নিরাপত্তা বাহিনীর একটি জিপের সামনে বাম্পারে বসিয়ে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা এক তরুণকে একটানা নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে।
ভিডিও-টির সূত্র জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শহর শ্রীনগরে সদ্য অনুষ্ঠিত ৯ই এপ্রিলের উপনির্বাচন; যেটিতে ভোটের হার ছিল কেবল মাত্র ৭ শতাংশ। নির্বাচনের সময়কাল জুড়ে বিভিন্ন রকমের অশান্তির কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলির আঘাতে মোট আটজন বিক্ষোভকারীরা নিহত ও আরো বেশ কয়েকজন গুরুতরভাবে আহত হন। যদিও ভারত সরকার একটি প্রেস রিলিজে জানায় যে বহু নিরাপত্তা কর্মীও এই উপনির্বাচনে সামাল দিতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের পাথর-প্রস্তরাঘাতে জখম হন।
কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীরা যথারীতি এই উপনির্বাচনটি গণভাবে বর্জন করে এবং এ সমস্ত কিছুর ফলে সর্বমোট ১২ লক্ষ নিবন্ধভুক্ত ভোটারের মধ্যে কেবল মাত্র ৭ শতাংশ ভোটাররাই ভোটদান করেন। লোকসভার একটি খালি আসনের জন্য অনুষ্ঠিত এই উপনির্বাচনে কাশ্মীরের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ভোটগ্রহণ দেখতে পাওয়া যায়।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ সামরিক এলাকা কাশ্মীরে প্রায় ৫ লক্ষেরও বেশি নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োজিত আছে। ১৯৮৯ সাল থেকে অসংখ্য কাশ্মীরি বাসিন্দা কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতের শাসনকে একেবারে খারিজ করে তথা পূর্ণ স্বতন্ত্রতা কিম্বা পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে কাশ্মীরের সংযোজনের লক্ষ্যে লড়াই করে যাচ্ছেন।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময় বৃহত্তর কাশ্মীর অঞ্চলটি কে সদ্য সৃষ্ট ভারত ও পাকিস্তান এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে ভৌগোলিক বিচারে বিভক্ত করা দেয়া হয়। দুই পক্ষই এ অঞ্চলের পূর্ণ কর্তৃত্ব দাবি করে আসছে।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সময়ে হিংস্রতার তাপ সামাজিক মিডিয়াতেও যথেষ্ট জোরালোভাবে অনুভূত হয়।
https://youtu.be/A09SY7Zc77Y
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া এই ভিডিওটিতে হিন্দি ভাষায় চিৎকার শোনা যায় “পাথর নিক্ষেপকারীদেরও একই পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি জনপ্রিয় হবার সাথে সাথেই জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ওমার আব্দুল্লাহ এটির প্রচার করেন ট্যুইটারে যা আরও অনেকেরই নজরে আসে এবং এর আরও প্রচার হয়ঃ
This young man was TIED to the front of an army jeep to make sure no stones were thrown at the jeep? This is just so shocking!!!! #Kashmir pic.twitter.com/bqs4YJOpJc
— Omar Abdullah (@abdullah_omar) April 14, 2017
এই লোকটিকে আর্মি জিপের সামনে বেঁধে রাখা হয়েছিল যাতে তাঁদের প্রতি কোনো ইটপাটকেল ছোড়া না হয়? এটি খুবই ভয়ঙ্কর!!!
Indian Occupation in one picture #Kashmir pic.twitter.com/zrCM6qPZbq
— Irshad Nabi (@kashmir_rise) April 15, 2017
এক ছবিতে ভারতীয় দখলের প্রমাণ
#Kashmir This is Farooq Ahmad Dar from Chill village of Beerwah who was tied with ropes and was used as a human shield by RR Indian Army pic.twitter.com/psi40uCOJ0
— Musa Kashmiri (@Musa_Kashmiri) April 14, 2017
#কাশ্মীর এই হলো বিরোয়ার চীল গ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ দার যাকে ভারতীয় সেনারা দড়ি দিয়ে বেঁধে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
Indian army's human shield is too poor to file a complaint. Anyone wish to assist him? #kashmir https://t.co/rWWEedLEei
— Dr Rita Pal (@dr_rita39) April 19, 2017
ভারতীয় সেনাবাহিনীর মানব ঢাল একটি অভিযোগ দায়ের করতেও অর্থনৈতিকভাবে অক্ষম। এনাকে কেউ সহায়তা করতে চান?
