থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী শিশুদের সত্যিকারের বন্দুক, ট্যাংক, অ্যাসল্ট হেলিকপ্টার দিয়ে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে

Children's Day at the Chiang Mai Air Force base in Thailand. Photo from Wikimedia Commons

থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই এয়ার ফোর্সের বেইজে শিশু দিবস পালন। উইকিমিডিয়া কমন্সের আওতায় ছবিটি প্রকাশিত।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে জাতীয় শিশু দিবসে থাইল্যান্ড জুড়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন শিশুরা বিনামূল্যে পার্কের বিভিন্ন রাইডে চড়তে পারে। জাদুঘর, সরকারি ভবনে প্রবেশ করতেও কোনো টাকা লাগে না। এমনকি এদিন শিশুরা সেনানিবাসে গিয়ে মারণাস্ত্র গুলো নিয়েও খেলতে পারে।

কি, বিশ্বাস হচ্ছে না? আলবৎ তাই! থাই শিশুরা সত্যিকারের মেশিনগান, আর্টিলারি চালাতে পারে। ট্যাংক এবং ব্ল্যাক হকস হেলিকপ্টারেও চড়তে পারে।

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন অনেক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত কয়েক দশক ধরে এটি একটি প্রচলিত স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমে সামাজিক জীবনে সহিংসতার অনুপ্রবেশ ঘটছে। ২০১৪ সালে সেনাবাহিনী থাইল্যান্ডের শাসন ক্ষমতা দখল করে। সমালোচকেরা বলছেন, সেনাবাহিনী তাদের ক্ষমতা দখলকে ন্যায্যতা দিতেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তাদের সম্পর্কে মানুষের যে ধারনা সেটা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।

১৯৩০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ডে অসংখ্যবার সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে।

শিশুদের সত্যিকারের বন্দুক দিয়ে খেলতে দেয়ার ঘটনা নিয়ে স্থানীয় একটি পত্রিকা সংবাদ শিরোনাম করেছে: “খুশির গুলি ছোঁড়া: শিশু দিবসে থাইল্যান্ডের শিশুরা সত্যিকারের ট্যাংক, জেট আর বন্দুক হাতে পেল।“

শিশু দিবসে একজন সৈন্য ৫ বছর বয়সী এক শিশুকে সত্যিকারের অস্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সেটি দেখাচ্ছেন:

What we’re doing is familiarizing them with soldiers and weaponry. By familiarizing them, they learn to love soldiers and even become soldiers.

তাদের সাথে আমরা কী করছি! সেনাবাহিনী এবং তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের সাথে পরিচিত করাচ্ছি। এর মাধ্যমে সৈন্যদের প্রতি তাদের অনুরাগ বাড়বে, এমনকি একদিন তারা সেনাবাহিনীর অংশ হতে চাইবে।

শিশু দিবসে ব্যাংককের কিংস গার্ডস সেকেন্ড ক্যাভালরি ডিভিশনে একজন শিশু ইসরাইলি টিএআর-২১ অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহারের সুযোগ পেল।

সাংবাদিক অ্যান্ড্রু ম্যাকগ্রেগর মার্শাল থাইল্যান্ডের শিশু দিবসকে “রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শিশু নির্যাতন দিবস” হিসেবে অভিহিত করছেন:

The main element of Children’s Day is that the army — which has never fought a real war against any foreign enemy but repeatedly crushes Thai democracy — invites kids into military camps where they can be brainwashed by being given lethal weapons to play with.

শিশু দিবসের মূল বিষয় ছিল সেনাবাহিনী। এরা কখনো সত্যি সত্যি যুদ্ধের ময়দানে বিদেশী শক্তির সাথে লড়াই করেনি। কিন্তু বারে বারে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হরণ করেছে। এখন তারা শিশুদেরকে সেনা শিবিরে আমন্ত্রণ করেছে। সেখানে তাদেরকে ভয়ংকর সব অস্ত্র দিয়ে খেলা করার সুযোগ দিয়ে ব্রেইন ওয়াশ করছে।

যেসব নেটিজেন শিশুদের সত্যিকারের অস্ত্র দিয়ে খেলার বিরোধী, তারা সবাই সাংবাদিক অ্যান্ড্রু ম্যাকগ্রেগর’র মতামত অনলাইনে শেয়ার করেছেন।

থাইল্যান্ডের জাতীয় শিশু দিবস।

শিশু দিবসে শিশুদের বন্দুক দিয়ে খেলাতে নিয়ে যাবেন না।

গত বছর থেকে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী শিশুদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য অনেকগুলো প্রচারাভিযান পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে স্কুলের পাঠক্রমের পরিবর্তন থেকে থাইল্যান্ডের সামাজিক মূল্যবোধ, ইন্টারনেটের জন্য সাইবার পুলিশ, প্রি-স্কুলে বুট ক্যাম্প পর্যন্ত রয়েছে।

প্রি-স্কুলগুলোতে শিশুদের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করাকে লেখক জন ড্র্যাপার “সিস্টেমেটিক মিলিটারাইজড ইনডক্ট্রিনেশন” (নিয়মতান্ত্রিকভাবে সামরিকায়ন) বলে উল্লেখ করেছেন।

এ ধরনের মতবাদ প্রচার কার্যক্রম কতদিন চলবে তা বলা মুশকিল। থাইল্যান্ডে যদি গণতন্ত্র ফিরে আসে, তখনও কি শিশুদের সত্যিকারের বন্দুক, ট্যাংক নিয়ে খেলা চলতেই থাকবে?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .