রুশ বাচ্চাদের সামাজিক মিডিয়া থেকে সরাতে ‘আসল নাম’ নিবন্ধন

ছবি: পিক্সাবে, কেভিন রথরক সম্পাদিত

রাশিয়ার সদ্য প্রস্তাবিত আইনে সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের অ্যাকাউন্ট তৈরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে তাদের নিবন্ধনের সময় পাসপোর্ট তথ্য দিয়ে যাচাইকৃত প্রাপ্তবয়স্কদের আসল নাম ব্যবহার করতে হবে।

এর ফলে রুনেট জুড়ে বর্তমানে চালু এবং রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম ভিকন্তাক্তে – যেখানে ব্যবহারকারীদেরকে তাদের আসল নাম নিবন্ধন করার প্রয়োজন হয় না – সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবহারকারী বেরিয়ে যাবে।

বৃহত্তর সেন্ট পিটার্সবার্গ এলাকার প্রতিনিধিত্বকারী লেনিনগ্রা্দের ওব্লাস্ট বিধানসভা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় সংসদ দ্যুমাতে এধরনের একটি আইন জমা দেয়ার পরিকল্পনা করছে। বর্তমান আইনে লেখা আছে, লঙ্ঘনকারীকে তিন লক্ষ রুবল (প্রায় ৪ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা) পর্যন্ত প্রশাসনিক জরিমানা দিতে হতে পারে।

রুশ নাগরিকদের এবং রুশ মাটিতে বসবাসকারী বিদেশীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার জন্যে পরিকল্পিত আইনটি – বিশেষ করে বিদেশী মালিকানাধীন সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমের প্লাটফর্মে যখন এটা ঘটবে তখন কর্মকর্তারা কিভাবে নীতিটি কার্যকর করবেন – সেটা স্পষ্ট নয়, সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়া জানিয়েছে।

খসড়া আইনটি ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যেকার অপ্রাপ্তবয়স্কদের সামাজিক নেটওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করার সুযোগ দিলেও “অতিপ্রাকৃত-ঐন্দ্রজালিক” বিষয়, “মিশ্রণ ধূমপান” বিষয়ক তথ্য এবং তথাকথিত “সমকামী প্রচারণা”সহ আইনত শিশুদের মধ্যে বিতরণ করা যায় না এমন  বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করা দল এবং সম্প্রদায়ে যোগদান করতে দেবে না।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের “অননুমোদিত” জনবিক্ষোভ সম্পর্কে তথ্য ভাগাভাগি নিষিদ্ধের তুলনায় এই ধরনের ভাগাভাগিকে সরাসরিভাবে অপরাধমূলক বিবেচিত করে এটি বিদ্যমান আইনটির চেয়ে দ্বিগুণ কঠোর হবে। এবং এটা ব্যক্তিগত অনুমতি ছাড়া আরেকজন সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য প্রকাশ অবৈধ করে দেবে। এই পদক্ষেপটি সম্ভবত: জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ফাঁস হয়ে যাওয়া যোগাযোগ জনিত  সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কেলেংকারির ফল।

গৃহীত হলে আইনটি ২০১৮ সালের শুরু থেকে কার্যকর হবে।

জর্দান থেকে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে জাম্বিয়া পর্যন্ত সারা বিশ্বের দেশগুলোতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং মোবাইল সিম কার্ড উভয়ের জন্যে কার্যকারিতার মাত্রার তারতম্যসহ একই ধরনের তথাকথিত “আসল নাম” নিবন্ধীকরণের প্রয়োজনীয়তা বাস্তবায়িত হয়েছে। এই সব ক্ষেত্রে আইনপ্রণেতারা যুক্তি দেখিয়েছেন যে এর অনুশীলন আইন প্রয়োগকারীদেরকে অনলাইনে অপরাধমূলক কার্যকলাপ সনাক্তকরণে ভালভাবে সাহায্য করবে। কিন্তু এই তথ্য সংগ্রহ সরকারি সত্তাগুলির অপরাধমূলক কার্যকলাপে নিযুক্ত থাকা নির্বিশেষে সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এই ধরনের ডেটা সংরক্ষণ চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারে। কিন্তু ২০১১ সালে রাষ্ট্র-পরিচালিত সার্ভারগুলো থেকে একটি বড় ধরনের হ্যাকের মাধ্যমে এক কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে দক্ষিণ কোরিয়া এই ধরনের প্রয়োজনীয়তা থেকে সরে আসে

“কেউ সেন্সরশিপ চালু বা কথা বলা সীমিত করার চেষ্টা করছে না,” ইজভেস্তিয়াকে বলেছেন লেনিনগ্রাদের ওব্লাস্ট বিধানসভার একজন ডেপুটি ভ্লাদিমির পেত্রভ। “[ব্যবহারকারীদের] নামের সত্যতা যাচাই এবং সত্যতা উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ কেবল অবভাসিক যোগাযোগ এবং কারো নিজের মতামতের মান বৃদ্ধি করবে মাত্র।”

“দায়িত্বহীন নামহীনতা যত কম, তত ভাল,” বলেছেন রাশিয়াতে এলজিবিটি (লেসবিয়ান, সমকামী, দ্বিকামী, বহুকামী) বিরোধী আইনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে কুখ্যাত রাষ্ট্রীয় দ্যুমার ডেপুটি ভিতালি মিলোনভ। “আপনি অবশ্যই এই জগৎটিকে শিশুনিপীড়নকারী, সন্ত্রাসী এবং অপরাধীদের কাছে ছেড়ে দিতে পারেন না।”

মিলোনভ ইজভেস্তিয়াকে বলেছেন আইনটি দ্যুমাতে  দেয়া হলে এটি অনুমোদিত হওয়ার একটি ভাল সম্ভাবনা রয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .