে তিনি সক্ষম হয়েছেন।