ফেসবুকে চীনের নয়া ‘কূটনীতি’ পাতা নিয়ে হংকংবাসীদের ক্ষুদ্ধ মন্তব্য

চীনের পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের হংকং দপ্তরের ফেসবুক পাতার পর্দাছবি।

এলসন তংয়ের লেখা এই পোস্টটি মূলত: ২০১৭ সালের ২২ মার্চ তারিখে হংকংয়ের মুক্ত প্রেসে প্রকাশিত হয়েছিল। একটি অংশীদারিত্ব চুক্তির অংশ হিসেবে নিচের সম্পাদিত সংস্করণটি প্রকাশিত হয়েছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হংকং শাখা একটি দাপ্তরিক ফেসবুক পাতা খোলার পর পাতাটিতে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ক্রুদ্ধ মন্তব্যের বন্যা বয়ে যায়। সামাজিক গণযোগাযোগ নেটওয়ার্ক দৈত্যটি চীনের মূল ভূখণ্ডে নিষিদ্ধ হলেও তার বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলে হংকং এবং ম্যাকাওতে নয়।

২১ মার্চ তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হংকং কমিশনারের দপ্তর একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একটি বোতাম চেপে ক্যান্টনীয় ভাষার প্রথম এই পোস্টটি আপলোড করা হয়:

好啦!咁其實我地係負責咩工作呢?香港實行“一國兩制”,相信大家都知啦,國家有外交部去處理國與國之間的關係,咁香港唔係一個國家,同香港相關外交事務就由我地負責啦。That's why we exist.

আচ্ছা, আসলে আমাদের দায়িত্ব কি? আমরা জানি সবাই এটা জানে হংকং ‘এক দেশ দুই পদ্ধতি’ বাস্তবায়ন করে, এবং দেশটির বিভিন্ন রাস্ট্রের প্রতি সম্পর্ক রক্ষার জন্যে এর একটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়েছে। ভাল কথা, হংকং তো কোন দেশ নয়, তাও আমরা হংকং-সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক বিষয়ের যত্ন নিই। (আর) এজন্যেই আমরা রয়েছি।

পাতাটিতে ক্যান্টনীয় সম্বন্ধসূচক পদ গা (噶) এর পরিবর্তে কণা গেহ (嘅) ব্যবহার করার জন্যে কিছু কিছু ব্যবহারকারী কৌতুক করেছে। একজন মন্তব্যকারী জিজ্ঞাসা করেছে “আপনারা কী হংকংয়ের একজন সম্পাদক ভাড়া করতে পারেন না?”

চীনা-ব্রিটিশ লিখিত যৌথ ঘোষণার নীতি অনুসারে “এক দেশ, দুই ব্যবস্থা” নীতি হবে এবং যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে হংকংকে চীনা জনগণের কাছে হস্তান্তর করার সময় থেকে শহরটির মৌলিক আইন এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও জীবন ব্যবস্থা ২০৪৭ সাল পর্যন্ত অন্তত ৫০ বছর অপরিবর্তিত থাকবে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং অধৈর্যের লক্ষণ দেখাচ্ছে নির্বাচনী সংস্কারকে সীমাবদ্ধ করার জন্যে মৌলিক আইনের নতুন ব্যাখ্যা দেয়া এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের নির্বাচিত আইন প্রণেতাদের বরখাস্ত করার পাশাপাশি সরকারের নীতি ও কর্মকর্তা নিয়োগে অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে হংকংয়ের অভ্যন্তরীন বিষয়ে বেশি বেশি অনধিকারচর্চা করছে।

চালু করার একদিনের মধ্যে পাতাগুলো ১,০০০ খানেক লাইক (পছন্দ) পাওয়া সত্ত্বেও মন্তব্য – বিশেষ করে প্রতিবাদের – পেয়েছে শত শত। কিছু মন্তব্যকারী বেইজিংকে প্রধান নির্বাহী প্রার্থী ক্যারি লামের জন্যে এর কথিত সমর্থন, অথবা বর্তমান নেতা লুয়েং চুং-ইং এবং তার কথিত চীনা সরকারি সমর্থকদের বিচার বন্ধ করতে বলেছে।

২৬ মার্চ তারিখে ১,২০০ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি শহরটির শীর্ষ নেতা নির্বাচিত করবে। প্রার্থী তিনজন হলেন সাবেক মুখ্য সচিব ক্যারি লাম, প্রাক্তন আর্থিক প্রধান সচিব জন ৎসাং ও সাবেক বিচারক উ কওক হিং। কিন্তু বেইজিংপন্থী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মধ্যে কথা চলছে যে ক্যারি লাম বেইজিংয়ের একমাত্র গ্রহণযোগ্য প্রার্থী। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে ক্যারি লামকে চীনা লিয়াজোঁ অফিস এবং অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠান ইউজিএল (ইউনাইটেড গ্রুপ লিমিটেড)-এর সঙ্গে ৫ কোটি হংকং ডলার (প্রায় ৫১.৬১ কোটি টাকা) লেন-দেন  ঘোষণা করতে ব্যর্থ একটি অসদাচারণ কাণ্ডে ধরা পড়া বর্তমান প্রধান নির্বাহী লুয়েং চুন ইং সমর্থন দিচ্ছে।

মূলভূখণ্ডে ফেসবুক অবরুদ্ধ থাকার কারণে অন্যান্যরা মন্ত্রণালয়টিকে বলেছে, “ওয়েইবোতে ফিরে যাও।”

চীনে এফবি (ফেসবুক) অবরুদ্ধ, বাড়ি ফিরে যাও… তোমার নিজের নকলটির কাছে।

Facebook是外國勢力
中國人用facebook就是賣國!一定收了美國黑金!

ফেসবুক একটি বিদেশী শক্তি। ফেসবুক ব্যবহার করে চীনারা নিশ্চিতভাবেই দেশদ্রোহী, তাদেরকে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাস্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা করছে।

強國不容許使用fb
若果你愛國嘅話,就乖乖地聽中國話,用返微博,qq啦

শক্তিশালী দেশটি এফবি নিষিদ্ধ করে
দেশকে ভালোবাসলে চীনকে মেনে চলো আর ওয়েইবো এবং কিউকিউ ব্যবহার কর।

ছাত্রনেতা জোশুয়া ওয়োং পাতার একটি পর্যালোচনা লিখেছেন:

撤回人大決定,落實民主普選,中共停止打壓!

জাতীয় গণকংগ্রেসের সিদ্ধান্ত বাতিল করে গণতান্ত্রিক সার্বজনীন ভোটাধিকার বাস্তবায়ন কর, চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে তার নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে!

কিছু কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী আরো স্বাগত জানাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ পাতা পর্যালোচনাগুলোর একটি বলেছে:

加強直接對香港市民了解是好事,因為現在中聯辦是個山寨王國,和一些人構成一個龐大利益集團,每事只想自己利益再先,視國家利益再後,尤其是回歸後才忽然愛國的那些,又經常誇大香港反動情況,騙取各種資源和權力,因香港越分化,那些人得到利益就越多,實質香港人大多希望團結和諧,法治和自由得到肯定而已,所謂國家好,香港好;香港好,國家也好,請好好看清香港實況呢。

হংকংয়ের নাগরিকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা ভাল। লিয়াজোঁ অফিসটি রাস্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করার দাবি করা একটি রাজ্য, এটা একটা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে এবং এটা রাষ্ট্রের নাম করে নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। সম্পদ ও ক্ষমতা পাওয়ার জন্যে কেউ কেউ চীনের কাছে হংকং ফেরত আসার পর যারা হঠাৎ করে দেশপ্রেমিকে রূপান্তরিত হয়েছে এবং হংকংয়ের বিরোধীদের শক্তিকে বাড়িয়ে বলে থাকে। হংকং যত বেশি টুকরো টুকরো হবে তারা ততো বেশি মজা পাবে। হংকংয়ের বেশিরভাগ মানুষ সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রীতি কামনা করে। তারা শুধু আইন ও স্বাধীনতার শাসন চায়। চীন এবং হংকং এর ভাগ্য পরস্পর সংযুক্ত। দয়া করে এখানকার বাস্তবতার প্রতি ঘনিষ্ট দৃষ্টি রাখুন।

ফেসবুকে চীনা সরকারের একটি দাপ্তরিক পাতা স্থাপন করা এবারই প্রথম নয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সঙ্গে মিল রেখে একটি ফেসবুক পাতা স্থাপন করেছিল। ‘শি-এর ভ্রমণ’ নামের পাতাটিতে তখন থেকেই ইংরেজিতে তার কার্যক্রম নথিভুক্ত রয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .