শহর হিসেবে বৈরুত তার আদি চরিত্র হারিয়ে ফেলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কান পাতলে লেবাননের অনেক নাগরিকের স্ট্যাটাসে এমন কথা শোনা যায়।
বৈরুত শহর সবচে’ বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ১৫ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময়ে। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে এসে এই গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এরপরে অবশ্য শহরটির পুনর্নির্মাণ শুরু হয়। তবে এই পুনর্নির্মাণ কালে বৈরুত শহরের অনন্য স্থাপত্যরীতি প্রাধান্য পায়নি। এখন শহরটির স্থাপত্য নিয়ে একটাই কথা বলার আছে, তা হলো ‘বিশৃঙ্খলা’।
তাই বৈরুত শহরের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ‘ডিজাইনার’ নামে শিল্পী এবং অ্যাক্টিভিস্টদের একটি সংগঠন উদ্যোগ নিয়েছে। তারা তাদের উদ্যোগের নাম দিয়েছে ‘পেইন্ট আপ’। সংগঠনটি বৈরুতের বিভিন্ন জায়গায় পেইন্ট করছে।
তবে এই উদ্যোগের শুরু বেশ কয়েক বছর আগে। ২০১২ সালে। জুবরান ইলিয়াস এবং লানা চুকরি দু’জনে মিলে শহরের ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
গ্লোবাল ভয়েসেস-এর সাথে সাক্ষাৎকালে জুবরান ইলিয়াস বলেন:
Our goal is not to change Beirut, but to bring it back to life. There are many things we cannot change in the political and economic situation of this place, however, we can try to revive Beirut with paint.
বৈরুতকে বদলে দেয়া আমাদের লক্ষ্য ছিল না। আমরা চেয়েছি বৈরুতের সাবেক ঐতিহ্য ফিরে আসুক। এখনকার যে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা, তাতে অনেককিছুর পরিবর্তন আর সম্ভব নয়। যদিও আমরা পেইন্ট করার মধ্যে দিয়ে পুরোনো বৈরুতকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছি।
একটি পেইন্টিং অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য মাসখানেকের পরিকল্পনা লাগে। তারা প্রথমে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমতি নেন। পরে তাদের স্পন্সর কালারটেক-এর কথা বলেন। এরপরে তারা অনুষ্ঠানের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে সবাইকে অবহিত করেন। ইলিয়াস বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন:
We start by taking photos of the stairs and then mock it up. Then we decide on its design.
আমরা প্রথমে সিঁড়িগুলোর ছবি নিই। এরপর সেগুলোর মক (নকল) পেইন্ট করি। তারপর সিদ্ধান্ত নিই কোনগুলো রং করবো।
খোলা আকাশের নিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করেছে সংগঠনটি। ইতোমধ্যে ‘পেইন্ট আপ’ নামের তাদের সিঁড়ির কাজগুলো বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তাদের কাজগুলো ভোগ ম্যাগাজিনের বিশ্বের ৯টি নানন্দিক সিঁড়ির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বোরডপান্ডা, বিবিসি, ফোবর্স-সহ অন্যান্য সংবাদ সাময়িকীতেও তাদের কাজ নিয়ে লেখালিখি হয়েছে। সম্প্রতি সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা লানা চুকরি’র সাক্ষাৎকার ছেপেছে আল জাজিরা।
নিচে তাদের কাজগুলোর কিছু রইলো:
‘হোম অব হোপ’ শিরোনামের এই প্রজেক্ট সম্পন্ন হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে।
‘রেলগাড়ির জন্য অপেক্ষা’ শিরোনামের কাজটি সম্পন্ন হয় ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে। বৈরুতের মার মিশেল এলাকার মার মিশেল রেলস্টেশনে কাজটি করা হয়েছে।
‘পেইন্ট আপ ভি ৬- টেট্রিস’ শিরোনামের কাজটি সম্পন্ন হয় ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে। বৈরুতের মার মিশেল এলাকায় এর অবস্থান।
‘পেইন্ট আপ ভি ৭- স্ট্রাইপ’ শিরোনামের কাজটি সম্পন্ন হয় ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে। বৈরুতের আজারিহ’র চাদ দ্য ম্যাড-এ এর অবস্থান।
বৈরুতের অতীত ঐতিহ্যের সাথে সংযোগ ঘটানোর লক্ষ্যে ‘ডিজাইনার’ নামে শিল্পী এবং অ্যাক্টিভিস্টদের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কমিউনিটির মানুষজন তাদের চারপাশে যা আছে, সেটা নিয়েই যে চিন্তা করে, সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে এই উদ্যোগের মাধ্যমে। সংগঠনের শিল্পীদের অসংখ্য কাজ আর ভালো কিছুর করার ইচ্ছে দেখে, এটা বলাই যায়, শিল্পীরা লেবাননের বুকে তাদের পদচিহ্ন রাখতে সক্ষম হয়েছেন।