বেপরোয়া কূটনীতি: তুর্কী-ডাচ #টিউলিপসংকট-এ ইউরোপীয় সংখ্যালঘুদের ভীতি

ওয়াশিংটনে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেভসোগ্লু প্রতিবেদকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছেন, দেখছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি। প্রাতিষ্ঠানিক ফ্লিকার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভাগাভাগি করা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ছবি। পাবলিক ডোমেইন।

একটি উদ্ভট কূটনৈতিক অচলাবস্থা ন্যাটো মিত্র নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলেছে। দেশ দু’টির মধ্যে চলছে পারস্পরিক নিষেধাজ্ঞা ও আরো অন্যান্য ব্যবস্থার হুমকির পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী বাগাড়ম্বর।

দুর্ধর্ষ এই ঘটনায় ১১ মার্চ তারিখে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কেভসোগ্লু এবং তুর্কি পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী ফাতমা বেতুল সায়ান কায়া ডাচ শহর রটারডামে তুরস্কের নিজস্ব দূতাবাসের বাইরে একটি সমাবেশে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করলে ডাচ কর্তৃপক্ষ তাদের দু’জনকে নেদারল্যান্ডে নামতে না দিয়ে পরেরদিন পাহারা দিয়ে জার্মান সীমান্তে পৌঁছে দিতে দেখা গিয়েছে।

কেভসোগ্লু এবং কায়া উভয়েই দেশের আসন্ন গণভোটের বিষয়বস্তুর উপর শহরটিতে তাদের দূতাবাসের বাইরে থাকা ৫ লক্ষের বেশি তুর্কি নাগরিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলেন। অভিবাসীদের একটি শহর হিসাবে খ্যাত রটারডামে একজন মুসলিম মেয়র রয়েছে এবং এখানকার জনসংখ্যার প্রায় আট শতাংশ তুর্কি বংশোদ্ভুত।

নাটকীয়ভাবে ডাচ কর্তৃপক্ষ উভয় মন্ত্রীর অনির্ধারিত পরিদর্শন আটকে দিয়ে ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে ওঠা জনতাকে জল কামান ও পুলিশের কুকুর দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে জনতা পুলিশের দিকে কাঁচ ও পাথর ছুঁড়ে মারে।

তুর্কী সরকারের বাইরের একটি দেশে নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি সমাবেশে পৃষ্ঠপোষকতা করা সঠিকতা ও বেঠিকতার পাশাপাশি পরিস্থিতিটিকে ডাচ সরকারের কঠোরহস্তে দমন টুইটারের আলোচনায় প্রাধান্য বিস্তার করেছে। আর তাই প্রত্যাশিতভাবেই তুরস্কের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগান প্রতিক্রিয়ায় নেদারল্যান্ড সরকারকে “নাৎসি অবশেষ” বলে শাপান্ত করে এবং নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন।

তুর্কী বিশ্লেষক এ্যারন স্টেইন নেদারল্যান্ডের জন্যে “সরকার ক” এবং তুরস্কের জন্যে “সরকার খ” ব্যবহার করে বাজেভাবে পরিচালিত নষ্ট প্রহসনের একটি ইংরেজি ভাষার দরকারী ঘটনাপঞ্জী সংকলিত করেছেন।

ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া রয়েছে

অবিসংবাদিত না হলেও ১৯৩৮ সালে ক্ষমতায় থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করা তুরস্কের আধুনিক প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের পর এরদোগান দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনীতিবিদ, যিনি আগামী মাসের গণভোটের সাংবিধানিক বাজিতে আটকে যাওয়া প্রধান সুবিধাভোগী।

তার দফতরের ক্ষমতায়নের পরিবর্তনগুলো পাস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ইউরোপে বসবাস ও কাজ করা প্রতিটি তুর্কীর ভোটের মূল্য রয়েছে। আর সেটাই ব্যাখ্যা করে কেন তার সরকারের সদস্যরা মহাদেশটির প্রধান প্রধান তুর্কি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত নগরগুলো পরিদর্শন এবং সমর্থন যোগাড় করা্র চেষ্টায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসফল হয়েছেন। নেদারল্যান্ড ছাড়াও অস্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ড হ্যাঁ ভোটের পক্ষে সমাবেশ বাতিল করে তাদের দেশ যেন কোন বিদেশী সরকারের রাজনৈতিক প্রচারাভিযানের মঞ্চ না হয় সে ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।

তবে সর্বশেষ সমাবেশ প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাচ প্রতিক্রিয়ার প্রকৃতি ক্রমশঃ জাতীয়তাবাদী এরদোগানের হাতের খেলনাতে পরিণত হয়ে উঠছে, তার সমর্থকদের টুইট এবং প্রতিষ্ঠানপন্থী সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পৃষ্ঠার চেহারার কারণে।

“এরা কাপুরুষ, ফ্যাসিবাদী এবং নাৎসি অবশেষ। #নাৎসিদেরবিরুদ্ধেআমরাসবাইএরদোগান “

“একেই বলে ‘জোর করে বার্তা ঘরে আনা'। #নেদারল্যান্ড এবং অন্যদের সঙ্গে সংকট ঘনীভূত হওয়ায় #তুর্কী সংবাদ মাধ্যম সম্পাদকীয় নির্দেশ মেনে চলছে।”

“আমি ‘হ্যাঁ’ গণভোট প্রচারাভিযানের পক্ষে এত কিছু করার জন্যে ডাচ সরকারকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ দিতে চাই। #টিউলিপসংকট “

এছাড়াও আগামী ১৬ মার্চ তারিখে ফলাফল পেতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিরোধীদলীয় ডানপন্থী ডাচ রাজনীতিবিদ গিয়ের্ত উইল্ডার্সের জন্যে একটি যথার্থ উপহার। সরকার সমাবেশটির প্রতি এভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী অনুভূতিকে উস্কানি দিয়ে উইল্ডার্সকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন।

“চলে যাও, আর ফিরে এসো না @ড.বেতুলসায়ান দয়া করে নেদারল্যান্ড থেকে তোমার সব তুর্কি ভক্তদের নিয়ে যাও। #বিদায় “

তবে বেশিরভাগের কাছে ইউরোপে একজন মুসলমান সংখ্যালঘু হওয়ার ভয়ানক সময় এটা, কারণ আংকারা ও পশ্চিমের মধ্যে উত্তেজনায় অভিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো সংগ্রামের একটি পাত্রে পরিণত হয়েছে।

“#টিউলিপসংকট হলো ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংখ্যালঘুদের নাজুক সময়ে মানুষের করুণ পরিণতির শেষ না হওয়া ?-এর একটি ধারাবাহিক…”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .