
ভোক্তাদের বেশি বেশি কিনতে উৎসাহিত করতে আজ থেকে ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ চালু হয়েছে ( ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে)। এএনএন অফিসিয়াল সংসাদ চ্যানেল থেকে স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে। .
সম্প্রতি জাপানের সরকার চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ নামের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো চাকরিজীবীদের কম কাজ এবং বেশি বেশি খরচে উৎসাহিত করা।
সরকারি এই পরিকল্পনার আওতায় চাকরিজীবীরা প্রতিমাসের শেষ শুক্রবারে বিকেল ৩টায় অফিস থেকে বের হবেন। এরপরে তারা মন চাইলে কোথাও ঘুরতে যাবেন, কেনাকাটা করতে যাবেন, সিনেমা দেখবেন, জাদুঘরে যাবেন। পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধব মিলে কোনো রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খাবেন। জাপানের সব চাকরিজীবী মানুষজন যদি ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’-তে অংশ নেন, তাহলে জাপানের ব্যক্তিগত খরচ প্রতি মাসে প্রায় ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পাবে।
কিন্তু সরকারের এ প্রত্যাশ পূরণ হয়নি। ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখ ছিল প্রথম ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’। সেদিন মাত্র ৪ শতাংশ চাকরিজীবী এতে অংশ নিয়েছিলেন। সরকারি এ পরিকল্পনায় অংশ না নেয়ার পিছনের মূল কারণ হলো, জাপানের চাকরিজীবীরা কাজে খুবই ব্যস্ত থাকেন। তারা চাইলেও কাজ থেকে আগে বের হতে পারেন না।
プレミアムフライデー、実際に早く帰った人は3.7% すでに死語領域にhttps://t.co/TTonaUDuqw
— 岡三マン (@okasanman) March 3, 2017
[According to this article], just 3.7% of workers left work early on Premium Friday (on February 24, 2017). The initiative appears to be dead on arrival.
(সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে) মাত্র ৩.৭ শতাংশ চাকরিজীবী ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’র দিন কাজ থেকে আগে আগে বের হয়েছিলেন। তাই বলতে গেলে, সরকারি পরিকল্পনা শুরুতেই ভেস্তে গেল।
‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ উদ্যোগের মাধ্যমে জাপানের দু’টি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর একটি হলো ভোক্তাদের টাকা খরচ করার উপলক্ষ তৈরি করে দেয়া। অন্যটি হলো অতিরিক্ত কাজের বোঝা কমানো। সত্যি বলতে কি, গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে, বিশেষ করে মহা মন্দার দশক থেকে জাপানের ভোক্তাদের খরচের পরিমাণ বেশ কমে গেছে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) এর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, জাপানের কর্মীরা প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের কর্মীদের চেয়ে বছরে গড়ে কয়েক ঘণ্টা কাজ কম করেন। তা সত্ত্বে, জনমনে একটা ধারণা রয়েছে যে, জাপানীদের কর্মঘণ্টা অন্যান্যদের চেয়ে বেশ লম্বা। আর তাই কাজের চাপ কমানোর জন্য কিছু একটা করা দরকার থেকেই এ ধরনের উদ্যোগ।
hours worked per worker according to @OECD_Stat
Some interesting figures:
Mexico 2246
Greece 2042
OECD 1766
Germany 1371 pic.twitter.com/0P0wYO3a0E— DimitrisMakrystathis (@makrystath) January 9, 2017
ওইসিডি-এর পরিসংখ্যান মতে, কর্মীদের বাৎসরিক গড় কর্মঘণ্টা
কিছু চমৎকার তথ্য:
মেক্সিকো ২২৪৬
গ্রিস ২০৪২
ওইসিডি ১৭৬৬
জার্মানি ১৩৭১
ব্লগার নিয়োকিকে কিউরেশন বিষয়ক ওয়েবসাইট নেভার ম্যাটোমি-তে ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ নিয়ে জাপানিদের ভাবনা ও প্রতিক্রিয়াগুলো তুলে এনেছেন । সেখানে ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ নিয়ে মানুষের সবচে’ বড় সমস্যা কি, সেটা উঠে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্র থেকে আগে আগে বের হওয়ার উপায় কারোরই নেই।
একজন টুইটার ব্যবহারকারী ব্যঙ্গ করে লিখেছেন:
プレミアムフライデーの反対語は金曜労働ショー
— プレミアムさわでぃ@かいしゃちほー (@sawadybomb) February 23, 2017
The opposite of “Premium Friday” would be “Road Show Friday.”
‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’-এর উল্টো হতে পারে, ‘রোড শো ফ্রাইডে’।
উল্লেখ্য, ‘রোড শো ফ্রাইডে’ একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান। সিনেমা বিষয়ক এই অনুষ্ঠানটি শুক্রবারে প্রাইম টাইমে দেখানো হয়।
অন্য একজন টুইটার ব্যবহারকারী জনমত জরিপের ফলাফলের হাইলাইটস নিয়ে টুইট করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ বাস্তবায়নের পথে বড় অন্তরায় হলো কর্মীদের অত্যাধিক কাজের চাপ:
実際にプレミアムフライデー利用した人は3.7%。
帰れなかった人の理由は、仕事が終わらなかった88.4%。
で、貴重な3.7%の人の退社後の行動は、自宅で過ごした41.8%。
…何がしたいの? pic.twitter.com/lRbQNtXn4U— NOWAR (@666fusei) March 3, 2017
Just 3.7% of survey respondents said they participated in Premium Friday. Reasons for not leaving early were “I still had work to do” (88.4%). Of the 3.7% of people who did leave work early, 41.8% said they spent time at home.
জনমত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৩.৭ শতাংশ ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’-তে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কাজ ছিল, তাই তাড়াতাড়ি বের হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ৮৮.৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। আবার ৩.৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী যারা আগে আগে অফিস থেকে বের হয়েছেন বলে জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪১.৮ শতাংশ বাসাতেই ছিলেন।
এদিকে জাপানের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ চালু করার ব্যাপারে অতোটা উৎসাহ দেখায়নি। ফেব্রুয়ারি মাসে ১,০০০ বা তার বেশি কর্মী আছে, এমন প্রতিষ্ঠানের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। সেখানে দেখা যায়, মাত্র ৫.৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিষ্ঠানে ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ উদ্যোগ চালু করেছেন। তাছাড়া ১০০ এর কম কর্মী আছে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২.৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিষ্ঠানে ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ চালু করবে জানিয়েছে।
একজন টুইটার ব্যবহারকারী ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’-এর দিন সন্ধ্যায় ডেনসু’র বিল্ডিংয়ে আলো জ্বলা ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, ডেনসু জাপানের অন্যতম হোয়াইট কলার চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান।
電通~プレミアム・フライデー~ pic.twitter.com/tdQeyh91qU
— shichi (@shichichaos) February 24, 2017
Premium Friday at Dentsu.
ডেনসু-তে প্রিমিয়াম ফ্রাইডে পালন।
জাপানের শ্রম বাজারে অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছে। আর এটাই ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ চালুর পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও জাপানে শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে। বর্তমানে প্রতি ১৪৩ চাকরির বিপরীতে ১০০ জন চাকরিপ্রার্থী রয়েছেন। তাছাড়া জাপানের কাজের মানও কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যের মতো এখানেও মজুরি কম, বেশিরভাগ চাকরিই পার্টটাইম অথবা চুক্তির ভিত্তিক।
আর তাই প্রান্তিক চুক্তি ভিত্তিক কর্মীরা ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’র সুবিধা নিতে পারছেন না। আবার এদের আর্থিক সক্ষমতা না থাকাও সরকার ভোক্তাদের খরচের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই উভয় সংকট অবস্থার একটা সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন একজন টুইটার ব্যবহারকারী:
政府「プレミアムフライデー導入する」
社員「3時に退社できる!」
飲食店「プレフラ限定ビール半額!」
97%の企業「うちは導入しない」
社員「ファッ!?」
ぼく(無職)「くぅ〜ww働かずに飲む半額ビールうんめぇ〜ww」
結論:プレミアムフライデーで得するのはニートだけ
— 中退くん (@chuutaikun) February 24, 2017
Government: “We are going to introduce Premium Friday.”
Employees: “We can quit at 3 p.m.!”
Restaurants: “Half-price for ‘limited edition’ Premium Friday beer!”
97% of companies: “We are not going to implement Premium Friday.”
Employees: “Wha – ?”
Me (unemployed): “Aahh, since I'm not working this half-price beer tastes great!”
Conclusion: Only NEETS (those Not in Education, Employment, or Training) get Premium Fridays.
সরকার: আমরা ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ চালু করতে যাচ্ছি।
চাকরিজীবী: আমরা তাহলে বিকেল ৩টার সময় অফিস থেকে বের হতে পারবো!
খাবারের দোকান: ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে বিয়ার’, এখন মাত্র অর্ধেক দামে। খুব সীমিত। তাড়াতাড়ি করুন।
৯৭% চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান: আমরা ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’ চালু করছি না।
চাকরিজীবী: কি…?
আমি (বেকার): কী মজা! অর্ধেক দামে বিয়ার খেতে পারবো!
উপসংহার: যাদের শিক্ষা, চাকরি ও প্রশিক্ষণ নেই, একমাত্র তারাই ‘প্রিমিয়াম ফ্রাইডে’র সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।