
স্ত্রী ও পুত্রের সঙ্গে আহমেদ আকসা গোরাইয়া। তিনি গত ৪ঠা জানুয়ারি ২০১৭ তারিখ লাহোর থেকে নিখোঁজ হন। ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করেছেন মিসকা সাইদ।
নতুন বছরের শুরুতেই পাকিস্তানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ব্লগারদের পরিবার এবং বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংস্থার তথ্যমতে পাকিস্তানে কমপক্ষে ৯ জন ব্লগার ২০১৭ সালের প্রথম সপ্তাহে নিখোঁজ হয়েছে। এর মধ্যে চারজন নিখোঁজ কর্মী ধর্মনিরপেক্ষ ও বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হিসাবে পরিচিত।
আহমেদ আকসা গোরাইয়া এবং অসীম সাইদ উভয় প্রবাসী – তারা পাকিস্তান ভ্রমণে এসে নিখোঁজ হন। নেদারল্যান্ডসে বাসরত গোরাইয়ার স্ত্রী গ্লোবাল ভয়েসেসকে বলেছেন- তার স্বামী এবং অসীম সাইদ গত ৪ঠা জানুয়ারি লাহোর থেকে নিখোঁজ হন। নেদারল্যান্ডস প্রবাসী গোরাইয়া একজন নৃতাত্ত্বিক। তাঁকে লাহোর থেকে আব্দুর রহমান চিমা নামক এক চাচাতো ভাইকে সহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
সিঙ্গাপুর প্রবাসী অসীম সাইদ একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ । গ্লোবাল ভয়েসেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর পিতা বলেছেন- “যখন তারা অসীমকে তুলে নিয়ে যায় তখন অসীমের সাথে দুটো স্মার্টফোন ও একটি ল্যাপটপ ছিলো। যাঁরা তার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায় তারা ছিলো সাদা পোশাকে এবং তারা নম্বরপ্লেটবিহীন নতুন গাড়ি নিয়ে এসেছিলো।”
Pakistani bloggers Ahmad Waqas Goraya, Asim Saeed and Ahmad Raza Naseer missing for 4-5 days — police have registered a case for 1 of them pic.twitter.com/aCKKunJd6C
— omar r quraishi (@omar_quraishi) January 9, 2017
পাকিস্তানি ব্লগার আহমেদ আকসা গোরাইয়া, অসীম সাইদ এবং আহমেদ রাজা নাসির ৪-৫দিন ধরে নিখোঁজ। পুলিশ এদের একজনের মামলা নথিভুক্ত করেছে।
Three of the bloggers went missing apparently after they were asked to appear before the FIA cyber crime wing office
— omar r quraishi (@omar_quraishi) January 8, 2017
নিখোঁজ ব্লগারদের মধ্যে তিনজনকে স্থানীয় সাইবার অপরাধ ইউনিটের অফিসে যেতে বলা হয়েছিল।
আকসার স্ত্রী মেসচা ফেসবুকে এক আবেগঘন অনুভূতি ভাগ করেছেন:
একজন সাধারণ মানুষের সাধারণ কাহিনী…
.
আহমেদ আকসা গোরাইয়া… আমার স্বামী, আমার সাথী, আমার প্রিয়তম এবং আমার সন্তানের পিতা। আমি তাকে বিগত ১৩ বছর থেকে জানি আর তার সঙ্গে আমার বিবাহিত জীবন ৯ বছরের। আমার প্রতি তার ভালোবাসা ছিলো নিরবচ্ছিন্ন…উনি একজন আবেগী কিন্তু স্থিতধী মানুষ। উনি পরিচিত মহলে একজন কট্টর উদারনৈতিক মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু আমার কাছে তিনি ছিলেন একজন প্রগতিশীল মানুষ, যিনি নিজের আদর্শে আমাদের পুত্রকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সেই নিরীহ মানুষটি… গত ৪ঠা জানুয়ারি ২০১৭ তারিখ নিরুদ্দেশ হলো, যেনো বাতাসে মিলিয়ে গেলো। নতুন বছরের কী নিদারুণ সূত্রপাত- আমাদের এই ছোট্ট পরিবারের জন্য। নতুন বছর নিয়ে আমার অনেকগুলো পরিকল্পনা ছিলো। সে পারিবারিক ভ্রমণ থেকে ফিরে এলে তারা সঙ্গে সেগুলো ভাগাভাগি করবো বলে পরিকল্পনা করেছিলাম। আমি আর আমার পুত্র ও তার সঙ্গে সেই পারিবারিক ভ্রমণে পাকিস্তানে গিয়েছিলাম। কিন্তু কর্মস্থলে কিছু কাজ থাকায় আমি আগেই ফিরে আসি, আর সে পাকিস্তানে তার পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় অতিবাহিত করছিল- পাকিস্তান, যার জন্য সে পাগল ছিলো…পাকিস্তান সেই ভূমি যার উন্নতি সে কামনা করতো।সে কী অন্যায় করেছিলো? সে কী ভুল করেছিলো? আমি ঘুমোতে পারি না, আমি চিন্তামুক্ত থাকতে পারি না…অনেক প্রশ্ন ভিড় করে মনে…আকসা কী ভুল করতে পারে..একজন মানুষ যাকে আমি বিয়ে করেছিলাম। প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ দেশপ্রেমিক ও উদ্যোমী একজন মানুষ, যে মানুষের বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করতো…এইটাই কি তার অন্যায় ছিলো? আমি জানি না তার কোন জিনিসটা হুমকি ছিলো এই লোকগুলোর জন্য যাঁরা তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। আমি শুধু তাঁকে ফিরে পেতে চাই।
তোমাকে ছাড়া আমরা দুই জনই একা এবং আমরা তোমার অভাব অনুভব করছি বাবা… তাড়াতাড়ি ফিরে এসে আমাদের বাড়িটাকে সত্যিকারের বাড়িতে পরিণত করো। সেই উজ্জ্বল দৃষ্টি, প্রাণশক্তি, উদ্যোগ নিয়ে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় ফিরে এসো…
#রিকভারআহমেদআকসাগড়েয়া
সাইদ এবং গোরাইয়ার নিখোঁজ হবার দুই দিন পর ৬ জানুয়ারি ইসলামাবাদ থেকে নিখোঁজ হন সালমান হায়দার নামে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মী। তিনি ছিলেন একাধারে প্রখ্যাত কবি, ফাতেমা জিন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং মুক্ত পত্রিকা তানকিদ এর সম্পাদক ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মী এবং প্রখ্যাত কবি সালমান সবার নজরে আসেন ২০১৪ সালে, যখন তাঁর ‘ম্যা ভি কাফির (‘আমি নাস্তিক’) কবিতাটি ব্যাপক প্রচার লাভ করে। কবিতাটিতে বেলুচিস্তান প্রদেশের শিয়া-হাজারা সম্প্রদায় এর উপর চলমান আক্রমণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। হায়দার একজন নাট্যকর্মী এবং সেনাবাহিনীর সমালোচক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তাছাড়া তিনি বেলুচিস্তানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে লেখালেখি করতেন।
হায়দার নিরুদ্দেশ হবার পর তানকিদ পত্রিকায় সাহায্যের জন্য ডাক দেয়া হয় #সালমানহায়দারকেউদ্ধারকরুন:
হায়দার যাকে আদর করে সাল্লু ভাই বলে ডাকা হয়, তিনি গতকাল রাত ১০ টার দিক থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এ সময় একটি অচেনা নম্বর থেকে তাঁর স্ত্রীকে টেক্সট করে জানানো হয় সাল্লু ভাইয়ের গাড়ি ইসলামাবাদের করলাচক থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। তারপর থেকে হায়দার কোথায়, তা জানা যাচ্ছে না। (…) তানকিদ পরিবার #সালমানহায়দারকেউদ্ধারকরুন-কে সমর্থন করার জন্য সাংবাদিক, শিল্পী-সাহিত্যিক ও অধিকার কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি ।আমরা আশা করছি কর্তৃপক্ষ সাল্লু ভাইকে নিরাপদে ও স্বল্পতম সময়ের মধ্যে গৃহে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নিবে।