ভারতীয় সেনাবাহিনী এই ঘটনার তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে। যদিও এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভারতের কিছু মিডিয়া গোষ্ঠী এবং অ্যাটর্নি জেনারেল এই ঘটনাটির ন্যায্যতা প্রতিপাদন করার সাথে সাথে এ কথা সাফভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা মানব ঢালের এই অভিপ্রায়টি বেশ উদ্ভাবনী ছিল তথা এই প্রক্রিয়ায় অনেক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের প্রাণ বেঁচেছে।
এই ধারণার সমর্থনে বিক্ষোভকারী দ্বারা নিরাপত্তা বাহিনীদের উপর হামলা চালানোর ও “ভারত, ফিরে যাও” এর মতোন স্লোগ্যানের বেশ কয়েকটি ভিডিওর ও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা মিলছে।
Here is another video – another side of the restraint debate in Kashmir. We should be outraging over this as well? No? Because hypocrisy? pic.twitter.com/UAOoAbVTA0
— Junaid Azim Mattu (@Junaid_Mattu) April 14, 2017
এটি হলো আরেকটি ভিডিও – কাশ্মীরে সংযত বিতর্কের ভিন্ন একটি দিক। আমাদের তো এটির উপর ও ক্ষোভ প্রকাশ করা উচিৎ? তাই না? কেন কপটতা?
This is what our security forces have to face in #Kashmir . You wont see bleeding Heart Liberals talking about this >? pic.twitter.com/nA1XTJPTo4
— Nation Wants To Know (@PawanDurani) April 15, 2017
এই হলো সেই পরিস্থিতি #কাশ্মীর উপত্যকায় যার সম্মুখীন আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীদের হতে হয়। রক্ত ঝরা হৃদয়ের উদারপন্থীদের আপনারা এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে দেখবেন না >?
It's raining stones. That's what India's security forces have to endure almost daily in Kashmir. Do watch. pic.twitter.com/QLbPo1JtQ5
— Rahul Singh (@rahulsinghx) April 14, 2017
পাথরের বৃষ্টিপাত। ভারতবর্ষের নিরাপত্তা কর্মীদের প্রায় দৈনন্দিনরূপে এটি সহ্য করে যেতে হয়। অবশ্যই দেখবেন।
কাশ্মীরের এই অশান্তীর প্রেক্ষাপটে, কাশ্মীরি ব্লগার আরিফ মুজাফার ভারতের মিডিয়া দ্বারা বাছাই-করা নিন্দন ও তাদের সংবাদ প্রতিবেদনে পক্ষপাতি প্রকৃতির নিন্দে করে বলছেনঃ
Few days ago, a video of Kashmiri boys attacking CRPF men in Budgam went viral. In no time, ‘prime time’ shows were set to condemn the assault forgetting the eight murders that had just taken place. [..]
কয়েকদিন পূর্বে, বুডগামে কাশ্মীরি ছেলেপুলেদের সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর হামলা চালানোর ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে; সদ্য ঘটা আটটি হত্যার ব্যাপার সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে সন্ধ্যার অনুষ্ঠানগুলোতে শুধু সেই হামলাটির নিন্দাই করা হয়। [..]
আরিফ আরো বলছেনঃ
The question whether beating of the CRPF men is justified or not is a matter of great debate. Of course, human dignity cannot be challenged at any cost whatsoever. But let’s tell the truth about India’s presence in Kashmir. If I start from my own person, I can extensively deliver firsthand accounts of the violence that I have been an eyewitness to.
During an assembly election in our village a long, long time ago, I was used by the army as a human shield, which is a globally acknowledged war crime. My father and my uncle had fled the village overnight to evade the continuous harassment and my elder brother had also escaped to some other place. I was the only male member at home. I was nine or ten. The army took me to the suspicious and sensitive places and I was left free after an hour long search. In her Independence Day speech last year, Chief Minister Mehbooba Mufti herself acknowledged the use of human shields in Kashmir.
সিআরপিএফ বাহিনীদের মারধর করাটা আদৌ উচিৎ হয়েছিল কি না সেটি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিতর্কের বিষয়। হ্যাঁ, মানব-মর্যাদাকে কোনোরূপে স্পর্ধা করার অধিকার অবশ্যই কারও নেই। তবে কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতীয় রাষ্ট্রের অবাঞ্ছিত উপস্থিতির সত্যটিকে এবার তুলে ধরা দরকার। যদি আমাকে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বলতে বলা হয়, তাহলে আমি অগুনতি সহিংসতার বিবরণ বিশদে দিতে পারি যার সাক্ষাৎ আমি সরাসরি হয়েছি।
দূর অতীতে একবার আমার গ্রামে বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন ভারতীয় সেনা দ্বারা আমায় মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল- যা বিশ্বব্যাপী এক ধরণের যুদ্ধ অপরাধ হিসাবে মানা হয়। ক্রমাগত হয়রানি এড়াতে আমার বাবা ও কাকা কে রাতারাতি গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে হয় ও আমার দাদাও আমায় ছেড়ে অজানা কোথাও পালিয়ে যায়। বাড়িতে আমিই তখন ছিলাম একমাত্র পুরুষ সদস্য। আমার বয়স তখন নয় কিম্বা দশ। সেনারা আমায় সন্দেহজনক এবং সংবেদনশীল সমস্ত স্থানগুলিতে নিয়ে যান তথা দীর্ঘ একঘণ্টা তল্লাসীর পর আমার মুক্তি মেলে। গত বছর স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতার সময় কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মেহ্বুবা মুফতিও কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা মানব-ঢাল ব্যবহারের অভিযোগ স্বীকার করে নেন।