শাইয়ান হুসাইন দাবি করছেন যে অধিকার কর্মী ছাড়াও টুইটার ও ফেসবুক অ্যাকাউন্টকেও নিশানা করা হচ্ছে:
মানবিক কণ্ঠস্বর ও ব্লগের উপর ব্যাপকহারে দমন চলছে। বিগত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহে দেখা যাচ্ছে সালমান হায়দার, আহমেদ আকসা গোরাইয়া ও আসীম সাইদ যে-ই রাষ্ট্রের কর্মনীতির সমালোচনা করেছে সে-ই নিখোঁজ হয়েছে। সাথে সাথে হারিয়ে গেছে বোল প্লাটুন, ভিনসা রোশনি এর মতো টুইটার অ্যাকাউন্ট ও ফেসবুক পেজ- যা সত্যিই সমর্থনযোগ্য নয়…
.@ahmedshaheed secular bloggers going missing in Pakistan, can you help? https://t.co/6MNTOD1BJO #RecoverBhensa
— Atheist Ireland (@atheistie) January 8, 2017
একজন অসাম্প্রদায়িক ব্লগার পাকিস্তানে নিখোঁজ হয়েছে, আপনি কি সাহায্য করতে পারেন? #রিকভারভিনসা
What's going on in #Pakistan?In past 4 days, one after another, bloggers & human right activists have gone missing.
(Via- @Ali_Abbas_Zaidi) pic.twitter.com/WaRCkan88o
— Shoaib Iqbal (@IqShoaib) January 9, 2017
এসব হচ্ছেটা কী #পাকিস্তান ? বিগত 4 দিনে একের পর এক ব্লগার, মানবাধিকার কর্মী হারিয়ে যাচ্ছে।
‘দায়িত্ব পালন করায় তারা আহত-নিহত-অপহৃত’
গত ৯ই জানুয়ারি মানবাধিকার কমিশন পাকিস্তান (এইচআরসিপি), নামক এক স্থানীয় এনজিও নিরুদ্দেশ ব্যক্তিদের বিষয়ে বিবৃতি প্রদান করে:
পাকিস্তান অধিকার কর্মীদের জন্য কখনোই নিরাপদ স্থান নয়। এখানে অনেক অধিকার কর্মী নিজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আহত-নিহত-অপহৃত হয়েছে এবং কখনো কখনো হুমকি পেয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য- এমন কর্মকাণ্ডে শুধু রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি জড়িত নয়, রাষ্ট্রীয় ভাবেও এমন কর্মকাণ্ড চালানো হয়। গত সপ্তাহের ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয়, বিপদ ডিজিটাল স্পেস পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে । ঘটনাগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কিনা সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই- কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ আমাদের খুব চেনা।
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার’ প্রণীত বিশ্ব মুক্ত সাংবাদিকতা সূচি-২০১৬তে পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৭ তম। উল্লেখ্য, উক্ত সূচিতে স্থান পেয়েছে ১৮০টি দেশ। আরএসএফ বলেছে- “সাংবাদিকরা এখানে উগ্রপন্থী সংগঠন, ইসলামি দল এবং সাধারণ মানুষের নিকট ত্রাস হিসাবে পরিচিত পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার নিশানায় রয়েছে।”
গুরুতর মানবাধিকার সমস্যা হওয়া সত্বেও কতো মানুষ অপহৃত বা হারিয়ে গিয়েছে তার কোনো সরকারি পরিসংখ্যান দেশে নেই। ২০১৫ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালত হারিয়ে যাওয়া মানুষ সম্পর্কে সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করে। ‘এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ এর মতে, পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনী আইন-২০১৫-তে একটি সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রভূত আইনি সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে।
মুলতানে নাগরিক সাংবাদিক গ্রেফতার
উপর্যুক্ত ঘটনাগুলো ছাড়াও গত পহেলা জানুয়ারি বেশ কয়েকজন নাগরিক সাংবাদিককে মুলতান শহর থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন অথরিটি (এফআইএ) এর অফিসে তলব করা হয়। সেখান থেকে তারা আর কখনো ফিরে আসেনি। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের অবস্থান বা ভাগ্য প্রসঙ্গে কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি।
গণমাধ্যমের ভাষ্যমতে, এফআইএ তাদের দপ্তরে সাংবাদিকদের তলব করে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি সাকিব নাসিরের একটি ছবি প্রকাশ করার জন্য। কর্তৃপক্ষের মতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দানের পর অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত সেই ছবিটি জাল। পাকিস্তানের এটর্নি জেনারেল , আসতার ঔসফ আলি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে লেখা এক চিঠিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এই জাল ছবি সম্পর্কে অভিযোগ করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর এফআইএ আইপি ঠিকানার সূত্র ধরে ছবি শেয়ারকারীদের পরিচয় সনাক্ত করে ওয়াটসঅ্যাপসের মাধ্যমে আইনি নোটিশ পাঠায়। সেই নোটিশে বলা হয়-অভিযুক্তরা যেনো ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে ইসলামাবাদে অবস্থিত এফআইএ অফিসে হাজির হয়।
আরো কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। টেক ব্লগ প্রো পাকিস্তানির মতে, কমপক্ষে ৩ জন ব্লগারকে আটক করা হয়েছে। জিও নিউজের তথ্য মতে, নয়জন ব্লগারকে তলব করা হয়েছিল এবং এই ব্লগাররা সবাই এফআইএ-এর হেফাজতে রয়েছে।
As per one report, the number of missing bloggers has gone up to nine. 1 from Islamabad, 3 Lahore, 1 Nankana Sahib and 4 from Multan.
— Marvi Sirmed (@marvisirmed) January 8, 2017
এক রিপোর্ট মতে নিখোঁজ ব্লগারদের সংখ্যা ৯য়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলামাবাদ থেকে ১ জন, লাহোর থেকে ৩ জন, নাঙ্কানা সাহিব থেকে ১ জন এবং মুলতান থেকে চারজন।
উর্দু সংবাদপত্র দৈনিক জং লিখেছে একটি নিন্ম আদালতের বিচারপতি এই ঘটনায় জড়িত অন্য অপরাধীদের ধরার জন্য কমপক্ষে দুই জনকে পাঁচ দিনের বিচার বিভাগীয় রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।
ইলেক্ট্রনিক অপরাধ নিরোধ আইন, ২০১৫
সাধারণ পাকিস্তানিদের নিকট “সাইবার অপরাধ আইন” নামে পরিচিত এই ইলেক্ট্রনিক অপরাধ নিরোধ আইন-২০১৫ এর পাঁচটি অধ্যায়ে সাইবার অপরাধ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এই আইন অনুসারে স্পর্শকাতর রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো বিষয়ে হস্তক্ষেপ, সাইবার সন্ত্রাস, ইলেক্ট্রনিক জালিয়াতি, পরিচয় প্রতারণা, যৌন হয়রানি, ভাইরাস ছড়ানো ও স্পুফিং এর মতো অপরাধ ও তার বিচার প্রক্রিয়ার উল্লেখ রয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের পিইসিএ-এর আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে কিনা, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা না গেলেও কারো কারো মতে, পিইসিএ এর ২০ নম্বর ধারা এদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে:
২০: একজন স্বাভাবিক ব্যক্তির মানহানি করা: কেহ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বা জনসন্মুখে যেকোনো প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে মিথ্যা তথ্য প্রদর্শন বা পরিবেশন বা প্রচার বা ভীতি প্রদর্শন করলে বা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিনষ্ট করলে যেকোনো প্রকৃতিস্ত ব্যক্তি সর্বাধিক তিন বছর কারাবাস এবং সর্বাধিক দশ মিলিয়ন রুপি জরিমানা বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত হতে পারে।
অনেক প্রশ্নেরই কোনো উত্তর মেলেনি। গ্রেতারকৃতদের কোটে উপস্থিত করা হয় প্রায় এক সপ্তাহ পরে। পাশাপাশি পরোয়ানা বহির্ভূতভাবে জব্দ করা হয় তাদের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস।
To demand recovery of 4 missing bloggers, protest o/side #Lahore Press Club, Jan 12, 3pm. Come all. #Recoverallbloggers #RecoverSalmanHaider
— Rabia Mehmood (@Rabail26) January 9, 2017
চারজন নিখোঁজ ব্লগারকে ফিরে পাবার লক্ষ্যে লাহোর প্রেসক্লাবের বাইরে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। ১২ই জানুয়ারি, বিকেল ৩টা। সবাই আসবেন।
নাজিয়া শফিক মোমিনা ফেসবুকের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন:
দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সন্ত্রাসবাদীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বাচনে জয় লাভ করছে অথচ অসহায় নাগরিকদের বিচার হচ্ছে। এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করুন। সবার আগে মানুষ, ভারতীয়, পাকিস্তানি, হিন্দু-মুসলিম, নাস্তিক, শিয়া-সুন্নি এই ভেদাভেদ গৌণ।
আটক ব্লগারদের মুক্তির দাবিতে একটি আবেদন প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যে ব্যাপী প্রতিবাদের পরিকল্পনা করা হচ্ছে:
#ফিরিয়েআনুনআমাদেরকর্মীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি:
করাচি| মঙ্গলবার ১০ জানুয়ারি @৪পিএম,করাচি প্রেসক্লাব
ইসলামাবাদ | মঙ্গলবার ১০ জানুয়ারি @৪পিএম,জাতীয় প্রেসক্লাব,ইসলামাবাদ
লন্ডন | শুক্রবার ১৩ জানুয়ারি @৪পিএম,পাকিস্তানি দূতাবাস,লন্ডন
পোস্টটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।
#হারিয়েযাওয়াকর্মীদেরউদ্ধারকরুন
#সালমনানহায়দারকেউদ্ধারকরুন
অপপ্রচার চলছেই
যখন হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের অবস্থান সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের নিকট বিস্তারিত তথ্য চাচ্ছে, তখন হতভাগ্য সেই মানুষগুলো সম্পর্কে চলছে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা। পাকিস্তান প্রতিরক্ষা, নামে সেনাবাহিনীপন্থী একটি ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়। উল্লেখ্য, এই ফেসবুক পেজটির অনুসরণকারীর সংখ্যা সত্তুর লাখ। শেয়ার করা পোস্টে তিনজন ব্লগারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননা এবং বিতর্কিত ফেসবুক পেজ ভিনসা'র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়।

“নাস্তিকদের পরাজয়- যারা ফেসবুকে ভিনসা'র মতো ধর্ম অবমাননাকারী পেজ চালাতো। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিকরা বিষয়টিকে মিডিয়ার মাধ্যমে রাজনীতির রঙ দেবার চেষ্টা করছে”
মোহাম্মদ জিবরান নাসির নামে একজন জনস্বাধীনতা কর্মী-যিনি একজন আইনজীবী ও ব্লগার- বলেছেন যে, এটি ডিফেন্স.পিকে (পাকিস্তান ডিফেন্স পেজ)-এর অপপ্রচার। তিনি তাঁর বক্তব্য একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শেয়ার করেন।
Propaganda by Defence.pk accusing missing activists of blasphemy and endangering their lives #RecoverSalmanHaider https://t.co/b1CYkalJ2X
— Jibran Nasir (@MJibranNasir) January 9, 2017
ডিফেন্স.পিকে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে যে নিখোঁজ ব্লগাররা ব্লাসফেমির অপরাধ করেছেন – যা তাদের জীবন বিপন্ন করে তুলবে।
এমতাবস্থায় নিখোঁজ কর্মীদের পরিবারবর্গ এবং নাগরিক আধিকার রক্ষা সংগঠনগুলো আরো বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা অনতিবিলম্বে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবার দাবী জানিয়েছে- কারণ সময় যতো যাচ্ছে তাঁদের জীবন সম্পর্কে শঙ্কা ততো গভীর হচ্ছে।
আপডেট [জানুয়ারি ১২,২০১৭, ১৬:৩২ ইএসটি]: স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ডেভিড কেইয়া [১১, জানুয়ারি] পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের নিকট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এইসব মানবাধিকার কর্মীকে খুঁজে বের করা, রক্ষা করা ও নিরপত্তা প্রদান করাকে প্রাধিকার প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন। কেইয়ার বক্তব্য পড়ুন।